কেউ মৃত্যুবরন করলে মৃতের অনেক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধব তাকে চুমু খায় এই বিষয়ে ইসলাম কি বলে

সহীহ সুন্নাহ ইঙ্গিত করে যে, মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েয, এবার চুম্বন দাতা মৃত ব্যক্তির আত্মীয় হোক অথবা অন্য কেউ এবং সেটা মৃতের কাফনের আগে হোক কিংবা পরে তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে পুরুষদের জন্য স্ত্রী এবং অন্যান্য পুরুষদের চুম্বন করা এবং মহিলাদের জন্য স্বামী এবং অন্যান্য মহিলাদের চুম্বন করা জায়েজ, এমনকি উদ্দেশ্য সৎ রেখে নারী-পুরুষ পরস্পর মাহারামদেরকে ও চুম্বন করতে পারে।দলিল আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উসমান ইবনু মাযউনের লাশে চুমু খেতে দেখেছি। আমি তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখেছি।(আবু দাউদ হা/৩১৬৩ ইবনু মাজাহ হা/১৪৫৬)। অপর বর্ননা আয়িশাহ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ বাকর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর তাঁকে চুমু দেন।(সহীহ বুখারী হা/৪৪৫৭ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১০৩)।
.
উক্ত হাদীসের আলোকে শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন মৃত ব্যক্তির পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য তার মুখ চুম্বন করা জায়েয এবং এ বিষয়ে হাদীসে দলিল রয়েছে।
.
হাফিজ ইবনে হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: এই হাদিসটি নির্দেশ করে যে মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েজ।
.
ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা জায়েজ সাহাবীদের কেউ অস্বীকার করেনি তাছাড়া আবু বকর (রাঃ)-এর রাসূল ﷺ কে চুম্বন করাতে কেউ আপত্তি করেছেন বলে দলিল নেই, তাই এই বিষয়ে ঐকমত্য ছিল।(বিস্তারিত দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৫৩৬৩১)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, যদি মৃতের পরিবার তাকে দেখতে চায় তবে তাদের বাধা দেওয়া উচিত নয়। এটির প্রমানে জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে দলিল রয়েছে তিনি বলেছেন: যখন আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল,তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে তার মুখ থেকে কাপড় উঠাতে শুরু করি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এটি করতে নিষেধ করেননি। আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান ইবনু মায্‘ঊন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন,এমনকি তাঁর চোখের পানি ‘উসমানের চেহারায় টপকে পড়েছে। আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) আরো বলেছেন,আবূ বাকর (রাঃ) ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে তার সুনহের বাড়ি থেকে আগমন করেন। ঘোড়া থেকে অবতরণ করে তিনি মসজিদে নাববীতে প্রবেশ করেন কিন্তু কারো সঙ্গে কোন কথা না বলে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। তখন তিনি চেহারা হতে কাপড় হটিয়ে তাঁর উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে চুমু দিলেন ও কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আমার মাতাপিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো আপনাকে দু’বার মৃত্যু দিবেন না, এই হাদীসগুলো সহীহ।(দেখুন সহীহ বুখারী হা/৪৪৫৩ আবু দাঊদ ৩১৬৩, আত্ তিরমিযী ৯৮৯, ইবনু কুদামাহ,আল-মুগনী, খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৩৫০)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করাতে কোন দোষ নেই, যদি তাকে তার কোন মহিলা মাহরাম বা কোন পুরুষ চুম্বন করে,যেমন আবু বকর আস-সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চুম্বন করেছেন।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খন্ড: ১৩ পৃষ্ঠা: ১০২)।
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা মুস্তাহাব, তবে তাকে চুম্বন করা অথবা তাকে দেখার জন্য তার মুখমন্ডল উন্মোচন করা জায়েয রয়েছে ইনশাআল্লাহ। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।