রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত এমন কোন হাদিস আছে কি যে কতক ক্বারীকে কুরআন লানত করে

উত্তর: “কতক ক্বারীকে কুরআন লানত করে” এই মর্মে রাসূল ﷺ থেকে প্রমাণিত কোন হাদিস আছে বলে আমরা জানি না। মূলত এই বর্ননাটি ইমাম গাজালী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন’ গ্রন্থে এ হাদিসকে প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৯৩ হি.]-এর দিকে সম্বোন্ধিত করেছেন যে, তিনি বলেন:
رب تال للقرآن والقرآن يلعنه ”
“কতক তেলাওয়াতকারীকে কুরআন লানত করে”।[ইইইয়াউ উলুমুদ্দীন, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ২৭৪)
.
সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র-২ তে এসেছে:

هذا أثر عن ميمون بن مهران ، وليس بحديث عن النبي صلى الله عليه وسلم .
ومعنى هذا: تحذير المسلم الذي يقرأ القرآن من ترك العمل به ، فإن من عباد الله من يمر على ما ينهى عنه القران ، كنهيه عن الربا ثم يتعامل بالربا ، وكنهيه عن الظلم ثم يظلم ، وكنهيه عن الغيبة ثم يقع فيها ، ونحو ذلك مما في القرآن الكريم من الأوامر والنواهي , وبالله التوفيق”

“এটি মায়মুন বিন মিহরানের উক্তি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস নয়।

এর মর্ম হচ্ছে: এমন মুসলিমকে সতর্ক করা, যিনি কুরআন পড়েন; কিন্তু আমল করেন না। কারণ আল্লাহ্‌র বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু বান্দা রয়েছে যারা কুরআনের নিষেধাজ্ঞাগুলো অবগত হয়; যেমন সুদের নিষেধাজ্ঞা; এরপর সুদী কারবার করে। কিংবা জুলুমের নিষেধাজ্ঞা; এরপর তারা জুলুম করে। কিংবা গীবত করার নিষেধাজ্ঞা; এরপর তারা গীবতে লিপ্ত হয়। এভাবে কুরআনে উদ্ধৃত আরও যে সব আদেশ ও নিষেধ রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও। আল্লাহ্‌ই তাওফিকদাতা।”(স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র, খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২১৩)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]- কে “কতক ক্বারীকে কুরআন লানত করে” এই হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। কিভাবে কুরআন তার পাঠককে লানত করে এবং কেন?

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বলেন:

لا أعلم صحة الحديث عن النبي صلى الله عليه وسلم ، ولا حاجة إلى تفسيره .
ولو صح لكان المعنى : أن في القرآن ما يقتضي ذمه ولعنه ؛ لكونه يقرأ القرآن وهو يخالف أوامره ، أو يرتكب نواهيه ، يقرأ كتاب الله وفي كتاب الله ما يقتضي سبه وسب أمثاله ؛ لأنهم خالفوا الأوامر وارتكبوا النواهي .
هذا هو الأقرب في معناه إذا صح عن النبي صلى الله عليه وسلم ؛ ولكني لا أعلم صحته عن النبي صلى الله عليه وسلم ”

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই হাদিসের সত্যতা জানি না। সুতরাং এর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। আর যদি সহিহ সাব্যস্ত হয় তাহলে অর্থ হবে: কুরআনে এমন কিছু রয়েছে যা পাঠকারীর নিন্দা করা ও লানত করার দাবী করে। এ কারণে যে, সে কুরআন পড়ে কিন্তু কুরআনের নির্দেশগুলো লঙ্ঘন করে এবং নিষেধগুলোতে লিপ্ত হয়। আল্লাহ্‌র কিতাবে পড়ে; অথচ আল্লাহ্‌র কিতাবে এমন কিছু রয়েছে যা তাকে ও তার মত যারা রয়েছে তাদেরকে গালি দেয়ার দাবী করে। যেহেতু তারা আদেশগুলো লঙ্ঘন করে এবং নিষেধগুলোতে লিপ্ত হয়। এটাই এর নিকটতম মর্ম; যদি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সাব্যস্ত হয়। কিন্তু আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এর সত্যতা জানি না।”(বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/২৬; পৃষ্ঠা: ৬১)
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে হাদীসটি রাসূল ﷺ বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২২৪০৩৫) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী