সুদ কাকে বলে এবং সুদ কত প্রকার ও কি কি?

প্রশ্ন: সুদ কাকে বলে এবং সুদ কত প্রকার ও কি কি? সুদের পরিনতি কি? সূদখোর কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?
________________🔰🌹________________
উত্তর:

🔰সুদ কি?

আরবী রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বৃদ্ধি,অতিরিক্ত, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি।ফকীহদের পরিভাষায় পণ্য বা অর্থের বিনিময়ে প্রদেয় অতিরিক্ত পণ্য বা অর্থই হলো রিবা।
__________________________
🔰সুদের প্রকারভেদ:
__________________________
ইসলামী শরীয়া অনুসারে রিবা দুই প্রকার। যথা:

◾১. ربا النسيئة রিবা আল-নাসিয়া: এর মানে সময়ের বিনিময়। ‘নাসিয়া’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিলম্ব বা প্রতীক্ষা।

উদাহরণ: ক ১ বছরের জন্য খ কে ১০০-/ টাকা দিল এই শর্তে যে, তাকে ১০০-/ টাকার সাথে অতিরিক্ত আরও ১০ টাকা দেয়া হবে। এই অতিরিক্ত ১০-/ টাকা হলো রিবা আল- নাসিয়া।
এভাবে টাকা ঋণের মাধ্যমে জাহেলীযুগের লোকেরা সুদ লেনদেরন করত। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّـهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩০)।

◾ ২. ربا الفضل রিবা আল-ফদল: এটা পণ্যসামাগ্রী বিনিময়ের ক্ষেত্রে কমবেশী করার সাথে সম্পৃক্ত। একই জাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের সাথে বেশি পরিমান পণ্য হাতে হাতে বিনিময় করা হলে পণ্যটির অতিরিক্ত পরিমানকে বলা হয় রিবা আল ফদল। উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ، وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ، وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ، وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ، وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ، وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ، مِثْلًا بِمِثْلٍ، سَوَاءً بِسَوَاءٍ، يَدًا بِيَدٍ، فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الْأَصْنَافُ فَبِيعُوا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- সোনার বদলে সোনা, রূপার বদলে রূপা, গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, খেজুরের বদলে খেজুর ও লবণের বদলে লবণ লেনদেন (কম-বেশি না করে) একই রকমে সমপরিমাণে ও হাত বাঁ হাত অর্থাৎ নগদে বিক্রয় চলবে। যখন ঐ বস্তুগুলোর মধ্যে প্রকারভেদ থাকবে তখন নগদে তোমরা ইচ্ছানুযায়ী বিক্রয় কর।[সহীহ মুসলিম, ১৫৮৭]
_________________________
🔰সুদের পরিনতি কি?
__________________________
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী ও সূদের দু’সাক্ষীর প্রতি অভিশাপ করেছেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অভিশাপে তারা সবাই সমান [সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/২৮০৭; বাংলা ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/২৬৮৩ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘সুদ’ অনুচ্ছেদ]।

আবদুল্লাহ ইবনু হানযালাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি জেনে শুনে এক দিরহাম বা একটি মুদ্রা সুদ গ্রহণ করলে ছত্রিশবার যেনা করার চেয়ে কঠিন হবে’ [আহমাদ, হাদীস সহীহ।, মিশকাত হা/২৮২৫; বাংলা মিশকাত হা/২৭০১]।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সুদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে মাতাকে বিবাহ করা’ [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৬, হাদীস সহীহ]।

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সুদ এমন বস্তু যার পরিণাম হচ্ছে সংকুচিত হওয়া যদিও তা বৃদ্ধি মনে হয়’ [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৮২৭]।

খাওয়ালাহ আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আল্লাহর সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম’ [সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৩৭৪৬]।

________________________
🔰সূদখোর কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?
_________________________
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সূদখোরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী ঘোষণা করেছেন [সূরা বাক্বারাহ ২/২৭৫]।

তবে বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কারণ শিরককারী ব্যতীত অন্য কোন কবীরা গুনাহগার ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না, যা কুরআন ও হাদীছের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সেকারণ বিদ্বানগণ ‘চিরস্থায়ী’ পরিভাষাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন।
(১) কুরআন বা হাদীছে কাফিরদের ক্ষেত্রে যখন উক্ত পরিভাষা ব্যবহার করা হয় তখন তার অর্থ হবে সীমাহীন।
(২) যখন তাওহীদবাদী পাপাচারীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে তার অর্থ হবে সীমাবদ্ধ। কারণ খালেছ তাওহীদে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে আল্লাহ তার পাপের শাস্তি দেওয়ার পর জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার শাফা‘আত প্রাপ্ত সবচাইতে সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে খালেছ অন্তরে বলেছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’ [সহীহ বুখারী হা/৯৯; মিশকাত হা/৫৫৭৪]।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা হ’ল মুসলিম পাপাচারীরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না, যেমনটি খারেজী ও মু‘তাযিলারা ধারণা করে থাকেন’ [মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৭/৬৭৯]। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানেঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।