বনী ইসরাইল কারা এবং মিশরের পিরামিডে ফেরাউনের লাশ রয়েছে উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক

আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আঃ)-এর প্রথমা স্ত্রী সারাহ (রা:)-এর গর্ভজাত একমাত্র পুত্র চিলেন নবী ইসহাক্ব (আঃ)। ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় জীবদ্দশায় পুত্র ইসহাক্বকে বিয়ে দিয়েছিলেন রাফক্বা বিনতে বাতওয়াঈল (رفقا بنت بتوائيل )-এর সাথে। কিন্তু তিনিও বন্ধ্যা ছিলেন। পরে ইবরাহীম (আ:)-এর খাছ দোআর বরকতে তিনি সন্তান লাভ করেন এবং তাঁর গর্ভে ঈছ ও ইয়াকুব নামে পরপর দু’টি পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করে। তার মধ্যে ইয়াকুব (আঃ) নবী হন। ইয়াকুবের অপর নাম ছিল “ইসরাইল”। যার অর্থ আল্লাহর দাস। সুতরাং ইয়াকুব (আ:)-এর অপর নাম ‘ইসরাঈল’ অনুযায়ী তাঁর বংশধরগণ “বনী ইসরাইল” নামে পরিচিত হয়। পথভ্রষ্ট ইহুদী-নাসারাগণ যাতে তারা ‘আল্লাহর দাস’ একথা বারবার স্মরণ করে, সেকারণে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাদেরকে “বনী ইসরাইল” বলেই সম্বোধন করেছেন।
.
ফেরাঊনের পরিচয়: ‘ফেরাঊন’ কোন ব্যক্তির নাম নয়। বরং এটি হলো তৎকালীন মিশরের সম্রাট বা রাজাদের উপাধি। ক্বিবতী বংশীয় এই সম্রাটগণ কয়েক শতাব্দী ব্যাপী মিশর শাসন করেন। এই সময় মিশর সভ্যতা ও সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। লাশ মমিকরণ, পিরামিড (PYRAMID), স্ফিংক্স (SPHINX) প্রভৃতি তাদের সময়কার বৈজ্ঞানিক উন্নতির প্রমাণ বহন করে। আল্লাহর নবী ইউসুফ (আঃ)-এর অনেক পরে এরা ক্ষমতায় আসে এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। ইউসুফ-এর সময় কেন‘আন থেকে মিশরে হিজরতকারী সম্মানিত বনী ইসরাইলগণকে এরা সেবক ও দাস শ্রেণীতে পরিণত করে। ফেরাঊন সংখ্যাগরিষ্ট ক্বিবতীদের হাতে রেখে সংখ্যালঘিষ্ঠ বনী ইসরাইলদের উপর যুলুমের চূড়ান্ত করে। মযলুম স্বজাতি বনী ইসরাইলদের উদ্ধার এবং ফেরাঊন ও তার কওমের হেদায়াতের জন্য মূসা (আ:)-কে আল্লাহ সেখানে নবী করে পাঠান। ফেরাঊন ও তার উদ্ধত মন্ত্রীরা মূসা ও তার ভাই হারূণের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। অবশেষে ফেরাঊনের জাদুকরদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইসরাইলী বর্ণনা অনুযায়ী মূসা বিশ বছর মিশরে অতিবাহিত করেন এবং মিশরবাসীকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু ফেরাঊনের ঔদ্ধত্য ও অহংকারে কোনরূপ ব্যত্যয় না ঘটায় তার কওমের উপর নানাবিধ এলাহী গযব একে একে আসতে থাকে। যেমন: (১). দুর্ভিক্ষ (২). প্লাবণ (৩). পঙ্গপাল (৪). উকুন (৫). ব্যাঙ (৬). রক্ত (৭). প্লেগ মহামারি ইত্যাদি। প্রতিটি গযব আসার পরে ফেরাঊনের লোকজন মূসার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় ও দো‘আ করতে বলে। পরে গযব উঠে গেলে দু’এক বছরের মধ্যে আবার অবাধ্যতা শুরু করে। ফলে আবার গযব আসে। ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীরা গযব সমূহকে মূসার জাদু কিংবা এগুলো শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে মনে করত। তাই এগুলোকে তারা কোনরূপ তোয়াক্কা করত না। ফলে তাদের যুলুম অব্যাহত থাকে। অবশেষে নেমে আসে চূড়ান্ত শাস্তি এবং ফেরাঊন ও তার সৈন্যদল একসাথে সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। উক্ত ঘটনার বর্ননা পবিত্র কুরআনের কয়েকটি সূরায় এসেছে যেমন:
.
মহান আল্লাহ বলেন; আর আমরা অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী করেছিলাম এ মর্মে যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতে বের হন। সুতরাং আপনি তাদের জন্য সাগরের মধ্য দিয়ে এক শুষ্ক পথের ব্যবস্থা করুন, পিছন থেকে এসে ধরে ফেলার আশংকা করবেন না এবং ভয়ও করবেন না। অতঃপর ফির’আউন তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ তাদের পিছনে ছুটল, তারপর সাগর তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল। (সূরা ত্বহা; ২১/৭৭-৭৮)। উপরোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে,সমুদ্র তাকে ও তার সেনাদেরকে ডুবিয়ে মারলো। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, মুহাজিরদের সাগর অতিক্রম করার পর পরই ফিরআউন তার সৈন্য-সামন্তসহ সমুদ্রের বুকে তৈরী হওয়া এ পথে নেমে পড়লো। (সূরা আশ-শু’আরা; ৬৩–৬৪)। সূরা আল-বাকারায় বলা হয়েছে, বনী ইসরাঈল সমুদ্রের অন্য তীর থেকে ফিরআউন ও তার সেনাদলকে ডুবে যেতে দেখছিল। (সূরা বাকারাহ্‌;৫০)। অন্যদিকে সূরা ইউনুসে বলা হয়েছে, ডুবে যাবার সময় ফিরআউন চিৎকার করে উঠলো; “আমি মেনে নিয়েছি যে আর কোন ইলাহ নেই সেই ইলাই ছাড়া যাঁর প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমিও মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা ইউনুস; ৯০)। কিন্তু এ শেষ মুহুর্তের ঈমান গৃহীত হয়নি এবং জবাব দেয়া হলো: “এখন! আর ইতিপূর্বে এমন অবস্থা ছিল যে, নাফরমানীতেই ডুবে ছিলে এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করেই চলছিলে। বেশ, আজ আমি তোমার লাশটাকে রক্ষা করছি, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।”(সূরা ইউনুস; ৯১–৯২)

▪️ মিশরে পিরামিডে এখনো ফেরাউনের লাশ রয়েছে; উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
.
কুরআন-সুন্নাহ এমন কোন সুস্পষ্ট দলিল নেই, যা প্রমান করে মিশরের জাদুঘরে এখনো ফেরাউনের লাশ রয়েছে। মূলত পবিত্র কুরআনের সূরা ইউনুসের একটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার কারণেই নিশ্চিত ভাবে একথা বলা হয়ে থাকে। সূরা ইউনুসে মহান আল্লাহ বলেন, সুতরাং আজ আমরা তোমার দেহটি রক্ষা করব যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক…।(সূরা ইউনুস: ১০/৯২)। উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইতিহাস বিখ্যাত ইমামদের বক্তব্য লক্ষ্য করুন:
.
ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৪ হি.] বলেছেন; ইবনে আব্বাস এবং তিনি ছাড়াও অন্যান্য সালাফিগণ বলেছেন যে- সাগরডুবির দৃশ্য স্বচক্ষে দেখার পরেও ভীত-সন্ত্রস্ত বনী ইস্রাঈলীরা ফেরাঊন মরেছে কি-না বিশ্বাস করতে পারছিল না। ফলে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা সমুদ্রকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আত্মা ছাড়া তার প্রাণহীন অক্ষত বডি জমির একটি উঁচু অংশে নিক্ষেপ করে। যাতে করে মানুষ তার মৃত্যু থেকে শিক্ষা নেয় গবেষণা করে। আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ্দাদ বলেন, ফেরাউনের বডিকে সুস্থ এবং সঠিক অর্থাৎ কোন কিছু ছিন্ন ভিন্ন নয় এমন অবস্থায় রাখবেন যাতে করে মানুষ তাকে দেখে চিনতে পারে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এই কথাগুলো উপর উল্লেখিত আয়াতের বৈপরীত্য নয়। আল্লাহ তাআলার বাণী হলো: “তোমার পরবর্তীদের জন্য যাতে করে এটা নিদর্শন হয়ে যায়। অর্থাৎ বনি ইসরাঈলদের জন্য তোমার মৃত্যু এবং তোমার ধ্বংস যাতে করে প্রমাণস্বরূপ হয়ে যায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হাতে রয়েছে প্রত্যেক বস্তুর প্রান। এবং কিছুই তার ক্রোধ প্রতিরোধ করতে পারে না।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৫৬৫)।
.
ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: আবু বকর হতে বর্ণিত- তারা যখন আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করল ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার বিষয়টি তাদেরকে স্বচক্ষে দেখানোর জন্য তখন তিনি তাদের তা দেখিয়েছিলেন আর তা ছিল আত্মাবিহীন। যখন বানু ইসরাঈল তা দেখেছিল, তখন তারা বলেছিল, হ্যাঁ, হে মুসা! এ হচ্ছে ফেরাউন যে ডুবে মারা গিয়েছে। ফলে তাদের অন্তর থেকে সন্দেহ বের হয়ে গেল এবং সমুদ্র পুনরায় ফেরাউনকে গিলে ফেলল। কুরআনের বানী; “আমরা (ফেরাউন) তোমার দেহ রক্ষা করব” (সূরা ইউনুস; ৯২)। এর দুটি অর্থ হতে পারে:

(১). আমরা তোমাকে মাটির উঁচু টিলাতে নিক্ষেপ করব।

(২). আমরা তোমার দেহ রুহ বা আত্মাবিহীন তোমার পরবর্তী মানুষকে দেখাব। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: যাতে তোমার অর্থাৎ (ফেরাউনের) পরে যারা আসবে তাদের জন্য এটি একটি নিদর্শন হতে পারে। (সূরা ইউনুস: ৯২)। অর্থাৎ বনী ইসরাঈল ও ফেরাউনের সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলন এবং এই সংবাদ যাদের কাছে পৌঁছায়নি তাদের জন্য ইহা একটি নিদর্শন। আর (خلفك) শব্দে লামের উপর যবর দিয়ে অর্থ হবে- যারা তোমার (ফেরাউন) পরে বেঁচেছিল তোমারই স্বদেশে তাদের জন্য এই মৃতদেহ নিদর্শন স্বরূপ। আলী বিন আবি তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] তেলাওয়াত করতেন; “যিনি তোমাকে (ফেরাউন) সৃষ্টি করেছেন তার নিদর্শন” অর্থাৎ এটি তোমার স্রষ্টার একটি নিদর্শন হবে। (মানে خلفك এর ” ফা” এর স্থানে “خلقك” পড়তেন)। (তাফসীরে কুরতুবি খন্ড: ১১ পৃষ্ঠা: ৪৯-৫১)।
.
ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
এখানে ফিরআউনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, জলমগ্নতার পর আমি তোমার লাশ পানি থেকে বের করে দেব যাতে তোমার এই মৃতদেহটি তোমার পরবর্তী জনগোষ্ঠীর জন্য আল্লাহ তা’আলার মহাশক্তির নিদর্শন ও শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। কাতাদা বলেন, সাগর পাড়ি দেবার পর মূসা আলাইহিস সালাম যখন বনী ইসরাঈলদেরকে ফিরআউনের নিহত হবার সংবাদ দেন, তখন তারা ফিরআউনের ব্যাপারে এতই ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল যে, তা অস্বীকার করতে লাগল এবং বলতে লাগল যে, ফিরআউন ধ্বংস হয়নি। আল্লাহ তা’আলা তাদের সঠিক ব্যাপার প্রদর্শন এবং অন্যান্যদের শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে একটি ঢেউয়ের মাধ্যমে ফিরআউনের মৃতদেহটি তীরে এনে ফেলে রাখলেন, যা সবাই প্রত্যক্ষ করল। (তাফসীরে তাবারী সূরা ইউনুসের, ৯২ নং আয়াতের তাফসির)।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন; আল্লাহর বাণী- “তোমার পরবর্তীদের জন্য যাতে করে তা নিদর্শন হয়ে যায়” এর অর্থ হলো যাতে করে বাণী ইসরাইলের জন্য এটা একটা নিদর্শন হয়ে যায় তোমার মৃত্যু এবং ধ্বংসের ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা ক্ষমতাবান যার হাতে প্রত্যেকটি প্রাণীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এমন কেউ নেই যে আল্লাহ তায়ালার শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে যদিও সে ক্ষমতাবান এবং মানুষদের মাঝে প্রভাবশীল হয়। তবে এখানে এটা আবশ্যক নয় যে ফেরাউনের মৃতদেহ এই সময় পর্যন্ত অক্ষত থাকবে যেমনটা কিছু অজ্ঞরা ধারণা করে। তবে সমুদ্র থেকে তার লাশ প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হলো বানু ইসরাঈলের মধ্যে যারা তার মৃত্যুতে সন্দেহ করেছিল তাদের জন্য। যাতে করে তারা এটা তার ধ্বংস সম্পর্কে জানতে পারে। আর এই উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়েছে। ফেরাউনের মৃতদেহ অন্যান্য দেহের মতোই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। শুধু “আজবুয যানাব” অর্থাৎ মেরুদন্ডের হাড় ব্যতীত কিছুই অবশিষ্ট নেই; যা থেকে কিয়ামতের দিন মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে যেমনটা হাদিসে এসেছে। সুতরাং ফেরাউনের দেহ আর অন্যান্য দেহের মাঝে তেমন কোন আলাদা পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্য নেই। (আল্লাহই ভাল জানেন)। “আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়া আল-ফাওজান” (১ প্রশ্ন নং ১৩২)।
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছে: “কিছু মানুষ সূরা ইউনুসের ৯২ নম্বর আয়াত অনুযায়ী বলে যে, অত্র আয়াতটি প্রমাণ করে, ফেরাউনের লাশ বর্তমানে মিশরের পিরামিডে সংরক্ষিত রয়েছে এবং কিছু মানুষ সে লাশ দেখে বলে, আমরা ফেরাউনের লাশ দেখেছি। এমনকি কতিপয় আলেমও একথা বলে থাকেন।
প্রশ্ন হলো: তাদের কথার কি কোন ভিত্তি রয়েছে?
.
উত্তরে শাইখ বলেন, তাদের উক্ত বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। আর যারা ফেরাউনি সাম্রাজ্যের অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গর্ব করতে চায় এবং খুশি হতে চায় তা কতই না নিকৃষ্ট! তারা মূলত বলে থাকে যে, পিরামিডে অবস্থিত লাশটি মুসা আলাইহিস সালাম এর জামানার ফেরাউনের লাশ। এই দাবিটি মিথ্যা এবং এর কোন ভিত্তি নেই।(উসাইমীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ,২৫/১৮৩) আরেকটি আলোচনায় শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) সূরা মায়েদার তাফসির করতে গিয়ে ফেরাউন আর লাশ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, “আমরা তা সত্য ও মিথ্যা কোনটাই বলব না।”
.
শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন: সুরা ইউনুসের ৯২নং আয়াতে মূলত ফেরাউনের লাশ কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষত থাকবে বিষয়টি প্রমাণ করে না। যেমনটি কেউ কেউ ধারণা করে থাকে। পরবর্তী সকল মানুষের জন্য যদি তাঁর দেহ নিদর্শন হতো তাহলে যারা তার ঘটনা শুনেছে প্রত্যেকের কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ থাকতো। আর এর মাধ্যমে আয়াতের অর্থ ও প্রতিশ্রুতি বেশি প্রমাণিত হতো। কিন্তু তা না হয়ে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই লাশের কোন হদিসই ছিল না। কোথায় ছিল এতোদিন এই কাহিনী? কোথায় ছিল এই নিদর্শন? এতেই বুঝা যায় বর্তমানে ফেরাউনের লাশ নিয়ে দাবিকৃত বিষয়টি সবার জন্য প্রত্যক্ষ নিদর্শন নয়। বরং মিথ্যা। (ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৭২৫১৬)।
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আহালুল ইমামগনের আলোচনা থেকে যেটা বুঝা যায় তা হল মিশরে পিরামিডে এখনো ফেরাউনের লাশ রয়েছে একথা বিশুদ্ধ নয়। কেননা ফেরাউনের লাশ এখনো বিদ্যমান থাকার মর্মে পবিত্র কুরআন অথবা রাসূল (ﷺ) এর সুন্নায় যেমন বিশুদ্ধ কোন দলিল নেই আবার এটি যে তার লাশ নয় সেটা অস্বীকার করার মত কোন দলিল নেই।সুতরাং এই বিষয়ে চুপ থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ। তাছাড়া ফেরাউনের লাশ এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান থাকা না থাকার মধ্যে আমাদের কোন কল্যাণ নেই। যদি থাকতো তাহলে অবশ্যই সুস্পষ্ট দলিল প্রমাণ থাকতো। তাই আসুন এই ধরনের অহেতুক বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি না করে। সময়ের যথার্থ ব্যবহার করে দুনিয়া ও আখেরাতে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করি। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।