মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত সাদাস্রাবের হুকুম কী

প্রশ্ন: মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত সাদাস্রাবের হুকুম কী? সাদাস্রাব বের হওয়ার কারণে কী অযু ভঙ্গ হবে?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সাদা স্রাব হচ্ছে মেয়েদের গর্ভাশয় থেকে নির্গত এক প্রকার তরল পদার্থ, যা স্বচ্ছ। এমনও হতে পারে এটি নির্গত হওয়ার সময় নারী টেরও পায় না। এক মহিলা থেকে অপর মহিলার ক্ষেত্রে এটি বের হওয়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। এখন নারীদের লজ্জাস্থান থেকে নির্গত সাদা স্রাব পবিত্র নাকি অপবিত্র এবং এর কারণে ওযু ভঙ্গ হবে নাকি হবেনা,এখানে দুটি মাসয়ালা রয়েছে, আর উভয় মাসয়ালায় আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। উক্ত মতনৈক্যের বিষয়গুলল পরিস্কার ভাবে বুঝতে দুটি মাসয়ালাই জানা প্রয়োজন যেমন:
.
❑১ম মাসয়ালা: ওই সাদাস্রাব পবিত্র নাকি অপবিত্র?
.
মেয়েদের গর্ভাশয় থেকে বের হওয়া সাদা স্রাব পবিত্র নাকি অপবিত্র এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ দুটি মত রয়েছে যথা:
.
▪️(১).প্রথম অভিমত: মহিলাদের লজ্জাসস্থান থেকে নির্গত সাদাস্রাব পবিত্র। ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) এবং শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ- শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর দুটি মতের মধ্যে শক্তিশালী মত অনুযায়ী সাদা স্রাব পবিত্র। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) এ মতকে সঠিক বলেছেন, এই মতটি শাইখ ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) সহ জমহুর আলেমগনের বিশুদ্ধ মত। (দেখুন নববী আল-মাজমু, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪০৬ উসাইমীন; আল-শারহুল মুমতি,খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৫৭)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,

وإذا كانت –يعني هذه الإفرازات- من مسلك الذكر فهي طاهرة ، لأنها ليست من فضلات الطعام والشراب ، فليست بولاً ، والأصل عدم النجاسة حتى يقوم الدليل على ذلك ، ولأنه لا يلزمه إذا جامع أهله أن يغسل ذكره ، ولا ثيابه إذا تلوثت به ، ولو كانت نجسة للزم من ذلك أن ينجس المني ، لأنه يتلوث بها

“নিঃসৃত এই স্রাব যদি মুত্রনালী দিয়ে বের হয় তাহলে সেটা পবিত্র। কেননা এটি খাবার ও পানীয় এর বর্জ্য নয়; সুতরাং এটা পেশাব নয়। আর যে কোন কিছুর মূল অবস্থা হচ্ছে– পবিত্রতা; যতক্ষণ না অপবিত্রতার পক্ষে কোন দলিল সাব্যস্ত হয়। তাছাড়া কেউ যদি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তার জন্য পুরুষাঙ্গ ধৌত করা কিংবা এসব তার কাপড়ে লেগে থাকলেও কাপড় ধৌত করা অনিবার্য নয়। যদি এগুলো নাপাক হয় তাহলে বীর্য নাপাক হওয়াও অনিবার্য হয়ে যায়। কেননা বীর্য এসব স্রাবের সাথে মিশে যায়”(উসাইমীন; আল-শারহুল মুমতি,খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৪৫৭)
.
▪️(২).দ্বিতীয় অভিমত: এটি অপবিত্র। এটি অল্প কয়েকজন আলেমদের মত। তবে দুটি মতের মধ্যে প্রথম কথাটি অগ্রাধিকার যোগ্য। কেননা এ সাদাস্রাব অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে কুরআন সুন্নায় বিশুদ্ধ কোন দলিল নাই।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, لأن عائشة كانت تفرك المني من ثوب رسول الله – صلى الله عليه وسلم – وهو من جماع … وهو يلاقي رطوبة الفرج ، ولأننا لو حكمنا بنجاسة فرج المرأة لحكمنا بنجاسة منيها “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাপড় থেকে সহবাস করার ফলে যে বীর্য লেগে থাকতো সেগুলো নখ দিয়ে উঠিয়ে দিতেন। আর এটা ছিল সাদা স্রাবের অন্তর্ভুক্ত। যদি সেটাকে অপবিত্র বলে হুকুম দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই বীর্যকেও অপবিত্র বলে হুকুম দিতে হবে”।(ইবনে কুাদামাহ আল-মুগনী, খন্ড:২ পৃষ্ঠা: ৮৮)
.
❑২য় মাসয়ালা: মহিলাদের লজ্জাসস্থান থেকে নির্গত এই সাদা স্রাবের কারণে কী অযু ভঙ্গ হয়ে যায় নাকি ভঙ্গ হয় না?
.
মহিলাদের লজ্জাস্থান থেকে সাদা স্রাব নির্গত হওয়ার কারণে ওযু ভঙ্গ হবে কিনা এ বিষয়ে আলেমদের দুইটি মতামত রয়েছে।
.
▪️(১).প্রথম মতামত: এর মাধ্যমে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এটা হল জমহুরদের কথা। তাঁরা দলিল গ্রহণ করেছেন রাসূল (ﷺ) এর সেই কথা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুমতী মহিলাকে প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই সাদাস্রাবটি ছিল ইস্তিহাযার সাথে মিশ্রিত, শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এ অভিমতটি গ্রহণ করেছেন। দলিল হচ্ছে, সহীহ বুখারীতে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; ফাতিমা বিন্‌তু আবু হুবায়শ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি একজন রক্ত-প্রদর রোগগ্রস্তা (ইস্তিহাযাহ) মহিলা। আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত পরিত্যাগ করবো?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; না, এতো শিরা হতে নির্গত রক্ত; হায়য নয়। তাই যখন তোমার হায়য আসবে তখন সালাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সালাত আদায় করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা বলেছেন; অতঃপর এভাবে আরেক হায়য না আসা পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে। (সহীহ বুখারী হা/২২৮; সহীহ মুসলিম ৩/১৪; হা/৩৩৩, আহমাদ ২৪৫৭৭; আধুনিক প্রকাশনী ২২২, ইসলামী ফাউন্ডেশন ২২৮)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন, الذي ينسب عني غير هذا القول غير صادق ، والظاهر أنه فهم من قولي إنه طاهر أنه لا ينقض الوضوء “যে ব্যক্তি অন্য মতটিকে আমার দিকে সম্পৃক্ত করে সে সত্যবাদী নয়। খুব সম্ভব ‘আমি যে বলেছি এগুলো পবিত্র’ এর থেকে সে বুঝেছে যে, এগুলো ওযু ভঙ্গ করবে না”।(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড: ১১ পৃষ্ঠা: ২৮৭)। তিনি আরও বলেন, أما اعتقاد بعض النساء أنه لا ينتقض الوضوء فهذا لا أعلم له أصلا إلا قول ابن حزم”
“কিছু কিছু নারী মনে করেন যে, ‘এতে ওযু ভাঙ্গবে না’ – আমি এ অভিমতের কোন ভিত্তি জানি না; শুধু ইবনে হাযমের উক্তি ছাড়া।”(মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড:১১ পৃষ্ঠা: ২৮৫)
.
কিন্তু কোন নারী থেকে যদি এ স্রাব অব্যাহতভাবে বের হতে থাকে তাহলে সে নারী ওয়াক্ত প্রবেশ করার পর প্রত্যেক নামাযের জন্য একবার ওযু করবেন। ওযু করার পর যদি কোন কিছু বের হয় এতে কোন অসুবিধা নেই; এমনকি সেটা নামাযের মধ্যে হলেও।
.
এই মর্মে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেন,

“إذا كانت الرطوبة المذكورة مستمرة في غالب الأوقات فعلى كل واحدة ممن تجد هذه الرطوبة الوضوء لكل صلاة إذا دخل الوقت ، كالمستحاضة ، وكصاحب السلس في البول ، أما إذا كانت الرطوبة تعرض في بعض الأحيان –وليست مستمرة- فإن حكمها حكم البول متى وُجدت انتقضت الطهاة ولو في الصلاة
.
“উল্লেখিত স্রাব যদি অধিকাংশ সময় অব্যাহতভাবে বের হয় তাহলে এ নারীর উপর প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত প্রবেশ করার পর ওযু করা আবশ্যক; যেমনটি ঋতুস্রাবের অনিয়মগ্রস্ত নারী ও অনর্গল প্রশ্রাব ঝরে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যদি এ স্রাব কখনও কখনও বের হয়; সবসময় নয়; তাহলে এর হুকুম প্রশ্রাবের হুকুম। যখন বের হবে ওযু নষ্ট হবে; এমনকি নামাযের মধ্যে বের হলেও।” (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১০; পৃষ্ঠা: ১৩০)

▪️(২).দ্বিতীয় মতামত: এর মাধ্যমে ওযু ভঙ্গ হয় না। এটা ইবনু হাযমের মত। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার নিকটে এই মাসয়ালার ক্ষেত্রে উল্লেখিত দুই অভিমতের মতই দুইটি অভিমত রয়েছে। তিনি তার “আল ইখতিয়ারাত” নামক গ্রন্থে ওযু ভঙ্গ হবে না এ মাসয়ালাটি পছন্দ করেছেন। অপরদিকে তিনি তার মাজমুউল ফাতাওয়া গ্রন্থে তিনি জমহুরদের মতটি অর্থাৎ ,ওযু ভঙ্গ হয়ে যায় এই মতটি পছন্দ করেছেন। (দেখুন; মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড: ২১ পৃষ্ঠা: ২২১,আল ইখতিয়ারাত পৃষ্ঠা:২৭)
.
আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] উভয় মতের বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন,

الظاهر لي بعد البحث أن السائل الخارج من المرأة إذا كان لا يخرج من المثانة وإنما يخرج من الرحم فهو طاهر، ولكنه ينقض الوضوء وإن كان طاهراً، لأنه لا يشترط للناقض للوضوء أن يكون نجساً، فها هي الريح تخرج من الدبر وليس لها جرم، ومع ذلك تنقض الوضوء، وعلى هذا إذا خرج من المرأة وهي على وضوء، فإنه ينقض الوضوء وعليها تجديده، فإن كان مستمراً، فإنه لا ينقض الوضوء، ولكن لا تتوضأ للصلاة إلا إذا دخل وقتها وتصلي في هذا الوقت الذي تتوضأ فيه فروضاً ونوافل وتقرأ القرآن وتفعل ما شاءت مما يباح لها، كما قال أهل العلم نحو هذا فيمن به سلس البول .هذا هو حكم السائل من جهة الطهارة فهو طاهر، لا ينجس الثياب ولا البدن.وأما حكمه من جهة الوضوء، فهو ناقض للوضوء، إلا أن يكون مستمراً عليها، فإن كان مستمراً فإنه ينقض الوضوء، لكن على المرأة أن لا تتوضأ للصلاة إلا بعد دخول الوقت وأن تتحفظ.أما إن كان متقطعاً وكان من عادته أن ينقطع في أوقات الصلاة، فإنها تؤخر الصلاة إلى الوقت الذي ينقطع فيه ما لم تخش الوقت، فإن خشيت خروج الوقت، فإنها تتوضأ وتتلجم (تتحفظ) وتصلي. ولا فرق بين القليل والكثير، لأنه كله خارج من السبيل فيكون ناقضاً قليله وكثيره.وأما اعتقاد بعض النساء أنه لا ينقض الوضوء، فهذا لا أعلم له أصلاً إلا قولاً لابن حزم ـ رحمه الله ـ فإنه يقول : إن هذا لا ينقض الوضوء ، ولكنه لم يذكر لهذا دليلاً ، ولو كان لـه دليل من الكتاب والسنة أو أقوال الصحابة لكان حجة ، وعلى المرأة أن تتقي الله وتحرص على طهارتها ، فإن الصلاة لا تقبل بغير طهارة ولو صلت مائة مرة ، بل إن بعض العلماء يقول : إن الذي يصلي بلا طهارة يكفر لأن هذا من باب الاستهزاء بآيات الله سبحانه وتعالى .
.
“গবেষণার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, মহিলাদের এই তরল পদার্থ যদি মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে তা পবিত্র। তবে পবিত্র হলেও তা অযু ভঙ্গ করবে। কেননা অযু ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য অপবিত্র হওয়া শর্ত নয়। যেমন এই যে বায়ূ- যা পশ্চাদভাগ দিয়ে বের হয়, তার তো কোন দোষ নেই; অথচ তা অযু ভঙ্গ করে। অতএব, অযু অবস্থায় যদি মহিলার এরূপ তরল পদার্থ বের হয়, তাহলে তা অযু ভঙ্গ করবে এবং তাকে নতুনভাবে অযু করতে হবে।
.
তবে যদি তা অবিরামভাবে চলে, তাহলে অযু ভঙ্গ করবে না। কিন্তু নামাযের সময় হলে সে নামাযের জন্য অযু করবে এবং ঐ অযুতে ঐ ওয়াক্তের ফরয ও নফল নামাযসমূহ আদায় করবে। অনুরূপভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে এবং তার জন্য বৈধ সব কাজ সে করতে পারে। যেমনিভাবে মূত্রবেগ ধারণে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিদ্বানগণ এ বক্তব্যই পেশ করেছেন। এটাই হলো তরল ঐ পদার্থের বিধান। অর্থাৎ পবিত্রতার দিক বিবেচনায় সেটা পবিত্র। কিন্তু অযু ভঙ্গের দিক বিবেচনায় সেটা অযু ভঙ্গকারী- যদি না সেটা অবিরাম বের হয়। আর অবিরাম বের হলে অযু ভঙ্গ করবে না; তবে মহিলাকে নামাযের সময় হলে নামাযের জন্য অযু করতে হবে- নামাযের সময়ের আগে নয় এবং অযু ধরে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে যদি তা অবিরাম না চলে এবং নামাযের সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া তার অভ্যাস হয়, তাহলে যে সময়ে বন্ধ থাকে নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় না থাকলে নামাযকে সেই সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করবে। আর নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় থাকলে অযু করে নামায আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে কম-বেশীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এর সবই একই রাস্তা দিয়ে বের হয়। সুতরাং কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে। তবে যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দিয়ে বের হয়- যেমন রক্ত, বমি, তা কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে না।
.
এদিকে এগুলো অযু ভঙ্গ করবে না মর্মে কতিপয় মহিলার যে বিশ্বাস, ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অভিমত ছাড়া তার কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তিনি (ইবনে হাযম) বলেন, “ইহা অযু ভঙ্গ করে না।” কিন্তু তিনি এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করেননি। যদি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বা সাহাবীগণের কথা থেকে এর পক্ষে কোন দলীল থাকত, তাহলে তা দলীল হিসাবেই গৃহীত হত। যাহোক, মহিলাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং নিজেদের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়লে তা গৃহীত হবে না- যদিও তারা একশত বার নামায পড়ে। এমনকি কতিপয় আলেম বলেছেন, যে অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়ে, সে কুফরী করে। কেননা ইহা আল্লাহর সাথে ঠাট্টার শামিল”। (উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খন্ড: ১ পৃষ্ঠা:২৮৪-২৮৬)
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে,গর্ভাশয় থেকে নির্গত সাদা স্রাব বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী পবিত্র এবং উক্ত স্রাব নির্গত হলে অধিক বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ওযু ভঙ্গ হবে। সুতরাং সাদাস্রাব নির্গত হলে ওযু করে নেওয়া আবশ্যক। তবে যদি এটি অনবরত বের হতে থাকে তাহলে ঐ নারীর কর্তব্য সালাতের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই নামাযের জন্য ওযু না করা।বরং সালাতের ওয়াক্ত হলে প্রত্যেক সালাতের জন্য একবার করে ওযু করে সালাত আদায় করা। ফলে সালাত পড়া অবস্থায় বের হলেও সালাতের কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ,অতঃপর সালাত শেষ করে নতুন করে সালাত শুরু করলে আবার একবার অযু করে নেওয়া। (এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫০৪০৪ ও ৪৪৯৮০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।