বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিধান এবং অমুসলিমদের মেলা থেকে কিছু কেনার বিধান

প্রশ্ন: ❛❛বাংলা নববর্ষ❞ নামে পরিচিত পহেলা বৈশাখ উদযাপনের বিধান কি? অমুসলিমদের বৈশাখী মেলা থেকে কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে কোন আপত্তি আছে কি?
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস বৈশাখ এবং ইংরেজী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস জানুয়ারি। তথা বাংলা নববর্ষ বা رأس السنة البنغالية বা NEW YEAR’S DAY বা বর্ষবরণ বা نيروز এই শব্দগুলো নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ-উল্লাস, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো, শাখা-সিঁদুরের রঙে (সাদা ও লাল) পোশাক পরিধান, বিয়ের মিথ্যা সাজে দম্পতি সাজিয়ে বর-কনের শোভাযাত্রা, মূর্তির (কুমির, প্যাঁচা, বাঘ ইত্যাদির মুখোশ) প্রদর্শনী, উল্কি আঁকা, মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছে। নববর্ষ উদযাপনে তাদের আনন্দ-ফূর্তি ক্রমেই যেন সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। বাংলা নববর্ষের নামে পৌত্তলিকতার প্রচার-প্রসার করা হচ্ছে, আর বলা হচ্ছে এটাই নাকি বাংলার সংস্কৃতি! (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
.
প্রতি বছর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ নববর্ষ পালনের সরকারী নির্দেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এদেশের জনগণের উপর ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? তাতে কি দেশে নিশ্চিতভাবেই মঙ্গল আসবে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছেন? কে সেই নিশ্চয়তা দিল? তাহলে কি কোন মানুষ মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক? এদেশে ‘মঙ্গলবার’ স্রেফ একটি বার হিসাবে গণনা করা হয়। এক্ষণে এদিনটিকে যদি কেউ মঙ্গলময় ধারণা করেন এবং অন্য দিনকে অমঙ্গলের মনে করেন, তবে তিনি আর মুসলিম থাকবেন না। কেননা মুসলিমের নিকট মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর এই বিশ্বাসটাই আমাদের সংস্কৃতির উৎস। আমরা দৈনিক আল্লাহর নিকটে দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল চেয়ে দো‘আ করি এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই।ইসলামে শব্দ উচ্চারণেই সবকিছু। কারণ মুখে কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ ও অস্বীকারের মাধ্যমেই মুসলিম ও কাফের নির্ধারিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা ‘মঙ্গল’ নামের কারণে নয়, বরং যে আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে এই যাত্রা হচ্ছে তার বিরোধিতা, যা তাওহীদ বিশ্বাসের সাথে পুরাপুরি সাংঘর্ষিক। আমরা আগে মুসলমান, পরে বাঙালী। এদেশের সবাই বাংলাভাষী হলেও বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে আমরা মুসলিম ও কাফের দুইভাগে বিভক্ত। যেমন; কুরায়েশরা সবাই আরবীভাষী হলেও মুসলিম ও কাফের দুইভাগে বিভক্ত ছিলেন। মুসলিমরা তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাসী এবং কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন। অমুসলিমরা শিরকে বিশ্বাসী ও সে অনুযায়ী তাদের জীবন পরিচালনা করেন। আর শিরকের পাপ ক্ষমার অযোগ্য। ধর্ম ও সংস্কৃতি কখনই পৃথক নয়। বরং ধর্মই সংস্কৃতির মূল উৎস। আর ধর্মের ভিত্তিতেই দুই বাংলা ভাগ হয়েছে। ইসলামকে বাদ দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাদ দিতে হবে এবং পৌত্তলিক ভারতের সাথে মিশে গিয়ে স্বাধীনতা বিলীন করে দিতে হবে। (নোটনআত তাহরীক)
.
সুতরাং, মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে ইসলামী সভ্যতা
-সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এটা পুরোপুরি একটি হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। মূলত দেব-দেবীকে উদ্দেশ্য করে এসব আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু গোষ্ঠী কল্যাণ কামনা করে থাকে। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে পেঁচা, রামের বাহন হিসাবে হনুমান, দুর্গার বাহন হিসাবে সিংহ, দেবতার প্রতীক হিসাবে সূর্য ইত্যাদি নিয়ে শরীরে দেব-দেবী ও জন্তু-জানোয়ারের প্রতিকৃতি এবং কালির লোহিত বরণ জিহ্বা, গণেশের মস্তক ও মনসার উল্কি ইত্যাদি এঁকে এদিন শোভাযাত্রা করে এবং এর মাধ্যমে তারা পূজা-প্রার্থনা করে। অথচ তাদের সংস্কৃতিকে বাংলাদেশী সংস্কৃতি হিসাবে চালিয়ে দিয়ে ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে এসব স্পষ্ট শিরকী কার্যকলাপ চাপিয়ে দেওয়া চরম অন্যায়। কেননা ইসলামে কোন মানুষ অথবা অন্যকিছুর মধ্যে আশীর্বাদ-অভিশাপ, কল্যাণ-অকল্যাণ, শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ নুনতম কল্যাণ বা অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। (সুনানে তিরমিযী ২৫১৬; মুসনাদে আহমাদ ২৬৬৪, ২৭৫৮, ২৮০০ রিয়াদুস সলেহিন, ৬৩)। কোন কিছুর মধ্যে কল্যাণ-অকল্যাণ আছে এই বিশ্বাস মূলত মক্কার মুশরিকদের। আরবরা কোথাও যাত্রার প্রাক্কালে বা কোন কাজের পূর্বে পাখি উড়িয়ে তার শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করত। পাখি ডান দিকে গেলে শুভ মনে করে সে কাজে নেমে পড়ত। আর বামে গেলে অশুভ মনে করে তা হতে বিরত থাকত। একেই ‘শুভলক্ষণ’ বা ‘কুলক্ষণ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘যখন ফেরাঊন ও তার প্রজাদের কোন কল্যাণ দেখা দিত, তখন তারা বলত, এটা আমাদের জন্য হয়েছে। আর যদি কোন অকল্যাণ হতো, তারা তখন মূসা ও তাঁর সাথীদের ‘কুলক্ষণে’ বলে গণ্য করত।’ (সূরা আ‘রাফ; ১৩১)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিনবার বলেছেন الطِّيَرَة شِرْكٌ، الطِّيَرَةُ شِرْكٌ، الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ‘‘অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাস করা বা নির্ণয়ের চেষ্টা করা শির্ক, অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাস করা বা নির্ণয়ের চেষ্টা করা শির্ক, অশুভ বা অযাত্রা বিশ্বাস করা বা নির্ণয়ের চেষ্টা করা শির্ক। (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/১৬০; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১৩/৪৯১; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৬৪; আবু দাঊদ, আস-সুনান ৪/১৭; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ২/১১৭০)
.
ইসলাম ধর্মে মুসলিমদের উৎসবের দিন দুইটি। যথা: ১. ঈদুল আযহা ও ২. ঈদুল ফিতর। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে এ দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এ দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে, একে অপরের মধ্যে আনন্দ, ভালোবাসা, সুখ-দুঃখ বিনিময় করবে। তাই ইসলামে উপরোক্ত দুটি উৎসবের দিন ছাড়া বাকি সব যেমন:- (১).জন্মদিবস, (২).মৃত্যুদিবস, (৩). থার্টিফার্স্ট নাইট, (৪). ভালোবাসা দিবস, (৫). বাংলা/আরবী/ ইংরেজি নববর্ষ দিবস, (৬). স্বাধীনতা দিবস,(৭). আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, (৮). বিজয় দিবস,(৯).শোক দিবস, (১০). মা দিবস, (১১). বাবা দিবস,(১২). মে দিবস ইত্যাদিসহ পৃথিবীতে আরো যত দিবস প্রচলিত আছে এবার হোক সেটা আরবি, অথবা বাংলা, কিংবা ইংরেজি, এক কথায় সকল দিবস পালন করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত এবং নিষিদ্ধ হারাম। এমনকি আক্বীদা-বিশ্বাসের গরমিল হলে কখনো কখনো শিরক ও হতে পারে। তাই এই সকল দিবস পালন করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এই সকল দিবস রাসূল (ﷺ) নিজে অথবা তার সাহাবীগণ কখনো নিজেরা পালন করেননি এবং এদিনগুলো কে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো আমল করেননি তাই ইসলামে এ ধরনের কোন দিবস পালনের বিধান নেই। এগুলো বিজাতীয় অপসংস্কৃতির অনুকরণ মাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (আবু দাঊদ হা ৪০৩১; তিরমিযী হা/২৬৯৫; সিলসিলা সিলসিলা সহীহাহ হা/২১৯৪; সনদ হাসান)।
.
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা:বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (অগ্নিপূজক) পারসিকদের দেশে গমন করে, অতঃপর তাদের নওরোজ (নববর্ষ) ও মেহেরজান (উৎসবের দিবস) পালন করে, আর তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং এ অবস্থাতেই মারা যায়, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার হাশর তাদের সাথেই হবে।’ (বায়হাক্বী, ৯/২৩৪, গৃহীত: ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম আহকামু আহলিয যিম্মাহ, পৃ. ১২৪৮; ইমাম ইবনু তায়মিয়্যা ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনে তাইমিয়া, ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৫১৩)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (সৌদি ফাতওয়া বোর্ড আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতওয়ায় বলা হয়েছে, لا تجوز التهنئة بالسنة الهجرية الجديدة، لأن الاحتفاء بها غير مشروع ‘হিজরী নববর্ষ উপলক্ষ্যে মুবারকবাদ জানানো জায়েয নয়। কেননা নববর্ষকে অভ্যর্থনা জানানো শরীআতসম্মত নয়।’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফতওয়া নং ২০৭৯৫)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]- কে হিজরি বর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের হুকুম ও শুভেচ্ছার প্রত্যুত্তরে কি বলতে হবে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়।
.
জবাবে শায়খ বলেন; যদি কেউ আপনাকে শুভেচ্ছা জানায় তাহলে এর উত্তর দিন। কিন্তু আপনি নিজের থেকে কাউকে শুভেচ্ছা জানাবেন না। এ মাসয়ালায় এটাই সঠিক অভিমত। যদি কেউ আপনাকে বলে যে, ‘নববর্ষ উপলক্ষে আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি’। আপনি জবাবে বলুন: আল্লাহ্‌ আপনাকে কল্যাণ দিয়ে শুভ করুন এবং এ বছরটিকে কল্যাণ ও বরকতের বছরে পরিণত করুন। কিন্তু আপনি প্রথমে অন্যদেরকে শুভেচ্ছা জানাবেন না। কেননা সালফে-সালেহীন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতেন এমন কোন বর্ণনা আছে মর্মে আমি জানি না। বরং আপনারা জেনে রাখুন সালফে-সালেহীন ‘মহররম’ মাসকে নতুন বছরের প্রথম মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর খিলাফত আমলে এসে। (সূত্র: উনাইযাস্থ ‘দাওয়াত ও ইরশাদ অফিস কর্তৃক প্রকাশিত শাইখের ‘মাসিক সাক্ষাৎকারের সংকলন’, সিডি সংস্করণ-১, প্রশ্ন নং- ৮৩৫ ফাতাওয়া ইসলাম, প্রশ্ন নং ২১২৯০; উসাইমীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ খন্ড:১০ পৃষ্ঠা:৯৩)
.
❑ অমুসলিমদের বৈশাখী মেলা থেকে কাপড়- চোপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে কোন আপত্তি আছে কি?
.
এ ধরনের মেলায় মুসলিমদের যাওয়া শরীয়ত সম্মত নয়।কারন হিন্দুরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করে। তা হলো, মূর্তিপূজা। এবং এটি হলো, শিরক। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন: إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ “নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)। সুতরাং কোনো মুসলিমের জন্য জঘন্য শিরকের কাজে কোনও ভাবেই সহায়তা করা বৈধ নয়। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لا يحل للمسلمين أن يتشبهوا بالكفار في شيء مما يختص بأعيادهم لا من طعام ولا لباس ولا اغتسال… ولا البي بما يستعان به على ذلك لأجل ذلك. “মুসলিমদের জন্য কাফেরদের উৎসবের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য, পোশাক, গোসল..ইত্যাদি কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের কাজে লাগানো হয় এমন জিনিসও এ উদ্দেশ্যে বিক্রয় করাও বৈধ নয়। (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ; খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৪৮৮ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ১০৬৬৬৮)
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে আরো বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।” (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৪৭) .
.
ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুশরিকদের উৎসব সমূহে খুশী করা কিংবা তাদের মত উৎসব করা উক্ত হাদীস দ্বারা অপছন্দনীয় প্রমাণিত হয়েছে’। শায়খ আবু হাফছ আল-কাবীর নাসাফী হানাফী বলেন, ‘এসব দিনের সম্মানার্থে মুশরিকদের যে ব্যক্তি একটি ডিমও উপঢৌকন দিল, সে আল্লাহর সাথে কুফরী করল।’ কাযী আবুল মাহাসেন হাসান বিন মানছূর হানাফী বলেন, ‘এ দিনের সম্মানার্থে কেউ যদি ঐ সব মেলা থেকে কোন বস্ত্ত ক্রয় করে কিংবা কাউকে কোন উপঢৌকন দেয়, সে কুফরী করল। এমনকি সম্মানার্থে নয় বরং সাধারণভাবেও যদি এই মেলা থেকে কিছু ক্রয় করে কিংবা কাউকে এই দিন কিছু উপঢৌকন দেয়, তবে সেটিও মাকরূহ।’ (মির‘আত শরহ মিশকাত, ‘সালাতুল ঈদায়েন’ অধ্যায়; খন্ড:৫ পৃষ্ঠা:৪৪-৪৫)
.
বিগত শতাব্দীতে সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম। ( মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:৪৪)
.
পরিশেষে, পিতাদের প্রতি অনুরোধ আপনার পরিবারের এ বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত যে- তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। এছাড়া আমার প্রিয় তরুণ-তরুণী ভাই-বোন! নিজেকে অবমূল্যায়ন করবেন না। আপনার মতো যুবকের হাতে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছে। আপনার মতো তরুণীরা কত পুরুষকে দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে সাহস জুগিয়েছে। আপনার বয়সে মুস‘আব ইবনু উমাইর (রা:) গিয়েছেন উহুদ যুদ্ধে শহীদ হতে। সুতরাং আসুন! সেদিন আসার আগেই আমরা সচেতন হই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক্ব দান করুন এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী (ﷺ) এর উপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের উপর। আল্লাহর বাণী, “আর তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান ও জমিনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।’’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩)। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন- আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।