বিবাহ করা সুন্নাত না ফরয এবং কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে

প্রশ্ন: বিবাহ করা সুন্নাত না ফরয? কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ব্যক্তির অবস্থার আলোক বিয়ে করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই কথা। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে যার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে এবং নিজেকে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রাখার ক্ষমতা আছে, স্বাভাবিক ভাবে তার জন্য বিবাহ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে যুব সম্প্রদায়!তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করতে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কারণ এটা তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে,লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না তার উপর সিয়াম পালন করা কর্তব্য। কারণ এটা তার জন্য ঢালস্বরূপ। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮০)। তবে একাকী জীবন-যাপনের চেয়ে বিবাহ করা উত্তম। কেননা ইসলামে সন্ন্যাসব্রত বা বৈরাগ্য নেই। (তিরমিজি ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৩০)। সুতরাং বিবাহ করা সুন্নাহ হলেও ক্ষেত্রবিশেষে কখনো বিবাহ করা ফরয আবার কখনো হারামও হতে পারে।যার অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে এবং যার শারীরিক শক্তিমত্তা, সক্ষমতা ও আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে এবং যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ ও পদস্খলনের আশংকা করে,তার জন্য বিবাহ করা ফরজ। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৮/ ৬)আল্লাহ বলেন, وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحاً حَتَّى يُغْنِيَهُمْ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ‘যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই,আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে।’ (সূরা নূর ২৪/৩৩)। কেননা আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং হারাম থেকে মুক্ত থাকা ওয়াজিব, যা বিবাহ ব্যতীত সম্ভব নয়।’ (সূরা নূর ৩৩)। আবার যার দৈহিক মিলনের সক্ষমতা ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সামর্থ্য নেই তার জন্য বিবাহ করা হারাম। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/১৩১)। অনুরূপভাবে যিনি যুদ্ধের ময়দানে বা কাফির-মুশরিক দেশে যুদ্ধরত থাকেন তার জন্য বিবাহ হারাম। কেননা সেখানে তার পরিবারের নিরাপত্তা থাকে না। তদ্রূপ কোন ব্যক্তির স্ত্রী থাকলে এবং অন্য স্ত্রীর মাঝে ইনসাফ করতে না পারার আশংকা করলে দ্বিতীয় বিবাহ করা হারাম। যেমন আল্লাহ বলেন, فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ‘আর যদি আশংকা কর যে,সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে।’ (নিসা ৪/৩)। [ইবনে উসাইমিন রহঃ শরহুল মুমতে,১২/৯]।

◾কেউ জীবনে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিলে কি গুনাহ হবে?
___________________________________
কোন নারী-পুরুষের জন্য সারাজীবন বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা বিবাহ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিবাহ করা সমস্ত নবীদের সুন্নাহ এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার উম্মতকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,তোমার পূর্বে আমরা অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম।’ (সূরা রা‘দ ১৩/৩৮)। রাসূল ( ﷺ)-এর স্ত্রীদের নিকট আগত তিন ব্যক্তির এক ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করার স্বার্থে বিবাহ না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِىْ فَلَيْسَ مِنِّىْ ‘আমি নারীদেরকে বিবাহ করি (সুতরাং বিবাহ করা আমার সুন্নাত)। অতএব যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (বুখারী হা/৫০৬৩; মসুলিম হা/১৪০১; মিশকাত হা/১৪৫)। তাছাড়া বিবাহ না করে চিরকুমার ও নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি ইসলামে নেই। সা‘আদ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) উসমান ইবনু মাযঊনকে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম।’ (বুখারী হা/৫০৭৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮১)। আয়েশা (রাঃ) বলেন,‘নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকে নিষেধ করেছেন।’ (সহীহ বুখারী হা/৫০৭৩; নাসাঈ হা/৩২১৩; মিশকাত হা/৩০৮১)।তাই কোন নারী-পুরুষ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবহেলার কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহ বা তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কবিরা গুনাহগার হবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সামর্থ্যবানদেরকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৩০৮০)।
.
কিন্তু কোন নারী-পুরুষের যদি বিবাহ করার ইচ্ছা থাকা এবং সাধ্য অনুযায়ী সর্বদিক থেকে প্রচেষ্টা করা সত্বেও কোন কারণে বিয়ে করতে ব্যর্থ হয় বা বিশেষ কোন ওজর বা শারীরিক সমস্যার কারণে বিবাহ করতে না পারে তাহলে এতে তাদের কোন গুনাহ হবেনা ইনশাআল্লাহ।কারন, বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। আর আল্লাহ অন্তরের খবর জানেন। সে চেষ্টা করেছে তার চেষ্টা করার পরেও সম্ভব হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন-আল্লাহ কারো উপর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা,২৮৬)। তিনি আরো বলেন, তুমি তোমার সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।(সূরা তাগাবুন: ১৬)।
.
পরিশেষে, মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী বংশ বৃদ্ধির জন্য হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করে আদম (আঃ) এর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন। মানব জীবন প্রণালী পরিবর্তনের সাথে সাথে বিবাহের নিয়মেও পরিবর্তন ঘটেছে। অবশেষে শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) জাহেলী যুগের সকল কুসংস্কার দূর করে নারীদেরকে বিবাহের মাধ্যমে মর্যাদা দান করেছেন। বিবাহ মানব বংশ রক্ষার জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি চিরন্তন ব্যবস্থা। বিবাহ নবীগণের সুন্নাত। বিবাহ করার জন্য পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা নিসা: ৩, সূরা নূর: ৩২)। তাই ইসলামের বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ের চেষ্টা অব্যহত রাখা কতর্ব্য। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুক। আমীন। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।