কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল হাদীসটির ব্যাখ্যা

কুরআন সুন্নাহ থেকে যা প্রমানিত হয় তা হল;
কুরআন যেমন কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীদের জন্য সুপারিশ করবে, তেমনি দুনিয়ায় কুরআনকে যারা অবহেলা করে, কুরআন তাদের বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দেবে। ইমাম মুসলিম তার সহীহ মুসলিমে আবু মালিক আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:, وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ অর্থাৎ কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে দলিল”।(সহীহ মুসলিম হা/৫৫৬ মিশকাত হা/২৮১, সহীহুল জামে‘ হা/৯২৫) হাদীসটির সনদ সম্পর্কে বলার কিছু নেই কেননা এটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস।
.
হাদীসটির সঠিক অর্থ: পবিত্র কুরআনুল কারীম মহান এবং শাশ্বত মর্যাদাসম্পন্ন পরিপূর্ণ কিতাব।পূর্ববর্তী নবীদের উপর নাযিলকৃত আসমানী কোন গ্রন্থই পবিত্র কুরআনের মর্যাদায় পৌঁছতে পারেনি। সুতরাং যারা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস,কুরআনের যথাযথ মর্যাদা দান এবং তার উপর ‘আমল করে। তাদের মর্যাদা এভাবে বাড়িয়ে দেয়া হবে যে, ইহকালে পাবে তারা এক সম্মানজনক জীবন এবং পরকালে অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের দিনে কুরআন তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিবে,এবং আল্লাহ কুরআনের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন ফলে তারা আল্লাহর নৈকট্যশীল পুরস্কারপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।পক্ষান্তরে যারা তার প্রতি পূর্ণরূপে ঈমান আনয়ন করবে না, তার ‘আমল ছেড়ে দিবে এবং তার যথাযোগ্য মর্যাদা দানে ব্যর্থ হবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের লাঞ্ছিত করবেন। এবং কুরআন হতে মুখ ফিরিয়ে রাখার কুরআন কেয়ামতে ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,‘‘এ কুরআন দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা অনেক মানুষকে পথপ্রদর্শন করেন আবার অনেককে করেন পথভ্রষ্ট।’’ (সূরা বাকারাহ ২: ২৬)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, যদি তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর ও সে অনুযায়ী আমল কর, তাহ’লে তুমি উপকৃত হবে। অন্যথা কুরআন তোমার বিপক্ষে দলীল হবে।(ইমাম নববী শরহু মুসলিম: খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১০২) এই মর্মে অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) কুরআন অনুযায়ী আমল না করলে কবরে ক্বিয়ামত অবধি শাস্তি হবে বলে উল্লেখ করেছেন।(সহীহ বুখারী হা/১৩৮৬, ১০৭৫)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:”হয়তো কুরআন আপনার পক্ষে হবে। তা এভাবে যে,যদি কুরআন দিয়ে আপনি আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেন এবং এ কুরআনের আবশ্যকীয় অধিকারগুলো আদায় করতে পারেন: কুরআনের সংবাদগুলো বিশ্বাস করেন, নির্দেশগুলো পালন করেন, নিষেধগুলো পরিহার করেন, এই কুরআনকে সম্মান করেন ও মর্যাদা দেন— এমন হলে কুরআন আপনার পক্ষের দলিল। কিংবা এর বিপরীত হবে: আপনি কুরআনকে অপমান করেছেন, কুরআনকে বর্জন করেছেন; এর শব্দ, ভাব ও আমল ত্যাগ করার মাধ্যমে; কুরআনের আবশ্যকীয় অধিকার আদায় করেননি— তাহলে এই কুরআন কিয়ামতের দিন আপনার বিপক্ষে সাক্ষী হবে।”(শারহু রিয়াদুস সালেহীন: পৃষ্ঠা-৩০ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৩২৩৩৭)
.
জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কিয়ামতের দিন কুরআনের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে, কুরআন তার পাঠকের পক্ষে কথা বলবে এবং তার কথা সত্যায়ন করা হবে। যে ব্যক্তি কুরআনকে অনুকরণীয় বানায়, কুরআন তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করবে আর যে ব্যক্তি কুরআনকে পেছনে রেখে দিবে কুরআন তাকে জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করবে।”(সহীহ ইবনে হিব্বান হা/১২৪ মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক: ৬০১০; শু‘আবুল ঈমান: ১৮৫৫; আল মু‘জামুল কাবীর: ৮৬৫৫; মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ: ৩০০৫৪। হাদীসটির সানাদকে আল্লামা শুআইব আল আরনাঊত রাহিমাহুল্লাহ যায়্যিদ বা ভাল বলেছেন। আল্লামা নাসিরুদ্দিন রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলা সহীহা: ২০১৯)
.
উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম আবু হাতিম ইবনে হিব্বান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “এই হাদীসের শব্দ ইলমে হাদীসে যার দ্বীনের গভীর জ্ঞান নেই অথবা যে শরীয়ত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ তাকে অনেক সময় সংশয়ে ফেলে দেয় যে, কুরআনকে বানানো হয়েছে, কুরআন মাখলূক বা সৃষ্ট! অথচ বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু এর শব্দ যেমনটা আমরা আমাদের কিতাবে বলে থাকি: আরবরা তাদের ভাষায় কোন জিনিসের নামকে তার উপকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন যেমনিভাবে কোন উপকরণের নামকে খোদ ঐ জিনিসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। সুতরাং যেহেতু কুরআন অনুযায়ী আমল ব্যক্তিকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে, সেজন্য ঐ জিনিসের নাম অর্থাৎ কুরআন অনুযায়ী আমলকে উপকরণ তথা কুরআনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে; এর উদ্দেশ্য মোটেও এটা নয় যে,কুরআন মাখলূক বা সৃষ্ট।”(আন-নিহায়া, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৬৩৬ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯৬০৫৪) আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের মর্যাদা উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।