পরিবারে সবার মন জয় করার কিছু সহজ টিপস

আমাদের সমাজে একটা মেয়ের জন্য বিয়ের পর স্বামীকে ঘিরেই তাঁর জগত তাঁর সংসার তাঁর সুখ-দুঃখ সাধারণত এরকমটা খুবই কম হয়।বিয়ের পর সে প্রবেশ করে নতুন একটা পরিবার পরিবেশে আর সেখানে থাকে অনেক রকমের মন মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা বিভিন্ন রুচি বোধের মানুষ, আর এদের সবাইকে নিয়েই একটা পরিবার।একটা নারী যখন নতুন একটা সংসারে প্রবেশ করে তখন সবার আগে যা দরকার সেটা হল নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা। আর একজন নারীর শিক্ষা-দীক্ষা তখনই সার্থক হয় যখন তাঁর শিক্ষার আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রেখে সংসারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই একজন নারীর সফলতা। নতুন পরিবারে যার ভুমিকা সবচেয়ে বেশি সে হল তাঁর শাশুড়ি। বিয়ের পর মেয়েরা যখন তার শ্বশুরবাড়ি আসে তখন এই শাশুড়িই তার মায়ের জায়গা পূরণ করে নেয়।

বেশির ভাগ সময় এই সম্পর্কটার মাঝে অনেক তিক্ততা সৃষ্টি হয় ভুল বুঝাবুঝির কারণে আর একটু সচেতনতাই পারে এ সম্পর্কটাকে মধুর করে রাখতে। এর জন্য চাই কিছুটা কৌশল, আসুন জেনে নেই ছোট ছোট কিছু কৌশল যা আপনাকে করে তুলবে তাঁর সবচেয়ে আদরিনী।

▪১. মনোমালিন্যের উৎসই যে জায়গাটা থেকে সেখানেই হোন বেশ সচেতন। রান্নাঘর-চেষ্টা করুন একটু গুছিয়ে ও পরিষ্কার রাখতে। দৈনন্দিন কাজে শাশুড়িকে সাহায্যের পাশাপাশি গোপনে তার কিছু প্রিয় খাবার বানিয়ে তাকে চমকে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর সাহায্য নিতে পারেন।

▪২. প্রতিটি শাশুড়িই চায় তার পুত্রবধু ঠিক তারই মত করে সংসারটাকে আগলে রাখুক। চায় ঘরের বউ যেনো হয় ঠিক তারই প্রতিচ্ছবি।

▪৩. পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। নিজের পছন্দের পোশাক পরিধানের ব্যাপারেও মার্জিত থাকুন। মাঝে মধ্যে শাশুড়ির পছন্দের পোশাক পরুন।

▪৪. শাশুড়ির পছন্দ জেনে নিয়ে তাকে মাঝে মধ্যেই কিছু উপহার দিন।

▪৫. শাশুড়ির সাথে আচরণে সচেতন হোন। মেজাজ খারাপ করে কখনো তাঁর সাথে কথা বলবেন না। তার সঙ্গে ভদ্র আচরণ করুন। নিজের মায়ের মত তাকেও সম্মান করুন। শাশুড়িকে মা, আম্মা বলে ডাকার আগে আন্তরিকতা বিষয়টাকে গুরত্ব দিন। তার কোন ভূল হলে তা সাথে সাথে না বলে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলুন।

▪৬. সব সময় শাশুড়ির শারীরিক অবস্থার খেয়াল রাখুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন-তার কী প্রয়োজন। তাকে মায়ের মত সেবা করুন। শরীর খারাপ হলে পাশে থেকে সেবা করুন। এমনকি তার খাবারের ক্ষেত্রেও আপনি পরামর্শ দিতে পারেন। তবে কোন ক্ষেত্রেই তা যেনো ভুল বোঝাবুঝিতে না পৌঁছায় সে ভাষায় বলার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনি যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ঠিক তাঁর মনের মত করে কথা বলেন, সেবা করেন, সম্মান করেন তবে আপনিও তার কাছ থেকে ঠিক সেরকমই আচরণই পাবেন।

এবার আসুন, পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে খুশি করার কিছু সহজ কৌশল যা করে আপনি হয়ে উঠতে পারেন তাদের ভালোবাসার মধ্যমণি।

নিজেকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সবার আগে নিজের স্বার্থপরতার মন মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে সবাইকে ভালোবাসার মন মানসিকতা তৈরি করুন। নিজের মা-বাবা ভাই -বোনের মতো নতুন পরিবারের সদস্যদের সম্পর্ক অনুযায়ী সবাইকে ভালোবাসার চেষ্টা করুন। ভালোবাসা দিয়ে যা জয় করা যায় জোর করে তা কখনো করা যায়না।

আসুন, জানি সে কৌশলগুলি:

✅ ১. সবার সাথে ভালো যোগাযোগ রাখুন: যোগাযোগ রাখা হলো সব চাইতে কার্যকরী এবং পরীক্ষিত ভাবে প্রমাণিত কৌশল। আপনি যদি সকলের সাথে ভালো ভাবে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হন তবে আপনি শ্বশুরবাড়ির সকলের মন খুব সহজেই জয় করে নিতে পারবেন।

✅ ২. আড়ালে কথা বলবেন না: নিজের শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে আড়ালে কথা বলবেন না কারও কাছে। আপনার কাছে যদি কোনো বিষয় খটকা লেগে থাকে তবে তা সরাসরি বলে পরিস্কার করে নেবেন। আপনি বলবেন এক ধরণের কথা কিন্তু তা হয়তো তাদের কানে পৌঁছুবে অন্যভাবে। এতে করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে এবং আপনি চক্ষুশূল হয়ে পরবেন। অনেকেই এই কাজটি করেন না এই ভেবে যে, সরাসরি বললে অনেকে অন্যকিছু মনে করে থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এটিই অনেক ভালো পদ্ধতি। এতে আপনি নিজেকে সকলের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

✅ ৩. নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলুন: অনেক সময় আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না জানার কারণে শ্বশুরবাড়ির মানুষজনের কাছে আপনার গতিবিধি তেমন পরিষ্কার না হওয়ার কারণেও শ্বশুরবাড়ির মানুষজন আপনাকে ভুল বুঝে থাকে। তাই আপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং কি কি করতে চান তা সুযোগ পেলেই তুলে ধরুন সকলের সামনে। এতে তাঁরা আপনাকে ভালো করে বুঝতে পারবেন।

✅ ৪. সকলের জন্য উপহার: অনুষ্ঠান কিংবা কোনো উৎসবে যার যার রুচি বোধের প্রতি লক্ষ্য রেখে উপহার দিতে একেবারেই ভুল করবেন না। উপহার এমন একটি জিনিস যা যে কোনো বয়সের মানুষের মন জয় করার জন্য যথেষ্ট।

✅ ৫. সাহায্য করুন: মানুষ তাকেই মনে রাখে এবং পছন্দ করেন যিনি বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। মানুষ হিসেবে এমনিতেই বিপদে পড়লে আমরা একে অপরকে সাহায্য করে থাকি। কিন্তু এখানে কথা হচ্ছে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে। এই ক্ষেত্রে একটু বেশিই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিপদে-আপদে অবশ্যই যতো দ্রুত সম্ভব সাহায্যের জন্য এগিয়ে যান।

✅৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: যার কাছ থেকেই আপনি একটু হলেও সাহায্য পেয়েছেন বা কেও আপনাকে খুশী করার চেষ্টা করেছে সুযোগ পেলেই অবশ্যই তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।এতে করে তাঁর মনে আপনি জায়গা করে নিতে পারবেন খুব সহজে।

✅৭. অহংকার ত্যাগ করুন: কোন কিছু নিয়ে অহংকার করবেন না। হতে পারে আপনি অনেক শিক্ষিত, সুন্দরী বা ধনী পরিবারের মেয়ে কিন্তু আপনার শ্বশুর বাড়িতে আপনি তাদের অন্য সব ছেলের বউ- এর মতই আরেকজন বউ। তাই সবার মনটি জয় করুন বিনয়ী হয়ে। বিনয় এমন একটা গুণ যাকে কেও হিংসা করতে পারে না। একজন মানুষের অন্য কোন মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে বিনয়ী হওয়া।

✅৮. সৎ থাকুন: পরিবারের সব সম্পর্কের মাঝেই সৎ থাকুন। কোন কারণেই মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। মিথ্যা কখনো ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনা।

সুখী থাকুন এবং সাথে সাথে সবাইকে সুখী করুন। সুখ কখনো একা একা উপভোগ করা যায় না। সবার সাথে মিলে মিশে সুখে থাকাই আসল সুখ। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুন। আমিন।
[সংগৃহীত-sylhetbarta24]
সংগ্রহে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।