তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা

পরিপূর্ণ হাদীসটি হলো, আবু বুরদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। (১). যে কিতাবধারী পূর্বে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর এই নবীর প্রতি ঈমান এনেছে। (২). যে অপরের মালিকানাধীন দাস; মনিব এবং তার মূল প্ৰভু রাব্বুল আলমীনের আনুগত্য করে (৩). যার মালিকানায় কোন যুদ্ধ-লব্ধ দাসী ছিল সে তাকে গোলামী থেকে মুক্ত করে বিবাহিতা স্ত্রী করে নিল। (সহীহুল বুখারী হা/৯৭, সহীহ মুসলিম হা/৪০৪, মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৫৩২)

▪️হাদীসটির ব্যাখ্যা: তিন শ্রেণীর প্রত্যেক লোকের জন্যই ক্বিয়ামাত দিবসে দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। যেমন:
.
(১). যে ব্যক্তি আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত নিজের নাবীর (আ) উপর ঈমান এনেছে আবার মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপরও ঈমান এনেছে। আহলে কিতাব নারী আহলে কিতাব পুরুষদের মতই। যেহেতু হুকুমের ক্ষেত্রে নারীগণ পুরুষের অন্তর্গত। তবে বিশেষ প্রমাণের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। আর আহলে কিতাবগণ দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে, কারণ তারা তাদের নাবীর প্রতি ঈমান আনার পর আবার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিও ঈমান এনেছে। এ কথার সমর্থনে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকাজ করবে তাকে আমরা পুরস্কার দেব দু’বার।” (সূরা আল-আহযাব: ৩১)
.
(২). যে ক্রীতদাস মহান আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি স্বীয় মুনিবের হকও আদায় করে তাকেও দ্বিগুণ সাওয়াব দেওয়া হবে। কারণ প্রতিদানের বিষয়টি কষ্টের উপর নির্ভর করে। কোনো কাজ করতে যাকে যত বেশি বেগ পেতে হয় তার প্রতিদান তত বেশি থাকে। দাস এখানে দু’টি আনুগত্য একত্রে পালন করছে। এক. তার প্রভুর আনুগত্য। দুই. তার মালিকের আনুগত্য। মালিকের আনুগত্যের সাথে সাথে প্রভুর আনুগত্য করার দরুন তার ওপর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে যা স্বাধীন ব্যক্তির ওপর নেই। তাই স্বাধীন ব্যক্তির তুলনায় সে দ্বিগুণ প্রতিদান পাবে। এর সমর্থনে দলিল আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; কোনো দাস যখন স্বীয় মালিকের কল্যাণকামী হয় ও উত্তমরূপে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত (সৎকর্ম) করে, তখন তাকে দ্বিগুণ সাওয়াব প্রদান করা হয়। (বুখারী ২৫৪৬, মুসলিম ১৬৬৪, আবু দাঊদ ৫১৬৯, সহীহাহ্ ১৪১৬, সহীহ আল জামি ১৬৭৪, মিশকাত হা/৩৩৪৮)
.
(৩). ঐ ব্যক্তি যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। আর সে তাকে উত্তম আদব শিখিয়েছে এবং উত্তমরূপে ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। অর্থাৎ দাসী আযাদ করে বিয়ে করলে মুনীব দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। কারণ আযাদ করা একটি ইবাদাত এবং বিয়ে করা আরেকটি ইবাদাত। (তাফসীরে কুরতুবী সূরা আহযাব, ৩১ নং আয়াতের তাফসীর, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১১ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_____________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: