মুসলিম কবিরা গুনাগাহর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা

প্রশ্ন: মুসলিম কবিরা গুনাগাহর ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা কি? তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হলো: সুদখোর, জিনাকারী,ব্যভিচারের অপবাদ-আরোপকারী, চুরিকারী, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্যতাকারী, অবৈধ ভাবে হত্যাকারী এবং অলসতা বসত মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগকারী ইত্যাদি এগুলো সবই কাবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে; যতক্ষণ না ব্যক্তি এই পাপগুলাকে হালাল মনে করে। অর্থাৎ যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি সজ্ঞানে অন্তর থেকে বিশ্বাস এবং এই আক্বীদা লালন করে যে উপরোক্ত পাপগুলো হালাল, এগুলো হারাম নয় অথবা এর জন্য কোন শাস্তি নেই। তাহলে মুসলিম উম্মার ঐক্যমতে সে ব্যক্তি কাফের। মৃত্যুর পর তার জানাযা নামায পড়া হবে না। মুসলিমদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না। জীবিত বা মৃত কোন অবস্থায় তাকে সালাম দেওয়া হবে না এবং তার সালামের জবাব দেওয়া হবে না। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হবে না, আল্লাহর রহমত কামনা করা হবে না। সে কারো থেকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না এবং তার থেকেও কেউ উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাবে না। বরং তার সম্পত্তি বায়তুল মালের ফান্ডে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে এমন কিছু জায়েজ আছে যখন মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য আছে যে তা হারাম এবং এই হারামের বিধান মুসলিমদের মধ্যে সুপরিচিত ও কুরআন সুন্নাহর গ্রন্থগুলি এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ রাখে না। যেমন: শূকরের গোশত, ব্যভিচার এবং অনুরূপ বিষয়, যা হারাম হওয়ার বিষয়ে ইমামগনের কোন মতানৈক্য নেই সে ব্যক্তি কুফরের অপরাধী অর্থাৎ কাফির।(ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ২৭৬)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন: প্রসিদ্ধ ওয়াজিব গুলোকে ওয়াজিব এবং সুপরিচিত নিষেধগুলোকে হারাম বলে বিশ্বাস করা ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলোর একটি এবং যে ব্যক্তি তা প্রত্যাখ্যান (অস্বীকার) করে সে আলেমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফির।”(মাজমু’আল-ফাতাওয়া, খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ৪৯৭)।
.
অপরদিকে সুদখোর, জিনাকারী, ব্যভিচারের অপবাদ-আরোপকারী, চুরি করা, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, অবৈধ ভাবে কাউকে হত্যাকারী এবং অলসতা বসত মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত পরিত্যাগকরা ইত্যাদি ব্যক্তিরা যদি এই পাপগুলো হালাল মনে না করে শয়তানের ধোকায় পড়ে লিপ্ত হয় এবং তওবা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফের নয়। বরং তিনি কবিরা গুনাহগার ফাসিক মুসলিম তার মৃত্যুর পর একজন মুসলিমের ন্যায় গোসল, জানাযা ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। সে কবিরা গুনাহর জন্য নির্ধারিত প্রতিদান তথা শাস্তির হকদার হবে। তবে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে না। তার বিষয়টি আল্লাহর কাছেই অর্পিত থাকবে।আল্লাহ চাইলে তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন,আবার শাস্তিও দিতে পারেন। যদি তিনি শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করার পর তাঁর ঈমানের কারণে তাকে জান্নাত দিবেন এবং তার উপর থেকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তি তুলে নিবেন।যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সব (গুনাহ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” (সূরা আন-নিসা: ৪৮) ইমাম জারীর আত্ব-ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ আয়াত প্রমাণ করে যে, কাবীরা গুনাহগারদের বিষয়গুলো আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত: তিনি ইচ্ছা করলে তাকে এর জন্য ক্ষমা করবেন এবং যদি তিনি চান তবে তিনি তাকে এর জন্য শাস্তি দেবেন যতক্ষণ না তার বড় পাপ আল্লাহর সাথে শরীক করা (শিরক) না হয়।(তাফসীরে আত-তাবারী: খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ৪৫০)।
.
হাদীসের মধ্যে যাদের ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে তারা হলো- পাপী মুসলিম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ ‘মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৩০৬২, ৪২০৩-৪২০৪, ৬৬০৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১১, ২০৫)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। (সহীহ বুখারী হা/৪২৫; সহীহ মুসলিম হা/৩৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘…এবং আমার উম্মাতের অবশিষ্ট লোকদের জাহান্নামীদের সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। অতঃপর জাহান্নামবাসীরা বলবে, ‘তোমরা যে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করতে না, আজ তা তোমাদের কোন উপকার করতে পারল না। একথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘আমার সম্মানের কসম, আমি অবশ্যই তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবো। সুতরাং তাদের জাহান্নাম থেকে এমতাবস্থায় বের করা হবে যে, তারা জ্বলে-পুড়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তাদের আবে-হায়াত (জীবন) নামক নদীতে প্রবেশ করানো হবে, ফলত স্রোতবাহিত উর্বর পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ললাটে লিখে দেয়া হবে, ‘এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অতঃপর তাদের নিয়ে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জান্নাতবাসীগণ তাদের জাহান্নামবাসী বলে সম্মোধন করলে, আল্লাহ বলবেন, ‘বরং এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। (মুসনাদে আহমাদ,হা/১২৪৬৯-১২৪৭০; ইবনু খুযাইমা, হা/৬০১; দারেমী, হা/৩৫; ইবনু মানদাহ, হা/৮৭৭,সনদ হাসান)। অন্যত্র নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন, ‘…কতকগুলো সম্প্রদায় তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। অতঃপর আল্লাহ নিজ রহমতে তাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদেরকে ‘জাহান্নামী’ বলা হবে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫৫৯, ৬৫৬৬, ৭৪৫০)।
.
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ইসলাম পুরাতন হয়ে যাবে, যেমন কাপড়ের উপরের কারুকার্য পুরাতন হয়ে যায়। শেষে এমন অবস্থা হবে যে, কেউ জানবে না, সাওম কি, সালাত কি, কুরবানী কি, যাকাত কি? এক রাতে পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহর কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের (মুসলিমদের) কতক দল অবশিষ্ট থাকবে। তাদের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বলবে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই)-এর অনুসারী দেখতে পেয়েছি। সুতরাং আমরাও সেই বাক্য বলতে থাকব। (তাবেঈ) ছিলা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’ বলায় কি তাদের কোন উপকার হবে না? কারণ তারা জানে না সালাত কি, সিয়াম কি, হজ্জ কি, কুরবানী কি এবং যাকাত কি? ছিলা ইবনে যুফার (রহঃ) তিনবার কথাটির পুনরাবৃত্তি করলে হুযায়ফা (রাঃ) প্রতিবার তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তৃতীয় বারের পর তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে ছিলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; সহীহাহ হা/৮৭; সহীহুল জামে হা/৮০৭৭)
.
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, এই হাদীসে গুরুত্বপূর্ণ ফিক্বহী উপকারিতা রয়েছে। আর সেটি হলো কালেমায়ে শাহাদাতের সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে স্থায়ী অবস্থান থেকে মুক্ত করবে। যদিও সে সালাত বা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের কোন একটি রুকন প্রতিষ্ঠা না করে। (সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা কাবীরা গোনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেন, আমি আমার দু‘আকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মাতের কাবীরা গোনাহগারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম।(মুসনাদে আবি ইয়া‘লা, হা/৫৮১৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,…. যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (আবু দাঊদ, হা/৪০৯১)।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ এই বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে যে, তাওহীদপন্থী (মুসলিম) কাবীরা গোনাহকারীর ব্যাপারে শাফা‘আত করা হবে এবং সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে না। পক্ষান্তরে খাওয়ারেজ ও মু‘তাযিলারা এটা অস্বীকার করে। (মাজমূঊল ফাতাওয়া, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১০৮)।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট কাবীরা গুনাহগাররা কাফির নয়। তারা জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে না‌। বরং তাদের বিষয়গুলো আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত’ (শারহুন নববী, খন্ড: ১১ পৃষ্ঠা: ১৬৭)।
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকিদা হলো: মুসলিমদের মধ্যে কেউ যদি ব্যভিচার, মিথ্যা অপবাদ-আরোপ,
চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ইত্যাদির মত কাবিরা গুনাহ-তে উপর্যুপরি লিপ্ত অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ইচ্ছার অধীন থাকবে। তিনি চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।অথবা তিনি চাইলে তাকে উপর্যুপরি লিপ্ত কবিরা গুনাহটির জন্য শাস্তি দিবেন। তবে তার শেষ পরিণতি হবে জান্নাত। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন; নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন।(সূরা নিসা, আয়াত: ৪৮)। এবং এই মর্মে সহীহ ও মুতাওয়াতির হাদিস রয়েছে; যে হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, গুনাহগার ঈমানদারদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। উবাদাহ ইবনুুস সামিত (রাঃ) হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎকাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হলো এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্‌ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।(সহীহ বুখারী হা/১৮ ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭২৮)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহীদ) দৃঢ়তা স্বীকার করে এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে, এমনকি পিতা-মাতার প্রতি অবজ্ঞা, সুদ এর মতো অন্যান্য পাপ, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান ইত্যাদি করে থাকে। কারণ তার বিষয়টি আল্লাহর কাছেই অর্পিত থাকবে। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, যতটুকু শাস্তি পাওয়ার হক রাখে সে। আবার আল্লাহ চাইলে তাকে মাফও করতে পারেন। যদি সে অনুতপ্ত না হয়ে মারা যায়। আর যদি সে জাহান্নামে প্রবেশ করে এবং সেখানে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়, তবুও সে সেখানে চিরকাল থাকবে না; বরং তাকে পবিত্র করার পর সেখান থেকে জান্নাতে নিয়ে আসা হবে।(বিন বায ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দার্ব; ৬/৫১)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: মুসলমানদের মধ্যে পাপী তিন প্রকার: প্রথম দল যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন এবং তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; দ্বিতীয় দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং তাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি পাবে, তারপর তাদেরকে বের করে আনা হবে। এবং তৃতীয় একটি দল যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং শাস্তি পাবে, তবে তাদের জন্য শাফায়াত করা হবে এবং তাদের প্রাপ্য শাস্তি সম্পূর্ণরূপে পাওয়ার আগেই তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনা হবে (উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ৪/২)।
.
বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শায়খ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন; নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে যেগুলোতে প্রমাণ রয়েছে যে, তাওহীদে বিশ্বাসী লোকদের মধ্যে যারা বড় ধরনের পাপ অর্থাৎ কবিরা গুনাহ করে মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে; তারা সেখানে প্রবেশ করবে কবিরা গুনাহের কারণে যেগুলো থেকে তারা মৃত্যুর পূর্বে তওবা করেনি। কেউ কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে কারণ তারা যিনা থেকে তওবা না করেই মৃত্যুবরণ করেছে; অন্যরা এতে প্রবেশ করবে কারণ তারা সুদ থেকে তওবা না করে, পিতা-মাতার অবাধ্যতা করে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে,গীবত করে, বা মিথ্যাকে সমর্থন করে বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে মৃত্যুবরন করার কারনে। তাদের মধ্যে আল্লাহ যাকে চান তাকে ক্ষমা করবেন। এবং অন্যরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং পাপ অনুযায়ী শাস্তি পাবে। তবে জাহান্নাম থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। তাদের মধ্যে কেউ তাদের গুনাহ ও কর্ম অনুসারে সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থান করবে এবং অন্যরা স্বল্প সময়ের জন্য সেখানে থাকবে। একসময় তাওহীদপন্থী সমস্ত পাপীকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হলে এবং তাদের কেউ অবশিষ্ট না থাকলে, আগুন সব ধরণের কাফেরদের উপর ভাঁজ করে ফেলবে। তাওহীদে বিশ্বাসীদের জাহান্নাম থেকে এমতাবস্থায় বের করা হবে যে, তারা জ্বলে-পুড়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছিল।অতঃপর তাদের আবে-হায়াত (জীবন) নামক নদীতে প্রবেশ করানো হবে, ফলত স্রোতবাহিত উর্বর পলিতে গজিয়ে উঠা শস্য দানার ন্যায় তারা সজীব হয়ে উঠবে। তাদের ললাটে লিখে দেয়া হবে, ‘এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত দল। অতঃপর তাদের নিয়ে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২০০২৫২) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।