বর্তমান সমাজে অধিকহারে তালাক সংঘটিত হওয়ার কারণ এবং তালাক প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়

ভূমিকা: মানব জীবনে পারিবারিক বন্ধন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বামী ও স্ত্রীর মাধ্যমে এই পরিবার গড়ে ওঠে। বিবাহের মাধ্যমেই এ সম্পর্কের সূত্রপাত। আবার কখনো যদি সম্পর্কের টানাপোড়নে একত্রে বসবাস সম্ভব না হয়, তাহলে তালাকের মাধ্যমেই তার পরিসমাপ্তি ঘটে। তাই তালাক সম্পর্কে সবিস্তার অবহিত হওয়া জরুরী। তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়া, বন্ধন মুক্ত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় তালাক অর্থ ‘বিবাহের বাঁধন খুলে দেওয়া’ বা বিবাহের শক্ত বন্ধন খুলে দেওয়া। অর্থাৎ স্বামী কর্তৃক তার স্ত্রীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া। ইসলামে তালাককে অপছন্দ করা হয়েছে। যদিও বেদ্বীনী, অবাধ্যতা, যেনাকারিতা প্রভৃতি চূড়ান্ত অবস্থায় এটাকে জায়েয রাখা হয়েছে এবং তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মোটকথা বৈধ কারণে ইসলাম তালাক প্রদান করাকে জায়েয করেছে। (সূরা বাক্বারাহ; ২/২২৯)
.
🔹বর্তমান সমাজে তালাক সংগঠিত হওয়ার বহু কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করছি:-

▪️(১). শয়তানের প্ররোচনা: অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত তালাক সংঘটিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ শয়তানের প্ররোচনা। শয়তান তালাককে পছন্দ করে। কারণ, এতে মুসলিমের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়। এটা দ্বীন-দুনিয়ার সর্বপ্রকার মুসিবত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইবলীস তার সঙ্গীদের এই ব্যপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ইবলিশের যে সৈন্য স্বামী-স্ত্রীর ছিন্ন করতে পারে শয়তান তার সাথে আলিঙ্গন করে।(বিস্তারিত, সহীহ মুসলিম হা/২৮১৩)

▪(২). স্বামী-স্ত্রীর অনৈক্য: অত্যাধিক তালাক সংঘটিত হওয়ার দ্বিতীয় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব। আমাদের দেশে অধিকাংশ পরিবারের অল্প শিক্ষিত বা অধিক শিক্ষিত নারীরা স্বামীর কথা মানতে নারায। স্ত্রী নিজেকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে চাকুরীর পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরে। চাকুরী পেলে স্বামীকে তোয়াক্কা করে না। ফলে পরিবারে সৃষ্টি হয় অনৈক্যের। অবশেষে তালাকের এই অনৈক্যের মাধ্যমে সমাধান হয়। সেটা কখনো স্ত্রীর পক্ষ থেকে আবার কখনো স্বামীর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।

▪(৩). ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়া: মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর দাসত্ব করা। কিন্তু মানুষ সেই দাসত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে মানুষ নানারকম ফেতনায় পতিত হচ্ছে। পরিবারের যথাযথ দ্বীন শিক্ষার অভাবে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাকবিতন্ডার মূল ইস্যু বা সূত্রপাত হয় আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে পড়ার কারণে। এজন্য পারিবারিক যত সমস্যা, অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয় সবই আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে পড়ার কারণে। আল্লাহ বলেন, আর যে ব্যক্তি আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবন-জীবিকা সংকুচিত হবে এবং আমরা তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠাব।’ (সূরা ত্ব-হা;২০/১২৪)।

▪️(৪).অবৈধ বিবাহ : অশ্লীলতা ও পর্দহীনতার কারণে যুবক-যুবতীরা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পিতা-মাতাকে না জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র একত্রে অবস্থান করে। অবশেষে সর্বস্ব খুইয়ে নিজের পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তনে বাধ্য হয়। কেউবা গোপনে কাযী অফিসে বা আদালতে গিয়ে বিবাহ করে। এক সময়ে যখন মোহ কেটে যায় তখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। ভাঙ্গে ভুল, ভাঙ্গে সংসার, ক্ষয়ে যায় মূল্যবান জীবন।

▪(৫). স্বামী-স্ত্রীর হকের ব্যাপারে অজ্ঞতা: সমাজে তালাকের ব্যাপকতার আরেকটি কারণ হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হক সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অবহেলা। আর একে অপরের হক পালন না করার কারণে দু’জনের মাঝে দূরত্ব তৈরী হয়। দূরত্ব তৈরি হতে হতে একটা সময় সুখের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়, পরিশেষে বিচ্ছিন্নতা রূপ নেয়।

▪(৬).পিতা-মাতার অবাধ্যতা: অনেক পুরুষ স্ত্রী নিয়ে সুখী হবার আশায় পিতা-মাতার উপর স্ত্রীকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে। ফলে দেখা যায় বৌ-শাশুড়ীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও মনোমালিন্য। তখন পিতা-মাতাকে ছেড়ে সংসার আলাদা করে নেয়। ফলে পিতা-মাতার অভিশাপে তাদের নিজেদের মাঝেও একসময় অশান্তি সৃষ্টি হয়। অবশেষে তালাক অথবা ডিভোর্সের মাধ্যমে ফয়সালা হয়। মাতা-পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে সে কি করে আল্লাহর রহমত পেতে পারে?

▪(৭). মা-বোন অথবা অন্য কারো কুপরামর্শে প্রভাবিত হওয়া: আমাদের দেশের কিছু নারীর বদ অভ্যাস হলো অন্যকে কুপরামর্শ দেওয়া। সেই কুপরামর্শ অনেক পুরুষ গ্রহণ করে না। ফলে তাদের মাঝে অনৈক্য দেখা দেয়। আবার বিদেশী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুসরণে আলাদা থাকার নীতি গ্রহণ করে। যৌথ পরিবার থেকে পরিত্রাণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে স্ত্রী। অবশেষে পরিবারের পরিসমাপ্তি ঘটে ডিভোর্স অথবা তালাকের মাধ্যমে।

▪(৮). প্রতারণার শিকার: বর্তমান সময়ে সরলমনা অনেক নারী প্রতারণার শিকার হয়। চাকুরীর সুবাদে নিজ জেলা ছেড়ে পাড়ি জমায় জনবহুল এলাকায়। মিলিত হয় ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে। নারীর সরলতার সুযোগে কোন পুরুষ প্রলোভন দেখিয়ে টেনে নেয় নিজের দিকে। প্রেমের প্রস্তাবে রাযী হয়ে অবশেষে বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু করে। কিন্তু ছেলের মোহ যখন কেটে যায়, তখন শুরু করে নির্যাতন। বাধ্য হয়ে স্ত্রী ডিভোর্সের পথ বেছে নেয়।

▪(৯). রাষ্ট্রীয় বিধানে তালাক সহজীকরণ: ধর্মীয় বিধানে তিন মাসে পবিত্র অবস্থায় তিন তালাকের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন করা যায়। আল্লাহ বলেন, তালাক (রাজঈ) হলো দু’বার। অতঃপর হয় তাকে ন্যায়ানুগভাবে রেখে দিবে, নয় সদাচরণের সাথে পরিত্যাগ করবে।’ (সূরা বাক্বারাহ; ২/২২৯)। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বিধানে কোর্টের মাধ্যমে এক বৈঠকে তিন তালাক কার্যকর হওয়ায় সহজে তালাক সংঘটিত হচ্ছে। অথবা মাযহাবী ফৎওয়ায় এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন তালাক কার্যকর করায় সহজে কেউ রাগের বশবর্তী হয়ে তিনবার তালাক বলে স্ত্রীকে বিদায় করে দেয়। এ বিধান তালাকের পথকে সুগম করেছে।

▪(১০). নারী-পুরুষের অভিন্ন কর্মস্থল : যৌথ কর্মসংস্থান: ইসলামী শরীয়তে নারী-পুরুষ একই সাথে শিক্ষা এবং কাজকর্ম করা জায়েজ নেই। কিন্তু বর্তমানে ইসলামী বিধান লংঘন করে নারী-পুরুষ যখন একই স্থানে চাকুরী করে,পাশাপাশি বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে ও গল্প-গুজবে মত্ত হয়, তখন তাদের অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অত্যধিক সম্ভাবনা থাকে। কেননা আল্লাহ নারী-পুরুষকে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করেছেন। একই কর্মস্থলে কাজ করার কারণে বর্তমানে অনেক নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। তারা সুন্দরী সহকর্মী বা সুদর্শন বসের খপ্পরে পড়ে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসছে।যার পরিণতি হিসেবে কখনো কখনো সুখের সংসারে অশান্তি বাসা বেঁধে তালাক সংঘটিত হচ্ছে সাথে ইভটিজিং,ধর্ষণ ও অপহরণসহ নানাবিধ অপকর্ম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

▪(১১). পরকীয়া: বিবাহ স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাসের পবিত্র বন্ধন। পরকীয়া এ পবিত্র বন্ধনকে নিমিশেই কলুষিত করে তুলে। পরকীয়া একটি সাজানো-গোছানো সংসারকে ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। এর চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। ব্যক্তি ও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সংসার ভেঙ্গে জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। পরকীয়ার ঘটনা আমাদের সামাজিক জীবনে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিবাহিত পুরুষদের অনেকে দীর্ঘদিন স্ত্রীকে একসঙ্গে থাকার দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেকে বছরের পর বছর দূর প্রবাসে জীবন কাটিয়ে দেয়। অনেক নারীই পারিবারিক নানা কারণে স্বামীকে ফিরে আসার দাবী করতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী কাছে না থাকায় অন্য পুরুষের প্ররোচনায় কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পরকীয়া বা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ফলে দেখা দেয় তালাক বা ডিভোর্সের প্রয়োজনীয়তা।

▪(১২). জৈবিক চাহিদায় অক্ষমতা: স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে যে কোন একজনের স্নায়ুবিক দুর্বলতার কারণে অপরজন তালাক বা ডিভোর্সের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। অক্ষম স্বামীর ঘর করতে চায় না স্ত্রী অথবা স্ত্রী স্বামীর চাহিদা মিটানোর মত উপযুক্ত না হলে তাকে নিয়ে ঘর করতে চায় না স্বামী। ফলে বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে পড়ে।

▪(১৩). ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধের অভাব: ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি ব্যাপক। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবনদর্শন, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা- এসব ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এসবের ঘাটতির কারণে সম্পর্কের অবনতি হয়। তাছাড়া ইসলামী পর্দা রক্ষা করা এবং পরপুরুষ বা পরনারীর সাথে অবাধ মেলামেশা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত, যা পালন না করা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এসব কারণে পারস্পরিক বিশ্বাসে ঘাটতি হয়। যা এক সময় বিচ্ছেদের পর্যায়ে গড়ায়

▪(১৪). উচ্চাভিলাষ: অনেকে ধনী প্রতিবেশী বা পার্শ্ববর্তী সচ্ছলদের অবস্থা দেখে নিজেও তাদের মত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাদের মত অভিজাত চাল-চলন ও দামী পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার ও গাড়ী-বাড়ির আকাঙ্ক্ষা করে। ফলে নারী সেটা না পেলে স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহার করে। অনেক সময় স্বামী পরের দামী গাড়ী, ভাল ব্যবসা বা চাকুরীর জন্য শশুর বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করে। এসব নিয়ে মনোমালিন্য থেকে দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের রূপ পরিগ্রহ করে।

▪(১৫). রূঢ় আচরণ ও বদমেজাজ: স্বামী-স্ত্রী দু’জনের প্রচেষ্টায় ও উভয়ের সুন্দর আচার-ব্যবহারে দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠে মধুময়, সংসার হয় শান্তি-সুখের আলয়। কিন্তু যে কোন একজনের রূঢ় আচরণ বা বদমেজায সুখের নীড়কে তছনছ করে দিতে পারে। তাই উভয়ের মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করা জরুরী। কিন্তু কোন একজন বা দু’জনই ভিন্ন আচরণের হলে দিনে দিনে আরো বেশী দূরত্ব তৈরী হয়। ভিতরের চাপা ক্ষোভ এক সময় বিষ্ফোরিত হয়ে বিচ্ছেদ আবশ্যিক হয়ে পড়ে।

🔹প্রতিকার: তালাক থেকে পরিত্রাণের জন্য নিম্নের বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।-
____________________________________
▪️(১). উত্তম আদর্শ বাস্তবায়ন: আদর্শবান হওয়ার জন্য উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জন করা অতি যরূরী। আর উত্তম চরিত্রের মূর্ত প্রতীক ছিলেন নবী করীম ﷺ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (আহযাব; ৩৩/২১)। রাসূলের আদর্শে জীবন গড়ে পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন বা স্থায়ী করা সম্ভব। তিনি তাঁর একাধিক স্ত্রীর সাথে কি ধরনের আচরণ করতেন তা জেনে সে মোতাবেক কাজ করতে হবে।

▪️(২).বিবাহপূর্ব পাত্র-পাত্রীর সম্মতি নেওয়া : বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বা বর-কনে হ’ল মূল। যারা সারা জীবন একসাথে ঘর-সংসার করবে। সেকারণ বিবাহের পূর্বে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই কোন ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদেরকে বিবাহ করতে বাধ্য করা উচিত নয়। কেননা এতে পরবর্তীতে পরিবারে অশান্তির তৈরি হয়।তাই বিবাহ পূর্ব দ্বীনদারী, পরহেযগারিতা, বংশমর্যাদা ও আর্থিক দিক সহ বিভিন্ন দিকে সমতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা যরূরী। বিশেষত দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে সমতা না থাকলে পরিবারে অশান্তি বিরাজ করে। এজন্য রাসূল (ﷺ) বলেন,তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফূ) বিবচেনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো’(ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; ছহীহাহ হা/১০৬৭)

▪️(৩). নারীর বৈধ অধিকার প্রদান: ইসলাম নারীকে তার ইয্যত রক্ষায় ও দাম্পত্য জীবনের শান্তি ধরে রাখতে বৈধভাবে জীবন পরিচালনার অধিকার দিয়েছে। সুতরাং স্ত্রীকে তার অধিকার প্রদান করলে সংসার সুখের হবে। ইনশাআল্লাহ। রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমার উপর তোমার দেহের হক আছে এবং তোমার রবের হক আছে, মেহমানের হক আছে এবং তোমার পরিবারের হক আছে। অতএব প্রত্যেক হাকদারকে তার হক প্রদান কর’।(সহীহ বুখারী হা/৬১৩৯; তিরমিযী হা/২৪১৩)

▪️(৪). স্নায়ুবিক দুর্বলতা বা শারীরিক অক্ষমতায় করণীয়: যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় কিংবা যৌন দুর্বলতার কারণে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হয় তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে এক বছর পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিবে। যদি চিকিৎসার পরেও স্বামীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় এবং নারী যদি ধৈর্যধারণ করতে না পারে তাহলে সে তার স্বামী বা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা করতে পারে। তবে যেসব স্ত্রী কারণ ছাড়াই স্বামীর কাছে তালাক চায় হাদীসে তাদের ব্যাপারে কঠোর পরিণতির কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোন নারী (স্ত্রী) অহেতুক তার স্বামীর কাছে তালাক চায় তবে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম হয়ে যায়।'(আবু দাঊদ হা/২২২৬)

▪️(৫). চলাচলে সতর্কতা: অবাধ, উচ্ছৃঙ্খল ও অশালীন চলাফেরা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। কর্মক্ষেত্রের নামে যৌথ কর্মসংস্থান পরিহার করা অত্যন্ত জরুরী। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন বা দুর্বলতার সমাধানে নিমেণ বর্ণিত কিছু পরামর্শ- স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ব্যবহার শালীন হতে হবে। দু’জনকে ধৈর্যশীল ও পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। একে অপরের হক সাধ্যমত আদায় করতে হবে, রাগ দমন করতে হবে এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব সচেতন এবং সহমর্মী হতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর।’ (সূরা নিসা; ৪/১৯)।
.
(৬).স্বামীর রাগের সময় স্ত্রী বিনম্র হওয়া : কখনও কোন কারণে স্বামী রাগান্বিত হ’লে স্ত্রী নীরব থাকবে ও নম্রতা অবলম্বন করবে। যে আদর-সোহাগ করে, তার শাসন করারও অধিকার আছে। আর এ শাসন স্ত্রীকে মাথা পেতে মেনে নিতে হয়। ভুল হ’লে ক্ষমা চাইবে। স্বামী যেহেতু বয়সে ও মর্যাদায় বড়, সেহেতু তার কাছে ক্ষমা চাওয়া অপমানের নয়; বরং এতে মান-সম্মান বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া অহংকার ও ঔদ্ধত্যের পরিণাম কখনও ভাল হয় না। সুতরাং স্বামীর রাগের আগুনকে গর্ব-অহংকার ও ঔদ্ধত্যের ফুৎকারে প্রজ্বলিত না করে বিনয়ের পানি দিয়ে নির্বাপিত করা উচিত।অন্যথায় বিচ্ছেদ হতে পারে।
.
পরিশেষে বলা বাহুল্য, সব মুদ্রারই যেমন দু’টি পিঠ আছে, তেমনি সব জিনিসেরই ভাল-খারাপ দু’টি দিক আছে। কিছু মানুষ অনেক সময় তালাকের অপব্যবহার করে। এমনকি কোন পরিস্থিতিতে কি ধরনের অপরাধে তালাক দেওয়া যায় এবং তার পদ্ধতিগত ধাপগুলি ঠিকঠাক মানা হলো কি-না সেটা চিন্তা ভাবনা করে না। সর্বোপরি দেখা দরকার পারস্পরিক সংশোধন ও সম্পর্কের পুনর্জাগরণের সুযোগ দেওয়া হলো কি-না। এসব কিছু না ভেবে নিছক হঠকারিতা কিংবা বহুবিবাহের লিপ্সা থেকে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বিবাহবিচ্ছেদের সহজলভ্য ছাড়পত্র বানানো ইসলাম সমর্থন করে না।উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা সকল নারী-পুরুষকে ধৈর্যধারণ করার তাওফীক দান করুন। সকলকে দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে শান্তি ও সফলতার জন্য সংশোধিত হওয়ার তাওফীক দিন-আমীন! কিছু বিষয় আত তাহরীক থেকে সংকলিত। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।