রাসূল (ﷺ) একটি হাদীসে চুলের যত্ন নিতে বলেছেন আবার অন্য হাদীসে প্রতিদিন মাথার চুল আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন দুটি হাদীসে দুরকম বর্ণনার মূল কারণ কি

স্বাভাবিক ভাবে চুলের যত্ন নেওয়া, চুলের সৌন্দর্য বর্ধন করা, ধোয়ার মাধ্যমে চুল পরিচ্ছন্ন রাখা, চুলে তেল ব্যবহার করা এবং চুল এলোমেলো না রাখা মুস্তাহাব। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; যে ব্যক্তির চুল আছে, সে যেন তা যত্ন নেয়া রাখে। (আবু দাঊদ ৪১৬৩, সিলসিলা সহীহা হা/৫০০, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৪৪৫০)। তবে চুলের যত্ন নিতে গিয়ে অধিক বিলাসিতা ও প্রাচুর্যতায় লিপ্ত থাকা যাবেনা। কেননা এটি অনারব তথা কাফিরদের অভ্যাস। আর কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করা মুসলিমদের জন্য জায়েজ নয়। এজন্য অপর বর্ণনায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রত্যহ) মাথা আঁচড়াতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী হা/ ১৭৫৬, আবু দাঊদ হা/ ৪১৫৯, সিলসিলা সহীহা হা/৫০১)। এই হাদীসটিতে মূলত চুল চিরুনির কর্মে প্রতিদিন ব্যস্ত থাকতে নিষেধ করা হয়েছে; কেননা এটা এক ধরনের বিলাসিতা। আর অধিক বিলাসিতার নিষেধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (‘আওনুল মা‘বূদ হাঃ ৭ম খন্ড, ৪৪৪৮)
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন, একদিন চিরুনি করবে এবং একদিন বাদ দিবে। অর্থাৎ প্রতিদিন না করে একদিন মাঝে রেখে চিরুনি করবে। কেউ কেউ বলেন, এক সময় করবে এক সময় বাদ দিবে। (আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হা/ ৪৪৪৮) ইমাম শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] উভয় হাদীসের মাঝে বিরোধ নিরসনে বলেছেন; সঠিক কথা হলো, চুলের যত্ন নেয়ার হাদীস এবং ঘন ঘন চিরুনি না করার হাদীসের মাঝে কোন ধরনের সংঘর্ষ নেই। কেননা বান্দা চুলের যত্ন নিতে নির্দেশিত। আর বিলাসিতায় আধিক্যতা অবলম্বনে নিষিদ্ধ। তাই সে চুলের যত্ন নিবে তবে বিলাসিতা ও চুল নিয়ে মত্ত থাকাকে তার অভ্যাস বানাবে না। বরং মাঝে মাঝে বাদ দিয়ে চিরুনি করবে। উভয় হাদীসের এভাবে অর্থ নেয়াই উত্তম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৫৯ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৬৯৮১৯)
.
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে প্রতিদিন মাথার চুল আঁচড়ানো নিষেধ এই বিধান কি নারী ও পুরুষের জন্য, নাকি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই সীমাবদ্ধ? এমন প্রশ্ন বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]- কে করা হলে শাইখ জবাবে বলেন, নিয়ম হলো হুকুম-নিষেধের ক্ষেত্রে যা হয় তা সবার জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ এই বিধান নারী পুরুষ হোক জন্য প্রযোজ্য। (বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৮৫৫)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, চুল চিরুনি করা বা চুলের যত্ন নেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত এবং তার নির্দেশ। অতএব পরের হাদীসে নিষেধের অর্থ এটাই যে, চুলের যত্ন নিতে গিয়ে বা চিরুনি করতে গিয়ে চুলের পিছে পড়ে যাওয়া এবং চুল নিয়েই ব্যস্ত থাকা ঠিক নয়। কেননা মুমিনগণ বেহুদা কাজে সময় নষ্ট করেনা, মুমিনের সময়ের মূল্য রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা মুমিনুনের মধ্যে ইমানদার ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যে উল্লেখ করে বলেন, আর সেই সমস্ত লোকেরা, যারা বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখে। (সূরা মুমিনুনঃ; ২৩/৩)। মোটকথাঃ যেসব কথায় বা কাজে কোন লাভ হয় না, যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, যেগুলোর আসলে কোন প্রয়োজন নেই, যেগুলোর উদ্দেশ্যও ভাল নয় সেগুলোর সবই ‘বাজে’ কাজের অন্তর্ভুক্ত। যাতে কোন দ্বীনী উপকার নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান। সুতরাং এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তার ইসলাম সৌন্দর্য মণ্ডিত হতে পারে।’ (তিরমিযী হা/২৩১৭, ২৩:১৮, ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৭৬)। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক আমীন। (আল্লাহ ই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।