হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে চতুর্থ দুআ

আজকের দু’আটি ফজিলতের দিক থেকে ভীষণ Powerful এই দুআ প্রতিদিন সকালে ৩ বার পাঠ করলে প্রায় সারাদিন যিকির করার সমপরিমাণ নেকী পাওয়া যাবে।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: দু’আটি পড়ার পূর্বে দু’আটির গুরুত্ব অনুধাবন করার চেষ্টা করব। উম্মুল মুমিনীন আম্মাজান জুওয়াইরিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদিন খুব সকালে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট হতে বের হলেন, যখন আমি ফজরের সালাত আদায় করে সালাতের স্বীয় স্থানে বসে ছিলেন। অতঃপর সূর্য খুব উপরে উঠার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যাবর্তন করেন, তখনো আমি সেখানেই বসেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমার থেকে পৃথক হওয়া পর্যন্ত কি তুমি এ অবস্থায় আছ? আমি বললেন, হ্যাঁ। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার পরে আমি মাত্র চারটি বাক্য তিনবার বলেছি, যদি এটাকে তুমি এ অবধি যা বলেছ তার সাথে ওযন দেয়া হয় তাহলে এ বাক্যগুলোর ওযনই বেশী হবে। হাদীসটির অন্যান্য বর্ণনার আলোকে মুহাদ্দিসগণ বলেন,যখন রাসূল (ﷺ) ভোরে আম্মাজান জুওয়াইরিয়্যাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন তখন জুওয়াইয়রিয়্যাহ বসে দু‘আ/যিকির করছিলেন, এরপর নবী ﷺ) দিনের অর্ধ দিবসের সময় ফিরে আসলেন তখনও জুওয়াইরিয়্যাহ ঐভাবেই বসে যিকির করতে ছিলেন। (সুবহানাল্লাহ) বাক্যগুলোর মূল আরবী হচ্ছে:
.
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَاءَ نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاته
.
মোটামুটি উচ্চারণ: সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী, ‘আদাদা খলকিহী, ওয়া রিযা- নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী’’(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)
.
অর্থ: ‘আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ,তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমতুল্য এবং তাঁর ‘আরশের ওযন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার সমপরিমাণ।”(সহীহ মুসলিম, হা/২৭২৬; সহীহ আল জামি‘ ৫১৩৯, ইবনু খুযায়মাহ ৭৫৩ মিশকাত হা/২৩০১)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন
.
سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ
(সুবহা-নাল্ল-হি ওয়া বিহামদিহী) অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
..
عَدَدَ خَلْقِهِ
(আদাদা খলকিহী) অর্থ: তাঁর সৃষ্টির/ মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ।
.
وَرِضَاءَ نَفْسِهِ
(ওয়া রিযা- নাফসিহী) অর্থ: তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির পরিমান। (নোট: এই বাক্যটি প্রমাণ করে আল্লাহর নফস রয়েছে, নফস আল্লাহর যাত সত্তা, এটি আলাদা কোন সিফাত নয়, এটাই আহলে সুন্নাহর আকিদা। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: ونفسه هي ذاته المقدَّسة তাঁর নাফস হচ্ছে তাঁর পবিত্র সত্ত্বা।(মাজমূ’উল ফাতাওয়া, খন্ড: ১৪ পৃষ্ঠা:১৯৬-১৯৭) ইনশাআল্লাহ সামনে আক্বীদা সিরিজে আল্লাহর নফস রয়েছে এই মর্মে একটি পর্ব আসবে)।
.
وَزِنَةَ عَرْشِهِ
ওয়াযিনাতা ‘আরশিহী) অর্থ: তাঁর ‘আরশের ওজন পরিমাণ।
.
وَمِدَادَ كَلِمَاته
(ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহী) অর্থ: তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।” (নোট: এই বাক্যটিতে আল্লাহর কথা বলার প্রমান রয়েছে,আল্লাহর কথায় হরফ (অক্ষর) ও সওত (আওয়াজ) আছে, কথা বলা আল্লাহর সত্তাগত ও কর্মগত গুণ। এটাই আহলুস সুন্নাহর আকিদা। কিন্তু আশ‘আরীরা মনে করে, আল্লাহর কথা দ্বারা ‘মনে মনে কথা বলা’ উদ্দেশ্য এবং তাঁর কথায় কোনো হরফ ও সওত নেই। সর্বপ্রথম ইবনু কুল্লাব (মৃত: ২৪১ হি.) এ বিদআতী আকিদা প্রচার করে। আর ইমাম আশ‘আরী, হারিস আল-মুহাসিবি-সহ আরও অনেকে তাঁর অনুগমন করেন। যদিও ইমাম আশ‘আরী ও হারিস আল-মুহাসিবি জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে এই বিদআতী আকিদা পরিত্যাগ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত দু’আয় ছোট্ট ছয়টি বাক্য রয়েছে কিন্তু তার ফজিলত বিশাল। এখানে একটি শিক্ষা রয়েছে, আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পারবেন কুরআন হাদীসে যেখানেই মহান রব আল্লাহ জাল্লা-শানুহুর একক অস্তিত্বের প্রমান, তাওহীদ ও তার গুণাবলীর বর্ণনা এসেছে সেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদা অন্য সব কিছুর চাইতে বেশি যেমন: সূরা ইখলাস, এই সূরাটি ছোট হলেও ফজিলত অনেক এমনকি কেউ সূরাটিকে অন্তর থেকে ভালবাসলেও জান্নাত লাভের কারণ হতে পারে মর্মে বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। আবার আয়াতুল কুরসি ৯-১০ বাক্য নিয়ে গঠিত হলেও এটি পবিত্র কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত,পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পরে একবার করে পড়লে মারলেই জান্নাত পাওয়া যায় মর্মে হাদীস এসেছে, আবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ছোট্ট একটি বাক্য অথচ এটি জান্নাতের চাবি। অনুরোধ উপরোক্ত দু’আ,কেন এগুলো এত ফজিলতপূর্ণ? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এগুলো মহান রবের পরিচয়,তার মর্যাদা ও গুনাবলি,তার তাওহীদ সংক্রান্ত বর্ননা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আজও আমরা তাওহীদ আসলে কী সেটাই বুঝতে পারিনি! আমরা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারিনি,পৃথিবীতে তার তাওহীদ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আজ যে সকল সালাফি আলেম তাওহীদের কথা বলে তারাই নাকি সমাজের ফেতনাবাজ এবং তারাই নাকি ঐক্য বিনষ্টকারী। কবর পূজারী, মাজার পূজারী, বিদআতি ডক্টর ডিগ্রিধারী পথভ্রষ্টরা আজ সমাজের বড় আলেম নামে পরিচিত। এই জাতি আর কবে বুঝবে কারা হক আর কারা বাতিল।
.
পরিশেষপ আমার পাঠকদের বলবো! আপনারা উপরোক্ত বাক্যগুলোর অর্থ খেয়াল করে, প্রতিদিন সকালে তিনবার করে পড়বেন। এছাড়াও চাইলে মাঝে মধ্যে অন্য সময় পড়তে পারেন, দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।