সালাতে আমীন বলার বিধান এবং ফজিলত

প্রশ্ন: আমীন শব্দের অর্থ কি? সালাতে আমীন বলার বিধান এবং ফজিলত কি? আমীন কি উচ্চস্বরে বলতে হবে নাকি নিম্নস্বরে? একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবেই যেভাবে তোমরা আমাকে দেখছ।’(সহীহ বুখারী, হা/৬৩১)। এই হাদীস সালাত আদায়ের স্পষ্ট একটি নীতিমালা। উক্ত হাদীসের আলোকে সালাতে উচ্চস্বরে আমীন বলতে হবে কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

আমীন অর্থ: اَللَّهُمَّ اسْتَجِبْ ‘হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর।’ ‘আমীন’ (آمِيْن)-এর আলিফ -এর উপরে ‘মাদ্দ’ বা ‘খাড়া যবর’ দুটিই পড়া জায়েয আছে। (মুনযেরী,সহীহ আত-তারগীব হা/৫১১, হাশিয়া আলবানী, ১/২৭৮ পৃঃ)। নামাজের মধ্যে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করার শেষে আমীন (آمِينَ) বলার অর্থ হলো এই যে, হে আল্লাহ! আমি সূরা আল ফাতিহার মাধ্যমে যে দোয়াটি আপনার নিকটে করেছি, সেই দোয়াটি আমার আপনি কবুল করুন।

সালাতে আমীন বলার বিধান এবং ফজিলত:
_______________________________________
শাইখ ইবনে উসাইমিন (রহঃ) বলেন, সালাতে আমীন বলা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম ২৬৮ পৃষ্ঠা:)। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন ‘ইমাম যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন,রাসূল (ﷺ) আমীন বলতেন। (বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭,ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬)।
.
শরীয়তে প্রতিটি সুন্নাত পালনে নেকী রয়েছে। ছোট হোক বা বড় হোক সুন্নাত পালনের মধ্যে রয়েছে দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। রাসূল (ﷺ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন লোকদের আমল সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসা করা হবে তাদের সালাত সম্পর্কে। যদি তাতে কোন ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়, তবে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কি? যদি থাকে তবে তিনি বলবেন, তোমরা তার নফল সালাত দ্বারা তার ফরয সালাতের ত্রুটি দূর কর। অতঃপর এইরূপে সমস্ত ফরয আমলের ত্রুটি নফল দ্বারা দূরীভূত করা হবে। (আবু দাউদ হা/৮৬৪; মিশকাত হা/১৩৩০; সহীহুত তারগীব হা/৫৪০)। তবে সুন্নাতকে অবজ্ঞা না করে কেউ অলসতা বশত তা পালন না করলে সে গুনাহগার হবে না। যেমন-বিভিন্ন কাজের সময় পালনীয় সুন্নাতসমূহ, সুন্নাতে রাওয়াতেবাহ,ক্বিয়ামুল লায়েল বা অন্যান্য নফল সালাত সমূহ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৬/১১২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব)।
.
তবে কেউ যদি স্পষ্ট সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও কেবল মাযহাবী গোঁড়ামির কারণে কোন সুন্নাত ছেড়ে দেয় বা অবজ্ঞা করে, সে ব্যক্তি অবশ্যই গোনাহগার হবে। আল্লাহ বলেন, অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়সালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়সালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে। (নিসা- ৪/৬৫)। ইসহাক বিন রাহওয়াইহ বলেন,যার নিকট রাসূল (ﷺ) এর সহীহ হাদীস পৌঁছল অথচ অবজ্ঞা করে তা প্রত্যাখ্যান করল, সে কাফের (ইবনু হায্ম, আল-ইহকাম ১/৯৯)। ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তির নিকট উসুলের মানদন্ডে রাসূলের কওলী বা ফে‘লী সহীহ হাদীস পৌঁছল অথচ সে অস্বীকার করল, এটিই তার কুফরীর দলীল।(মিফতাহুল জান্নাত ১৪ পৃ.)।
.
আমীন কি উচ্চস্বরে বলতে হবে নাকি নিম্নস্বরে?
_______________________________________
জেহরী সালাতে ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম-মুক্তাদী সকলে উচ্চস্বরে আমীন’ বলবে। ইমামের আগে নয় বরং ইমামের ‘আমীন’ বলার সাথে সাথে মুক্তাদীর ‘আমীন’ বলা ভাল। তাতে ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা সম্ভব হয় এবং ইমাম, মুক্তাদী ও ফেরেশতাদের ‘আমীন’ সম্মিলিত ভাবে হয়।আর এই আমীনের স্বর কতটা সবরে হবে এই প্রশ্নের জবাব হল, ইমাম-মুক্তাদী উভয়ে স্বাভাবিক স্বরের চেয়ে একটু উঁচু স্বরে আমীন বলবে। হাদীসে আমীন বলার ক্ষেত্রে ‘রাফা‘আ’, ‘মাদ্দা’, ‘জাহারা’ ইত্যাদি শব্দ এসেছে। যার দ্বারা স্বাভাবিক ক্বিরাআতের চেয়ে উঁচু স্বরে বলা বুঝায়। ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মতে, আমীনের শব্দে মসজিদ যেন গুঞ্জরিত হয়ে উঠে। (সহীহ বুখারী তা‘লীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী হা/৭৮০-৮১)। যেমন:
.
ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন তখন তাকে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি আমীনের আওয়ায জোরে করতেন। (তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭-৫৮ পৃঃ) ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, রাসূলের সাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অনেকেই এই কথা বলেছেন যে, মুসল্লী আমীন জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন।’ (তিরমিযী ১/৫৭-৫৮ পৃঃ)।
.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে।’ (সহীহ বুখারী হা/৭৮২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮)। অন্য হাদীসে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন। (আবুদাঊদ হা/৯৭২, ১/১৪০ পৃঃ)। অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। (বুখারী হা/৬৪০২, ২/৯৪৭ পৃঃ)।

উক্ত হাদীসের আলোকে ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন, بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ وَقَالَ عَطَاءٌ آمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً ‘ইমামের উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হল দু‘আ। ইবনু যুবাইর এবং তার পিছনের মুসল্লীরা এমন জোরে আমীন বলতেন, যাতে মসজিদ বেজে উঠত’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন بَابُ جَهْرِ الْمَأْمُوْمِ بِالتَّأْمِيْنِ ‘মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮, হা/৭৮০,(ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ) এর অনুচ্ছেদ)।
.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) মারওয়ান বিন হাকামের মুআযযিন ছিলেন। তিনি শর্ত লাগালেন যে, ‘আমি কাতারে শামিল হয়ে গেছি এ কথা না জানার পূর্বে (ইমাম মারওয়ান) যেন ‘অলায যা-ল্লীন’ না বলেন।’ সুতরাং মারওয়ান ‘অলায যা-ল্লীন’ বললে আবু হুরাইরা টেনে ‘আমীন’ বলতেন। (বায়হাকী ২/৫৯, বুখারী তা’লীক, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৩০৬)।

নাফে বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) কখনো ‘আমীন’ বলা ছাড়তেন না এবং তিনি এব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দিতেন। আত্বা বলেন, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (রাঃ) সরবে ‘আমীন’ বলতেন। তাঁর সাথে মুক্তাদীদের ‘আমীন’-এর আওয়াযে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত’ (حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً)। (বুখারী তা‘লীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ-১১১)।

আত্বা বলেনঃ “আমীন একটি দু‘আ। ইব্‌নু জুবায়র (রাঃ) আমীন বলেছেন এবং তাঁর পিছনের লোকেরা বলেছেন এমন কি মসজিদ আমীন ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হয়েছিল ।” (সহীহ বুখারী, তাগলীকুত তা‘লীক ২/৩১৮, হাফিয ইব্‌নু হাজার)

হানাফী ‘আলিম শায়খ ‘আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) বলেনঃ “রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলতেন জাহরী সালাতে (অর্থাৎ মাগরিব, ইশা ও ফজরে) উচ্চস্বরে আর সিররী ছলাতে (অর্থাৎ যুহর ও ‘আসরে) নিম্নস্বরে। (মাদারিজুন নুবুওয়াত পৃষ্ঠা ২০১)।

আল্লামা আবদুল হাই লক্ষ্মৌবী (রহঃ) বলেনঃ ন্যায় সঙ্গত কথা হলো, দলীল অনুযায়ী উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলা মজবুত ।” (আত্ তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ ১০৩ পৃষ্ঠা) তিনি আরো বলেনঃ “গভীর চিন্তা গবেষণার পর আমরা উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলাকেই অতি সঠিক পেলাম। কেননা এটা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াতের সাথে মিলে। আর নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার রিওয়ায়াতগুলো দূর্বল তাই উচ্চস্বরে বলার রিওয়ায়াতের সমকক্ষতা করতে পারবে না ।” (আস্ সিআয়া ১/১৩৬)।

প্রিয় পাঠক, দুঃখজনক হলেও হল, এতগুলো হাদীস থাকা সত্ত্বেও ‘হেদায়া’ কিতাবে বলা হয়েছে, মুক্তাদীরা নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলবে’।(হেদায়া ১/১০৫ পৃঃ)। এটাই মাযহাবী শিক্ষা। এছাড়াও ‘মাযহাব বিরোধীদের স্বরূপ সন্ধানে’ বইটিতে নানা কৌশল ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। (হেদায়া ১/২৯৭-৩১২ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, ‘আমীন’ বলার পক্ষে ১৭টি হাদীস এবং তিনটি আছার রয়েছে (আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭১নায়লুল আওত্বার ২/১২২ পৃঃ)। যার মধ্যে ‘আমীন’ আস্তে বলার পক্ষে শো‘বা থেকে একটি রেওয়ায়াত আহমাদ ও দারাকুতনীতে এসেছে أو أَخْفَي بِهَا صَوْتَهُ خَفَضَ বলে। যার অর্থ ‘আমীন’ বলার সময় রাসূল (ﷺ)-এর আওয়ায নিম্নস্বরে হত। একই রেওয়ায়াত সুফিয়ান সাওরী থেকে এসেছে رَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ বলে। যার অর্থ- তাঁর আওয়ায উচ্চৈঃস্বরে হত। হাদীস বিশারদ পন্ডিতগণের নিকটে শো‘বা থেকে বর্ণিত নিম্নস্বরে ‘আমীন’ বলার হাদীসটি ‘মুযত্বারিব’ (مضطرب)। অর্থাৎ যার সনদ ও মতনে নাম ও শব্দগত ভুল থাকার কারণে ‘যঈফ’। পক্ষান্তরে সুফিয়ান সাওরী (রাঃ) বর্ণিত সরবে আমীন বলার হাদীসটি এসব ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়ার কারণে ‘সহীহ’।(দারাকুৎনী হা/১২৫৬-এর ভাষ্য, আর-রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৭২; নায়লুল আওত্বার ৩/৭৫) এমনকি হানাফী আলেমদের নিকটেও নীরবে আমীন বলার হাদীসের সনদ সহীহ নয়। যেমন আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘নীরবে আমীন’ বলার সনদে ত্রুটি আছে। সঠিক ফৎওয়া হ’ল জেহরী সালাতে জোরে ‘আমীন’ বলা’ (শরহ বেকায়াহ ১৪৬ পৃঃ) এছাড়া নীরবে আমীন বলার পক্ষে যে কয়টি বর্ণনা এসেছে,তার সবই যঈফ । (আবুদাঊদ হা/৯৩৪ সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৫২)।

উল্লেখ্য যে, অনেক স্থানে সালাতে সূরা ফাতিহা শেষ করে তিনবার আমীন বলার প্রচলন দেখা যায়। কিন্তু উক্ত মর্মে যে দু’একটি বর্ণনা পাওয়া যায় তা যঈফ। যেমন: আব্দুল জাব্বার ইবনু ওয়ায়েল তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে,আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাতে প্রবেশ করতে দেখেছি। যখন তিনি সূরা ফাতিহা শেষ করতেন, তখন তিনবার আমীন বলতেন।(ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/১৭৫০৭।বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু ইসহাক্ব ও সা‘দ ইবনু সালত নামে দুইজন যঈফ রাবী আছে।(তানক্বীহুল কালাম, পৃঃ ৩৯৩, আরো দেখুন-ইবনু মাজাহ হা/৮৫৭বযঈফ তারগীব হা/২৭০ হাশিয়া সিন্দী ২/২৪৭ পৃঃ)।

জেনে রাখা ভাল যে: অনেক মসজিদে ইমাম ‘আমীন’ বলার পূর্বেই মুক্তাদীরা আমীন বলে থাকে। সে জন্য ইমাম ‘য-ল্লীন’ বলার পর ওয়াক্ফ না করেই একই সঙ্গে ‘আমীন’ বলে দেন। কোনটিই সঠিক নয়। বরং ইমাম ওয়াক্ফ করবেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৭ পৃঃ)।অতঃপর ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও একই সঙ্গে আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। অন্যথা আমীন বলার ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবে। (ফাতাওয়া উসাইমীন ১৩/৭৮ পৃঃ।) আরো উল্লেখ্য যে,কোন মসজিদে ইমামের আমীন বলা শেষ হলে তারপর মুক্তাদীরা আমীন বলে। এটাও বাড়াবাড়ি।

পরিশেষে, বুখারী-মুসলিম সহ বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত জেহরী সালাতে সশব্দে ‘আমীন’ বলা অসংখ্য দলিল দ্বারা প্রমানিত। যেহরী সালাতে উচ্চস্বরে আমীন না বলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবাদের আমলের বিপরীত, তাই বিশুদ্ধ সুন্নাতের উপরে আমল করাই নিরপেক্ষ মুমিনের কর্তব্য। তাছাড়া ইমামের সশব্দে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ‘সিরাতুল মুস্তাক্বীম’ এর হেদায়াত প্রার্থনার সাথে মুক্তাদীগণের নীরবে সমর্থন দান কিছুটা বিসদৃশ বৈ-কি! মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়ঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।