সূরা মূলক পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় মর্মে বর্ণিত হাদিসটি কি সহীহ

প্রশ্ন: সূরা মূলক পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি কি সহীহ? যদি সহীহ হয় তাহলে এর সঠিক ব্যাখ্যা কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: সূরা মুলক কুরআনে কারীমের ঊনত্রিশ তম পারার প্রথম সূরা। সূরার ক্রম অনুসারে এটি কুরআনের সাতষট্টি নম্বর সূরা। সূরাটি অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি সূরা এটি। সূরাটি আল্লাহ তাআলার রাজত্ব-কতৃর্ত্ব ও মহত্ত্বের বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে। আসমান ও গ্রহ-নক্ষত্রের সৃষ্টি-কুশলতা ও নিপুণতা উল্লেখের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতার কথা আলোচনা করা হয়েছে।জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনার মাধ্যমে মানুষের জীবনের লক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহকে ভয় করে যে বান্দা সিরাতে মুসতাকীমের উপর অটল-অবিচল থাকবে এবং জীবন-পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে তার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে মহা পুরস্কারের। সাথে সাথে জীবন চলার পথে মানুষ যদি লক্ষচ্যুত হয়; আল্লাহর নাফরমানীর পথ অবলম্বন করে তাহলে তার জন্য কী ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে তা বিবৃত হয়েছে। আর পথভ্রষ্ট বান্দা তার পরিণাম প্রত্যক্ষ করে আখেরাতে কী ভাষা ও বাক্যে আফসোস-আক্ষেপ করবে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে মর্মস্পর্শী উপস্থাপনায়।স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে দুনিয়াতে আল্লাহর দেয়া সুযোগ ও ছাড়ের কথা। পরিশেষে তাঁর বিভিন্ন নিআমতের কথা উল্লেখ করে মানুষের আল্লাহ-মুখাপেক্ষিতা ও অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আল্লাহর শোকর আদায় ও আখেরাতের প্রস্তুতির প্রতি। এসব কারণে সূরা মুলক মুমিনের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক পাথেয়। সাথে সাথে সূরাটির উপর আমলের অনেক ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। এমনকি এ সূরা তিলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না। এ সূরা তার আমলকারীর জন্য সুপারিশ করবে। কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে। আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভের মাধ্যম হবে। সুতরাংসূরা মুলক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা। তাই আসুন,এ ব্যাপারে হাদীসে কী বলা হয়েছে তা জেনে নেই:
.
(১).আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ سُورَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ -وحسنه الألباني في صحيح الترمذي

“কুরআনের তিরিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক (অর্থাৎ সূরা মূলক)।”(তিরমিযী হা/২৮৯১,আবূ দাঊদ হা/ ১৪০০, ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম হা/২০৭৫, সহীহ আত তারগীব হা/১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৭৮৭, বায়হাকী শু‘আবূল ঈমান হা/২৫০৬,মিশকাত হা/২১৫৩)
.
হাদীসটির তিরমিজির সনদ: আমাদেরকে মুহাম্মাদ বিন বাশশার (রহিমাহুল্লাহ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, আমাদেরকে মুহাম্মাদ বিন জাফর (রহিমাহুল্লাহ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে কাতাদা (রহিমাহুল্লাহ) হতে শুবাহ (রহিমাহুল্লাহ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন আব্বাস আল-জুশামী (রহিমাহুল্লাহ) হতে, তিনি বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাযিাআল্লাহু তাআলা আনহু) হতে, তিনি বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন…
.
তাহকীক: এই হাদীসটির সনদ হাসান লি-যাতিহ স্তরের। এই হাদীসটিকে ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) তার সুনানে আবু দাউদে হা/১৪০০ এবং ইমাম ইবনু মাজাহ রহিমাহুল্লাহ তার সুনানে ইবনে মাজাতে হা/ ৩৭৮৬ এবং আরো কয়েকজন বিদ্বান ইমাম শুবাহ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণনা করেছেন। শাইখ আহমাদ শাকির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,এর সানাদ সহীহ। সকলে শু‘বাহ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ননা করেছেন মুসনাদে আহমেদ খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ২৯৯) ইমাম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ (মাওয়ারিদুয যামআন হা/ ১৭৬৬, ইমাম হাকেম রহিমাহুল্লাহ,খন্ড:২ পৃষ্ঠা: ৪৯৭- ৪৯৮, হা/২০৭৫ এবং হাফেয ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।ইমাম আবূ ঈসা তিরমিজি বলেন,এ হাদীসটি হাসান সুনানে তিরমিজি হা/২৯১) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন (মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২২; পৃষ্ঠা: ২৭৭) বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ইমাম আলবানী রহিমাহুল্লাহ সহীহ ইবনে মাজাহতে হাদীসটি সহীহ বলেছেন দেখুন ইবনে মাজা হা/৩০৫৩)
.
(২).জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,

كَانَ ‌لَا ‌يَنَامُ ‌حَتَّى ‌يَقْرَأَ الم تَنْزِيلُ ، وَتَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الملْكُ-

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আলিফ লাম-মীম তানয়ীল ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। (সুনানে তিরমিজি হা /২৮৯২,মুসতাদরাকে হাকেম,হাদীস ৩৫৪৫; মুসনাদে আহমাদ,হা/১৪৬৫৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৯৮১৬; আদাবুল মুফরাদ, হা/১২০৭; সুনানে দারিমী, হা/১০৪০ সিলসিলা সহীহা হা/৫৮৫)
.
হাদীসটির তিরমিজির সনদ: আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন হুরাইন বিন মিসআর। তিনি বলেছেন যে, আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ফুযাইল বিন ইয়ায। তিনি বর্ণনা করেছেন লাইস হতে। তিনি বর্ণনা করেছেন আবুয যুবয়ের হতে। তিনি বর্ণনা করেছেন জাবের রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা সিজদা এবং সূরা মূলক পাঠ করা ব্যতীত ঘুমাতেন না।

তাহক্বীক: এই হাদীসটি মুরসাল স্তরের। এই হাদীসটি রাবী লাইস বিন আবী সুলাইমের সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে । যা নিচের গ্রন্থাবলীতে বিদ্যমান রয়েছে।

(১).মুসনাদে আহমাদ, খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৩৪০ হা/১৪৭১৪)

(২).মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ হা/১০৩৮, রাবী লাইস তার নিকট থেকে হাদীসের সামা সহ বর্ণনা করেছেন

(৩).মুসনাদে দারেমী হা/৩৪১৪ ; অন্য বর্ননা অনুযায়ী হা/৩৪৫৪

(৪).মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ (হা/২৯৮০, ১০/৪২৪)

(৫).ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ আস-সুনানুল কুবরা হা/১০৫৪২ বর্ননা করেছেন)
.
শায়েখ সালীম হিলামী এই হাদীসটির দীর্ঘ তাখরীজ করেছেন।লাইস বিন আবী সুলাইম রহিমাহুল্লাহ একজন যঈফ রাবী ছিলেন। কিন্তু মুগীরা বিন মুসলিম রহিমাহুল্লাহ এই হাদীসটি আবুয যুবায়ের মাক্কী রহিমাহুল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন। (দেখুন নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৫৪২; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল-লাইলাহ হা/৭০৬; ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ হা/১২০৭) ইবনু হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ মুগীরাহ বিন মুসলিমকে সদূক স্তরের রাবী বলেছেন।(তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৬৮৫০) রাবী আবুয যুবায়ের মাক্কী রহিমাহুল্লাহ একজন মুদাল্লিস রাবী ছিলেন দেখুন ফাতহুল মুবীন ফী তাহকীকী তাবাকাতিল মুদাল্লিসীন খন্ড:৩ পৃষ্ঠা: ১০১)। আর এই হাদীসটি মুআনআন। তথা আন শব্দ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ হাদীসের সনদটি যঈফ। (এ হাদীসের বর্ণনাকারী) আবুয যুবায়ের রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আপনি এই হাদীসটি জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারী রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু হতে শ্রবণ করেছিলেন কি ? তিনি বলেছেন যে, আমাকে এ হাদীসটি কেবল সফওয়ান কিংবা ইবনু সফওয়ান মুরসাল রূপে) বর্ণনা করেছেন। (সুনানে তিরমিযী হা/২৮৯২ )হাফেয ইবনু হাজার রহিমাহুল্লাহ পরিপূর্ণ তাহকীক করতে গিয়ে বলেছেন যে,وعلي هذا فهو مرسل أو معضل- আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে এই হাদীসটি মুরসাল কিংবা মুযাল। (নাতায়েজুল আফকার, খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২৬৭)
.
(৩).প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেন,

مَنْ قَرَأَ {تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ} كُلَّ لَيْلَةٍ مَنَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهَا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَكُنَّا فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ نُسَمِّيْهَا الْمَانِعَةَ، وَإنَّهَا فِيْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ سُوْرَةٌ مَنْ قَرَأَ بِهَا فِيْ لَيْلَةٍ فَقَدْ أَكْثَرَ وَأَطَابَ-

“যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাযী অর্থাৎ সূরা মুলক পড়বে, এর জন্য আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন। আর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর আমলে একে (কবর আযাব) প্রতিরোধকারী বলে অভিহিত করতাম। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে (কুরআনে) একটি সূরা আছে, যে ব্যক্তি রাতে তা পাঠ করল, সে অধিক করল ও উত্তম কাজ করল”।(ত্ববাক্বাতুল মুহাদ্দিসীন আসবাহান, হা/ ৫২৬, আল-নাসায়ী, খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ১৭৯, আলবানী সহীহুল জামি‘, হা/৩৬৪৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১১৪০,সহীহ আত তারগীব হা/১৪৭৫)
.
তাহক্বীক: শাইখ আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন। অপরদিকে এ হাদীসটির সনদের ব্যাপারে কোন কোন মুহাদ্দিস বলেন যে, এতে দূর্বলতা আছে। কেউ কেউ বলেছেন, এটি মাউকুফ হাদীস; মারফু নয় অর্থাৎ এটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. এর নিজস্ব বক্তব্য; রাসূল (ﷺ) এর বক্তব্য নয়। কিন্তু এটি মাউকুফ হলেও মরফু’র এর হুকুমে। কেননা,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হয়ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেই এ কথা বলেছেন। নিজের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা তার দ্বারা সম্ভব নয়। হাদীসটি অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, “বান্দাকে কবরে রাখা হ’লে পায়ের দিক হ’তে আযাব আসে। তখন পা বলে, আমার দিক থেকে আযাব দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমাদের উপর সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। এরপর পেটে শাস্তি দিতে চাইলে পেট বলে, আমাকে শাস্তি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমার মধ্যে সূরা মুলক আয়ত্ব করতেন। মাথার দিক থেকে আযাব আসতে চাইলে মাথা বলবে, আমার দিকে দিয়ে আসার কোন সুযোগ নেই। কারণ তিনি আমার মধ্যে সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন”।(মু‘জামুল কাবীর হা/৮৬৫১; হাকেম হা/৩৮৩৯; সহীহ আত-তারগীব হা/১৪৭৫)।
.
এবার পুনরায় প্রথম হাদীসটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানা যাক অর্থাৎ আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ سُورَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ -وحسنه الألباني في صحيح الترمذي

“কুরআনের তিরিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সূরা আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক (অর্থাৎ সূরা মূলক)।”(তিরমিযী হা/২৮৯১, আবূ দাঊদ হা/ ১৪০০, ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮৬, মুসতাদারাক লিল হাকিম হা/২০৭৫, সহীহ আত তারগীব হা/১৪৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৭৮৭, শু‘আবূল ঈমান হা/২৫০৬, মিশকাত হা/২১৫৩)
.
হাদীসটির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা: হাদিসটি থেকে বুঝা যাচ্ছে, কুরআনের ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট সূরা (মুলক) এক ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেছে ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কেননা এ ব্যক্তি সর্বদা সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন এবং তার যথাযথ মর্যাদা প্রদান করতেন। অতঃপর লোকটি মৃত্যুবরণ করলে এ সূরাটি তার জন্য সুপারিশ করে ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার ‘আযাব দূর করে দেন, এটা অতীতের কোন ঘটনা। অথবা এটা ভবিষ্যতকালের অর্থেই ব্যবহার হবে, যিনি পাঠ করবেন কিয়ামতের দিন অথবা তার কবরে ঐ সূরাটি তাকে সুপারিশ করবে, ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
.
হাদীসটির ব্যাখায় সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ এ প্রসঙ্গে বলেন:

وعلى هذا يُرجى لمن آمن بهذه السورة وحافظ على قراءتها ، ابتغاء وجه الله ، معتبراً بما فيها من العبر والمواعظ ، عاملاً بما فيها من أحكام أن تشفع له .

“এর উপর ভিত্তি করে আশা করা যায়, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ সূরাটি পড়ার প্রতি যত্মশীল হবে, এর মধ্যে যে সব উপদেশ ও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং এর বিধিবিধানগুলোর প্রতি আমল করবে এ সূরাটি কিয়ামতের তার জন্য দিন শাফায়াত করবে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৩৪-৩৩৫)
.
আল্লামা মুবারকপূরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, معناه أن تلاوة هذه السورة في الحياة الدنيا تكون سبباً لنجاة تاليها من عذاب القبر ” এর অর্থ হল:“দুনিয়ার জীবনে এ সূরাটির তিলাওয়াত তিলাওয়াতকারীর জন্য কবরের আযাব হতে মুক্তির কারণ হবে।” (মিরআতুল মাফাতীহ, খন্ড: ৭ পৃষ্ঠা: ২৩১)
.
ইমাম আল-মানাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:

” كان قد لازم على قراءتها ، فما زالت تسأل الله فيه حتى غفر له ، وهذا حث لكل أحد على مواظبة قراءتها لينال شفاعتها ”
“তিনি সর্বদা সূরা মুলক তিলাওয়াত করতেন, ফলে সূরাটি আল্লাহর কাছে (তাকে ক্ষমা করার) প্রার্থনা করতে থাকে যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করা হয়। এই হাদীসটি প্রত্যেক ব্যক্তিকে সূরাটি নিয়মিত পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করে যাতে সূরাটির সুপারিশ লাভ করা যায়।” (ফায়েজুল-কাদির, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৫৭৪)
.
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] বলেন,

هذا الحديث دال على فضلها ، وأنها تشفع لصاحبها يوم القيامة ، أي: للذي يقرؤها

“এই হাদিসটি সূরাটির ফজিলত নির্দেশ করে,এবং এটি কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীর জন্য,(যে এটি পাঠ করবে) তার জন্য সুপারিশ করবে।”(শরহু সুনানে আবি দাউদ, খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ৭)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, সূরা মুলক একটি ফজিলতপূর্ণ সূরা। এই সূরাটির ফজিলত একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং যে ব্যক্তি দিনে রাতে যেকোনো সময় এই সূরাটি তেলাওয়াত করবে এবং সূরাটির শিক্ষা ও পবিত্র কুরআনের বিধি- বিধানগুলো ব্যক্তির বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে তাহলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ ব্যক্তির মৃত্যুর পর কবরের আযাব থেকে মুক্তি, এবং আখিরাতের শাফাআত লাভ করার তৌফিক দান করবেন ইনশাআল্লাহ।আর নিশ্চয় তিনি আল্লাহ মহান দয়ালু ও দাতা।আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।