বীর্য কামরস ও সাদা স্রাব কী এবং কিভাবে বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য করা যায় এবং এসবের হুকুম

প্রশ্ন: বীর্য, কামরস এবং সাদা স্রাব কী? আমরা কিভাবে বীর্য ও কামরসের মাঝে পার্থক্য করতে পারি? বীর্য, কামরস এবং সাদা স্রাব এই তিনটির হুকুমগত দিক থেকে পার্থক্য কী?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ১.বীর্য এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে:

(ক)। হলুদ রঙের পাতলা। এ বৈশিষ্ট্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- “নিশ্চয় পুরুষের পানি ঘন সাদা। আর মহিলার পানি পাতলা ও হলুদ রঙের।”(সহহি মুসলিম হা/৩১১)

(খ)। বীর্যের গন্ধ গাছের মঞ্জরির মত। আর মঞ্জরির গন্ধ ময়দার খামিরের কাছাকাছি।

(গ)। সুখানুভূতির সাথে বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসা। এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। বরং একটি পাওয়া গেলেই সে তরলকে বীর্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে।
.
▪️(২).কামরস: সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।
.
▪️(৩).সাদা স্রাব: গর্ভাশয় থেকে নির্গত পদার্থ, যা স্বচ্ছ। হতে পারে এটি বের হওয়ার সময় নারী টেরও পায় না। এক মহিলা থেকে অপর মহিলার ক্ষেত্রে এটি বের হওয়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
.
বীর্য ও কামরস অর্থাৎ (মনী ও মযি) এর মাঝে মৌলিক তিনটি পার্থক্য রয়েছে:

(১)। বীর্য সবেগে ও শক্তি দিয়ে বের হয়। পক্ষান্তরে, কামরস কোন গতি ছাড়া বের হয়। কখনও কখনও এটি বের হওয়ার সময় মানুষ টেরও পায় না।

(২)। বীর্য হচ্ছে- সাদা, ঘন, গাঢ় তরল। এর গন্ধ গাছের মঞ্জরী বা ময়দার খামিরের মত। পক্ষান্তরে, কামরস হচ্ছে- স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল তরল; এর কোন গন্ধ নেই।

(৩)। বীর্য বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে। পক্ষান্তরে, কামরস বের হওয়ার পর এরকম কোন নিস্তেজতা আসে না।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] তাঁর ‘আল-মাজমু’ গ্রন্থে বলেন:

” كل واحد من هذه الثلاثة كافية في كونه منيا ، ولا يشترط اجتماعها ، فإن لم يوجد منها شيء لم يحكم بكونه منيا ”

“এ তিনটি বৈশিষ্ট্যের যে কোন একটি পাওয়াই বীর্য সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট; তিনটি একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। যদি এ তিনটি শর্তের কোনটি পাওয়া না যায় তাহলে সেটাকে বীর্য বলে হুকুম দেয়া হবে না।”(নববী আল-মাজমু’ খন্ড: ২ পৃষ্ঠা:১৪১)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,

” المني : ماء أبيض ثخين ، يخرج من الذكر ، دفقا بلذة ، وبعد خروجه يحس الإنسان بفتور، والمني طاهر على الصحيح ، ويستحب تنظيف الثياب منه بغسل أو حك ، وخروجه من الإنسان موجب للغسل ، سواء كان بجماع أو احتلام ، أما إذا خرج المني بغير لذة ، بسبب مرض ، أو شدة برد ، فإنه لا يوجب الغسل ، ولكن يوجب الو ضوء فقط .
المذي : ماء رقيق ، أبيض ، لزج ، يخرج من الذكر عند مداعبته لزوجته ، أو عند التفكير بالجماع ، لكن من غير دفق ، ولا يعقبه فتور ، والمذي نجس ، ويجب بخروجه الوضوء ، وغسل الذكر والخصيتين ، ورش ما أصاب البدن والثياب منه .
والودي : ماء ثخين ، أبيض ، يخرج من الذكر بعد البول ، وهو نجس ويوجب الوضوء ”

বীর্য হচ্ছে- গাঢ় সাদা পানি। এটি পুরুষাঙ্গ থেকে সবেগে সুখানুভূতির সাথে বের হয়। এটি বের হওয়ার পর মানুষ যৌন নিস্তেজতা অনুভব করে। সঠিক মতানুযায়ী বীর্য পবিত্র। ধুয়ে ফেলা কিংবা খসে ফেলার মাধ্যমে বীর্য থেকে কাপড়-চোপড় পরিস্কার করা মুস্তাহাব। কেউ বীর্যপাত করলে তার ওপর গোসল ফরয হয়; সেটা সঙ্গমের কারণে হোক কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে হোক। আর যদি রোগের কারণে কিংবা তীব্র ঠাণ্ডার কারণে সুখানুভূতি ছাড়া বীর্য বের হয় তাহলে গোসল ফরয হবে না; শুধু ওজু ফরয হবে।

কামরস হচ্ছে- পাতলা ও পিচ্ছিল পানি। এটি স্ত্রীর সাথে শৃঙ্গারে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ থেকে বের হয় কিংবা সঙ্গম নিয়ে চিন্তা করলে বের হয়; তবে এটি সবেগে বের হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর নিস্তেজতা আসে না।

ওদি হচ্ছে- গাঢ় সাদা রঙের পানি; যা প্রস্রাবের পর পুরুষাঙ্গ থেকে বের হয়। এটি অপবিত্র। এটা বের হলে ওজু ফরয হয়।( ফাতওয়া লাজনাদ দায়মা খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ১৩৮)
.
▪️উপরোক্ত এ তিনটি তরল (বীর্য, কামরস ও স্রাব) এই তিনের মাঝে হুকুমগত দিক থেকে পার্থক্য হচ্ছে:

বীর্য পবিত্র। বীর্য কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধোয়া ফরয নয়। তবে, বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয়; সেটা ঘুমের মধ্যে বের হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায়; সহবাসের কারণে বের হোক কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে। বীর্য ধুয়ে ফেলা কিংবা খসে ফেলার মাধ্যমে বীর্য থেকে কাপড়-চোপড় পরিস্কার করা মুস্তাহাব।

আর কামরস বা মযী নাপাক। এটি শরীরে লাগলে ধুয়ে ফেলা ফরয। কাপড়ে লাগলে কাপড় পবিত্র করার জন্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট। কামরস বের হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। কামরস বের হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয় না।

পক্ষান্তরে, স্রাব পবিত্র। এটি ধৌত করা কিংবা কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধৌত করা আবশ্যক নয়। তবে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। তবে এটা যদি চলমানভাবে বের হতে থাকে তাহলে সে মহিলা প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর নতুন করে ওজু করবে। ওজু করার পর স্রাব বের হলেও কোন অসুবিধা নেই।(বিস্তারিত জানতে মূল ফাতওয়া দেখুন: ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৯৫০৭ এবং ১৬৬১০৬) আল্লাহই ভাল জানেন।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।