অতিতের অনাদায়কৃত নামাযের কাযা আদায় করার শারঈ হুকুম কী

উত্তর: সালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর উপরেই অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে। সালাত সঠিক হলে অন্যান্য সব ইবাদত সঠিক হবে। আর সালাত বাতিল হলে অন্যান্য সব ইবাদত বাতিল হবে। তাই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের সালাতের প্রতি যত্নশীল হওয়া অপরিহার্য।আর কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে কোন ব্যক্তির অতিতে ছুটে যাওয়া ফরজ নামায সংক্রান্ত মাসয়ালা সম্পর্কে ইমামদের বক্তব্য থেকে যা প্রামন হয় তা হচ্ছে, অতিতের নামায ছুটে যাওয়ার সর্বমোট তিনটি অবস্থা হতে পারে যেমন:

(১)। প্রথম অবস্থা: তীব্র সদিচ্ছা সত্ত্বেও অনিচ্ছাকৃতভাবে, শরিয়তে গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে নামায ছুটে যাওয়া। যেমন ভুলে যাওয়া কিংবা ঘুমিয়ে পড়া। এ অবস্থাতে আপনার ওজর গ্রহণযোগ্য এবং স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে নামাযের কাযা পালন করা আপনার ওপর অপরিহার্য ওয়াজিব। এ হুকুমের দলিল হচ্ছে সহিহ মুসলিমের হাদিস: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ ফজর নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকার ঘটনা। তখন সাহাবায়ে কেরাম একে অপরকে ফিসফিস করে বলছিলেন: নামাযের ক্ষেত্রে আমাদের এ অবহেলা করার কাফফারা (প্রতিকার) কী? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ঘুমের কারণে নামায ছুটে গেলে সেটা অবহেলা নয়; অবহেলা হচ্ছে যে ব্যক্তি অন্য নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নামায পড়ে না। ঘুমের কারণে যার নামায ছুটে গেছে সে যেন জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে নামায আদায় করে নেয়।(সহীহ মুসলিম হা/ ৬৮১) অপর বর্ননায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন:‏ “‏ مَنْ نَسِيَ صَلاَةً أَوْ نَامَ عَنْهَا فَكَفَّارَتُهَا أَنْ يُصَلِّيَهَا إِذَا ذَكَرَهَا ‏”‏ “যে ব্যক্তি সালাত আদায় করতে ভুলে গেছে অথবা সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে ছিল,এরকাফফারা হচ্ছে- সে যখনই তা মনে করবে তখনই সালাত আদায় করে নিবে।”(ইমাম বুখারী হা/৫৭২ ও মুসলিম হা/৬৮৪; সহীহ ইবনু হিব্বান ১৫৫৬: হাদিসটির ভাষা ইমাম মুসলিমের)

এর অর্থ এ নয় যে, কোন মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকবে; এরপর ঘুমের ওজর পেশ করবে কিংবা ঘুম থেকে জাগার উপায়গুলো গ্রহণ না করে এরপর ওজর পেশ করবে। বরং তার কর্তব্য হচ্ছে- যাবতীয় উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে ঘুম থেকে জাগার চেষ্টা করা যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ঘটনায় করেছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে জেগে থেকে তাদেরকে নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তন্দ্রা সে ব্যক্তিকে কাবু করে ফেলে; ফলে তিনি তাদেরকে জাগাতে পারেননি। এমন অবস্থার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ওজর গ্রহণযোগ্য হবে।সুতরাং এমন অবস্থায় স্বরন হওয়ার সাথে সাথে ছুটে যাওয়া নামাযের কাযা আদায় করতে হবে এক্ষেত্রে যদি একাধিক নামায ছুটে যায় তাহলে প্রথম নামাযটি প্রথমে আদায় করবেন।তারপর দ্বিতীয়টি এভাবে সিরিয়ালে এর দলীল জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর হাদিস-“উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে দিতে বললেন:“ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি আসরের সালাত আদায় করতে করতে সূর্য তো ডুবেই যাচ্ছিল!”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “আল্লাহর শপথ,আমিতোএখনো আসরের সালাত আদায় করতে পারিনি।”তার পর আমরা উঠে বুত্বহান নামক উপত্যকায় গেলাম। সেখানে তিনি সালাতের জন্য ওজুকরলেন। আমরাও সালাতের জন্য ওজু করলাম। তিনি যখন আসরের সালাত পড়ালেন তখন সূর্য ডুবে গেছে। আসরের পর তিনি মাগরিবের সালাত পড়ালেন।”[সহীহ বুখারী হা/৫৭১ও সহীহ মুসলিম হা/৬৩১) আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন, ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৬৬৪)
.
(২)। দ্বিতীয় অবস্থা: এমন ওজরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া যে সময় ব্যক্তির কোন হুঁশ থাকে না। যেমন অজ্ঞান হওয়া। এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিকে সালাতের বিধান থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাই তাকে উক্ত সালাতের কাযা করতে হয় না।

গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে কোন এক ব্যক্তি কর্তৃক প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। এর ফলে তিন মাস হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলাম। এসময়ে আমার হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময়ে আমি কোন সালাত আদায় করিনি।আমি কি এ সালাতগুলো কাযা করা থেকে অব্যাহতি পাব? নাকি আমাকে এ সালাতগুলো কাযা করতে হবে?

তাঁরা উত্তরে বলেন:
” تسقط عنك الصلاة في المدة المذكورة ما دمت لا تعقل في تلك المدة ”
“উল্লেখিত সময়ের সালাত কাযা করা থেকে আপনি অব্যাহতি পাবেন। কারণ তখন তো আপনার কোন হুঁশ ছিল না।”[উদ্ধৃতি সমাপ্ত] তাঁদেরকে আরো প্রশ্ন করা হয়েছিল: যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে এবং এ পুরো সময়টাতে কোন সালাত আদায় না করে, তবে ইনি ছুটে যাওয়া সালাত কি পদ্ধতিতে আদায় করবেন?

তাঁরা উত্তরে বলেন:

” لا يقض ما تركه من الصلوات في هذه المدة ، لأنه في حكم المجنون والحال ما ذكر , والمجنون مرفوع عنه القلم ”

“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করতে হবে না। কারণ উল্লেখিত অবস্থায় তিনি বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির হুকুমের মধ্যে পড়েন।বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির উপর থেকে তো (শরয়ি বিধান আরোপের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।”[গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র; ৬/২১)
.
(৩)। তৃতীয় অবস্থা: ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওজর ছাড়া সালাত ত্যাগ করা। এটি মহা অপরাধ ও ন্যাক্কার জনক গুনাহ। আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:

এক: সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, সালাত ফরজ হওয়াকে মেনে না নেয় তবে সে লোক কাফের- এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কারণ সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে আগে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর ইসলামের আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে। আর কাফের থাকা অবস্থায় সে যে সালাতগুলো ত্যাগ করেছে সেগুলোর কাযা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয়।

দুই: সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা আদায় শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন সালাত ত্যাগ করেছিল তখন তার কোন গ্রহণযোগ্য ওজর ছিল না।আল্লাহ তো সুনির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করাকে তার উপর ফরজ করেছেন।আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন : (إِنَّ الصَّلاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا ) “নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।”[সূরা নিসা, ৪: ১০৩] অর্থাৎ নামাযের সুনির্দিষ্ট সময় আছে। আরেকটি দলীল হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:“
: ( مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ )
“যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করবে যা আমাদের শরিয়তভুক্ত নয়- তবে তা প্রত্যাখ্যাত”[ইমাম বুখারী হা/২৬৯৭ ও মুসলিম হা/১৭১৮)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] তার ‘আল-শারহুল মুমতি গ্রন্থে আলেমদের এ বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন। তবে, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া যে মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন সেটা হচ্ছে- এ ধরণের কাযা নামায সহিহ হবে না; বরং সে ব্যক্তির এ নামাযগুলো কাযা পালন করার বিধান নেই। শাইখুল ইসলাম তাঁর ‘ইখতিয়ারাত’ নামক গ্রন্থে বলেন: ” وتارك الصلاة عمدا لا يشرع له قضاؤها ، ولا تصح منه ، بل يكثر من التطوع ، وهو قول طائفة من السلف .”
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পড়ে না সে ব্যক্তির নামায কাযা পালন করার বিধান নেই এবং আদায় করলে সহিহ হবে না। বরং সে ব্যক্তি বেশি বেশি নফল নামায আদায় করবে। এটি একদল সলফে সালেহীন এর উক্তি।” সমকালীন আলেমদের মধ্যে শাইখ উসাইমীন পূর্বোক্ত গ্রন্থে এ অভিমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ হাদিস দিয়ে দলিল দিয়েছেন: “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে- নামাযের ক্ষেত্রে আপনি তীব্র সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং যথাসময়ে নামায আদায়ে সচেষ্ট হোন; যেমনটা আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করা মুমিনদের ওপর ফরয”[সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩: বিস্তারিত দেখুন, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার আল ইখতিয়ারাত পৃষ্ঠা: ৩৪; ইমাম উসাইমীন ‘আল-শারহুল মুমতি; খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৮৯)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করিনি।এখন আমি প্রতি ফরজ সালাতের সাথে আরেক বার ফরজ সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার উপর অন্য কোন করণীয় আছে?

তিনি উত্তরে বলেন:

” الذي يترك الصلاة عمداً ليس عليه قضاء على الصحيح ، وإنما عليه التوبة إلى الله عز وجل ؛ لأن الصلاة عمود الإسلام ، وتركها أعظم الجرائم ، بل تركها عمداً كفر أكبر في أصح قولي العلماء ؛ لما ثبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال : ( العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر ) أخرجه الإمام أحمد وأهل السنن بإسناد صحيح عن بريدة رضي الله عنه ؛ ولقوله عليه الصلاة والسلام : ( بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة ) أخرجه الإمام مسلم في صحيحه عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما ، وفي الباب أحاديث أخرى تدل على ذلك .

فالواجب عليك يا أخي التوبة إلى الله التوبة الصادقة ، وذلك بالندم على ما مضى منك ، والإقلاع من ترك الصلاة ، والعزم الصادق على أن لا تعود إلى ذلك ، وليس عليك أن تقضي لا مع كل صلاة ولا في غير ذلك ، بل عليك التوبة فقط ، والحمد لله ، من تاب تاب الله عليه ، يقول الله سبحانه : ( وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ) ، ويقول النبي صلى الله عليه وسلم : ( التائب من الذنب كمن لا ذنب له ) .

فعليك أن تصدُق في التوبة ، وأن تحاسب نفسك ، وأن تجتهد بالمحافظة على الصلاة في أوقاتها في الجماعة ، وأن تستغفر الله عما جرى منك ، وتكثر من العمل الصالح ، وأبشر بالخير ، يقول الله سبحانه : ( وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى ) ، ولما ذكر الشرك والقتل والزنا في سورة الفرقان قال جل وعلا بعد ذلك : ( وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا . إِلا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا ) .نسأل الله لنا ولك التوفيق ، وصحة التوبة ، والاستقامة على الخير ”

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে,সঠিক মতানুসারে তার উপর কোন কাযা নেই। বরং তাকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে।কারণ সালাত ইসলামের একটি রুকন বা স্তম্ভ।সালাত ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধ সমূহের একটি।বরং ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’-আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে এ মতটি অধিক বিশুদ্ধ। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সাব্যস্ত হয়েছে যে তিনি বলেছেন:“আমাদের ও তাদের (বিধর্মীদের) মাঝে পার্থক্য হলো সালাত। তাই যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কুফরিকরলো।”[ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ সনদে বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন] এবং তিনি আরো বলেছেন:“কোন ব্যক্তি এবং শিরকও কুফরে পতিত হওয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[হাদিসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনাকরেছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদিস রয়েছেযাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়]

প্রিয় ভাই, এক্ষেত্রে আপনার উপর ওয়াজিব হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তওবা করা। আর তা হলো: (১) পূর্বে যা গত হয়েছে তার জন্যঅনুতপ্ত হওয়া (২) সালাত ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেয়া এবং (৩) এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না।আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা আদায় করতে হবে না। বরং আপনাকে শুধু তওবা করতে হবে। সকল প্রশংসা আল্লাহ’র জন্য। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন।আল্লাহতা‘ আলা বলেছেন: “হে মু’মিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তওবা করো,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”[২৮ আন-নূর: ৩১] আর নবী সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেন:“পাপ থেকে তওবাকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার মূলতঃই কোন পাপ নেই।” তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তওবা করতে হবে। নিজের নফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে।সঠিক সময়ে জামাতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনার দ্বারা যা যা হয়ে গেছে -সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:“আর যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়েতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয়ই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।”[সূরা ত্বহা, ২০: ৮২] সূরা আল-ফুরক্বান এ শিরক, হত্যা, জিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করার পর আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর যে তা করল সে পাপ করল। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে। তবে ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে; আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভাল কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।”[সূরা আল-ফুরক্বান, আয়াত ২৫: ৬৯-৭০] আমরা আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও আপনাকে তাওফিক দান করেন, বিশুদ্ধ তওবা নসীব করেন ও সৎ পথে অবিচল রাখেন।”(বিন বায মাজমূ ফাতওয়া খন্ড: ১০ পৃষ্ঠা: ৩২৯, ৩৩০)
.
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যথাসময়ে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।