সিজদা হলো দোয়া কবুলের সবচেয়ে উত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বান্দা যখন সিজদা করে সে তখন তার রবের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশি বেশি দোয়া করো” অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা সিজদাতে দোয়া করতে চেষ্টা করো, আশা করা যায় তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে।” মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪। “বান্দা সিজদার অবস্থায় স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা অধিক মাত্রায় (ঐ অবস্থায়) দোয়া কর।” [মুসলিম: ৪৮২; নাসায়ী: ১১৩৭; আবূ দাউদ: ৮৭৫; আহমাদ: ৯১৬৫]
🛑 ১: দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য দোয়া:
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
উচ্চারণ: ইয়া-মুক্বাল্লিবাল কুলুব ছাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিক।
অর্থ: ‘হে অন্তর আবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ়
রাখ’। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত: ১০২]
*******************************************
🛑 ২: গ্রহণযোগ্য ইবাদত করার তাওফীক্ব চেয়ে দোয়া:
اللَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ’ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবা-দাতিকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য কর আমি যেন তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং ভালভাবে তোমার ইবাদত করতে পারি’। [আহমাদ, আবুদাউদ, নাসাঈ, মিশকাত: ৮৮৮]
*******************************************
🛑 ৩: অন্তরের পরিশুদ্ধির জন্য দোয়া:
اَللّٰهُمَّ اٰتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا، أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا
*******************************************
🛑 ৪: তাওবার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। [মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত]
*******************************************
🛑 ৫: সমস্ত গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়ার দোয়া:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَّتَهُ وَسِرَّهُ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লী যাম্বী কুল্লাহ দিক্কাহ ওয়া জিল্লাহ, ওয়া আউয়ালাহু ওয়া ‘আখিরাহ, ওয়া ‘আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু)।
অর্থ: “হে আল্লাহ। আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন- ভার ক্ষুদ্র অংশ, তার বড় অংশ, আগের গুনাহ্, পরের গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ।” [মুসলিম ১/২৩০, নং ৪৮৩; আবু দাউদ: ৮৭৮]
*******************************************
🛑 ৬: হেদায়াতের পর অন্তরের বক্রতা হতে মুক্তি চাওয়ার দোয়া:
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ القُلُوبِ صَرِّفْ قُلُوبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
*******************************************
🛑 ৭: হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থভা ও সম্পদ প্রার্থনার দোয়া:
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থভা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি। [তিরমিযী: ৩৪৮৯]
*******************************************
🛑 ৮: সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া:
اَلـلّـهُـمَّ اِنِّـىْ اَعُـوْذُبِـكَ مِـنَ الْـبَـرَصِ وَالْجُـنُـوْنِ, وَالْـجَـذَامِ, وَسَـيِّـئِ الاَسْـقَـامِ
উচ্চারণঃ আল্লহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন ছাইয়্যি ইল আস্ক্বাম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেতকুষ্ঠ, উন্মাদনা, কুষ্ঠরোগ এবং সমস্ত খারাপ রোগ হতে। [আবু দাউদ: ১৫৫৪; নাসায়ি: ৫৪৯৩]
*******************************************
🛑 ৯: ঋণমুক্তির দোয়া:
اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বি’হালা-লিকা ‘আন ‘হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-কা।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হালালের সাহায্যে হারাম হ’তে বাঁচাও এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষিতা হ’তে বাঁচাও।
ফযীলত: পাহাড় পরিমাণ দেনার চাপ থাকলেও উক্ত দো’আর বদৌলতে আল্লাহ তা পরিশোধ করার সামর্থ্য দিবেন বলে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। [তিরমিযী: ৩৫৬৩]
*******************************************
🛑 ১০: ঋণমুক্তির দোয়া:
اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল ‘হাঝানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা’ইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: হে আল্লাহ্ আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি দুশ্চিন্তা, দুঃখ-বেদনা, মনোকষ্ট, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের প্রাধান্য বা প্রভাবের অধীনতা থেকে। [বুখারী: ২৮৯৩]
*******************************************
🛑 ১১: দুশ্চিন্তা ও পেরেশানিতে পতিত ব্যক্তির দোয়া:
اَللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو، فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রহ্মাতাকা আরজু ফালা তাকিলনী ইলা- নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন, ওয়া আসলিহ্ লী শা’নি কুল্লাহু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা।
*******************************************
🛑 ১২: বালা-মুসিবত থেকে মুক্ত থাকতে দোয়া:
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ وَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ
উচ্চারণ: ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছু, আসলিহ লি শানি কুল্লুহু, ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন।
অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে সৃষ্টিকুলের নিয়ন্ত্রক, আপনার রহমতের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনি আমার সকল বিষয় শুদ্ধ করে দিন, এক মুহূর্তের জন্যও আপনি আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিয়েন না। [নাসাঈ, বাযযার, সহীহ তারগীব: ৬৫৪]
*******************************************
🛑 ১৩: উপকারী জ্ঞান ও উত্তম রিজিকের দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআন ওয়া রিযকান তায়্যিবান ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালান।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি। [ইবন মাজাহ: ৯২৫]
*******************************************
🛑 ১৪: মন্দভাগ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَ شَمَائَةِ الْأَعْدَاءِ :
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন জাহদিল বালা-য়ি ওয়া দারকিশ শাকা-য়ি ওয়া সূইল কাদায়ি ওয়া শামাতাতিল আ’দাহ।
অর্থঃ হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি।
[বুখারি: ৬৩৪৭; মুসলিম: ২৭০৭]
*******************************************
🛑 ১৫: চোখ, কান, জিহ্বা, মন ও বীর্যের অপকারিতা হতে পরিত্রাণের দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَشَرِّ بَصَرِى وَشَرِّ لِسَانِي وَشَرِّ قَلْبِي وَشَرِّ منیی
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন শাররি সাম’ঈ ওয়া শাররি বাছারী ওয়া শাররি লিসা-নী ওয়া শাররি ক্বালবী ওয়া শাররি মানিইয়্যি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার কানের অপকারিতা, আমার চোখের অপকারিতা, আমার জিহ্বার অপকারিতা, আমার মনের অপকারিতা ও বীর্যের অপকারিতা হ’তে আশ্রয় চাই’। [আবু দাউদ: ১৫৫১]
*******************************************
🛑 ১৬: শিরক থেকে বাঁচার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আলাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! জেনেশুনে তোমার সাথে শিরক করা থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং অজ্ঞতাবশে শিরক করা থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। [আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬; ছহীহুল জামে হা/৩৭৩১]
*******************************************
🛑 ১৭: কৃতকর্মের ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা আমিলতু ওয়া মিন শাররি মা লাম আমাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে এবং তার অনিষ্ট হতে যে কাজ আমি করিনি। [মুসলিম: ২৭১৬]
*******************************************
🛑 ১৮: অসৎ চরিত্র ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ وَالْأَعْمَالِ وَالْأَهْوَاءِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ী।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অসৎ চরিত্র, খারাপ আমল এবং অসৎ কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। [তিরমিযী: ৩৫৯১]
*******************************************
🛑 ১৯: আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার দোয়া:
للَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِي وَأَهْلِي وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা হুব্বাক। ওয়া হুব্বা মান ইয়ুহিব্বুক। ওয়াল আমালাল্লাযী ইয়ুবাল্লিগুনী হুব্বাক। আল্লাহুম্মাজআল হুব্বাকা আহাব্বা ইলাইয়া মিন নাফসী ওয়া আহলী ওয়া মিনাল মা-ইল বারিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনার ভালোবাসা এবং যে আপনাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা প্রার্থনা করি এবং এমন আমল করার সামর্থ্য চাই যা আপনার ভালোবাসা লাভ করা পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। হে আল্লাহ! আপনার ভালোবাসাকে আমার নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ও ঠান্ডা পানির চেয়েও বেশি প্রিয় করে দিন। [তিরমিযী: ৩৪৯০]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: আসাদ রনি