রোগীর পবিত্রতা ও ওযু-গোসলের বিধান

প্রশ্ন: রোগীর পবিত্রতা ও ওযু-গোসলের বিধান কি? রোগী কিভাবে ওযু-গোসল করবে বা পবিত্রতা হাসিল করবে?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলাম বাস্তবমুখী পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান। মানব জাতির এমন কোন সমস্যা নেই যে ইসলাম তার সমাধান দেয়নি। মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ইসলাম চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করেছে।রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। যখন সেটা পৌঁছে যায়,তখন সে আল্লাহর হুকুমে রোগ মুক্ত হয়’। (সহীহ মুসলিম, হা/২২০৪; মিশকাত, হা/৪৫১৫)। অসুস্থ ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জনের বিধান হল কেউ রোগী হলেও তার গোসল ওয়াজিব হলে গোসল করা এবং ওযুর দরকার হলে ওযু করা জরুরী। এক্ষেত্রে রোগী শরীরের যতটুকু ধৌত করতে পারে ততটুকু ধৌত করা তার উপর আবশ্যক। যেমন: হাতদ্বয়, পাদ্বয় ইত্যাদি ধৌত করা। তবে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করায় ক্ষতির আশঙ্কা হলে রোগী গরম পানি ব্যবহার করবে। পানি ব্যবহারে একেবারেই অসমর্থ হলে বা রোগ-বৃদ্ধি অথবা আরোগ্য লাভে বিলম্বের আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করবে।(আবুদাঊদ হা/৩৩৬; মিশকাত হা/৫৩১)।
.
হাদীসে এসেছে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) এক শীতের রাতে নাপাক অবস্থায় তায়াম্মুম করেন ও তাঁর সাথীদের সালাতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি দলীল হিসাবে আল্লাহর বাণী পাঠ করেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি দয়াবান।’ (নিসা, ২৯; ছহীহ বুখারী, ১/৪৯ পৃঃ; আবুদাঊদ, হা/৩৩৪)। ‘আত্বা ইবনু আবু রাবাহ (রাহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে এক ব্যক্তি আহত হয়। ঐ অবস্থায় তার স্বপ্নদোষ হলে তাকে গোসল করার নির্দেশ দেয়া হয়। অতঃপর সে গোসল করলে তার মৃত্যু হয়। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, এরা লোকটিকে হত্যা করেছে। আল্লাহ যেন এদের ধ্বংস করেন! অজ্ঞতার প্রতিষেধক জিজ্ঞেস করা নয় কী।
(আবুদাঊদ, হা/৩৩৭)।
.
রোগী নিজে ওযু বা তায়াম্মুম করতে না পারলে অন্য কেউ করিয়ে দেবে। ওযুর কোন অঙ্গে ক্ষত থাকলেও তা ধুতে হবে। অবশ্য পানি লাগলে ঘা বেড়ে যাবে এমন আশঙ্কা থাকলে হাত ভিজিয়ে তার উপর বুলিয়ে মাসাহ্‌ করবে। মাসাহ্‌ করাও ক্ষতিকারক হলে ঐ অঙ্গের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নেবে। ক্ষতস্থানে পটি বাঁধা বা প্লাস্টার করা থাকলে অন্যান্য অঙ্গ ধুয়ে পটির উপর মাসাহ্‌ করবে। মাসাহ্‌ করলে আর তায়াম্মুমের প্রয়োজন নেই। এক ওয়াক্তে তায়াম্মুম করলে এর দ্বারা পরবর্তী ওয়াক্তের সালাত আদায় করা যাবে যদি ওযু ভঙ্গের কোন কারণ এর মধ্যে না ঘটে।মহান আল্লাহ বলেন, “তুমি তোমার সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করো।” (সূরা তাগাবুন:১৬)। অন্য আয়াতে বলেন, “কারো মহান আল্লাহ সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা:২৮৬)। কারন নামায কবুল হওয়ার জন্য যেরুপ বিশুদ্ধ ঈমান এবং হৃদয়কে সিক্ত ও কুফরী ধারণা ও বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা জরুরী শর্ত, তদ্রুপ নামাযীর বাহ্যিক দেহ্‌ ও পোশাক-আশাককে পবিত্র রাখাও এক জরুরী শর্ত। যেহেতু “নামাযের চাবিকাঠিই হল পবিত্রতা।” (আবূদাঊদ, তিরমিযী,মিশকাত ৩১২)। তাছাড়া এই পবিত্রতা হল অর্ধেক ঈমান।” (মিশকাত,২৮১)।
.
সালাত আদায়ের জন্য রোগীর শরীর, লেবাস ও নামায পড়ার স্থানের সর্বপ্রকার পবিত্রতা জরুরী। কিন্তু কোন ভাবেই অপবিত্রতা দূর করতে না পারলে যে অবস্থায় থাকবে সে অবস্থাতেই তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। রোগীকে সহায়তা করার কেউ না থাকলে এ অবস্থায়ই সালাত আদায় করলে তা হয়ে যাবে। অপবিত্র জায়গায় একটা পবিত্র কাপড় বিছিয়ে দিলে এর উপর সালাত আদায় করা যাবে। তবুও কোন নামাযকে তার যথা সময় থেকে পিছিয়ে দেওয়া (যেমন ফজরকে যোহরের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করা) রোগীর জন্যও বৈধ নয়। যথা সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে অথবা (অক্ষম হলে) না করেই নামাযের যথা সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই নামায অবশ্যই পড়ে নেবে। নচেৎ গুনাহগার হবে। (রাসাইল ফিত্ তাহারাতি অস্ সালাত,ইবনে উসাইমীন ৩৯-৪১পৃ:)।

শুধুমাত্র মাথা ধুলে অসুখ হওয়ার বা বাড়ার ভয় হলে বাকী দেহ্‌ ধুয়ে মাথায় মাসাহ্‌ করবে। অবশ্য এর সাথে তায়াম্মুমও করতে হবে। (ইবনে বায, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২১৪)।

যদি কোন নারী-পুরুষের অনবরত প্রস্রাব বা রক্ত ঝরে অথবা বাতাস বের হলে এবং চিকিৎসায় রোগমুক্তি না হলে প্রতি ওয়াক্তের শুরুতেই একবার ওযু করতে হবে। একবারের ওযু দিয়ে এক ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে।কিন্তু এক ওয়াক্তের অযু দিয়ে অন্য ওয়াক্তের সালাত পড়া যাবে না। আর পানির ব্যবহার ক্ষতিকারক হলে অনুরূপ প্রতি ওয়াক্তের শুরুতে তায়াম্মুম করে নেবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/২৮৭-২৯১ দ্র:)।

নামাযের সময় হলে যদি কাপড়ে নাপাকী লেগে থাকে, তবে নামাযী তা বদলে লজ্জাস্থান ধুয়ে ওযু করবে। নামাযের সময় যাতে নাপাকী অন্যান্য অঙ্গে বা কাপড়ে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য শরমগাহে বিশেষ কাপড়, ল্যাঙ্গট বা পটি ব্যবহার করবে। গোসল করলে রোগ-বৃদ্ধি হবে এবং ওযু করলে ক্ষতি হবে না বুঝলে তায়াম্মুম করে ওযু করবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি হল মুহল্লী পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে (সহীহ বুখারী, হা/১; মিশকাত, হা/১)। ‘বিসমিল্লাহ’ (তিরমিযী, হা/২৫; মিশকাত, হা/৪০২) বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে। অতঃপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখমণ্ডল তারপর দুই হাত একবার কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৮; মিশকাত, হা/৫২৮)। [আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী]।
▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।