সালাতের সংজ্ঞা ও সালাত কখন ফরজ করা হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফরয ও সুন্নত মিলে সর্বমোট রাক‘আত সংখ্যা

প্রশ্ন: সালাতের সংজ্ঞা কি? পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কখন ফরজ করা হয়? বিশুদ্ধ দলিলের আলোকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফরয ও সুন্নত মিলে সর্বমোট রাক‘আত সংখ্যা কত?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সালাত-এর আভিধানিক অর্থ দো‘আ,রহমত,ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি (আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, পৃঃ ১৬৮১)।
পারিভাষিক অর্থ: শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে সালাত বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়।’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, সালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০)।
◾পাঁচ ওয়াক্ত সালাত কখন ফরজ করা হয়:
_______________________________________
রাসূল (ﷺ) এর উপর পাঁচ ওয়াক্ত ১৭ রাকাত সালাত ফরজ করা হয়েছে মেরাজের রাত্রিতে।প্রথম কুরআন নাযিলের পর জিব্রীলের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ) ওযু ও সালাত শিক্ষা করেন। [আহমাদ হা/১৭৫১৫, দারাকুৎনী হা/৩৯৯, মিশকাত হা/৩৬৬; সহীহাহ হা/৮৪১]।

হিজরতের স্বল্পকাল পূর্বে মি‘রাজ সংঘটিত হবার আগ পর্যন্ত ফজরের দু’রাক‘আত ও আসরের দু’রাক‘আত করে সালাত আদায়ের নিয়ম জারী ছিল। আয়েশা (রাঃ) বলেন,শুরুতে সালাত বাড়ীতে ও সফরে দু’ দু’ রাক‘আত করে ছিল। (মুসলিম হা/৬৮৫; আবূদাঊদ হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১)।

অতঃপর মি‘রাজের রাত্রিতে চূড়ান্তভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। হাদিসে এসেছে,আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, মিরাজের রাতে রাসূল (ﷺ)-র উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছিল। অতঃপর তা কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তে সীমাবদ্ধ করা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা হল, হে মুহাম্মাদ! আমার নিকট কথার কোনো অদল বদল নাই। তোমার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সওয়াব রয়েছে।’ [সহীহ বুখারী হা/৩২০৭; মুসলিম হা/১৬২; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ দ্র. সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২১৩]।

অতঃপর মিরাজে রাসূল (ﷺ) তাঁর উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার পর সর্বপ্রথম যোহরের সালাত আদায় করেছিলেন।যেমন হাদীসে এসেছে,আবু বারাযাহ আসলামী (রাঃ) কে রাসূল (ﷺ)-এর সালাতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যোহরের সালাত যাকে তোমরা প্রথম সালাত বলে থাক,সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন।’ [সহীম বুখারী হা/৫৪৭; মিশকাত হা/৫৮৭]।

◾বিশুদ্ধ দলিলের আলোকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফরয ও সুন্নত মিলে সর্বমোট রাক‘আত সংখ্যা:
_______________________________________
আর আপনি সালাত আদায় করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত রাখে।আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (আনকাবূত ৪৫)। তিনি আরো বলেন, আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে,সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবাভাগে। (সূরা ত্ব-হা, আয়াত-১৩০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, আর আপনি দিনের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির কিছু অংশে সালাত আদায় করুন। নিঃসন্দেহে সৎকর্ম সমূহ মন্দ কর্মসমূহকে দূর করে দেয়।’ (হূদ ১১৪)।

উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি:আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি সালাতের কোন হক নষ্ট না করে তা যথাযতভাবে আদায় করবে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌র নিকট কিয়ামাতের দিন তার জন্য এই প্রতিশ্রুতি আছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।আর যে ব্যক্তি সালাতের হক নষ্ট করবে এবং যথাযতভাবে সালাত পড়বে না, তার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন, অন্যথায় মাফ করবেন। (নাসায়ী ৪৬১, আবূ দাঊদ ৪২৫, ১৪২০; আহমাদ ২২১৮৫, ২২১৯৬, ২২২৪৬, ২৭৭৪০; মুওয়াত্ত্বা মালিক ২৭০, দারিমী ১৫৭৭। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৪৫১, ১২৭৬, মিশকাত ৫৭০। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৪০১)।

পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত দিনে-রাতে মোট ১৭
রাক‘আত ও জুম‘আর দিনে ১৫ রাক‘আত ফরয এবং ১২ অথবা ১০ রাক‘আত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যেমন:

(১) ফজর: ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ২ রাক‘আত ফরয।

(২) যোহর: ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত, অতঃপর ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত ।

(৩) আসর: ৪ রাক‘আত ফরয ।

(৪) মাগরিব: ৩ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত।

(৫) এশা: ৪ রাক‘আত ফরয। অতঃপর ২ রাক‘আত সুন্নাত। অতঃপর শেষে এক/তিন/পাঁচ রাক‘আত বিতর।

(৬)জুম‘আর সালাত ২ রাক‘আত ফরয। তার পূর্বে মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে কমপক্ষে ২ রাক‘আত ‘তাহিয়াতুল মাসজিদ’ এবং জুম‘আ শেষে ৪ অথবা ২ রাক‘আত সুন্নাত। (উপরে বর্ণিত সবগুলিই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিয়মিত আমল দ্বারা নির্ধারিত এবং সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। (দ্র: সহীহ ইবনু খুযায়মা ‘সালাত’ অধ্যায়, ২ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ সালাত’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-৩)। যা অত্র বইয়ের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় সমূহে দ্রষ্টব্য।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মুক্বীম
অবস্থায় ও সফরে দু’রাক‘আত করে সালাত ফরয করেছিলেন। পরে সফরের সালাত আগের মত রাখা হয় আর মুক্বীম অবস্থার সালাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। (বুখারী হা/৩৯৩৫; মুসলিম হা/৬৮৫; মিশকাত হা/১৩৪৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রথমে দু’দু’ রাক‘আত করে সালাত ফরয করা হয়েছিল। যখন রাসূল (ﷺ) মদীনায় গমন করলেন ও স্থির হ’লেন তখন মাগরিব ও ফজর ব্যতীত অন্য ওয়াক্তের সালাতে দু’দু’ রাক‘আত করে বৃদ্ধি করে চার রাক‘আত করা হ’ল। মাগরিবে করা হয়নি তার কারণ সেটি বেজোড়। আর ফজরে করা হয়নি কারণ তাতে দীর্ঘ তেলাওয়াত রয়েছে। (বায়হাক্বী ১/৫৩৩, হা/১৬৯৮ সনদ হাসান)।
.
উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে রাতে ১২ রাক‘আত সালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। সেগুলো হল- যোহরের পূর্বে চার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পর দুই এবং ফজরের পূর্বে দুই।(মুসলিম হা/১৭২৯, ১/২৫১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫৬৪), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত হা/১১৫৯, পৃঃ ১০৩) অন্য বর্ণনায় ১০ রাক‘আতের কথা এসেছে। সেখানে যোহরের পূর্বে দুই রাক‘আত বলা হয়েছে। (বুখারী হা/১১৮০; তিরমিযী হা/৪৩৩; মিশকাত হা/১১৬০, পৃঃ ১০৪)।
.
এছাড়াও কেউ যদি নফল (অতিরিক্ত) পড়তে চায় তার জন্য সুযোগ আছে। হাদীসে এসব সালাতের বিশেষ মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
▪️প্রত্যেক বার ওযু করার পর তাহিয়াতুল ওযু ২ রাকআত।
▪️প্রত্যেকবার মসজিদে প্রবেশের পর তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ ২ রাকাআত।
▪️আসরের আগে ৪ রাকাআত। (২+২ রাকাআত করে পড়া উত্তম)।
▪️ মাগরিবের ফরজ সালাতের পূর্বে ২ রাকাআত।
▪️রাতে তাহাজ্জুদের সালাত।
▪️ ইশরাক বা চাশত বা আওয়াবীনের সালাত।
▪️তওবার জন্য দু রাকআত সালাত।
▪️এছাড়াও তিনটি নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যখন ইচ্ছা দু রাকাআত করে নফল সালাত।
________________________
উত্তর প্রদানেঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।