খ্রিস্টানদের প্রচলিত খ্রিস্টমাস তথা বড়দিনের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান

ভূমিকা: নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে মহান আল্লাহ তাআলা বনি ঈসরাইলের কাছে সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তিনি আসমানী কিতাব ‘ইনজীল’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর আগমনের পর থেকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর আবির্ভাব পর্যন্ত আর কোন নবী আগমন করেননি।তিনি এখনো জীবিত রয়েছেন। ইয়া-হুদী খৃ-ষ্টান উভয় মিলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে মহান আল্লাহ তাকে দ্বিতীয় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত কাল পূর্বে ঈসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং মুহাম্মাদী শরী‘আত অনুসরণে ইমাম মাহদীর নেতৃত্বে সারা পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য কায়েম করবেন।তিনি উম্মতে মুহাম্মাদীর সাথে বিশ্ব সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।এই মর্মে সকল মুসলিমদের জন্য তার উপর ঈমান আনা- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অংশ। সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আনা ব্যতিরেকে কারো ঈমানই শুদ্ধ হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,“রাসূল তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। তারা সবাই আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছে। (তারা বলে): আমরা রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য করি না।”(সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫)

ইমাম ইবনে কাছির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

فالمؤمنون يؤمنون بأن الله واحد أحد ، فرد صمد ، لا إله غيره ، ولا رب سواه . ويصدقون بجميع الأنبياء والرسل والكتب المنزلة من السماء على عباد الله المرسلين والأنبياء ، لا يفرقون بين أحد منهم ، فيؤمنون ببعض ويكفرون ببعض ، بل الجميع عندهم صادقون بارون راشدون مهديون هادون إلى سبل الخير

“মুমিনগণ বিশ্বাস করে আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, তিনি সবার আশ্রয়স্থল, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই; আর কোন রব্ব নেই। মুমিনগণ সকল নবী-রাসূল ও নবী-রাসূলের উপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। মুমিনগণ ঈমান আনার ক্ষেত্রে নবী-রাসূলদের কারো মাঝে পার্থক্য করে না। অর্থাৎ কারো প্রতি ঈমান আনে; কারো প্রতি ঈমান আনে না- এমনটি করে না। বরং তাঁরা সকলে তাদের নিকট সত্যবাদী, নেককার, সুপথপ্রদর্শক, হেদায়েতের উপর অটল, কল্যাণের দিশারী।”(তাফসির ইবনে কাছির,খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৭৩৬)
.
▪️খ্রি-স্টানদের প্রচলিত ‘খ্রিস্টমাস’ তথা বড়দিনের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি?
.
খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম। আর এটি হারাম হওয়ার কারণ হলো এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”[সূরা যুমার, আয়াত: ৭] আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩]
.
তাছাড়া খ্রিস্টানদের খ্রিস্টমাস (বড়দিন) উৎসব উদযাপন মূলতঃ মানব নবী ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মবার্ষিকী পালন নয়, বরং এটি তাদের প্রভূ কিংবা প্রভূ-পুত্র ঈসা এর জন্য উদযাপন! (নাউজুবিল্লাহ) অথচ তারা যা বলে তা থেকে মহান আল্লাহ্‌ তাআলা বহু ঊর্ধ্বে। সুতরাং একজন মুসলিম কিভাবে বিশ্বাস করতে পারে যে, এটি একজন নবীর জন্মবার্ষিকী পালনে যোগদান; অথচ তিনি তাদের নিকট উপাস্য কিংবা উপাস্যের পুত্র! সুতরাং খ্রিস্টানেরা ‘খ্রিস্টমাস’ নামে যা পালন করে থাকে সেটি একটি শিরকি বিদআত। মুসলমানদের এমন কোন অনুষ্ঠানের সদৃশ কিছু করা নাজায়েয। ঈসা (আঃ) এ ধরণের কর্ম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মুসলমানদের জন্য –এটি বিদআত হওয়ার চেয়ে মারাত্মক হল- এটি কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করার নামান্তর; যেহেতু এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের দলভুক্ত।” [সুনানে আবু দাউদ হা/ ৩৫১২), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] হাদিসটির সনদকে “জায়্যিদ’ হুকুম দিয়ে বলেন:

” وهذا الحديث أقل أحواله أنه يقتضي تحريم التشبه بهم وإن كان ظاهره يقتضي كفر المتشبه بهم كما في قوله ( ومن يتولهم منكم فإنه منهم )

“এই হাদিসটির ন্যুনতম দাবী হচ্ছে তাদের সাথে (বিধর্মীদের সাথে) সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম। যদিও হাদিসের বাহ্যিক ভাষা সাদৃশ্যগ্রহণকারীর কাফের হয়ে যাওয়ার দাবী রাখে। যেমনটি আল্লাহর বাণীর মধ্যে এসেছে “তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”[ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, পৃষ্ঠা ৮২-৮৩ সমাপ্ত]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন:

” فقد تبين لك أن من أصل دروس – ذهاب – دين الله وشرائعه وظهور الكفر والمعاصي التشبه بالكافرين ، كما أن من أصل كل خير المحافظة على سنن الأنبياء وشرائعهم ، ولهذا عظم وقع البدع في الدين وإن لم يكن فيها تشبه بالكفار ، فكيف إذا جمعت الوصفين ؟!
“আপনার কাছে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, আল্লাহর দ্বীন ও তাঁর শরিয়ত বিলীন হয়ে যাওয়া এবং কুফর ও পাপাচার বিস্তার লাভ করার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে- কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ। অপরদিকে সকল কল্যাণের মূল হচ্ছে- নবীদের সুন্নত (আদর্শ) ও তাঁদের দেয়া অনুশাসনগুলো মেনে চলা। তাই ইসলামে বিদআতের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর; যদি এর মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য না থাকে তবুও। আর যদি এ দুটি বিষয় একত্রিত হয় তাহলে সেটা কত বেশি ভয়াবহ!(ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, পৃষ্ঠা: ১১৬)
.
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন আবু বকর ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

وأما التهنئة بشعائر الكفر المختصة به فحرام بالاتفاق ، مثل أن يهنئهم بأعيادهم وصومهم ، فيقول: عيد مبارك عليك ، أو تهْنأ بهذا العيد ونحوه ، فهذا إن سلم قائله من الكفر فهو من المحرمات وهو بمنزلة أن يهنئه بسجوده للصليب بل ذلك أعظم إثماً عند الله ، وأشد مقتاً من التهنئة بشرب الخمر وقتل النفس ، وارتكاب الفرج الحرام ونحوه ، وكثير ممن لا قدر للدين عنده يقع في ذلك ، ولا يدري قبح ما فعل ، فمن هنّأ عبداً بمعصية أو بدعة ، أو كفر فقد تعرض لمقت الله وسخطه

“কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”। (ইবনুল কাইয়্যেম, আহকামু আহলিয যিম্মাহ খন্ড: ১ পৃষ্ঠা ১৪৪-২৪৪)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেন,

” لا يجوز لمسلم التعاون مع الكفار بأي وجه من وجوه التعاون في أعيادهم ، ومن ذلك إشهار أعيادهم وإعلانها ، ولا الدعوة إليها بأية وسيلة ، سواء كانت الدعوة عن طريق وسائل الإعلام

“কোন মুসলিমের জন্য কাফেরকে তাদের উৎসব পালনে কোন ধরণের সহযোগিতা করা জায়েয নেই। এ ধরণের সহযোগিতার মধ্যে পড়বে তাদের উৎসবের প্রচার করা, বিজ্ঞাপন দেওয়া। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের দাওয়াত দেয়াও জায়েয নেই; সেটা যে মাধ্যমেই হোক না কেন, মিডিয়ার মাধ্যমে হোক কিংবা…।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ;খণ্ড:২৬; পৃষ্ঠা: ৪০৯)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

تهنئة الكفار بعيد الكريسماس أو غيره من أعيادهم الدينية حرام بالاتفاق ؛ لأن فيها إقرارا لما هم عليه من شعائر الكفر ، ورضا به لهم ، وإن كان هو لا يرضى بهذا الكفر لنفسه ، لكن يحرم على المسلم أن يرضى بشعائر الكفر ، أو يهنئ بها غيره ؛ وكذلك يحرم على المسلمين التشبه بالكفار بإقامة الحفلات بهذه المناسبة ، أو تبادل الهدايا أو توزيع الحلوى ، أو أطباق الطعام ، أو تعطيل الأعمال ونحو ذلك ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( من تشبه بقوم فهو منهم ) رواه أبو داود

“ক্রিস্টমাস কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কারণ এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে তারা যে সব কুফরী নিদর্শনের উপরে রয়েছে সেগুলোর প্রতি মৌন স্বীকৃতি রয়েছে এবং ব্যক্তি নিজের জন্য এ কুফরের প্রতি সন্তুষ্ট না হলেও এ শুভেচ্ছা তাদের কুফরের প্রতি ব্যক্তির সন্তুষ্টির প্রকাশ। কেননা কোন মুসলমানের জন্য কুফরী নিদর্শনের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা কিংবা সেটাকে উপলক্ষ করে অন্যকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম। অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে মুসলমানেরা কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করাও হারাম; যেমন- এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবারের ডিস আদানপ্রদান করা, কর্ম বিরতি দেয়া ইত্যাদি। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি কোন কওমের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই দলভুক্ত”(সুনানে আবু দাউদ হা/৪০৩১), সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত উসাইমীন মাজমুউ ফাতাওয়া ও রাসায়েলে খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা:৪৫-৪৬)
.
অতএব কোন অবস্থাতেই তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো যা এবং তাদের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য তাছাড়া খ্রিস্টবছরের শুরুতে উৎসব পালনের মধ্যে মুসলমানদের জন্য একাধিক ক্ষতির দিক রয়েছে যেমন:
.
(১)- যেসব কাফের-মুশরিক শিরক ও কুফরের অনুপ্রেরণা নিয়ে এ উৎসবগুলো উদযাপন করে এতে তাদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) এর শরিয়ত হিসেবে এগুলো পালন করে না। কারণ আমাদের ও তাদের সর্বসম্মতিক্রমে ঈসা (আঃ) এসব পালনের বিধান জারী করেননি। বরং এগুলো শিরক ও বিদআত মিশ্রিত। এ অনুষ্ঠানগুলোতে নানা রকম পাপাচার তো থাকে-ই যেটা সবার জানা। সুতরাং আমরা কিভাবে এসব ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য নিতে পারি।
.
(২)- মিলাদুন্নবী উদযাপন-ই নাজায়েয। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এটি নবপ্রচলিত বিদআত। সুতরাং এর উপরে অন্য কিছুকে কিয়াস করা চলবে না। কারণ কিয়াসের মূল দলিল যদি ঠিক না হয়; কিয়াসও ঠিক হবে না।
.
(৩)- খ্রিস্টমাস পালন যে কোন অবস্থায় মুনকার, গর্হিত কাজ। এটিকে জায়েয বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ এটি মূলতঃ বাতিল। যেহেতু এতে রয়েছে- কুফর, ফিসক ও অবাধ্যতা। এ ধরণের কর্মকে অন্য কিছুর সাথে কিয়াস করার কোন সুযোগ নেই। কোন অবস্থাতে এটিকে জায়েয বলার কোনপ্রকার সুযোগ নেই।
.
(৪)- যদি আমরা এ বাতিল কিয়াসকে শুদ্ধ বলি তখন আমাদের উপর অনিবার্যতা আসবে: আমরা প্রত্যেক নবীর মিলাদ (জন্মদিবস) পালন করি না কেন? তাঁরা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নন?! অথচ এমন কথা কেউ বলবে না।

(৫)- কোন নবীর জন্মদিন সুনির্দিষ্টভাবে জানা অসম্ভব। এমনকি আমাদের নবীর ক্ষেত্রেও। কারণ তাঁর জন্মদিন অকাট্যভাবে জানা যায় না। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণের প্রায় ৯টি বা তারও বেশি অভিমত রয়েছে। তাই তাঁর জন্মদিন পালন ঐতিহাসিকভাবে ও শরয়িভাবে বাতিল। এবং মিলাদ পালনের বিষয়টি সেটি আমাদের নবীর জন্মদিন হোক অথবা ঈসা (আঃ) এর জন্মদিন হোক মূল থেকেই বাতিল।ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মরাত পালন ঐতিহাসিকভাবে অথবা শরয়িভাবে সঠিক নয়।(উসাইমীন ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব,১৯/৪৫)এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৪৭, ১৪৫৯৫০ এবং ১৭৬০১১)
.
পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাদেরকে বিজয়ী করেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।