যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও বিনা ওজরে দীর্ঘ দিন ফরয সিয়াম পালন করেনি তাদের জন্য করণীয়

প্রশ্ন: যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও বিনা ওজরে দীর্ঘ দিন ফরয সিয়াম পালন করেনি তাদের জন্য করণীয় কি? বেনামাজির সিয়াম কবুল হবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যে ব্যক্তির মধ্যে ৫টি শর্ত পাওয়া যায়; তার উপর সাওম পালন করা ওয়াজিব। যেমন: (১). যদি সে মুসলিম হয়। (২). যদি সে মুকাল্লাফ (যার উপর শারীআতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য) হয়। (৩). যদি সে সাওম পালন করতে সক্ষম হয়। (৪). যদি সে অবস্থানকারী (মুকিম) হয়। এবং (৫). যদি সাওম পালনে বাধাদানকারী বিষয়সমূহ তার মধ্যে না পাওয়া যায়। এই পাঁচটি শর্ত যে ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যায়; তার উপর সাওম পালন করা ওয়াজিব। (ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৬৮১৪)। তাছাড়া রমাদ্বনের সিয়াম পালন ইসলামের অন্যতম একটি রুকন (মূল স্তম্ভ)। কোন মুসলিমের জন্য ওজর ছাড়া রমাদ্বনের রোযা ত্যাগ করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি শরীয়ত অনুমোদিত কোন ওজরের কারণে (যেমন- অসুস্থ থাকা, সফরে থাকা, ঋতুগ্রস্ত হওয়া) রমাদ্বনের রোযা বাদ দিয়েছে কিংবা ভঙ্গ করেছে; যে রোযাগুলো সে ভেঙ্গেছে সে রোযাগুলোর কাযা পালন করা আলেমগণের ইজমার ভিত্তিতে তার উপর ফরয। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাক্বারাহ; ২/১৮৫)। সুতরাং, উপরোক্ত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে মোটেই সিয়াম পালন করেনা বা যারা বিনা ওজরে দীর্ঘ দিন ফরয সিয়াম পালন করেনি তাদের জন্য করনীয় সম্পর্কে আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ তিনটি মত পাওয়া যায়। যেমন:
.
(১). আহালুল আলেমগনের ছোট্ট একটি অংশ বলেন, যে ইচ্ছাকৃতভাবে মোটেই রোযা রাখে না সে ব্যক্তি কিছু উলামার মতে কাফের ও মুর্তাদ হয়ে যাবে। তার জন্য তওবা জরুরী এবং বেশী বেশী নফল ইবাদত করা উচিত। যেমন; জরুরী দ্বীনের সকল বিধানকে ঘাড় পেতে মান্য করা। আর উলামাদের সঠিক মতানুসারে তার জন্য কাযা নেই। যেহেতু তার অপরাধ বড় যে, কাযা করে তার খন্ডন হবে না। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ খন্ড: ২, পৃষ্ঠা:১৫৪)
.
(২). অপর কিছু সংখ্যক উলামা বলেন যে, বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃত ভাবে সালাত, সিয়াম ত্যাগকারীর কোন কাযা নেই। আর না-ই পালনে তার তা শুদ্ধ হবে। অবশ্য যা কাযা করার ব্যাপারে দলীল আছে তার কথা স্বতন্ত্র। যেমন; রোযা রেখে ইচ্ছাকৃত স্ত্রী-সঙ্গমকারী এবং বমনকারী ব্যক্তি দলীলের ভিত্তিতে রোযা কাযা করবে। আর যে ইচ্ছাকৃত ভাবে রমাদান মাসের সিয়াম ত্যাগ করেছে তার জন্য করনীয় সে বেশি বেশি নফল রোযা রাখবে। এটি জাহেরি মতাবলম্বীদের মাযহাব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও শাইখ উসাইমীন এ অভিমতটি পছন্দ করেছেন। (তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী, পৃষ্ঠা:৪২৫-৪২৬, ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২৩২৬৯৪)
.
ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯৫ হি.] বলেছেন, জাহেরি মতাবলম্বীদের অভিমত কিংবা তাদের অধিকাংশ আলেমের অভিমত হচ্ছে- ইচ্ছাকৃত ভাবে রোযা ত্যাগকারীর উপর কাযা নেই। শাফেয়ীর ছাত্র আব্দুর রহমান থেকে, শাফেয়ীর মেয়ের ছেলে থেকেও এমন অভিমত বর্ণিত আছে। ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা-নামায ত্যাগকারীর ক্ষেত্রে এটি আবু বকর আল-হুমাইদিরও উক্তি: ‘কাযা পালন করলে দায়িত্ব মুক্ত হবে না।’ আমাদের মাযহাবের অনুসারী পূববর্তী একদল আলেমের অভিমতও এটাই; যেমন- আল-জুযজানি, আবু মুহাম্মদ আল-বারবাহারি, ইবনে বাত্তাহ্‌। (ফাতহুল বারী: খন্ড:৩, পৃষ্ঠা:৩৫৫)। হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, বিনা ওজরে সালাত কিংবা সিয়াম ত্যাগকারী কাযা পালন করবে না। (আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যা পৃষ্ঠা:৪৬০)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, “আর যদি মূলতই সে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওজর ছাড়া রোযা ত্যাগ করে; তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী, তার উপর কাযা পালন করা আবশ্যক নয়। কেননা কাযা পালন করে তার কোন লাভ হবে না। যেহেতু তার থেকে সেটা কবুল করা হবে না। কারণ, ফিকহী নীতি হচ্ছে, যদি নির্দিষ্ট কোন সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ইবাদত কোন ওজর ছাড়া উক্ত নির্দিষ্ট সময়ে পালন করা না হয়; তাহলে তার থেকে সেটা কবুল করা হয় না।” (ইমাম উসাইমীন, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৯ পৃষ্ঠা:৮৯)
.
(৩). জমহুর ওলামাদের মতে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করে রমযানের রোযা বর্জন করেছে, সেটা একটিমাত্র রোযার ক্ষেত্রে হলেও সে ব্যক্তির পাপ হবে মহাপাপ (কাবীরা গুনাহগার)। তাকে দীর্ঘদিনের বর্জন করা সিয়াম গুলোর কাযা আদায় করতে হবে এবং ঐ অপরাধের জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ ভাবে তওবা করতে হবে। সাথে বেশী বেশী করে নফল সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত করতে হবে, যাতে ফরয ইবাদতের ঐ ক্ষতিপূরণ সম্ভব হয়। আর সম্ভবতঃ আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।(সাবঊনা মাসআলাহ ফিস-সিয়াম ৪৩)। এ মতের পক্ষে দলিল উক্ত অভিমত সেই রমাযানের দিনের বেলায় স্ত্রী-সঙ্গমকারীর হাদীসকে ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়েছে; যাতে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাকে ঐ দিনকে কাযা করতে আদেশ করে বলেছিলেন, ‘‘একদিন রোযা রাখ এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।” (আবু দাউদ ২৩৯৩, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ১৯৫৪, দারাকুত্বনী, বাইহাকী ৪/২২৬-২২৭, ইরওয়াউল গালীল ৯৪০)
.
ইবনে আব্দুল বার বলেন; “গোটা উম্মত ইজমা করেছেন এবং সকলে উদ্ধৃত করেছেন যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা পালন করেনি, কিন্তু সে রমযানের রোযা ফরয হওয়ার প্রতি বিশ্বাসী, সে অবহেলা করে, অহংকারবশতঃ রোযা রাখেনি, ইচ্ছা করেই তা করেছে, অতঃপর তওবা করেছে: তার উপর রোযার কাযা পালন করা ফরয। (আল-ইযতিযকার খন্ড:৭ পৃষ্ঠা: ৭৭)

হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, “আমরা এ ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ জানি না। কেননা রোযা তার দায়িত্বে সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং রোযা পালন করা ছাড়া তার দায়িত্ব মুক্ত হবে না। বরং যেভাবে ছিল সেভাবে তার দায়িত্ব থেকে যাবে।” (ইমাম কুদামাহ আল-মুগনি খন্ড :৪ পৃষ্ঠা: ৩৬৫) সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা আলিমগণ বলেছেন, যে ব্যক্তি রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে রোযা ত্যাগ করে; সে ব্যক্তি সর্বসম্মতিক্রমে (ইজমার ভিত্তিতে) কাফের। আর যে ব্যক্তি অলসতা করে, কিংবা অবহেলা করে রোযা ছেড়ে দেয় সে কাফের হবে না। কিন্তু, সে ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত (ইজমা সংঘটিত) একটি রুকন ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে মহা বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। নেতৃবর্গের কাছ থেকে সে শাস্তি ও সাজা পাওয়ার উপযুক্ত; যাতে সে এবং তার মত অন্যেরা এর থেকে নিবৃত্ত হয়। বরং কিছু কিছু আলেমের মতে, সেও কাফের। সে যে রোযাগুলো ভঙ্গ করেছে সেগুলোর কাযা পালন করা ও আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা তার উপর ফরয। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা:১৪৩)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: শরীয়ত অনুমোদিত কোন ওজর ছাড়া যে ব্যক্তি রমাদ্বন মাসের রোযা রাখে না তার হুকুম কী? তার বয়স প্রায় সতের বছর। তার কোন ওজর নেই। তার কি করা উচিত? তার উপর কি কাযা পালন করা ফরয? জবাবে তিনি বলেন: হ্যাঁ, তার উপর কাযা পালন করা এবং তার অবহেলা ও বাড়াবাড়ির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা ফরয। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ সংক্রান্ত যে হাদিসটি বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি কোন (শরয়ি) ছাড় ব্যতীত কিংবা রোগ ব্যতীত রমযান মাসের কোন একদিনের রোযা ভাঙ্গে সে সারা বছর রোযা রাখলেও কাযা পালন হবে না।” সে হাদিসটি দুর্বল, মুযতারিব, আলেমদের নিকট এটি সহিহ হাদিস নয়। (ফাতওয়া নুরুন আলাদ দারব খন্ড:১৬, পৃষ্ঠা:২০১)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, যে ব্যক্তি রমাদান মাসের সিয়াম ইচ্ছাকৃত ভাবে বর্জন করবে অধিকাংশ আলেমের মতে, তার উপর একনিষ্ঠ ভাবে তওবা করা এবং উক্ত সিয়াম গুলোর কাযা পালন করা আবশ্যক। আর কিছু কিছু আলেমের মতে, কাযা পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এটি এমন ইবাদত যে ইবাদতের সময় পার হয়ে গেছে। তবে, অধিকাংশ আলেম যে অভিমত প্রকাশ করেছেন সেটা অগ্রগণ্য এবং নিরাপদ।কেননা, রমাদানের সিয়াম পালন ইসলামের অন্যতম একটি রুকন (মূল স্তম্ভ)। এটি এমন ইবাদত যা ব্যক্তির দায়িত্বে সাব্যস্ত হয়েছে; সুতরাং এটি পালন করা ছাড়া দায়িত্ব মুক্ত হবে না। আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন লোকের সিয়াম থাকাবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে বমি হলে সে লোককে ঐ সিয়ামের কাযা আদায় করতে হবে না। কিন্তু কোন লোক ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে তাকে কাযা আদায় করতে হবে। (সুনানে তিরমিযী, হা/৭২০; মিশকাত হা/২০০৭, সনদ সহীহ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪২৬-২৭)। )
.
বেনামাজির সিয়াম কবুল হবে কি?
_______________________________
জেনে রাখা ভালো যে, সালাত আদায় না করলে যাকাত, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি কোনো আমলই কবুল হবেনা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল। (সহীহুল বুখারী হা/৫৫৩, ৫৯৪, নাসায়ী হা/৪৭৪, ইবনু মাজাহ হা/৬৯৪)। উক্ত হাদীসে তার “আমল নিষ্ফল হয়ে যায়” এর অর্থ হলো: তার ঐদিনের আমল বাতিল হয়ে যায় এবং তা তার কোনো কাজে আসবে না। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, বেনামাযীর কোনো আমল আল্লাহ কবুল করেন না এবং বেনামাযী তার আমল দ্বারা কোন ভাবে উপকৃত হবে না। তার কোনো আমল আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে না। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.]“আস-স্বালাত” নামক গ্রন্থে এ হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন – “এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নামায ত্যাগ করা দুই প্রকার। (১). পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করা। কোন নামাযই না-পড়া। এ ব্যক্তির সমস্ত আমল বিফলে যাবে। (২). বিশেষ কোন দিন, বিশেষ কোন নামায ত্যাগ করা। এক্ষেত্রে তার বিশেষ দিনের আমল বিফলে যাবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সালাত ত্যাগ করলে তার সার্বিক আমল বিফলে যাবে। আর বিশেষ নামায ত্যাগ করলে বিশেষ আমল বিফলে যাবে। (ইবনুল ক্বাইয়্যিম; ‘আস-স্বালাত’; পৃষ্ঠা:-৬৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে বেনামাযীর রোজা রাখার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো; তিনি উত্তরে বলেন: বেনামাযীর রোজা শুদ্ধ নয় এবং তা কবুলযোগ্য নয়। কারণ, নামায ত্যাগকারী কাফের, মুরতাদ। এর স্বপক্ষে দলিল হচ্ছে- আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী: “আর যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।” (সূরা আত্‌ তওবা: ১১)। নবী (ﷺ) বলেছেন; “কোন ব্যক্তির মাঝে এবং শির্‌ক ও কুফরের মাঝে সংযোগ হচ্ছে সালাত বর্জন।” (সহীহ মুসলিম হা/৮২, তিরমিযী হা/২৬১৮, আবু দাঊদ হা/ ৪৬৭৮)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেছেন, আমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি হলো নামাযের। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করল, সে কুফরি করল। (জামে তিরমিযী হা/২৬২১)। এই মতের পক্ষে সাহাবায়ে কেরামের ‘ইজমা’ সংঘটিত না হলেও সর্বস্তরের সাহাবীগণ এই অভিমত পোষণ করতেন। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে শাক্বিক রাহিমাহুমুল্লাহ বলেছেন; “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ নামায ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরি মনে করতেন না।” পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যদি কোন ব্যক্তি রোজা রাখে; কিন্তু নামায না পড়ে তবে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত, গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা কেয়ামতের দিন আল্লাহ্‌র কাছে কোন উপকারে আসবে না। আমরা এমন ব্যক্তিকে বলবো; আগে নামায ধরুন, তারপর রোজা রাখুন। আপনি যদি নামায না পড়েন, কিন্তু রোজা রাখেন তবে আপনার রোজা প্রত্যাখ্যাত হবে; কারণ কাফেরের কোন ইবাদত কবুল হয় না। (ইমাম উসাইমীন, “ফাতাওয়াস সিয়াম”, পৃষ্ঠা:-৮৭, ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৪৯৬৯৮)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা এর আলিমগণ- কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র রমজান মাসে রোজা পালনে ও নামায আদায়ে সচেষ্ট হয় আর রমজান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নামায ত্যাগ করে, তবে তার সিয়াম কি কবুল হবে? এর উত্তরে বলা হয়- “নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। সাক্ষ্যদ্বয়ের পর ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজে বিধান। যে ব্যক্তি এর ফরজিয়তকে অস্বীকার করে কিংবা অবহেলা বা অলসতা করে তা ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল। আর যারা শুধু রমজানে নামায আদায় করে ও রোজা পালন করে তবে তা হলো আল্লাহ্‌র সাথে ধোঁকাবাজি। কতইনা নিকৃষ্ট সেসব লোক যারা রমজান মাস ছাড়া আল্লাহ্‌কে চেনে না! রমজান ব্যতীত অন্য মাসগুলোতে নামায ত্যাগ করায় তাদের সিয়াম শুদ্ধ হবে না। বরং আলেমদের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নামাযের ফরজিয়তকে অস্বীকার না-করলেও তারা বড় কুফরে লিপ্ত কাফের। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা:১৪০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।