তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ এবং বিতর সালাত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রশ্নোত্তর

❑ (১). আপনি যদি জামাআতের সাথে তারাবীহ আদায় করে শেষ রাতে আবার তাহাজ্জুদ আদায় করতে চান; এমতাবস্থায় আপনার করনীয় কি?
.
উত্তর: এ ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি হতে পারে। যেমন:

প্রথমত: আপনি ইমামের সাথে বিতরের সালাত আদায় করে ফেলবেন। তারপর দুই রাকাত রাকাত করে আপনার সুবিধামত যত রাকাত সম্ভব তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে নিবেন। তবে বিতরের সালাত পুনরায় পড়বেন না। কারণ এক রাতে দুইবার বিতির পড়া যায় না। কারণ মহানবী (ﷺ) বলেন, “এক রাতে দুটি বিতর নেই।” (আবু দাউদ হা/১২৯৩; তিরমিজি হা/৪৭০, সহীহহুল জামে হা/৭৫৬৭)
.
দ্বিতীয়ত: আপনি বিতরের সালাত শেষ রাতের জন্য রেখে দিবেন। অর্থাৎ ইমাম যখন বিতরের সালাত আদায় শেষে সালাম ফিরাবেন তখন আপনি সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করবেন যাতে শেষ রাতে আপনি বিতির আদায় করতে পারেন। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন; তোমরা বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত করো।” (সহীহ বুখারী হা/৯৯৮; সহীহ মুসলিম হা/৭৫১; আবু দাঊদ হা/৪২২)। সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ এই নিয়মটি উত্তম বলে ফাতওয়া দিয়েছে। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খন্ড:৭ পৃষ্ঠা:২০৭)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: ইমাম বিতিরের সালাত আদায় শেষ করলে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায় এবং অতিরিক্ত এক রাকাত যোগ করে যাতে শেষ রাতে তিনি বিতর পড়তে পারেন। এই আমলের হুকুম কি? এতে কি তিনি “ইমামের সাথে সালাত সম্পন্ন করেছেন” ধরা যাবে?
.
তিনি উত্তরে বলেন: “আমরা এতে কোন দোষ দেখি না। আলেমগণএটা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি এটা করেন যেন বিতির (বেজোড়) নামাযটা শেষ রাতেই আদায় করতে পারেন। তাঁর ক্ষেত্রে এ কথা বলাও সত্য হবে যে, “ইমাম শেষ করা পর্যন্ত তিনি ইমামের সাথে সালাত আদায় করেছেন”। কারণ ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত তিনি তো ইমামের সাথে ক্বিয়াম করেছেন এবং এরপর তিনি এক রাকাত যোগ করেছেন; অন্য একটি শরয়ী কল্যাণের কারণে। সেটা হলো- বিতির (বেজোড়) সালাতটা যাতে শেষ রাতে আদায় করা যায়। তাই এতে কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত এ রাকাতের কারণে এ ব্যক্তি ‘যারা ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত সালাত পড়েছেন’ তাদের দল থেকে বের হয়ে যাবে না। বরং তিনি তো ইমামের সাথে সম্পূর্ণ সালাত আদায় করেছেন। তবে ইমামের সাথে সালাত শেষ করেননি; কিছুটা বিলম্বে শেষ করেছেন। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১১; পৃষ্ঠা:৩১২)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ) এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] কে এই প্রশ্নের মত একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল;
.
তখন উত্তরে তিনি বলন: “মুক্তাদির ক্ষেত্রে উত্তম হলো ইমামের অনুসরণ করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তারাবী ও বিতির সালাত শেষ করেন। যাতে করে তার ক্ষেত্রে এই কথা সত্য হয় যে তিনি ইমামের সাথে ইমাম শেষ করা পর্যন্ত সালাত আদায় করেছেন এবং তার জন্য সারারাত ক্বিয়াম করার সওয়াব লেখা হয়; যেমনটি ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য আলেমগণ হাদিস রেওয়ায়েত করেছেন।”এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যদি তিনি তাঁর (ইমামের) সাথে বিতির সালাত আদায় করেন তবে শেষ রাতে বিতির সালাত আদায় করার প্রয়োজন নেই। যদি তিনি শেষ রাতে উঠেন তবে তিনি তার জন্য যত রাকাত সম্ভব তা জোড় সংখ্যায় (অর্থাৎ দুই দুই রাকা‘আত করে) আদায় করবেন। বিতিরের পুনরাবৃত্তি করবে না, কারণ এক রাতে দুইবার বিতির হয় না। আর কিছু আলেম ইমামের সাথে বিতিরকে জোড় বানিয়ে (অর্থাৎ এক রাকাত যোগ করে) পড়াকে উত্তম হিসেবে গণ্য করেছেন। তা হল এভাবে যে ইমাম সালাম ফিরানো শেষে তিনি অতিরিক্ত এক রাকাত সালাত আদায় করে তারপর সালাম ফিরাবেন এবং বিতিরের সালাত শেষরাতে তাহাজ্জুদের সাথে পড়ার জন্য রেখে দিবেন । এর দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী: তোমাদের মধ্যে কেউ ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করলে আদায় করা সালাতের সাথে এক রাকাত বিতির পড়ে নিবেন। তিনি আরও বলেছেন, তোমরা বিতিরের (বেজোড়ের) মাধ্যমে আপনাদের রাতের সালাত সমাপ্ত করুন। (ফাতাওয়া রমজান পৃষ্ঠা: ৮২৬ ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৬৫৭০২)
.
তবে উত্তম হল ইমামের সঙ্গেই বিতর পড়া, তাঁর সঙ্গেই নামায শেষ করা এবং তারপর আর তাহাজ্জুদ না পড়া। যেহেতু সাহাবাগণ যখন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট বাকী রাতটুকু সালাত পড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানালেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামায পড়ে এবং তার নামায শেষ করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকে (ইক্তিদা করে), সেই ব্যক্তির জন্য সারা রাত্রি কিয়াম করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (আবু দাঊদ হা/১২২৭, সহীহ তিরমিযী হা/৬৪৬)
.
❑ (২). প্রশ্ন: আপনি এশার সালাত আদায় করেননি। মসজিদে এসে দেখতেছেন ইমাম সাহেব তারাবীহর জামআত শুরু করে দিয়েছে; এমতাবস্থায় আপনার করনীয় কি?
.
উত্তর: তারাবীহর সালাতের জামাআত চলাকালে কেউ এশার সালাত না পড়া অবস্থায় মসজিদে এলে তার জন্য একাকী বা পৃথক জামাআত করে এশার সালাত পড়া বৈধ নয়। বরং তার উচিৎ হল, এশার নিয়তে জামাআতে শামিল হওয়া। অতঃপর ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিলে এশার বাকী সালাত একাকী পড়ে নেওয়া। তারপর এশার পর ২ রাকআত সুন্নাতে মুআক্কাদার নিয়তে ইমামের সাথে ২ রাকআত পড়া। তারপর তারাবীহর নিয়তে বাকী সালাত পড়া। এ ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন হলেও কোন ক্ষতি নেই। যেহেতু নফল সালাত আদায়কারীর পশ্চাতে ফরয সালাত পড়া বৈধ।( ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড:৪ পৃষ্ঠা: ৯১)।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যদি কোন মুসলিম মসজিদে এসে লোকদেরকে তারাবীহর সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং সে ব্যক্তি তখনো এশার সালাত আদায় করেনি। সেক্ষেত্রে তিনি কি এশার সালাতের নিয়্যতে তাদের সাথে তারাবীহর জামাতে যোগ দিতে পারবে?
.
উত্তরে তিনি বলেন: “আলেমগণের দুইটি মতের অধিকতর সঠিক মত অনুসারে তাদের সাথে এশার নিয়্যতে যোগ দিয়ে সালাত আদায় করতে কোন সমস্যা নেই। ইমাম সালাম ফিরালে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর অবশিষ্ট সালাত সম্পন্ন করবেন।” যেহেতু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ মু’আয ইবনে জাবা’ল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এশার সালাত আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদেরকে এশার সালাত পড়াতেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারটির বিরোধিতা করেননি। এ হাদিস প্রমাণ করে যে, নফল সালাত আদায়কারী ব্যক্তির পিছনে ফরয সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সালাত আদায় করা জায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ গ্রন্থে এসেছে যে, কোন এক সালাতুল খওফ (ভয়ের সময়ের সংক্ষেপিত সালাত) এর সময় এক গ্রুপকে নিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। আবার দ্বিতীয় গ্রুপকে নিয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করে সালাম ফিরান। এক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথমবারের আদায়কৃত নামাযহচ্ছে- ফরয। কিন্তু দ্বিতীয় বারের সালাত তাঁর জন্য নফল, তাঁর পেছনে সালাত আদায়কারীদের জন্য ফরজ। আল্লাহই তাওফিক দাতা। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১২; পৃষ্ঠা:১৮১)‌। শাইখ আরও বলেন: “সুন্নত পদ্ধতি হচ্ছে- রামাদানে বা অন্য সময়ে এশার সুন্নাত সালাতের পরে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করা, যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। এক্ষেত্রে তাহাজ্জুদ এর সালাত বাড়ীতে বা মসজিদে আদায়ে কোন পার্থক্য নেই। (বিন বায মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১১, পৃষ্ঠা: ৩৬৮)

❑ (৩). প্রশ্ন: যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে তারাবীহর সালাত শুরু করেছেন তার উপর সম্পূর্ণ তারাবীহ সালাত পড়া কি আবশ্যক?
.
উত্তর: উপরোক্ত প্রশ্নটি বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে করা হয়েছিল:
.
জবাবে শাইখ বলেন, নিঃসন্দেহে তারাবীহর সালাত সুন্নাত এবং সেটি নফল। তারাবীর সালাতই হচ্ছে— রামাদানের কিয়ামুল লাইল। অনুরূপভাবে সালাতুল লাইল (তাহাজ্জুদের সালাত), সালাতুদ দোহা (চাশতের সালাত), ফরয সালাতগুলোর শেষের সুন্নাত সালাত এগুলো সবই সুন্নাত ও নফল সালাত। যে সালাতগুলো ব্যক্তি চাইলে পড়তে পারেন; না চাইলে বাদ দিতে পারেন। তবে পড়াটা উত্তম। তাই কেউ যদি ইমামের সাথে তারাবীহ পড়া শুরু করে এবং ইমাম সমাপ্ত করার পূর্বে সে ব্যক্তি চলে যেতে চায় এতে কোন অসুবিধা নাই। তবে ইমাম সমাপ্ত করার আগ পর্যন্ত ইমামের সাথে থাকাটাই উত্তম। ইমামের সাথে থাকলে তার জন্য গোটা রাত সালাত পড়ার সওয়াব লেখা হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়াম পালন করবে যতক্ষণ না ইমাম সালাত সমাপ্ত করেন আল্লাহ্‌ তার জন্য গোটা রাত সালাত পড়ার সওয়াব লিখে দিবেন।” তাই কেউ যদি ইমাম সম্পূর্ণ সালাত শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সাথে অবস্থান করে সে গোটা রাত কিয়ামুল লাইল পালন করার সওয়াব পাবে। আর যদি কয়েক রাকাত পড়ার পর চলে যায় এতেও কোন অসুবিধা নাই, কোন গুনাহ নাই। যেহেতু এটি নফল সালাত। (ইমাম বিন বায ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৯০১)
.
❑ (৪). প্রশ্ন: আপনি শরীয়ত সম্মত কোন ওজরের কারণে রাতে কিয়ামুল লাইল-এর সালাত অথবা বিতর আদায় করতে পারেন নি। আপনার এখন করনীয় কি?
.
উত্তর: যে ব্যক্তি কোন ওযরবশতঃ রাতের সালাত (তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা কিয়াম) পড়তে সুযোগ না পায়, সে যদি দিনে তা কাযা করে নেয়, তাহলে তা তার জন্য বৈধ এবং তাতে সওয়াব ও ফযীলতও আছে। তবে বিতর সহ সে কাযা তাকে জোড় বানিয়ে পড়তে হবে। বলা বাহুল্য, তার অভ্যাস মত ১১ রাকআত কিয়াম ছুটে গেলে, দিনের বেলায় ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে ১২ রাকআত সালাত কাযা পড়বে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর তাহাজ্জুদ ঘুম বা ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি কারণে ছুটে গেলে দিনে ১২ রাকআত কাযা পড়তেন। (সহীহ মুসলিম ৭৪৬, মিশকাত হা/১২৫৭, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫)
.
উমার বিন খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় অযীফা (দৈনিক যথা নিয়মে তাহাজ্জুদের সালাত) অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে তা রাতেই পড়েছে। (সহীহ মুসলিম ৭৪৭, তিরমিযী ৪০৮, নাসায়ী ১৭৯০ থেকে ১৭৯২, আবু দাঊদ ১৩১৩, ১৩৪৩, ২২০, ৩৭৯, মুওয়াত্তা মালিক ৪৭০, দারেমী ১৪৭৭, রিয়াদুস সালেহীন হা/১১৯০)। তাহাজ্জুদ বা বিতর ক্বাযা হয়ে গেলে উবাদাহ বিন ছামিত, আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস প্রমুখ সাহাবীগণ ফজর সালাতের আগে তা আদায় করে নিতেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ খন্ড: ১ পৃষ্ঠা:৮৩)
.
বিতরের সালাত যথা সময়ে না পড়া হলে তা কাযা পড়া বিধেয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিত্‌র না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা পড়তে ভুলে যায় সে ব্যক্তি যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও সহীহুল জামে ৬৫৬২)। তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ঘুমিয়ে থেকে বিত্‌র না পড়তে পারে সে ব্যক্তি যেন ফজরের সময় তা পড়ে নেয়।” (তিরমিযী, সুনান, ইর: ৪২২, জামে ৬৫৬৩)। খোদ মহানবী (ﷺ)-এর কোন রাত্রে বিত্‌র না পড়ে ফজর হয়ে গেলে তখনই বিত্‌র পড়ে নিতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৬/২৪৩, বায়হাকী ১/৪৭৯)
.
অপরদিকে বিতরের ক্বাযা দিনে ক্বাযা পড়লে জোড় পড়তে হবে। অর্থাৎ সূর্য উঠার পরে বিতর সালাত পড়লে জোড় পড়তে হবে। বিতর এক রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে এক সঙ্গে দুই রাক‘আত পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। তিন রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে দুই সালামে চার রাক‘আত পড়বে। আর পাঁচ রাক‘আত পড়ার অভ্যাস থাকলে তিন সালামে ছয় রাক‘আত পড়বে। আরো অতিরিক্ত পড়তে হলে এভাবেই পড়তে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই পড়তেন। প্রায় সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সালাত ১১ রাক‘আত আদায় করতেন। কোন কারণে রাত্রে আদায় করতে না পারলে দিনের বেলায় বারো রাক‘আত পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৬২৮)। তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ হিসাবে এটাই উম্মাহর জন্য করণীয়। (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ১১/৩০০)। আরো দেখুন: (সুনানে নাসায়ী: ১৭১০-১৭১৩; মুসনাদে আহমাদঃ ১৪২২,২৩০৩৩; সুনানে দারিমীঃ ১৫৮২, মিশকাতঃ ১২৬৫ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৪৮; নায়লুল আওত্বার ৩/৩১৮-১৯)
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।