দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের ওপর আমল করলেই খুব সহজেই অলসতা দূর করা সম্ভব

প্রথম হাদীসটি ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের ‘রাহে বেলায়েত’ বইয়ে পেয়েছিলাম। সেখানেই রেফারেন্স দেয়া আছে।
.
হাদীসটি হলোঃ
সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
“কে আছে, যে দায়িত্ব গ্রহণ করবে যে, সে কারও কাছে কিছু চাইবেনা, তাহলে আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করব।” সাওবান রা. বলেন: “আমি বললাম, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ, আমি।” এরপর সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু কারও কাছেই কিছু চাইতেন না। অনেকসময় উঠের পিঠে থাকা অবস্থায় তাঁর লাঠি পড়ে যেত। তিনি কাউকে বলতেন না যে, আমার লাঠিটি উঠিয়ে দিন। বরং তিনি নিজে উটের পিঠ থেকে নেমে নিজের হাতেই লাঠি উঠাতেন। হাদীসটি সহীহ।
.
দ্বিতীয় হাদীসটি হলোঃ
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, কিছু সংখ্যক আনসারী সাহাবী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ “আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেয়া হয়নি।” (৬৪৭০, মুসলিম ১২/৪২, হাঃ ১০৫৩, আহমাদ ১১৮৯০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৭৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩৮১)
.
.
অলসতার প্রথম ধাপটাই হলো অন্যের কাছ থেকে চাওয়া। সেটা যা-ই হোক। অনেক অলস ছাত্র পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করেনা; পাশের ছেলেটি প্রশ্নের উত্তরগুলো দেখাবে বলে, এটাও একধরণের ‘চাওয়া’। সে চায়, তাকে যেন পাশের সেই ছেলেটি দেখায়.. কিংবা এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্য নিজে উঠে না গিয়ে অন্যকে বলা, এটাও আমরা অনেকেই করে থাকি। কিংবা আরও অনেক কিছু.. হেঁটে যাওয়া যাবে এমন অল্প সময়ের পথ দিয়েও আমরা রিকশা দিয়ে যাই, আমরা ‘চাই’ যাতে রিকশাচালক ভাইটি আমাদের নিয়ে যায়। এটাও একধরণের মুখাপেক্ষিতা। আমরা যদি উপরের দুই হাদীসের ওপর যতটুকু সম্ভব আমল করার চেষ্টা করি তাহলে আমরা অলসতার প্রথম স্টেপটাকেই ধ্বংস করে দিতে পারবো। ইনশা’আল্লাহ! আমাদের কারও কাছে চাইতে হবেনা.. কারও কাছে মাথানত করতে হবেনা.. কাকুতিমিনতি করতে হবেনা.. এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারও কাছে চাইতে হবেনা.. আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা আমাদের স্বাবলম্বী বানিয়ে দিবেন। ইনশা’আল্লাহ!
,
আরেকটি বিষয় আছে, সেটা হলো ধৈর্য। আমরা অলসতার কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ একটানা করতে পারিনা। যেমন বই পড়া। একটা গুরুত্বপূর্ণ বই হাতে নিলাম পড়ার জন্য। এক পৃষ্ঠা পড়েই আমাদের ‘বোরিং’ লাগতেছে.. ‘ভাল্লাগেনা’। ‘বোরিং’ লাগা, ‘ভাল্লাগেনা’ রোগের ঔষধ হলো ‘ধৈর্য’। এই ‘ধৈর্য’কে নিজেদের গুণাবলীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে পারলে আমাদের জন্য দুনিয়াটাও সহজ হয়ে যাবে, আখিরাতেও এর উত্তম বিনিময় পাবো। ইনশা’আল্লাহ!
আল্লাহ যাতে আমাদের এই দুই হাদীসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করেন।
______________
.
বিঃদ্রঃ কারও কাছে লৌকিক বিষয়ে সাহায্য চাওয়া দোষের কিছুনা। যেমন ধরুন, আপনি ড্রেনে পড়ে গেলেন। এখন একজন মানুষকে আপনি বলতে পারেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য। তবে এখানেও যদি আপনার সুযোগ থাকে উঠে যাওয়ার তাহলে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবেন নিজে উঠে যাওয়ার। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলব না। ‘রাহে বেলায়েত’ বইয়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে।

*****{কৃতজ্ঞতাঃ মিশারি রফিক রাহাত}*****