হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ২৯তম দুআ

চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা,অন্তর এবং বীর্য মোট পাঁচটি অঙ্গের মন্দ ব্যবহার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার অতীব সুন্দর দু’আটি মুখস্থ করে ফেলুন। ▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আমরা অনেক সময় বলি, বর্তমান যুগটি ফিতনার যুগ। কথাটা অবাস্তব নয়। ফিতনা যদিও সব যুগেই ছিল, কিন্তু নবী ﷺ এর -যুগ থেকে দূরত্ব যত বাড়ছে ফিতনার অন্ধকারও ততই বাড়ছে।যদিও ফিতনা কম বা বেশি, সব যুগেই তা ছিল।কিয়ামতের আগে আরো যে কত ভয়াবহ ফিতনা প্রকাশিত হবে মর্ম হাদীস থেকে জানা যায়।মানুষ বিভিন্ন সময় ফেতনায় পড়ে গোনাহের কাজ করে। মহান আল্লাহ যাকে হিফাযত করেছেন তিনি ব্যতীত আদম সন্তানের সকলেই যিনার নির্ধারিত অংশ অবশ্যই পাবে। যেমন: হাদীস থেকে জানা যায়,দুই চোখের যিনা তাকানো,কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা ইত্যাদি।চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা ও অন্তরের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার সুন্দর একটি দু’আ উল্লেখ করেছি। হাদীসটি বর্নন করেছেন, শুতায়র ইবনু শাকাল ইবনু হুমায়দ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা শাকাল (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদিন বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পড়- দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে,
.
اَللَّهُمَّ اِنِّي اَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ, وَمِنْ شَرِّ بَصَرِيْ, وَمِنْ شَرِّ لِسَانِيْ وَمِنْ شَرِّ قَلْبِيْ مِنْ شَرِّ مَنِيِّيْ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন শার্রি সামঈ, ওয়ামিন শার্রি বাছারী, ওয়ামিন শার্রি লিসানী ওয়ামিন শার্রি ক্বালবী, ওয়ামিন শার্রি মানিইঈ। (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাই আমাদের কর্ণ, আমাদের চক্ষু, আমাদের জিহ্বা ও আমাদের অন্তরের অনিষ্ট হতে এবং আমার শুক্রাণু অবৈধ স্থানে পতিত হওয়া থেকে।(আবু দাঊদ হা/১৫৫১; তিরমিযী হা/৩৪৯২; মিশকাত হা/২৪৭২; সহীহুল জামে‘ হা/১২৯২, ৪৩৯৯ হাদীসটি বিশুদ্ধ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اَللَّهُمَّ اِنِّي اَعُوذُ بِكَ
(আল্ল-হুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা) অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
.
مِنْ شَرِّ سَمْعِيْ
(মিন শার্রি সামঈ) অর্থ: আমাদের কর্ণের অনিষ্টতা থেকে,
.
وَمِنْ شَرِّ بَصَرِيْ
(ওয়ামিন শার্রি বাছারী) অর্থ: আর আমাদের চক্ষুর অনিষ্টতা থেকে,
.
وَمِنْ شَرِّ لِسَانِيْ
(ওয়ামিন শার্রি লিসানী) অর্থ: আর আমাদের জিহ্বার অনিষ্টতা থেকে,
.
وَمِنْ شَرِّ قَلْبِيْ
(ওয়ামিন শার্রি ক্বালবী) অর্থ:এবং আমাদের অন্তরের অনিষ্টতা থেকে,
.
مِنْ شَرِّ مَنِيِّيْ
(মিন শার্রি মানিইঈ) অর্থ: আমার শুক্রাণু অবৈধ স্থানে পতিত হওয়া থেকে।
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি অতি ছোট্ট সহজ এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। দু’আটিতে চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা,অন্তর এবং বীর্যসহ মোট পাঁচটি অঙ্গের মন্দ ব্যবহার বা অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে,দু‘আটির ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে,
.
(১).হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই আমার কানের অনিষ্টতা থেকে যাতে আমি এমন কিছু না শুনি যা শুনা অপছন্দনীয়। যেমন- মিথ্যা কথা, অপবাদ, গীবত সহ যে কোন অবাধ্যতামূলক (গুনাহের) কথা। আবার যা শুনা উচিত। যেমন- সত্য কথা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ ইত্যাদি শোনা থেকে যেন বঞ্চিত না হই।
.
(২).চোখের অনিষ্টতা বলতে অপছন্দনীয় কিছু দেখা। যেমন- হারাম কিছু দেখা। আবার ভাল কিছু কুরআন সুন্নার বা উপকারী জিনিসপত্র দেখা থেকে বঞ্চিত না হই।
.
(৩).মুখের অনিষ্টতা বলতে অনুপকারী কিছু বলা, কারণ বেশিরভাগ পাপ মুখের দ্বারাই সংঘটিত হয়। উপরোক্ত অঙ্গসমূহের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কথা এজন্যে বলা হয়েছে যে, এগুলো হচ্ছে সকল স্বাদ ও যৌন আসক্তির উৎস মূল।
.
(৪).অন্তরে অনিষ্টতা বলতে কোন ভ্রান্ত শিরক-কুফরি বিশ্বাস লালন করা বা হিংসা, বিদ্বেষ, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, সৃষ্টিকে ভয় করা, জীবিকা বন্ধ হওয়ার ভয় ইত্যাদি বুঝায়।
.
(৫).বীর্যের অনিষ্টতা বলতে যিনার প্রাথমিক স্তরসমূহ যেমন দেখা,স্পর্শ, চুমু দেয়া, একসাথে পথ চলা ইত্যাদির কোনটিতে সম্পৃক্ত হওয়া এবং এর মাধ্যমে ক্রমশ যিনা পর্যন্ত পৌঁছা।
.
সুতরাং দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়, তাই প্রত্যেকের উচিত দু’আটি মুখস্থ করা নেওয়া এবং নিদিষ্ট কোন সময় খাস না করে সকাল-সন্ধ্যায়, নামাজের সিজদায়,সালাম ফেরানোর পূর্বে, এবং অন্য যেকোনো সময় পাঠ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।