রুকূ সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রশ্ন: রুকূ অর্থ কি? সালাতে সূরা ফাতিহা না পড়লে সালাত হয় না, এমতাবস্থায় রুকূ‘ পেলে কেন উক্ত রাক‘আত হবে? একটি দলিল ভিত্তিক আলোচনা।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর উপরেই অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে। সালাত সঠিক হলে অন্যান্য সব ইবাদত সঠিক হবে। আর সালাত বাতিল হলে অন্যান্য সব ইবাদত বাতিল হবে। তাই সালাতকে মানদন্ড বলা যায়।সালাত সম্পাদনের কতিপয় শর্তাবলি,স্তর বা রুকন,ওয়াজিব এবং সুন্নাত কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে। যেগুলি প্রতিপালন করলে সালাত সঠিক হবে এবং কাঙ্ক্ষিত সওয়াব অর্জিত হবে। পক্ষান্তরে এগুলি প্রতিপালন না করলে সালাত যেমন সঠিক হবে না,তেমনি কাঙ্ক্ষিত সওয়াবও অর্জিত হবে না। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ ‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবেই যেভাবে তোমরা আমাকে দেখছ।’(সহীহ বুখারী, হা/৬৩১)। এই হাদীস সালাত আদায়ের স্পষ্ট একটি নীতিমালা।

◾রুকূ শব্দের অর্থ এবং রুকূ করার সঠিক পদ্ধতি
_______________________________________
রুকু শব্দের অর্থ: মাথা ঝুঁকানো (الإنحناء)। পারিভাষিক অর্থ,শারঈ তরীকায় আল্লাহর সম্মুখে মাথা ঝুঁকানো। ক্বিরাআত শেষে মহাপ্রভু আল্লাহর সম্মুখে সশ্রদ্ধচিত্তে মাথা ও পিঠ ঝুঁকিয়ে রুকুতে যেতে হয়। রুকুতে যাওয়ার সময় ‘আল্লা-হু আকবার’ বলে তাকবীরের সাথে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত সোজাভাবে উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করে রুকুতে যাবে।(মুত্তাফাক্ব আলাইহ,সহীহ বুখারী হা/৭৩৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০২; এছাড়া হা/৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯ দ্রঃ,ইফাবা হা/৬৯৯-৭০৩, ২/১০০-১০১ পৃঃ; সহীহ মুসলিম হা/৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৮)। অতঃপর দুই হাতের আঙ্গুল খোলা রেখে দুই হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে রুকু করবে। রুকুর সময় পিঠ ও মাথা সোজা ও সমান্তরাল রাখবে। হাঁটু ও কনুই সোজা থাকবে। অতঃপর সিজদার স্থান বরাবর নযর স্থির রেখে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা ও নিজের ক্ষমা প্রার্থনায় মনোনিবেশ করে দোআ পড়তে থাকবে। রুকু ও সিজদার জন্য হাদীসে অনেকগুলি দোআ এসেছে। তন্মধ্যে রুকুর জন্য سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ (সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম) ‘মহা পবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান’ এবং সিজদার জন্য سُبْحَانَ رَبِّىَ الْأَعْلَى ( সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা) ‘মহা পবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ।’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৮১)। সর্বাধিক প্রচলিত। এ দু’টি দোআ তিনবার পড়বে। বেশির কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। (আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৮৮৫; ইবনু মাজাহ হা/৮৮৮; আলবানী, ছিফাত, ১১৩ পৃঃ, ‘রুকূর দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ, টীকা-২ ও ৩)। ঊর্ধ্বে দশবার পড়ার হাদীস ‘যঈফ’। (তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৮০, ৮৮৩ ‘সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রুকূ‘ অনুচ্ছেদ-১৩।সনদ জয়ীফ)।

◾ইমামের পিছনে সূরা আল-ফাতিহা না পড়লে সালাত হয় না, তবে রুকূ পেলে কেন রাক‘আত হবে?
______________________________________
মুত্তাদী ইমামের পিছনে সূরা আল-ফাতিহা না পড়লে সালাত হয় না বিশেষ করে যোহর এবং আসর সালাতে,যা একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।রাসূল (ﷺ) বলেন, اَ صَلاَةَ لِمَنْ لَّمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ (‘লা সালা-তা লিমান লাম ইয়াক্বরা’ বিফা-তিহাতিল কিতা-ব’) ‘ঐ ব্যক্তির সালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে না’। (সহীহ বুখারী, ৭৫৬ মুসলিম, ৭৬৬ মিশকাত হা/৮২২) অপর বর্ননায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে নির্দেশ দেন যেন আমি এই কথা ঘোষণা করে দেই যে,সালাত সিদ্ধ নয় সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু’।(আবু দাঊদ হা/৮২০) এখানে প্রথমে সূরায়ে ফাতিহা, অতঃপর কুরআন থেকে যা সহজ মনে হয়, সেখান থেকে অতিরিক্ত কিছু পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামের সাথে মুক্তাদী রুকু পেলে রাক‘আত গণ্য হবে কিনা উক্ত মাসআলায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে সামান্য ইখতিলাফ থাকলেও সংশ্লিষ্ট হাদীস, আছার ও পরবর্তী প্রায় সকল বিদ্বানের পর্যালোচনার আলোকে বিশুদ্ধ বক্তব্য হল রুকু পেলে রাক‘আত গণ্য হবে। এ ব্যাপারে ইবনে মাসঊদ, ইবনে উমার, যায়দ বিন সাবেত, আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র প্রভৃতি কর্তৃক রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। পক্ষান্তরে আবূ বাকরার সহীহ হাদীসটির ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনেকে হাদীসটিকে রুকূ পেলে রাকআত গণ্য হওয়ার দলীল হিসাবে ব্যবহার করেছেন। হাদীসটি হল,আবূ বাকরাহ্‌ একদা মসজিদ প্রবেশ করতেই দেখলেন নবী (ﷺ) রুকূতে চলে গেছেন। তিনি তাড়াহুড়ো করে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই রুকূ করলেন। অতঃপর রুকূর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে গিয়ে শামিল হলেন। একথা নবী (ﷺ)-কে বলা হলে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ্‌ আরো বৃদ্ধি করুন। আর তুমি দ্বিতীয় বার এমনটি করো না। (অথবা আর তুমি ছুটে এসো না। অথবা তুমি নামায ফিরিয়ে পড়ো না।)” (সহীহ বুখারী,মিশকাত ১১১০) উক্ত হাদীসে রুকূ পেলে রাকআত পেয়ে নেওয়ার কথা ইঙ্গিতে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আর একটি সুন্নতের কথা বর্ণিত হয়েছে যে, যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে ইমামকে রুকূর অবস্থায় দেখে তাহলে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই তার জন্য রুকূ করা সুন্নত। তাতে যদি সে ইমামের মাথা তোলার পর কাতারে শামিল হয় তাহলেও তার ঐ রাকআত গণ্য হয়ে যাবে। (আলবানী রহ,তামামুল মিন্নাহ্‌, ২৮৬পৃ:)।
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ ‘যে ব্যক্তি সালাতের রাক‘আত পেল সে সালাত পেল।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৬০৭; মিশকাত, হা/১৪১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩২৮, ৩/১৯৯ পৃ.)। উক্ত হাদীসের ‘রাক‘আত’-এর অর্থ নিয়ে বিদ্বানগণের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। তবে অধিকাংশ বিদ্বানের মতে ‘রাক‘আত’ অর্থ রুকু। তাই রুকু পেলে রাক‘আত হিসাবে গণ্য হবে। অনুরূপ কোন বর্ণনায় ‘সাজদাহ’ উল্লিখিত হয়েছে (সহীহ বুখারী, হা/৫৫৬; মিশকাত, হা/৬০২; আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃ. ৯৭)। তাই রাক‘আত বলতে রুকু। যেমন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) পরিপূর্ণ রুকুকেই রাক‘আত হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং দলীল হিসাবে উক্ত হাদীস উল্লেখ করেছেন। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২৩ তম খণ্ড, পৃ. ৩৩২)।
.
তাছাড়া জুম‘আর সালাত সম্পর্কে এসেছে, مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْجُمُعَةِ أَوْ غَيْرِهَا فَقَدْ تَمَّتْ صَلَاتُهُ ‘যে ব্যক্তি জুম‘আ বা অন্য সালাতে রাক‘আত পাবে, তার সালাত পূর্ণ হবে।’ (নাসাঈ, হা/৫৫৭; ইবনু মাজাহ, হা/১১২৩, সনদ সহীহ)। উক্ত হাদীসে ‘রাক‘আত’ অর্থ রুকু। শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ‘ইমামের সাথে রাক‘আত না পেলে জুম‘আ গণ্য হবে না। আর রাক‘আত পাওয়া হল, ইমামের সাথে রুকু পাওয়া। সুতরাং যখন মুক্তাদী ইমামকে দ্বিতীয় রাক‘আতে রুকু থেকে উঠার আগেই পেয়ে যাবে, তখন সে সালাত পেয়ে যাবে। অতঃপর ইমামের সালামের পর মুসল্লী তার সালাত সম্পন্ন করবে। অর্থাৎ মুক্তাদী দাঁড়িয়ে ছুটে যাওয়া রাক‘আত পড়ে নিবে। (ফাতাওয়াউল ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, পৃ. ৮৯৪, প্রশ্ন নং-১২৬০১)।
.
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যখন মুসল্লী ইমামের সাথে সালাত আদায় করে এবং ইমামকে রুকু অবস্থায় পায় অতঃপর সূরা ফাতিহা না পড়েই রুকু করে, তবে তার সালাত সহীহ হবে।’ (ফাতাওয়াউল ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, প্রশ্ন নং-৬৫৫১)। অতঃপর তিনি দলীল হিসাবে পেশ করেছেন, আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الصَّلَاةِ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ ‘যে ব্যক্তি সালাতের রাক‘আত পেল সে সালাত পেল।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৮০; ছহীহ মুসলিম, হা/৬০৭; মিশকাত, হা/১৪১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩২৮, ৩/১৯৯ পৃ.)। সালেম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আ বা অন্যান্য সালাতের এক রাক‘আত পেল, সে তার পূর্ণ সালাত পেল।’ (নাসাঈ, হা/৫৫৭; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৯৪)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রুকু পেলে রাক‘আত গণ্য হবে। তিনি দলীল হিসাবে নিচের হাদীসটি উপস্থাপন করেছেন। عَنْ أَبِىْ بَكْرَةَ رضى الله عنه أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ رَاكِعٌ فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَّصِلَ إِلَى الصَّفِّ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّفِّ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَّلَا تَعُدْ আবু বাকরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এমন অবস্থায় পৌঁছলেন, যখন তিনি রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি কাতারে পৌঁছার পূর্বেই রুকু করলেন অতঃপর তিনি হেঁটে কাতারে পৌঁছলেন। বিষয়টি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানালে তিনি বলেন, আল্লাহ তোমার (ইবাদতের প্রতি) আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিন, তবে পুনরায় এরূপ করবে না। (সহীহ বুখারী, হা/৭৮৩; আবু দাঊদ, হা/৬৮৩-৮৪; মিশকাত, হা/১১১০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১০৪২, ৩/৬৪ পৃ.)।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উক্ত সালাত ক্বাযা আদায়ের নির্দেশ দেননি। তাকে কাতার ছাড়া রুকুতে ফিরে যেতে নিষেধ করেছেন। তবে মাসবুকের দায়িত্ব হল কাতারে প্রবেশ না করা পর্যন্ত রুকুতে যাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। আর এটাই সহীহ ও জায়েয হওয়া বুঝায়। হাদীসে বর্ণিত ‘রাক‘আত’ অর্থ যে, রুকু এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, من أدرك الركوع فقد أدرك الركعة ‘যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাক‘আত পেল।’ (শায়খ বিন বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১১/২৪৬ পৃ., ৩০/১৪৭ পৃ.)।
.
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: রুকু পেলে রাক‘আত গণ্য হবে। তিনি নিচের হাদীস উল্লেখ করেন। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُوْدٌ فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعُدُّوْهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلَاةَ ‘তোমরা সালাতে এসে আমাদেরকে সিজদায় পেলে সিজদায় চলে যাবে। তবে এ সিজদাকে গণ্য করবে না। আর যে ব্যক্তি রাক‘আত পেল সে সালাত পেয়েছে।’ (আবু দাঊদ, হা/৮৮৯, সনদ হাসান)। তিনি উক্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন, হাদীসে রাক‘আত অর্থ হল রুকু। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রুকু পেল সে সালাত পেয়েছে বলে গণ্য হবে।’ (আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৯৬, ২/২৬০ পৃ.)। অতঃপর আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) আরো একটি হাদীস উপস্থাপন করেছেন। আব্দুল আযীয ইবনু রাফে (রাহিমাহুল্লাহ) এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِذَا جِئْتُمْ وَالْإِمَامُ رَاكِعٌ فَارْكَعُوْا وَإِنْ كَانَ سَاجِدًا فَاسْجُدُوْا وَلَا تَعْتَدُّوْا بِالسُّجُوْدِ إِذَا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ الرُّكُوْعُ
‘তোমরা যখন ইমামের রুকু অবস্থায় আসবে, তখন তেমারা রুকু কর। আর যদি সিজদা অবস্থায় থাকে, তাহলে সিজদা কর। তবে ইমামের সাথে রুকু না পেলে সিজদা পাওয়ার কারণে রাক‘আত গণ্য করবে না।’ (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, হা/২৫৭৬; সিলসিলা আহাদীছিয যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ, ১০/১৮৬ পৃ.)। উক্ত হাদীসকে তিনি সহীহ দাবী করে গভীর পর্যালোচনা করেছেন। (ইরওয়াউল গালীল, ২/২৬১-৬৬ পৃ., হা/৪৯৬-এর আলোচনা দ্র., সনদ সহীহ)। তাছাড়া তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৬২২; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২৫৮০; ইরওয়াউল গালীল, ২/২৬৩ পৃঃ), যায়েদ ইবনু ছাবেত (মুলতাক্বা আহলিল হাদীস, ২৬/২২১ পৃ.; ইরওয়াউল গালীল, ২/২৬৩-৬৪ পৃ.), ওছমান ইবনুল আসওয়াদ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/২৬৪৬; ইরওয়াউল গালীল, ২/২৬৪ পৃ.) সহ বিভিন্ন সাহাবী ও তাবেঈ থেকে অনেক সহীহ আছারও পেশ করেছেন (ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৯৬)।
.
সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ড ‘আল-লাজনা আদ-দায়েমা’ ফতওয়া প্রদান করেছে যে, রুকু পেলে রাক‘আত বলে গণ্য হবে। দলীল হিসাবে তাঁরা আবু বাকরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং এ সম্পর্কে ‘আম হাদীস দু’টি উল্লেখ করে বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সূরা ফাতিহা পড়তে না পারার কারণে পুনরায় রাক‘আত ক্বাযা করতে আদেশ করেননি। সুতরাং যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাক‘আত পেল। (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমা, ৬/২২১ পৃ., ফৎওয়া নং-১৭৬৬১)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, মাসবুক যখন ইমামের রুকুর সাথে রুকু করে তখন তার রুকু রাক‘আত হিসাবে গণ্য হবে সূরা আল-ফাতিহা না পড়া সত্ত্বেও। এটাই জমহূর এর মতামত এবং এটাই প্রাধান্যযোগ্য মত ইনশাআল্লাহ। কেননা আবু বকর সাকাফীর হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উক্ত কর্মের জন্য তাকে বলেছেন আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিক (জামা‘আতে ছালাত আদয়ের আগ্রহ)। উক্ত ঘটনায় লক্ষনীয় বিষয় হল, যদি মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু পাওয়া রাক‘আত বলে গণ্য না হত তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বাকরা কে ঐ রাক‘আতটি পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দিতেন, যে রাক‘আতে তিনি সূরা আল-ফাতিহা পড়েননি। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অতএব প্রমাণিত হল যে, রুকু পেলে রাকা‘আত হয় (সালিহ আল-উসাইমীন, শারহুল মুমতি‘, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১২৩)।
.
তিনি আরো বলেন,কোন মুসল্লী যখন ইমামের রুকু অবস্থায় সালাতে প্রবেশ করে তখন তিনটি হালাত বা অবস্থা বর্ণনা করেছেন। যথা:

ক. এ মর্মে নিশ্চিত হওয়া যে, ইমামের রুকু থেকে উঠার পূর্বে সে রুকুতে পৌঁছেছে, তখন সে রাক‘আত পেয়েছে বলে গণ্য হবে। কিন্তু তার সূরা ফাতিহা ছুটে গেছে।

খ. এ মর্মে নিশ্চিত হওয়া যে, তার রুকুতে পৌঁছানোর পূর্বে ইমাম রুকু থেকে উঠে গেছে, তখন তার রাক‘আত ফউত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং তার ক্বাযা আদায় করতে হবে।

গ. এ মর্মে সন্দেহ পোষণ করা যে, সে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়েছে অথবা তার রুকু পাওয়ার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে উঠে গেছে, তাহলে তার সন্দেহটা বিজয়ী হবে। অর্থাৎ তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারাব, অডিও ক্লিপ-১৭৫, প্রিন্ট পৃ. ১-২)।
.
অন্যদিকে রুকু পেলে রাক‘আত গণ্য হবে না মর্মে যে সমস্ত প্রমাণ পেশ করা হয়, সেগুলোকে অনেকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। (ইরওয়াউল গালীল, ২/২৬৫-২৬৬, হা/৪৯৬-এর আলোচনা দ্র.)। তাছাড়া সূরাহ ফাতিহা না পড়ার কারণে রাক‘আত গণ্য হবে না মর্মে যে যুক্তি পেশ করা হয়, তা দলীলের আলোকে প্রমাণিত হয় না। কারণ এখানে রুকুর অবস্থাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যেমন জনৈক সাহাবী কুরআন থেকে কোন কিছু মুখস্থ রাখতে অক্ষমতা পেশ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সালাতে ‘সুবহা-নাল্লাহি, ওয়াল হামদুলিল্লাহি, ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার ওয়ালা হাউলা ওলা কুউওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ পড়তে বলেন। (আবূ দাঊদ, হা/৮৩২, সনদ হাসান)। এখানে সূরা ফাতিহা পড়তে না বলার কারণ হল তার অক্ষমতা। এই অক্ষমতার কারণে উক্ত ব্যক্তি সূরাহ আল-ফাতিহা না পড়লেও তার সালাত হবে বলে সাব্যস্ত হয়। (আল ইখলাস) মহান আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল (ﷺ) দেখানো পদ্ধতিতে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়ঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।