আল্লাহ বলেছেন সিয়াম আমার জন্য আর আমি তার প্রতিদান দিবো এই হাদিসের অর্থ

প্রশ্ন: আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসির মধ্যে বলেছেন,”সিয়াম আমার জন্য আর আমি তার প্রতিদান দিবো”। তাহলে কি এই হাদিসের অর্থ সিয়াম পালন করলে সাতশত গুণের বেশি নেকি হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▪️🌻▪️▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মাহে রমযান বছরের সবচেয়ে উত্তম মাস। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা এ মাসে সিয়ামকে ফরয করে, ইসলামের চতুর্থ রুকন বানিয়ে এ মাসকে বিশেষত্ব দিয়েছেন। এ মাসের রাতে কিয়াম পালন করার বিধান জারী করেছেন। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর নির্মিত: এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল (বার্তাবাহক), নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের রোযা রাখা এবং বায়তুল্লাহ্‌র হজ্জ আদায় করা।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশায় রমযান মাসে কিয়াম পালন করবে তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”[সহিহ বুখারী হা/২০১৪ও সহিহ মুসলিম হা/৭৬০] এমনকি রাসূল ﷺ আরো বলেছেন,“জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। একটি দরজার নাম হচ্ছে- রাইয়্যান। এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণ ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না।”(সহিহ বুখারি হা/৩০১৭)
.
সুতরাং রোজা একটি মহান ইবাদত। সওয়াবের আশাবাদী রোজাদারের সওয়াব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.]থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
( كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ ، الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ ، قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : إِلَّا الصَّوْمَ ، فَإِنَّهُ لِي ، وَأَنَا أَجْزِي بِهِ ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي )
আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তবে রোযা ব্যতীত। কেননা তা।শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরষ্কার দিব।(সহীহুল বুখারী হা/ ১৮৯৪,সহীহ মুসলিম হা/১১৫১,তিরমিযী হা/৭৬৪)
.
এই হাদিসটির ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেছেন যে এর অর্থ হলঃ রোযার সওয়াবকে সাতশত গুনেরও বেশি করা হবে এবং আমরা এখানে অনেক নির্ভরযোগ্য আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উক্তি পেশ করব ইনশাআল্লাহ।
.
হাদীসটির ব্যাখ্যায় আবু ওয়ালিদ বাযী (রাহিমাহুল্লাহ) ( মৃত্যু: ৪৭৪ হি:) বলেন:
” فضل تضعيف الصيام ، فأضاف الجزاء عليه إلى نفسه تعالى ، وذلك أنه يقتضي أنه يزيد على السبعمائة ضعف ”
সিয়ামের নেকির গুন বৃদ্ধি করা তিনি (আল্লাহ) পছন্দ করেন বিধায় তিনার নিজের দিকে এর প্রতিদানকে সম্পর্কিত করেছেন ফলে এটা ৭০০ গুণেরও বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। (আল মুনতাকা শারহু মুয়াত্ত্বা ২/৭৪)
.
আবু হামীদ গাজালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু: ৫০৫‌ হি:] বলেন:

” وقد قال الله تعالى : ( إنما يوفى الصابرون أجرهم بغير حساب ) ، والصوم نصف الصبر ، فقد جاوز ثوابُه قانون التقدير والحساب ”
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,নিশ্চয়ই,ধৈর্যশীলদের হিসাব ছাড়াই তাদের পুরষ্কার দেওয়া হবে।(সুরা যুমার: ১০) সিয়াম হল ধৈর্যের অর্ধেক।সুতরাং এর প্রতিদান অনুমান ও হিসাবকে অতিক্রম করে।(ইহয়াউ উলুমিদ দ্বীন খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ২৩১)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম আবূ বাকার ইবনুল ‘আরাবী আল-মালিকী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৫৪৩ হি.] বলেছেন,

” فأعلمنا ربنا تبارك وتعالى أن ثواب الأعمال الصالحة مقدر من حسنة إلى سبعمائة ضعف ، وخبأ قدر الصبر منها تحت علمه ، فقال : ( إنما يوفى الصابرون أجرهم بغير حساب ) [الزمر/10] ولما كان الصوم نوعا من الصبر ، حين كان كفا عن الشهوات ، قال تعالى : ( كل عمل ابن آدم له إلا الصيام فإنه لي ، وأنا أجزي به ) قال أهل العلم : كل أجر يوزن وزنا ، ويكال كيلا ، إلا الصوم ، فإنه يحثي حثيا ، ويغرف غرفا ؛ ولذلك قال مالك : هو الصبر على فجائع الدنيا وأحزانها ؛ فلا شك أن كل من سلم فيما أصابه ، وترك ما نهى عنه ، فلا مقدار لأجره ، وأشار بالصوم إلى أنه من ذلك الباب ، وإن لم يكن جميعه ”

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জানিয়েছেন কোন একটা সৎকর্মের প্রতিদান ১ থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত লেখা হয় আর ধৈর্যের পরিমাণ এটা আল্লাহ তায়ালার নিকটে রয়েছে। তিনি বলেন: “ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে”।(সুরা যুমার: ১০)। যেহেতু রোজা হল এক প্রকার ধৈর্য, এটি মনের কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখে। হাদিসের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের তার প্রত্যেক আমল তারই জন্য সিয়াম ব্যতীত কেননা সিয়ামটা আমার জন্য আর আমি তার প্রতিদান দিবো। আলিমগণ বলেন প্রত্যেক আমল ওজন করা হবে পরিমাপ করা হবে তবে সিয়ামের পরিমাপ করা হবে না। এর প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন। এজন্যই ইমাম মালিক বলেছেন, দুনিয়ার বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করাই ধৈর্য্য, তাই নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি তার বিষয়গুলো আল্লাহর কাছে অর্পণ করে, তার ওপর যা আসে তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে এবং যা তার জন্য নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকে, তার পুরস্কারের হিসাব করা যায় না। আর এটা সিয়ামের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (আহকামুল কুরআন,খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৭৭)
.
কাযী ইয়াজ (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত্যু: ৫৪৪ হি:) বলেন:

” ثم يتفضل الله على من يشاء بما يشاء بالزيادة عليها إلى سبعمائة ضعف ، وإلى ما لا يأخذه حساب ، كما قال تعالى : ( إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ ) ، وقال : ( إلا الصوم فإنه لي ، وأنا أجزي به ) بعدما ذكر نهاية التضعيف إلى سبعمائة

এছাড়াও,আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দান করেন যাকে তিনি চান সাত শতগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন, এমনকি তারও বেশি, যা অনুমান করা যায় না, যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, শুধুমাত্র যারা ধৈর্যধারণকারীরা তাদের পুরষ্কার সম্পূর্ণরূপে পাবে, হিসাব ছাড়াই” [সূরা যুমার:৩৯/১০)
এবং হাদিসে কুদসিতে বলেন,”রোযা ব্যতীত, কারণ এটি আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দেব”। এর সাতশতগুণ সওয়াবের কথা উল্লেখ করার পরে। (ইকমালুল মুয়াল্লিম বিফাওয়ায়েদে মুসলিম, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ১৮৪)
.
হাফিয যাইনুদ্দীন আবুল ফারজ ‘আব্দুর রহমান বিন শিহাব যিনি ইবনু রজব আল-হাম্বালী আল-বাগদাদী নামে প্রসিদ্ধ রাহিমাহুল্লাহ [জন্ম: ৭৩৬ হি. মৃত: ৭৯৫ হি:] বলেছেন,

” فعلى الرواية الأولى [ يعني المذكورة أول الجواب ] : يكون استثناء الصوم من الأعمال المضاعفة ، فتكون الأعمال كلها تضاعف بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف ، إلا الصيام ، فإنه لا ينحصر تضعيفه في هذا العدد ، بل يضاعفه الله عز وجل أضعافا كثيرة بغير حصر عدد ، فإن الصيام من الصبر ، وقد قال الله تعالى : ( إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ) [الزمر: 10] ، ولهذا ورد عن النبي صلى الله عليه وسلم : أنه سمى شهر رمضان شهر الصبر .وفي حديث آخر عنه صلى الله عليه وسلم قال : ( الصوم نصف الصبر ) خرجه الترمذي .
والصبر ثلاثة أنواع : صبر على طاعة الله ، وصبر عن محارم الله ، وصبر على أقدار الله المؤلمة . وتجتمع الثلاثة في الصوم

প্রথম বর্ণনায় বলা হয়েছে সিয়ামের প্রতিদান অন্যান্য আমলের থেকে ভিন্ন। অন্যান্য আমল গুলোর নেকি ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় শুধু সিয়াম ব্যতীত সিয়ামের গণার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয় (এর প্রতিদান কত গুণ বৃদ্ধি করা হবে তা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন) বরং আল্লাহ তায়ালা এসব ছাড়াই সিয়ামের প্রতিদান অনেক গুণে বৃদ্ধি করবেন কেননা সিয়াম হল ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত। (আল্লাহ তাআলা বলেন: শুধুমাত্র ধৈর্যশীলরাই তাদের পুরষ্কার পাবে, হিসাব ছাড়া”(সুরা যুমার ১০)। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রমজান মাস হল ধৈর্যের মাস। অন্য হাদিসে রয়েছে সিয়াম হল ধৈর্যের অর্ধেক। ‌(তিরমিজি) ধৈর্য তিন প্রকার: আল্লাহর আনুগত্য করার ক্ষেত্রে ধৈর্য, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার করার ক্ষেত্রে ধৈর্য এবং আল্লাহর নির্ধারিত কষ্টদায়ক বিষয়ের ক্ষেত্রে ধৈর্য। সিয়ামের ক্ষেত্রে এই তিনটিই পাওয়া যায়। (লাতায়িফুল মায়ারিফ, পৃষ্ঠা: ১৫০)
.
ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে। (১) নফসকে হারাম এবং না-জায়েয বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা (২) ইবাদাত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং (৩) যেকোন বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয়, সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। (তাফসির ইবনে কাসির)
.
ইবনে মুলকিন (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত্যু: ৮০৪ হি:) বলেন:

” وقيل : في قوله تعالى : ( فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ ) [السجدة: 17] أن عملهم الصيام ، فيفرغ لهم الجزاء إفراغًا من غير تقدير ، فخص الصيام بالتضعيف عَلَى سبعمائة ضعف في هذا الحديث ”

আয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছিল, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে”।(সুরা সাজদাহ: ১৭) আয়াতে “তারা যা করত” তা হচ্ছে রোজা, তাই কোন প্রকার হিসেব ছাড়াই তাদের প্রতিদান সম্পূর্ণরূপে প্রদান করা হবে। হাদিসে এই রোযাকে সাতশত গুণের বেশি বৃদ্ধি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।(আত্ব তাওযীহ শারহু জামে মুসলিম; খন্ড: ১৩ পৃষ্ঠা: ২৮)
.
ইমাম আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত্যু ১৩৭৬ হি:) বলেন,

” استثنى في هذا الحديث الصيام ، وأضافه إليه ، وأنه الذي يجزى به بمحض فضله وكرمه ، من غير مقابلة للعمل بالتضعيف المذكور الذي تشترك فيه الأعمال . وهذا شيء لا يمكن التعبير عنه ، بل يجازيهم بما لا عين رأت ، ولا أُذن سمعت ، ولا خطر على قلب بشر .
وفي الحديث : كالتنبيه على حكمة هذا التخصيص ، وأن الصائم لما ترك محبوبات النفس التي طبعت على محبتها ، وتقديمها على غيرها ، وأنها من الأمور الضرورية ، فقدم الصائم عليها محبة ربه ، فتركها لله في حالة لا يطلع عليها إلا الله ، وصارت محبته لله مقدمة وقاهرة لكل محبة نفسية ، وطلب رضاه وثوابه مقدماً على تحصيل الأغراض النفسية ؛ فلهذا اختصه الله لنفسه ، وجعل ثواب الصائم عنده ، فما ظنك بأجر وجزاء تكفل به الرحمن الرحيم الكريم المنان ، الذي عمت مواهبه جميع الموجودات ، وخصّ أولياءه منها بالحظ الأوفر ، والنصيب الأكمل ، وقدر لهم من الأسباب والألطاف التي ينالون بها ما عنده على أمور لا تخطر له بالبال . ولا تدور في الخيال . فما ظنك أن يفعل الله بهؤلاء الصائمين المخلصين .
وهنا يقف القلم ، ويسيح قلب الصائم فرحاً وطرباً بعمل اختصه الله لنفسه ، وجعل جزاءه من فضله المحض ، وإحسانه الصرف . وذلك فضل الله يؤتيه من يشاء والله ذو الفضل العظيم ”

এই হাদিসের মধ্যে সিয়ামকে আলাদা করা হয়েছে যে, আল্লাহ বলেছেন তাঁর জন্য, এবং তিনিই এর জন্য পুরস্কৃত করবেন, তাঁর উদারতা ও দয়ার ভিত্তিতে, এই অর্থ ছাড়া যে তাদের রোজা রাখার একাধিক পুরস্কার অন্যান্য কাজের জন্য পুরস্কার। এটি এমন কিছু যা কখনো প্রকাশ করা সম্ভব নয়; বরং তিনি তাদের পুরস্কৃত করবেন যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং অন্তরে পরিকল্পনা করেনি। এই হাদিসের মধ্যে সিয়ামকে খাস করা হয়েছে সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি তার নিজের প্রিয় জিনিসগুলো পরিত্যাগ করে নিজের প্রিয় জিনিসগুলোর ওপরে আল্লাহর প্রয়োজন এ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে আর এগুলো শেষ হারে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্টি করণার্থে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সিয়ামকে তার সাথে খাস করেছেন। তার সব আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিবে বলে ঘোষণা করেছেন। ‌ যার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিবে বলে ঘোষণা করেছেন তাহলে তার প্রতিদান কতই না বড় হতে পারে এটা কি আপনি ভেবেছেন?
এখানে কলম থামাতে হবে (কারণ আমি আমার কথা বলেছি)। রোজাদারের হৃদয় আনন্দে ভরে যাবে কারণ আল্লাহ বলেছেন, যে একটি কাজ করা হয়েছে তার জন্য, এবং তার পুরষ্কারকে তাঁর উদারতা ও দয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছেন। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন এবং আল্লাহ মহান অনুগ্রহের অধিকারী।” (বুহজাতু কুলুবিল আবরার ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,

” العبادات ثوابها الحسنة بعشر أمثالها إلى سبعمائة ضعف إلى أضعاف كثيرة ، إلا الصوم ، فإن الله هو الذي يجزي به ، ومعنى ذلك أن ثوابه عظيم جداً . قال أهل العلم : لأنه يجتمع في الصوم أنواع الصبر الثلاثة ، وهي : الصبر على طاعة الله ، وعن معصية الله ، وعلى أقداره ، فهو صبر على طاعة الله لأن الإنسان يصبر على هذه الطاعة ويفعلها ، وعن معصيته لأنه يتجنب ما يحرم على الصائم ، وعلى أقدار الله لأن الصائم يصيبه ألم بالعطش والجوع والكسل وضعف النفس ، فلهذا كان الصوم من أعلى أنواع الصبر ؛ لأنه جامع بين الأنواع الثلاثة ، وقد قال الله تعالى : ( إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ )

“প্রত্যেকটা ইবাদতের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ অথবা এর চাইতেও অনেক বেশি গুণে বৃদ্ধি করেন সিয়াম ব্যতীত কেননা সিয়ামের প্রতিদান আল্লাহ তাআলা নিজেই দিবেন এর অর্থ হল: এর প্রতিদান অনেক অনেক বেশি। আলেমগণ বলেছেন: সিয়ামের মধ্যে সবরের তিন প্রকার একত্রিত হয়। আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উপরে ধৈর্য ধারণ, নাফারমানি কাজ থেকে বিরত থাকার ধৈর্যধারণ, আল্লাহতালার নির্ধারিত তাকদীরের ফয়সালার উপর ধৈর্য ধারণ। আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উপর ধৈর্য ধারণের অর্থ হল মানুষ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে ধৈর্য ধারণ করে। নাফারমানি থেকে ধৈর্য ধারণ অর্থাৎ সে আমরা তো অবস্থায় যেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা। তাকদিরের ওপর ধৈর্য ধারণ। কারণ রোজাদার ব্যক্তি তৃষ্ণা, ক্ষুধা, ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব অনুভব করে। তাই রোজা হল ধৈর্যের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট রূপগুলির মধ্যে একটি, এজন্য বলা হয়ে থাকে সবরের তিন প্রকার সিয়ামের ক্ষেত্রে একত্রিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, শুধুমাত্র ধৈর্যশীলরা তাদের পুরষ্কার পাবে, হিসাব ছাড়া”(সূরা জুমার: ১০; উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে’ খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৪৫৮)
.
হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) অপর এক ফাতওয়া আরো বলেছেন,

” وَهَذَا الحديثُ الجليلُ يدُلُّ على فضيلةِ الصومِ من وجوهٍ عديدةٍ:

• الوجه الأول: أن الله اختصَّ لنفسه الصوم من بين سائرِ الأعمال، وذلك لِشرفِهِ عنده، ومحبَّتهِ له، وظهور الإِخلاصِ له سبحانه فيه، لأنه سِرُّ بَيْن العبدِ وربِّه لا يطَّلعُ عليه إلاّ الله. فإِن الصائمَ يكون في الموضِعِ الخالي من الناس مُتمكِّناً منْ تناوُلِ ما حرَّم الله عليه بالصيام، فلا يتناولُهُ؛ لأنه يعلم أن له ربّاً يطَّلع عليه في خلوتِه، وقد حرَّم عَلَيْه ذلك، فيترُكُه لله خوفاً من عقابه، ورغبةً في ثوابه، فمن أجل ذلك شكر اللهُ له هذا الإِخلاصَ، واختصَّ صيامَه لنفْسِه من بين سَائِرِ أعمالِهِ ولهذا قال: يَدعُ شهوتَه وطعامَه من أجْلي. وتظهرُ فائدةُ هذا الاختصاص يوم القيامَةِ كما قال سَفيانُ بنُ عُييَنة رحمه الله: إِذَا كانَ يومُ القِيَامَةِ يُحاسِبُ الله عبدَهُ ويؤدي ما عَلَيْه مِن المظالمِ مِن سائِر عمله حَتَّى إِذَا لم يبقَ إلاَّ الصومُ يتحملُ اللهُ عنه ما بقي من المظالِم ويُدخله الجنَّةَ بالصوم.

• الوجه الثاني: أن الله قال في الصوم: (وأَنَا أجْزي به) فأضافَ الجزاءَ إلى نفسه الكريمةِ؛ لأنَّ الأعمالَ الصالحةَ يضاعفُ أجرها بالْعَدد، الحسنةُ بعَشْرِ أمثالها إلى سَبْعِمائة ضعفٍ إلى أضعاف كثيرةٍ، أمَّا الصَّوم فإِنَّ اللهَ أضافَ الجزاءَ عليه إلى نفسه من غير اعتبَار عَددٍ، وهُوَ سبحانه أكرَمُ الأكرمين وأجوَدُ الأجودين، والعطيَّةُ بقدر مُعْطيها. فيكُونُ أجرُ الصائمِ عظيماً كثيراً بِلاَ حساب. والصيامُ صبْرٌ على طاعةِ الله، وصبرٌ عن مَحارِم الله، وصَبْرٌ على أقْدَارِ الله المؤلمة مِنَ الجُوعِ والعَطَشِ وضعفِ البَدَنِ والنَّفْسِ، فَقَدِ اجْتمعتْ فيه أنْواعُ الصبر الثلاثةُ ، وَتحقَّقَ أن يكون الصائمُ من الصابِرِين. وقَدْ قَالَ الله تَعالى: إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّـابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ الزمر/10.

“এই হাদিসটি বিভিন্নভাবে রোজা রাখার ফজিলতকে নির্দেশ করে:

প্রথম দিক: আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সব ইবাদাতের থেকে সিয়ামকে তার নিজের জন্য খাস করেছেন। কারণ সিয়ামের মর্যাদা অনেক এবং ইখলাস পূর্ণ ইবাদাত অর্থাৎ এতে ইখলাস প্রকাশ পায়। সিয়ামের একনিষ্ঠতা বান্দা ও আল্লাহর মাঝে গোপন একটি বিষয় যা শুধু আল্লাহ তাআলা জানতে পারেন। রোজাদার এমন খালি জায়গায় থাকতে পারে যেখানে আশেপাশে অন্য কেউ নেই, এবং রোজাদারের জন্য আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা সে খেতে বা পান করতে পারে, কিন্তু সে তা করে না, কারণ সে জানে যে তার একজন প্রভু আছেন যিনি তাকে দেখছেন।যদিও সে সেখানে একা তবুও সে আল্লাহ শাস্তির ভয়ে খারাপ কাজ ছেড়ে দেয় এবং তার প্রতিদানের আশায় তা পরিত্যাগ করে। এই কারণে, আল্লাহ তার আন্তরিকতার প্রশংসা করেন এবং অন্যান্য সমস্ত নেক আমলের মধ্যে থেকে নিজের জন্য রোজাকে বেছে নিয়েছেন। এই কারণে তিনি বললেনঃ সে আমার জন্য তার আকাঙ্ক্ষা ও খাদ্য ত্যাগ করে। এভাবে সিয়ামকে খাস করার উপকারিতা কিয়ামতের দিন প্রকাশ পাবে যেমন সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যখন কেয়ামতের মাঠে আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের হিসাব নিবেন এবং তার সিয়াম ছাড়া অন্য কোন যদি আমল না থাকে তাহলে তার যে অন্যায়গুলো রয়েছে সেগুলো আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়ে সিয়ামের বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন।

দ্বিতীয় দিক: আল্লাহ সিয়াম সম্পর্কে বলেছেন: (আমি এর পুরষ্কার দিবো) তাই তিনি রোজা রাখার পুরস্কারকে তার নিজের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। কারণ সৎ কাজের পুরস্কার সংখ্যা দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে, এবং একটি ভাল কাজ ১০ থেকে নিয়ে সাতশো পর্যন্ত অথবা তার চাইতেও অধিক গুনে বৃদ্ধি করা হয়।কিন্তু রোযার ব্যাপারে আল্লাহ কোন সংখ্যা উল্লেখ না করেই পুরস্কারকে নিজের সাথে সংযুক্ত করেছেন। যারা উদার তাদের মধ্যে আল্লাহ হলেন সবচেয়ে উদার এবং দান দাতার উদারতা প্রতিফলিত করে।সুতরাং রোজাদারের প্রতিদান হবে অনেক বড়, হিসাব ছাড়া। রোজা হলো আল্লাহর আনুগত্যে উপর ধৈর্য, আল্লাহর হারাম জিনিস থেকে দূরে থাকার ধৈর্য এবং আল্লাহর হুকুম, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা বহনে ধৈর্য। সুতরাং এটি তিন প্রকার ধৈর্যকে একত্রিত করে,আল্লাহ তায়ালা বলেন,”শুধুমাত্র ধৈর্যশীলরা তাদের পুরষ্কার পাবে, হিসাব ছাড়া” (সূরা যুমার: ১০; উসাইমীন মাজালিসু শাহরি রমাযান, পৃষ্ঠা: ১৩)
.
পরিশেষে, আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাওফিক দেন, আমাদেরকে সিয়াম পালন, কিয়াম আদায়, নেক আমল করা ও বদ আমল বর্জনে সাহায্য করেন। সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।
___________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।