হাদিস থেকে বাছাইকৃত উচ্চারণ ও অর্থসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দুআর মধ্যে ১৩তম দুআ

আজকের ফজিলত পূর্ণ এই দু’আটি আশা করি আপনারা সবাই পারেন, কিন্তু দু’আটি কোথায় কোথায় পড়া যায় সেটি হয়তোবা অনেকেই জানেন না। আলহামদুলিল্লাহ আজ আমরা জানবো।
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আজকের দু’আটি সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ কারণ এই দু’আটির গুরুত্ব এবং বিরাট ফজিলত রয়েছে। হাদীসটি বর্ননা করেছেন রাসূল (ﷺ) এর একাধিক প্রখ্যাত সাহাবী যেমন: আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ খুদরি,আম্মাজান আয়শা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) প্রমোখ। দু’আটির একাধিক ফজিলতের মধ্যে অন্যতম একটি ফজিলত হল: যে ব্যক্তি ওযুর পর এবং সালাতের পর দু’আটি পাঠ করে, তার জন্য তা এক শুভ্ৰ পত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেওয়া হয়,যা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত নষ্ট করা হয় না। দু’আটি সর্বমোট ৪ টি স্থানে পড়া যায়। স্থানগুলো হচ্ছে:
.
(১). কুরআন তিলাওয়াত শেষে ভুলত্রুটির কাফফারাস্বরূপ: (দেখুন ইমাম নাসাঈ, আল-কুবরা হা/১০১৪০; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ হা/৩০৮, ইমাম আলবানী সিলসিলা সহীহাহ হা/৩১৬৪)
.
(২). অযুর শেষে দু’আ হিসেবে: (দলিল ইমাম নাসাঈ, আল কুবরা হা/ ৯৯০৯, মুস্তাদরাক হাকেম হা/২০৭২, ত্বাবারনীর আওসাত্ব হা/ ১৪৫৫, সহীহ তারগীব ২২৫, হাদিস সম্ভার হা/৫৬৬)
.
(৩). যেকোন দ্বীনি বৈঠক শেষে (কাফফারাস্বরূপ): (দলিল আবু দাউদ হা/ ৪৮৫৯, সুনানে দারেমী হা/২৬৫৮, রিয়াদুস সলেহিন হা/৮৩৭)
.
৪). সালাত শেষে জিকির হিসাবে: (দলিল সুনানে আন-নাসায়ী হা/১৩৪৪, মুসনাদে আহমেদ হা/২৪৪৮১ ইমাম আলবানী সিলসিলা সহীহা হা/৩১৬৪)
.
দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে:
.
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
..
মোটামুটি উচ্চারণ: “সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা ওয়াতূবু ইলাইক”।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পাক-পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা‘বূদ নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার কাছে তাওবাহ্ করছি। (মুসনাদে আহমেদ হা/১৯৮১২ তিরমিযী হা/ ৩৪৩৩, মুসতাদারাক লিল হাকিম হা/ ১৯৭১ হাদীসটি বিশুদ্ধ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
سُبْحَانَكَ
(“সুবহা-নাকা”) অর্থ:আপনার পবিত্রতা বর্ননা করছি,
.
اَللّٰهُمَّ
(আল্লাহুম্মা) অর্থ: হে আল্লাহ!
.
وَبِحَمْدِكَ
(ওয়া-বিহামদিকা) অর্থ : এবং আপনার প্রশংসা সহকারে।
.
أَشْهَدُ أَنْ لاَّ
(আশহাদু আল্লা) অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, হে আল্লাহ।
.
لاَّ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ
(লা ইলাহা ইল্লা আন্তা) অর্থ: আপনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন হক ইলাহ নেই,
.
َأَسْتَغْفِرُكَ
(“আস্তাগফিরুকা”) অর্থ :আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি,
.
وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ
(ওয়া আতূবু ইলায়কা’’) অর্থ: এবং আপনার নিকট আমি তাওবাহ করছি।
.
প্রিয় পাঠক! অতি ছোট্ট খুবই সুন্দর এবং চমৎকার একটি দু’আ। দু’আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক দু’আটিতে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে,আর তা হচ্ছে- সন্মানিত বা মর্যাদাবান কারো কাছে কিছু চাইতে হলে কিভাবে চাইতে হবে।আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখতে পারবেন উপরোক্ত দু’আটির প্রথম অংশে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে, তারপর আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হয়েছে অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, এবং তওবাহ করছি। (আমাকে ক্ষমা করুন) তাই প্রত্যেকের দু‘আটি মুখস্থ করা উচিত এবং নিয়মিত পড়া উচিত। দু‘আটি আমরা উপরোক্ত চারটি স্থান ছাড়াও নামাজের সিজদায়, শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর আগে, দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারি।আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।