হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ৩০তম দুআ

ঋণ মুক্তি, হালাল উপার্জনে সাহায্য এবং হারাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনার সুন্দর একটি দু’আ।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা “হিকমত” বা প্রজ্ঞার গুণে গুণান্বিত। তাঁর মহান নামের মধ্যে রয়েছে- “আল-হাকিম” বা প্রজ্ঞাবান। আল্লাহ তাআলা হচ্ছেন- রাযযাক (জীবিকাদাতা) এবং তিনিই উত্তম জীবিকাদানকারী। পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রত্যেকটি জীবের জীবিকা আল্লাহরই দায়িত্বে। কোন লোভাতুরের লোভ অথবা হিংসুকের হিংসা কাউকে তার জীবিকা হতে বঞ্চিত করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রজ্ঞা অনুযায়ী মানুষের জীবিকার মধ্যে তারতম্য করেন। যেমনিভাবে মানুষের আকার-আকৃতি ও স্বভাব-চরিত্রের মধ্যেও তিনি ভিন্নতা দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবিকার মধ্যে বিস্তৃতি দেন। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবিকার সচ্ছলতা দেন, যাকে ইচ্ছা জীবিকা সংকুচিত করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্ববর্তী জ্ঞান ও লিপিকার ভিত্তিতে মানুষের জীবিকা বণ্টন করেন। তাঁর পূর্ব জ্ঞান ও লিপিকাতে রয়েছে বান্দাদের মধ্যে কে সচ্ছল জীবিকা পাবে, আর কে সংকুচিত জীবিকা পাবে। এর মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহর প্রভূত হেকমত (গূঢ় রহস্য)। তাঁর সকল হেকমত অনুধাবন করা বান্দার সাধ্যে নেই। জীবিকায় সচ্ছলতা দান ও সংকোচনের একটি হেকমত হচ্ছে- নেয়ামত দিয়ে অথবা বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করা। “আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”[সূরা আম্বিয়া, ৩৫]
.
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছুর প্রয়োজন তার মধ্যে,ধন-সম্পদ একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ।অর্থ-সম্পদ ছাড়া ছোট্ট একটি পরিবার পরিচালনাও দুঃসাধ্য। সেকারণ প্রত্যেক বনু আদমকেই প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য আয়-রোযগারের পথ অবলম্বন করতে হয়।অপরদিকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফিৎনার মধ্যে অন্যতম একটি ফিতনা হচ্ছে ধন-সম্পদের ফিতনা। কারন সম্পদের কারণেই মানুষ মানুষকে খুন করছে। স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া, ভাই-ভাইয়ে মারামারি, প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন ইত্যাদি নানাবিধ ঘটনার মূল কারণ হচ্ছে সম্পদ। সম্পদের যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ জান্নাত লাভ করতে পারে। আবার এই সম্পদের শরীয়ত বিরোধী পথে আয়-ব্যয়ের ফলে সে জাহান্নামের ইন্ধন হতে পারে। বর্তমানে বিশ্বে সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ আল্লাহর দেওয়া রিজিকের উপর সন্তুষ্ট থেকে হালাল উপার্জনের চেষ্টা করছে,আবর কেউ হালাল-হারামের প্রতি তোয়াক্কা না করেই অবৈধ পথে হারাম উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,যার ফলস্বরূপ আজ সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সূদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণা, মজুতদারী, মাপে ঠকানো,ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভক্ষণ করা সহ বিভিন্ন প্রকার গর্হিত কাজ ব্যাপকতা লাভ করেছে। অথচ প্রতিটি মানুষের উপর আবশ্যক দায়িত্ব ছিল আল্লাহকে ভয় করা, হালাল উপার্জনের মাধ্যম অন্বেষণ করা, হারাম মাধ্যম বর্জন করা। কিন্তু মানুষ তার দায়িত্ব ভুলে গিয়ে হারামের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমরা আল্লাহর কাছে শরীয়ত বিরোধী সমস্ত কার্যক্রম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
.
আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ যে দু’আ নিয়ে আলোচনা করবো তা হচ্ছে, ঋণ মুক্তি, হালাল উপার্জনে সাহায্য এবং হারাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা। হাদিসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] তিনি বলেন, একদিন তাঁর কাছে একজন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) এসে বললো, আমি আমার কিতাবাতের (মুনিবের সাথে সম্পদের লিখিত চুক্তিপত্রের) মূল্য পরিশোধ করতে পারছি না, আমাকে সাহায্য করুন। উত্তরে তিনি (আলী (রাঃ) বললেন,আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালাম (বাক্য) শিখিয়ে দেবো, যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন? (এ দু‘আর মাধ্যমে) যদি তোমার ওপর বড় পাহাড়সম ঋণের বোঝাও থাকে, আল্লাহ তা পরিশোধ করে দেবেন। তুমি পড়বে, দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে,
.
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ عَمَّنْ سِوَاكَ».

মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান সিওয়া-ক)।
.
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল দ্বারা পরিতুষ্ট করে আপনার হারাম থেকে ফিরিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আপনি ছাড়া অন্য সকলের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন।(মুসনাদে আহমাদ হা/ ১৩১৯; মুসতাদারাক লিল হাকিম হা/ ১৯৭৩;তিরমিযী হা/ ৩৫৬৩, সিলসিলা সহীহাহ হা/২৬৬, সহীহ আত তারগীব হা/১৮২০,সহীহ আল জামি হা/ ২৬২৫: মিশকাত হা/২৪৪৯ সনদ হাসান)

এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ اكْفِنِي
(আল্লা-হুম্মাকফিনী) অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে পরিতুষ্ট করুন,
.
بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ
(বিহালা-লিকা আন হারা-মিকা) অর্থ: হালাল (রিজিক) দিয়ে হারাম থেকে দুরে রেখে,
.
وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ
(ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা) অর্থ: এবং আমাকে সমৃদ্ধ/ অমুখাপেক্ষী করুন আপনার রহমত/অনুগ্রহের মাধ্যমে.
.
عَمَّنْ سِوَاكَ
(আম্মান সিওয়া-ক) অর্থ: আপনি ছাড়া অন্য সকলের থেকে (আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন)।
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি অতি সহজ এবং খুবই ছোট্ট। একটু চেষ্টা করলেই মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল (ﷺ)-এর কাছে একজন গোলাম সম্পদ চাইল আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই দু‘আ শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে সর্বোত্তম কিছু দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন,অথবা তাকে সঠিক পথ দেখালেন। এটি এদিকে ইঙ্গিত করে যে, নিশ্চয় উত্তম ও অধিক বিশুদ্ধ বিষয় হলো তা (মালিকের পাওনা) আদায় করার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া এবং অন্যের ওপর নির্ভর না করা। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন। তাই সবাই দু’আটি মুখস্থ করে অভাব অনটনে কিংবা ঋণগ্রস্ত থেকে মুক্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়াটি পড়ে আমল করতে পারেন।চাইলে মাঝে মধ্যে এই দু’আটি নামাজের সিজদায়,শেষ বৈঠকে কিংবা নামাজের বাহিরেও পড়তে পারেন, নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন। পরিশেষে বলা যায়, রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে অনেক সময় হারামসহ বিভিন্ন পাপ কাজে প্রবৃত্ত হয়। শয়তান এক্ষেত্রে তাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে। তাই আল্লাহর কাছে আমাদের একান্ত প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে হালাল উপার্জনে সাহায্য করেন এবং হারাম থেকে দূরে রাখেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।