মহিলাদের কবর যিয়ারতের বিধান এবং কবর যিয়ারতের সুন্নাহ সম্মত দো‘আ

ভূমিকা: দুনিয়ার জীবনের মূল্যহীনতা প্রসঙ্গে ধারণা ও উপদেশ গ্রহণ,মৃত্যু,আখিরাত বা পরকালকে স্মরণ এবং মৃতব্যক্তির জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব।রাসূল (ﷺ) বলেন,“আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। শোনো! এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। কারণ,কবর যিয়ারত হৃদয় নম্র করে,চক্ষু অশ্রুসিক্ত করে এবং পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে (যিয়ারতে গিয়ে) বাজে কথা বলো না।(মুস্তাদরাক হাকেম ১/৩৭৬ মুসনাদে আহমাদ ৩/২৩৭-২৫০)।অপর বর্ননায় বলেন,“তোমাদের কবর যিয়ারত যেন তোমাদের কল্যাণ বৃদ্ধি করে।”(মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫০-৩৫৫ প্রমুখ)
.
মহিলারা কবর যিয়ারত করতে পারবে কিনা এই ব্যপারে ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কারন এই মর্মে দুই রকম বর্ননা পাওয়া যায়।তবে বর্ননা গুলো সমন্বয় করে জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মত হল মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করা এবং যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া হারাম এবং কবীরা গোনাহ। কারণ, নারীদের এমনিতেই ধৈর্য ও সহ্য শক্তি কম। তাছাড়া তারা যিয়ারতে গিয়ে শরীয়ত-বিরোধী কাজ অধিক করতে পারে। যেমন: চেঁচামেচি ও উচ্চস্বরে কান্নাকাটি পর্দাহীনতার সাথে যিয়ারতে যাওয়া,অভ্যাসগত ভাবে কবরস্থান বেড়াতে যাওয়া। (পার্ক মনে করে নেবে।) সেখানে বসে ফালতু আড্ডা দিয়ে বাজে কথাবার্তা ইত্যাদি বলা।যা কিছু মুসলিম দেশে এর বাস্তব উদাহরণ বর্তমান। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের কবর যিয়ারাত অপছন্দ করেছেন।আবু হুরাইরা (রাঃ)থেকে বর্নিত তিনি বলেন,কবর যিয়ারাতকারী মহিলাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন।(তিরমিজি, ১০৫৬ ইবনে মাজা ১৫৭৬)।
.
তবে নারীদের জন্য কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ হলেও কবর যিয়ারতের নিয়্যত ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যাওয়ার পথে কোনো মহিলা যদি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে,তাহলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কবরবাসীদের জন্য দো‘আ করলে কোন সমস্যা নেই। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)–এর হাদীসে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।আয়েশা (রাঃ) তার ভাই আব্দুর রহমান বিন আবুবকর (রাঃ)-এর কবর যিয়ারত করার সময় তাকে বলা হ’ল রাসূল (ﷺ) কি কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ নিষেধ করেছিলেন। তবে পরে তিনি কবর যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন।(মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৩৯২; আবু ইয়া‘লা হা/৪৮৭১ ইরওয়া হা/৭৭৫; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭০, সনদ সহীহ) এছাড়াও রাসূল (ﷺ) আয়েশা (রাঃ)-কে কবর যিয়ারতের দো‘আ শিখিয়ে দিয়েছেন(সহীহ মুসলিম হা/৯৭৪; সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৪৪২১ মিশকাত হা/১৭৬৭)।
.
রাসূল (ﷺ)বলেন, তোমাদের কেউ যখন পরিচিত কোন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে সালাম দিলে সেও তাকে চিনে এবং তার সালামের জবাব দেয়। আর যখন কোন অপরিচিত কবরের পাশ দিয়ে সালাম দিয়ে অতিক্রম করে,তখন সেও তার সালামের জবাব দেয়।’[বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৯২৯৬; ইবনু আব্দিল বার্র, আল-ইস্তিযকার ১/১৮৫; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২৯৭; ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ, পৃ. ৫ ইবনে উসাইমীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ক্রমিক ৩০৭, ২/২৪৪ পৃ.) ইরাক্বী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু আব্দিল বার্র, শাওকানী প্রমুখ বিদ্বানগণ হাদীসটি সহীহ বলেছেন। তবে আলবানী একে যঈফ বলেছেন।(সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৪৯৩)।

অতএব,সকল প্রকার আদবের সাথে মহিলারা কখনো কখনো কবর যিয়ারত করতে পারে।অর্থাৎ মহিলারা কবরের পাশ দিয়ে যাতায়াত করলে কবরবাসীদের কে সালাম দেয়া বা তাদের জন্য দোয়া করলে হারাম হবেনা ইনশাআল্লাহ।বহু উলামার নিকট অনুমতি রয়েছে এবং তার দলীলও বর্তমান। তবে বেশী করলে তারা অভিসম্পাতে শামিল হবে।(দেখুন, আহকামুল জানাইয ১৮০- ১৮৭ পৃঃ)
.
কবর যিয়ারতের সুন্নাহ সম্মত দো‘আ হল:

اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ، مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللّٰهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ، (وَيَرْحَمُ اللّٰهُ الْمُسْتَقْدِمِيْنَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ) أَسْاَلُ اللّٰهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
অনুবাদ:আস্‌সালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লা-হিকুনা,(ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীনা) আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ

অর্থ: হে গৃহসমূহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আর নিশ্চয় আমরা ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হবো।(আল্লাহ আমাদের পুর্ববর্তীদের এবং পরবর্তীদের প্রতি দয়া করুন।) আমি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। (সহীহ মুসলিম ২/৬৭১, নং ৯৭৫; ইবন মাজাহ্‌, ১/৪৯৪, আর শব্দ তাঁরই, নং ১৫৪৭; বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে। আর দু ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস থেকে, যা সংকলন করেছেন, মুসলিম, ২/৬৭১, নং ৯৭৫)
.
উল্লেখ যে, কবরবাসীকে সালামের প্রচলিত যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে উক্ত হাদিস সহীহ নয়।

السلام عليكم يا اهل القبور ويغفر الله لنا ولكم انتم سلفنا ونحن بالاثر ـ
“আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা, ওয়া নাহনু বিল আছারি।” বাংলাতে এই বলবে, ‘হে কবরবাসী! আপনাদের প্রতি সালাম। আল্লাহপাক আপনাদেরকে ক্ষমা করুন। আপনারা আমাদের পূর্বে চলে এসেছেন,আমরা পিছে পিছে আসছি।[য‘ঈফ সুনানে তিরমিযী ১০৫৩, রিয়াযুস সলিহীন ৫৮৯, য‘ঈফ আল জামি‘ আস্ সগীর ৩৩৭২](আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।