যেখানে আযান হয়না

প্রশ্ন: আমি এখন একটা অমুসলিম দেশে আছি।এখানে আযান হয়না। এখন আমি যদি মোবাইলের অ্যাপস টিভি রেডিওতে যে আযান হয় ওই আযান শুনে আযানের জবাব এবং শেষে দোয়া পড়ি সেটাকে কি আযান আর ইকামতের দোয়া হিসেবে গন্য করা যাবে? বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আযান অর্থ আহবান করা, ঘোষণা করা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে শরী‘আত সম্মত উপায়ে উচ্চৈঃস্বরে সালাতের ঘোষণা প্রদানকে আযান বলা হয়।

সালাতের প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৃথকভাবে আযান দিতে হবে। ক্যাসেট বা সিডিতে আযান সংরক্ষণ করে সেটি প্রতি ওয়াক্তে শ্রবণ করানোর দ্বারা আযান প্রদান করা হ’লে তা বাতিল হবে। কেননা আযান দেওয়া ইবাদত। হাদীসে মুওয়াযযিনের বহু ফযীলত রয়েছে। যেমন মুওয়াযযিনের আযানের আওয়ায যত দূর যাবে তত দূর পর্যন্ত সকল মানুষ, জিন এবং সমুদয় বস্ত্ত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে। [সহীহ বুখারী হা/৬০৯; মিশকাত হা/৬৫৬]।

মুওয়াযযিনদের গর্দান ক্বিয়ামতের দিনে সর্বাধিক দীর্ঘ হবে। [সহীহ বুখারী হা/৬০৯; মিশকাত হা/৬৫৬]।

আযানের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব [ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১/৩০৯; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১২/১৯৬; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ৩৪০ পৃ.]।

তবে একই ওয়াক্তে একাধিকবার আযান হ’লে একটি আযানের জবাব দিলেই ফযীলত অর্জিত হবে। রাসূল (আল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি অন্তরের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে আযানের জওয়াব দিবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে [নাসাঈ হা/৬৭৪; মিশকাত হা/৬৭৬;সহীহুত তারগীব হা/২৪৬]।

🔰আযানের জবাব দেয়ার দুটি অবস্থা হতে পারে যার একটি বৈধ অপরটি বৈধ নয় যেমনঃ-

▪️১) সরাসরি আযান হচ্ছে সেটার জবাব দেয়া এটি বৈধ।
▪️২) রেকর্ডকৃত আযান শুনে সেটার জবাব দেয়া। এটি বৈধ নয়।

◾১) সরাসরি আযান হচ্ছে সেটার জবাব দেয়া, এটি বৈধ। কারন হাদীসে আযানের উত্তর দেওয়ার যে নির্দেশ এসেছে, তা সরাসরি মুয়াজ্জিন থেকে শোনা আজানের ব্যাপারে বলা হয়েছে।রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন,যখন তোমরা আযান শুনবে,তখন আযানের জবাবে তাই বলবে যা মুওয়াযযিন বলে থাকেন। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৩৮৪]।
.
যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুওয়ায্যিনের পিছে পিছে আযানের বাক্যগুলি অন্তর থেকে পাঠ করে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [মুসলিম হা/৩৮৫; মিশকাত হা/৬৫৮, ৬৭৬]।
.
অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুওয়াযযিন যা বলে তদ্রূপ বল’। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়। কেননা যে আমার উপর একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও…। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’ চাইবে তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে’ [সহীহ মুসলিম হা/৩৮৪; মিশকাত হা/৬৫৭]।
.
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা…রাযীতু বিল্লাহি…ওয়াবিল ইসলামে দীনা’ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। [সহীহ মুসলিম হা/৩৮৬; মিশকাত হা/৬৬১]।
.
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুওয়াযযিনরা তো আমাদের উপর ফযীলত প্রাপ্ত হচ্ছে। আমরা কিভাবে তাদের সমান ছওয়াব পাব? তিনি বলেন, মুওয়াযযিনরা যেরূপ বলে তুমিও তদ্রূপ বলবে। অতঃপর যখন আযান শেষ করবে! তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রূপ ছওয়াব প্রাপ্ত হবে।’ [আবুদাউদ হা/৫২৪; সহীহ আত-তারগীব হা/২৫৬]।
.
আর ইক্বামতের জবাব একইভাবে দিবে। উল্লেখ্য যে, আযান ও ইক্বামত দু’টিকেই হাদীসে ‘আযান’ বলা হয়েছে। [সহীহ বুখারী মিশকাত হা/৬৬২]।
.
◾২) রেকর্ডকৃত আযান শুনে সেটার জবাব দেয়া। এটি বৈধ নয়।কারন হাদীসে রেকর্ডকৃত আজান প্রচারিত হলে সেটার জবাব দিতে বলা হয়নি তাছাড়া রেকর্ডকৃত এই আযানটি যখন যেভাবে রেকর্ড করা হয়েছে সেটা কিন্তু এখনকার সালাতের আযান হিসেবে দেয়া হচ্ছেনা। সুতরাং আপনি যে সালাতের জন্য জবাব দিতে চাচ্ছেন সেটা সরাসরি এই ওয়াক্তের জন্য নয় বরং পূর্বের কোন ওয়াক্তে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আযান দাতা এখন মৃত ও হতে পারে। তাই এই আযানের জবাব দেয়া যেমন বৈধ নয় তেমনি দিলেও কোন ফজিলত পাওয়া যাবেনা কিন্তু সরাসরি লাইভে টিভি রেডিওতে আযান হবে এবং সেটার জবাব দিলে ফজিলত পাওয়া যাবে।
.
রেডিও-টেলিভিশনে রেকর্ডকৃত আযানের জবাব দেওয়া যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শায়খ সালেহ ইবনে উসাইমীন (রহঃ) প্রশ্ন করে হলে শায়খ বলেন, আযান দুই অবস্থা থেকে খালি নয় প্রথম অবস্থা হল এই আযানটা সরাসরি দেয়া হচ্ছে অর্থাৎ মুয়াজ্জিন সালাতের ওয়াক্ত হলে এই আযানটা প্রদান করছেন। তাহলে এই অবস্থায় করনীয় হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাধারণ নির্দেশনার কারণে এই আযানের জবাব দেয়া হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে,তখন আযানের জবাবে তাই বলবে যা মুওয়াযযিন বলে থাকেন। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। [সহীহ মুসলিম হা/৩৮৪]।

দ্বিতীয় অবস্থার ক্ষেত্রে ইবনে উসাইমীন (রহঃ)বলেন, যখন আযানটা রেকর্ডকৃত হয় এবং কোন ডিভাইসে রেকর্ড করা থাকে এবং সেটা ওয়াক্ত অনুযায়ী দেয়া হয়নি বরং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় হলে সেই রেকর্ডকৃত আযান প্রচার করা হয়, তাহলে এই আযানের জবাব দেয়া যাবেনা। কারন এটা প্রকৃত এই ওয়াক্তের আযান নয়। অর্থাৎ ব্যক্তি সরাসরি এই ওয়াক্তে দেননি বরং সেটা শ্রুতিতে এসেছে পূর্ববর্তী কোন আযানের রেকর্ড হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তাই এই আযানের জবাব দেয়া যাবেনা। [মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে উছায়মীন (রহঃ) ১২/১৯৬ পৃঃ]।
.
সৌদি স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৃথকভাবে আযান দিতে হবে। ক্যাসেট বা সিডিতে আযান সংরক্ষণ করে সেটি প্রতি ওয়াক্তে শ্রবণ করানোর দ্বারা আযান প্রদান করা হ’লে তা বাতিল হবে। কেননা আযান দেওয়া ইবাদত। যা মুওয়াযযিনের উপর আদায় করা ধার্য করা হয়েছে। এর কোন বিকল্প গ্রহণ করা হারাম। [ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৬/৬৯, ফৎওয়া-১০১৮৯।] (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)।
__________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।