হায়েজ-নিফাস শেষ হওয়ার পর ফরজ গোসল করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করার বিধান

প্রশ্ন: হায়েজ-নিফাস শেষ হওয়ার পর ফরজ গোসল করার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করার বিধান কি? কেউ এমন অবস্থায় সহবাস করলে তার করনীয় কী?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং সালাফদের অধিক বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী একজন ঈমানদার ব্যক্তির জন্য হায়েয বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর গোসলের মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্র হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া জায়েজ নয়। কারন আল্লাহ তাআলা বলেন: وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّـهُ আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। সুতরাং তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না (স্ত্রী সহবাস করবে না) যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। অত:পর যখন উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন তাদের কাছে গমন কর-যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। (সূরা বাকারা: ২২২)
.
উল্লেখিত আয়াতে “যখন তারা পবিত্র হয়’’ এর দু’টি অর্থ রয়েছে বলে অভিমত রয়েছে।

(ক). যখন রক্ত আসা বন্ধ হয়। অর্থাৎ, গোসল ছাড়াই সে পবিত্র হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় পুরুষের জন্য তার সাথে (গোসলের পূর্বে) সহবাস করা জায়েয। ইমাম আবু হানিফা, ইবনে হাযম এবং অন্য কিছু ইমামগণ এরই সমর্থক। আল্লামা আলবানীও এই মতের সমর্থন করেছেন। (আদাবুয যিফাফ পৃষ্ঠা: ৪৭)

(খ). রক্ত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করে পবিত্র হওয়া ছাড়া সহবাস জায়েজ নয়। দ্বিতীয় অর্থানুযায়ী স্ত্রী যতক্ষণ না গোসল করেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে সহবাস করা হারাম থাকবে। ইমাম শাওকানীসহ জমহুর আলেমগন এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর দুটি মতের মধ্যে এটাই বিশুদ্ধ মত। সুতরাং উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঋতুবতী স্ত্রী গোসলের মাধ্যমে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। আর এই আয়াতে পবিত্রতার অর্থ গোসল করা,এবং হায়েজের রক্ত বন্ধ হলেও গোসলের পূর্বে সে পবিত্র নয়। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেন,فإن انقطع دمها فلا توطأ حتى تغتسل، وجملته أن وطء الحائض قبل الغسل حرام وإن انقطع دمها في قول أهل العلم. قال ابن المنذر وهذا كالإجماع منهم “রক্ত বন্ধ হলে গোসল করা পর্যন্ত সহবাস করো না। মোটকথা,‌ আলেমদের মতে গোসলের আগে ঋতুমতী নারীর সাথে সহবাস করা হারাম যদিও তার রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। ইবনুল মুনজের বলেন, এটি যেন ইজমা বা সর্বসম্মত মত”। (ইবনু কুদামাহ,আল-মুগনী, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ২৪৫)। ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ আল মারওয়াযি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لا أعلم في هذا خلافا “এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত আছে বলে জানি না।” (ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৬৬০১২)
.
অতএব এর থেকে প্রমাণ হয় যে, গোসল করা ওয়াজিব। কারণের সাথে বিধানকে সম্পৃক্ত করার হেতুবশত, রক্তপাত শুরু হওয়ার মাধ্যমেই গোসল ফরয হয়েছে। আর রক্তপাত বন্ধ হওয়া গোসল শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। যদি জিজ্ঞেস করা হয় ফরয গোসল করার নিয়ম কী?-জবাবে বলবো, নাপাক দূর করা অথবা সালাত বা এ জাতীয় ইবাদতের নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো। বিশেষভাবে মাথার চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছানো, চুলে খোঁপা বাঁধা থাকলে খোলা জরুরি নয়, তবে চুলের গোঁড়ায় অবশ্যই পানি পৌঁছানো জরুরি, যদি বড়ই অথবা পরিচ্ছন্নকারী কোনো বস্তু যেমন; সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় খুব ভালো। গোসলের পর সুগন্ধি জাতীয় তুলা অথবা কোনো সুগন্ধি বস্তু যোনীতে ব্যবহার করা মুস্তাহাব। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করেছেন। এখানে একটি মাসয়ালা জেনে রাখা ভালো আর তা হবে ঋতুবতী নারীর গোসলের পূর্বে সহবাস করা নিষিদ্ধ হলেও সিয়াম পালন করা বৈধ। কেননা ঋতুবতী নারীর রক্ত বন্ধ হলে সে জুনুবী অবস্থায় ফিরে আসে। আর জুনুবী অবস্থায় সিয়াম পালন করা জায়েয।
.
▪️এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, গোসলের পূর্বে জুনুবী অবস্থায় সিয়াম পালন করা বৈধ হলে স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে না কেন?
.
এই প্রশ্নের জবাবে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ “আর তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না‌।” আর গোসলের পূর্বে সে পবিত্র হয় না। বরং জুনুবী অবস্থায় থাকে। অতএব যেখানে দলীল স্পষ্ট সেখানে ক্বিয়াসের কোন স্থান নেই। সুতরাং গোসলের দ্বারা পবিত্র হলেই কেবল তার সাথে সহবাস করা জায়েয হবে; অন্যথা নয়। (উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৮৩ থেকে সংক্ষেপিত)
.
গোসলের পূর্বে সিয়াম পালন করা জায়েজ এই মর্মে দলিল হচ্ছে, আবু বকর ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, كُنْتُ أَنَا وَأَبِيْ فَذَهَبْتُ مَعَهُ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ أَشْهَدُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنْ كَانَ لَيُصْبِحُ جُنُبًا مِنْ جِمَاعٍ غَيْرِ احْتِلاَمٍ ثُمَّ يَصُوْمُهُ، ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، فَقَالَتْ مِثْلَ ذَلِكَ. অর্থাৎ আমি আমার পিতার সঙ্গে রওনা হয়ে আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলাম। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি স্বপ্নদোষ ব্যতীত স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সিয়াম পালন করেছেন। অতঃপর আমরা উম্মু সালামার নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৩১-১৯৩২)
.
▪️কেউ এমন অবস্থায় অর্থাৎ স্ত্রী হায়েজ থেকে পবিত্র হয়েছে কিন্তু এখনো গোসল করেনি এই সময়ে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে তার করনীয় কী?
.
স্ত্রী হায়েজ-নিফাস থেকে সুস্থ হওয়ার পর কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রী সহবাস করে তাহলে করনীয় কি? কাফফারা আদায় করতে হবে কিনা! এই মাসালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন:
প্রথমত; এমন অবস্থায় কেউ যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে অধিক সঠিক কথা হচ্ছে, তাকে এই ভুলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। ফলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের ভুলবশতঃ ও বাধ্যগত অবস্থায় কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।(ইবনু মাজাহ হা/২০৪৫, মিশকাত হা/৬২৮৪)।
.
কিন্ত কেউ যদি জেনে বুঝে অর্থাৎ স্ত্রী হায়েজ থেকে পবিত্র হয়েছে কিন্তু এখনো গোসল করেনি এমনটা জেনেও স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তাহলে করনীয় কি? এক্ষেত্রে আমরা বলবো নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী কাজ করেছে। কিন্তু এর জন্য তার করনীয় কি? তাকে কি কাফফারা আদায় করতে হবে নাকি শুধুমাত্র একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করলেই যথেষ্ট হবে? এই মাসালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি মত রয়েছে। যেমন:
.
(১). সালাফদের মধ্য থেকে প্রখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) প্রখ্যাত তাবেঈ কাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.]-এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, এক্ষেত্রে কাফফারা দেওয়া আবশ্যক। আর তা হচ্ছে, এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার সাদাকাহ করতে হবে। তারা মূলত প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ৬৮ হি.] থেকে বর্নিত একটি হাদীসের আলোকে হায়েয অবস্থায় সহবাস করার বিধানের উপর কিয়াস করে কাফফারা ওয়াজিব বলেছেন। হাদিসটি হচ্ছে, ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, الَّذِيْ يَأْتِيْ امْرَأَتَهُ وَهِىَ حَائِضٌ قَالَ يَتَصَدَّقُ بِدِيْنَارٍ أَوْ نِصْفِ دِيْنَارٍ. অর্থাৎ নবী করীম (ﷺ)-এমন ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, যে নিজের ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, সে যেন এক অথবা অর্ধ দীনার সাদাকাহ করে। (মুসনাদে আহমাদ হা/২০৩২, আবু দাউদ হা/২৬৪, তিরমিযী হা/১৩৫, ইবনু মাজাহ হা/৬৪০)। এই হাদীসটির সনদ সহীহ-জয়ীফ নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। যদিও সঠিক কথা হচ্ছে হাদীসটি বিশুদ্ধ। হাদীসটির ব্যাখ্যা করে অপর বর্ননায় মওকুফ সূত্রে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যদি কেউ হায়িয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে তবে তাকে এক দীনার এবং যদি রক্তস্রাব না থাকাকালীন সময়ে সহবাস করে তবে অর্ধ দীনার সাদাকাহ করবে। (ইমাম আবু দাউদ হা/২১৬৯; ইমাম হাকেম হা/৬১৩; ইমাম বায়হাকী হা/১৫৭৯; হাদীসটি মাওকূফ সূত্রে বিশুদ্ধ)। উক্ত হাদীসে (রক্ত শেষের সময়) এই কথাটিতে অনেকগুলো বিষয় শামিল রয়েছে। তন্মধ্যে শাইখ হামদ (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি তার ব্যাখ্যা করেছেন যে রক্ত শেষের সময়। শায়েখ হামদ শারহু যা’দ গ্রন্থে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেন; বলা হয়ে থাকে এইটা ইবনে আব্বাস এবং কাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অভিমত যে, যখন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে হায়েজের প্রথম সময়ের দিকে মেলামেশা করবে এবং উত্তেজনার সময় তখন তার কাফফারা লাগবে এক দিনার। আর যদি শেষ সময়ে মেলামেশা করে তাহলে অর্ধেক দিনার কাফফারা দিতে হবে। এটা আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) এই মতটি সমর্থন করেছেন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল; ঋতুমতি নারী পবিত্র হলে গোসলের পূর্বে কি তার সাথে সহবাস করা জায়েজ?
.
উত্তরে শাইখ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لا ما يجوز فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ [البقرة: 222] حتى تطهر فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ [البقرة: 222].س: والحالة هذه يلزمها الكفارة؟الشيخ: إذا وطأها قبل الغسل نعم “না”, পবিত্রতা অর্জন করা পর্যন্ত তা জায়েজ নয়। فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ “পবিত্রতা অর্জন করলে স্ত্রী গমন কর।” [সূরা বাকারা: ২২২]। فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّـهُ
“অত:পর যখন উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন তাদের কাছে গমন কর-যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন।” [সূরা বাকারা: ২২২]। পুনরায় – প্রশ্ন: এ অবস্থায় যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে তাহলে কি কাফফারা দেওয়া আবশ্যক? উত্তরে বলেন: হ্যাঁ, গোসলের পূর্বে যদি স্ত্রী সহবাস করে তাহলে (কাফফারা দেওয়া আবশ্যক)। (বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-২৩৫৬২) অনুরূপ ফাতওয়া বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) দিয়েছেন (দেখুন,উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-৭৮)
.
(২). চার মাজহাবসহ জমহুর আলেমগনের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী হায়েজ শেষ হওয়ার পর স্ত্রী এখনো গোসল করেনি, কেউ যদি এটা জেনেও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তাহলে সে শরীয়তের বিধান লংঘনের জন্য গুনাহের কাজ করেছে। এক্ষেত্রে তার জন্য অবশ্যক হচ্ছে এই ভুলের জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করবে এবং ভবিষ্যতে এই ভুল না করার অঙ্গীকার করবে। কিন্তু তার জন্য কাফফারা আদায় করা আবশ্যক নয়। কারণ, প্রথমত এই মর্মে রাসূল (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ কোন দলিল নেই, দ্বিতীয়ত যে হাদীসটির আলোকে কাফফারা আদায় করার কথা বলা হয়েছে সেটি মূলত স্ত্রীর হায়েজ-নিফাস চলা অবস্থায় কেউ সহবাস করলে তওবা ও ইস্তেগফারের পাশাপাশি এক দীনার কিংবা অর্ধ দিনার স্বর্ণ মুদ্রার পরিমাণ সাদকাহ করতে হবে। কিন্তু এই ব্যক্তি তো স্ত্রীর মাসিক চলা অবস্থায় সহবাস করেননি বরং মাসিক শেষ হওয়ার পর গোসল করার পূর্বে সহবাস করেছেন। ফলে তিনি কবিরা গুনাহের কাজ করেছেন, তাই এর থেকে তওবা করা আবশ্যক। কাফফারা ওয়াজিব নয়।(বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং-৬৬০১২ এবং ফাতওয়া নং-১৩২৩০৫)
.
ইমাম মারদুুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: (لو وطئها بعد انقطاع الدم وقبل غسلها: فلا كفارة عليه على الصحيح من المذهب. وعليه الجمهور). যদি কেউ হায়জের রক্ত বিচ্ছিন্ন (পবিত্র) হওয়ার পরে এবং (গোসলের মাধ্যমে) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার পূর্বে স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে, তাহলে চার মাযহাবের মত অনুসারে এবং জমহুর আলেমদের নিকটে তার কোন কাফফারা লাগবে না। (মারদুবী আল ইনসাফ, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৩৫২)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, স্ত্রী হায়েজ-নিফাস থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র অর্জন করা ব্যতিত স্ত্রীর সাথে সহবাস করা জায়েজ নয়। এখন কেউ যদি ভুলবশত, সহবাস করে তাহলে তওবা ও ইস্তেগফার করলেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছেকৃতভাবে সহবাস করে তাহলে তওবা ইস্তেগফারের পাশাপাশি কাফফারা আদায় করতে হবে কিনা যদিও জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মতে কাফফারা আদায় করতে হবেনা। তবে আমরা বলবো, যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা সংশয় থেকে নিরাপদ থাকার জন্য অর্ধ দিনার পরিমাণ যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৪০০০ হাজার টাকা কাফফারাস্বরূপ গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে পারেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।