রমজান মাসে ওমরা করলে হজের সমপরিমাণ নেকি হয় এর সঠিক ব্যাখ্যা

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। ইমাম বুখারী ও মুসলিম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন আনসারী মহিলাকে বললেন:-আমাদের সাথে হজ করতে কিসে তোমাকে বাধা দিচ্ছে? মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট, যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, রমাযান এলে তখন ‘উমরাহ করে নিও। কেননা, রমযানের একটি ‘উমরাহ একটি হাজ্জের সমতুল্য। আর মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,(আমার সাথে হজ করার সমতুল্য )।(সহীহ বুখারী/১৭৮২ ও মুসলিম হা/১২৫৬)।
.
অত্র হাদীসে রমাযান মাসে ‘উমরা পালন করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।আর হাদিসে বর্ণিত ফযীলত কে অর্জন করতে পারে সে বিষয়ে আলেমদের মধ্যে থেকে তিনটি মতামত পাওয়া যায়।
.
▪️প্রথম: এই হাদিসটি মুহাম্মাদ (ﷺ) যে মহিলাকে বলেছিলেন তার সাথে খাস বা সীমাবদ্ধ। আর এই মতটিকে পছন্দ করেছেন বিখ্যাত তা’বিয়ী সাইদ বিন জুবায়ের। যেমনটি ইবনে হাজার তার “ফাতহুল বারী-৩/৬০৫” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আর এই মতের পক্ষে যে সকল দলিল উপস্থাপন করা হয় তার মধ্যে উম্মে মা’ক্বিল এর হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:-হজ্জ তো হজ্জ, আর উমরা তো উমরা-ই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ বলেন। আর আমি অবগত নই যে, এটা কি আমার জন্য খাস, নাকি গোটা উম্মতের জন্যও এরূপ নির্দেশ।(আবু দাউদ/১৯৮৯), ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন: মুসলিমের শর্তে সহীহ। অপরদিকে ইমাম আলবানী এটিকে তার “যয়ীফ আবি দাউদ” গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন।(আবু দাউদ হা/১৯৮৯)
.
▪️দ্বিতীয়: এই ফজিলত অর্জিত হবে ঐ সকল লোকদের যারা হজের নিয়ত করবে অতঃপর তা সম্পাদন করা হতে অপারগ হবে। অতঃপর রমজান মাসে উমরার উদ্দেশ্যে বের হবে। ফলে মুহাম্মদ (ﷺ)-এর সাথে পরিপূর্ণ হজের প্রতিদান ওমরা আদায়ের সাথে হজের নিয়ত একত্রিত হওয়ার কারণে সে পেয়ে গেল।
.
হাফিয যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ‘আব্দুর রহমান বিন শিহাব যিনি ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি.মৃত:৭৯৫ হি:] বলেছেন,

” واعلم أن مَن عجز عن عملِ خيرٍ وتأسف عليه وتمنى حصوله كان شريكا لفاعله في الأجر… – وذكر أمثلة لذلك منها – : وفات بعضَ النساءِ الحجُّ مع النبي صلى الله عليه وسلم ، فلما قدم سألته عما يجزئ من تلك الحجة ، قال : ( اعتمري في رمضان ، فإن عمرة في رمضان تعدل حجة أو حجة معي )

জেনে রাখুন! কোন ব্যক্তি যখন কল্যাণমূলক কাজ হতে অপারগ হবে। এবং তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে আর তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করবে। তাহলে সে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে ঐ কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তির অংশীদার হবে…..। এর দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে। তার মধ্যে হতে: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কতিপয় মহিলার হজ্জ ছুটে গিয়েছিল। অতঃপর যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন তখন তারা তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কী কাজ করলে এ হজ্জের সমপরিমাণ হবে বা যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন:-রমাযান মাসে উমরা আদায় করো।কারণ রমাজান মাসে উমরা আদায় করা হজ্জের অথবা আমার সাথে হজ্জের সমপরিমাণ নেকি”।(লাত্বায়িফুল মা’আরেফ ইবনু রজব পৃষ্ঠা: ২৪৯)।অনুরূপ কথা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তার “মাজমু’ল ফাতওয়া”গ্রন্থে,ইমাম ইবনু কাসির তার তাফসির গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। (দেখুন তাফসিরে ইবনে কাসীর খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৫৩১“মাজমু’ল ফাতওয়া খন্ড: ২৬, পৃষ্ঠা: ২৯৩, ২৯৪)।
.
▪️তৃতীয়: চার মাযহাবের আলেমগনসহ অন্যান্যদের মধ্য হতে আহলুল ইলম যেদিকে মত দিয়েছেন তা হলো: এই হাদিসে বর্ণিত ফজিলত সাধারণ অর্থে রমজান মাসে ওমরাহকারী প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ রমজান মাসে ওমরা পালনকারী সকল মুসলিম নারী পুরুষই এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং রমজান মাসে ওমরা পালন করা হজের সমপরিমাণ নেকি। আর এটি সকল মানুষের ওপর প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি বা অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ নয়। দেখুন: (রদ্দুল মুহতার: খন্ড: ২, পৃষ্ঠা:৪৭৩, মাওআয়িবুল জালিল: খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৯,নববী আল-মাজমু’উ: খন্ড: ৭,পৃষ্ঠা: ১৩৮, ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী: খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৯১,আল-
মাওসুআতুল ফিক্বহিয়্যাহ: খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৪৪)।
.
উপরোক্ত তিনটি মতামতের মধ্য হতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো শেষের অর্থাৎ তৃতীয় মতটি (আল্লাহু আলাম)। আর তা হল যারা রমজান মাসে ওমরা করবে তাদের সকলের জন্য এ ফজিলত। এর পক্ষে বেশ কিছু প্রমাণ রয়েছে। যেমন:

(১)-হাদীসটি সাহাবীদের একটি বড় দল হতে বর্ণিত। ইমাম তিরমিজি বলেন:- এই অধ্যায়ে ইবনে আব্বাস, জাবির, আবু হুরায়রা, আনাস ও ওয়াহাব বিন খুম্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে। তাদের একাধিক বর্ণনা রয়েছে যা প্রশ্নকারী মহিলার ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়নি।
.
(২)-যুগ যুগ ধরে মানুষদের আমল। সাহাবী, তাবিয়ী, আলেমগণ ও সৎলোকদের মধ্যে হতে সকল মানুষ যারা সর্বদা রমজানে উমরা পালনের জন্য আগ্রহী ছিল যাতে তারা এই সওয়াব অর্জন করতে পারে।
.
⚫এখানে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাকি থাকে।আর তা হচ্ছে রমজান মাসে ওমরা পালন করা হজের সমপরিমাণ নেকি হয় একথা সঠিক কিন্তু তার মানে এই নয় যে,কোন ব্যক্তি রমজান মাসে ওমরা পালন করলে তার জন্য ফরজ হজ্জ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তিনি আল্লাহর ফরজ হজ্জ পালনে যিম্মাদারি থেকে মুক্ত হবেন।বরং যে ব্যক্তির উপরে হজ্ব ফরজ হয়েছে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে অনতিবিলম্বে হজ্জ আদায় করা। কেননা প্রত্যেকটি ফরজ আমল অনতিবিলম্বে আদায় করা বাধ্যতামূলক, আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”[সূরা আলে ইমরান, ৩: ৯৭] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করো।” হজ্জ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা (ঐক্যমত) সংঘটিত হয়েছে।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: হজ্জ পালন কি অবিলম্বে ফরয; নাকি বিলম্বে?

জবাবে তিনি বলেন:
“الصحيح أنه واجب على الفور، وأنه لا يجوز للإنسان الذي استطاع أن يحج بيت الله الحرام أن يؤخره، وهكذا جميع الواجبات الشرعية، إذا لم تُقيد بزمن أو سبب، فإنها واجبة على الفور ”
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হজ্জ অবিলম্বে ফরয। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ পালনে বিলম্ব করা নাজায়েয। অনুরূপ বিধান শরিয়তের সকল ফরয আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি কোন আমল বিশেষ কোন কাল বা কারণের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সেটা অবিলম্বে আদায় করা ফরয (উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড, ১৩ পৃষ্ঠা: ২১)
.
সুতরাং “রমজান মাসে ওমরা করা হজ্জের সমতুল্য” এই হাদিস দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে তা হল, তারা সওয়াবের দিক থেকে সমান, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নয়। তা সত্ত্বেও,রমজানে উমরাহর সওয়াব এবং হজের সওয়াবের মধ্যে সমতা বলতে যা বোঝায় তা পরিমাণের দিক থেকে সমতা, প্রকারের দিক থেকে নয়।নিঃসন্দেহে কর্মের দিক দিয়ে ওমরা পালন করার থেকে হজ্জ পালন করা অধিক শ্রেষ্ঠ। ফলে যে ব্যক্তি রমজান মাসে ওমরা পালন করবে,সে হজের সমপরিমাণ নেকি পেলেও হজের আমল যে বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে আসে যা উমরার মধ্যে নেই। তা হলো আরাফার ময়দানে দোয়া করা, যামারায় পাথর নিক্ষেপ করা,কোরবানি করা ইত্যাদি। ফলে এ দুটি যদিও সংখ্যার দিক থেকে নেকির ক্ষেত্রে সমান। কিন্তু পদ্ধতি ও প্রকারের ক্ষেত্রে সমান নয় বরং ভিন্নতা রয়েছে।কেননা বস্ত্তকে কোন বস্ত্তর সাথে তুলনা করার অর্থ এ নয় যে, এ বস্ত্তটি সর্বাংশে তুল্য বস্ত্তর সমান বরং এক বস্ত্তর সাথে অন্য বস্ত্তর কোন দিক দিয়ে মিল থাকলেই তাকে ঐ বস্ত্তর সাথে তুলনা করা যায়। যদিও সব দিক দিয়ে তার সমতুল্য নয়।আর এটি ইবনে তাইমিয়ার দিক নির্দেশনা যখন তিনি একটি হাদিস সম্পর্কে হাদিসের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে সুরাতুল ইখলাস একবার পাঠ করা কুরআনের এক তৃতীয়াংশ সমপরিমাণ। শাইখুল ইসলামের ব্যাখ্যাটি বুঝতে হলে একটি বিষয় বুঝতে হবে। আরবীতে জাযা (جزاء) এবং ইহযা (اجزاء) শব্দ দু’টির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ‘জাযা’ বলা হয় আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে কোনো কাজের সওয়াব বা প্রতিদানকে আর ইজযা’ বলা হয় কোনো কাজ অন্য কাজ থেকে অমুখাপেক্ষি করে দেয়া এবং অন্য কাজের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাওয়া। শেষোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী (অর্থাৎ সূরা ইখলাস সওয়াবের ক্ষেত্রে কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান) উক্ত হাদীসে সূরা ইখলাস এর জাযা বা সওয়াব কোরআনের এক- তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়েছে, একথা বলা হয় নি সূরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ পড়া থেকে অমুখাপেক্ষি করে দেবে বা এক-তৃতীয়াংশের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝা যেতে পারে। কেউ যদি হারাম শরীফে এক নামায পড়ে তাহলে এক লক্ষ নামাযের সওয়াব পাবে তাই বলে কেউ কি এমন মনে করবে যে, যেহেতু এক লক্ষ নামাযের সওয়াব পেয়েছি সুতরাং দশ বছর নামায না পড়লেও চলবে!! কেউ কি এমন মনে করবে? কখনো নয়। তেমনিভাবে সূরা ইখলাস এবং কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের বিষয়টি।(আরো বিস্তারিত জানি মাজমূউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া: ১৭/৭৪-৭৫)
.
ইসহাক বিন রাহবিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:- এই হাদিসটি, অর্থাৎ, “রমজানে ওমরাহ হজের সমতুল্য”, এর অর্থ রাসূল (ﷺ) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তার অনুরূপ। যেমন তিনি বলেন যে ব্যক্তি সুরাতুল ইখলাস একবার পাঠ করল, সে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করল।(সুনানুন তিরমিজি: ২/২৬৮)।(মাসায়িলুল ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল রিওয়ায়াতু আবি ইয়া’ক্বুব আল-কু-সাজি) গ্রন্থে এসেছে: আমি বললাম:-যে ব্যক্তি বলে (রমজান মাসে ওমরা পালন করা ও হজের সমপরিমাণ নেকি), সে ব্যক্তি কি নির্ভরযোগ্য? তিনি বললেন: অবশ্য, তিনি সিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য। ইসহাক বলেন: সে নির্ভরযোগ্য। যেমন তিনি বলেন: এবং এর অর্থ: যে তার জন্য হজের সমপরিমাণ নেকি লিপিবদ্ধ করা। হজের সাথে তুলনা বা মিলিয়ে দেওয়া কখনোই উদ্দেশ্য নয়।
..
ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সময়ের মর্যাদার কারণে কার্যের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় যেমন মনোযোগ সহকারে ও ইখলাসের সাথে ‘আমল করার কারণে কাজের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/২৫০৯ এর ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য

হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আন-নুমাইরি, (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:

” معلوم أن مراده : أن عمرتك فى رمضان تعدل حجة معي ، فإنها كانت قد أرادت الحج معه ، فتعذر ذلك عليها ، فأخبرها بما يقوم مقام ذلك ، وهكذا من كان بمنزلتها من الصحابة ، ولا يقول عاقل ما يظنه بعض الجهال أن عمرة الواحد منا من الميقات أو من مكة تعدل حجة معه ، فإنه من المعلوم بالاضطرار أن الحج التام أفضل من عمرة رمضان ، والواحد منا لو حج الحج المفروض لم يكن كالحج معه ، فكيف بعمرة !! وغاية ما يحصله الحديث أن تكون عمرة أحدنا في رمضان من الميقات بمنزلة حجة ”

এটা সর্বজনবিদিত যে,”রমজানে আপনার ওমরাহ করা আমার সাথে হজ্জের সমতুল্য”,কারণ তিনি রাসূল (ﷺ) এর সাথে হজ করার ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু কারণবশত আদায় করতে সক্ষম হন নি। ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তার স্থলাভিষিক্ত আমলের কথা জানিয়ে দিলেন। সাহাবীদের মধ্যে যারা তার মতো একই অবস্থানে ছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।আর কোন বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি কখনোই বলবে না যেমনটি কতিপয় মূর্খ ব্যক্তি ধারণা করে থাকে যে আমাদের একজনের উমরা মিকাত থেকে অথবা মক্কা থেকে তার সাথে হজ্জ করার সমপরিমাণ। কারণ এটি নিশ্চিতভাবে জ্ঞাত বিষয় যে পূর্ণ হজ রমজানে ওমরা পালন করার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ। আর আমাদের একজন যদি ফরজ হজ পালন করে, তাহলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ করার মত হবে না। তাহলে ওমরাকে তার সাথে তুলনা করা কিভাবে সম্ভব!!আর হাদিসে যা পাওয়া যায় তার মূল উদ্দেশ্য হলো রমজান মাসে আমাদের একজনের নির্ধারিত সময়ে ওমরা করা (নেকির দিক থেকে) হজের সমতুল্য।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া, খন্ড: ২৬, পৃষ্ঠা: ২৯৩/২৯৪)
আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৪৯২৬ (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।