পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকুরি করা যাবে কি

প্রশ্ন: পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকুরি করা যাবে কি?
__________🔰🔰🔰__________
উত্তর: সাধারণত পরিবার পরিকল্পনা বলতে Family planning অর্থাৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ বোঝানো হয়, মৌলিক ভাবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চাকুরি করা হারাম নয় বরং জায়েজ তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত প্রতিষ্ঠান যদি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত হয় কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের উক্ত কার্যকর যদি কুরআন সুন্নার বাহিরে অর্থাৎ অমুসলিম পশ্চিমাদের অনুসরনে করা হয় তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যাবেনা কেননা এখানে হারাম কাজে সহযোগিতা করা হয় আর ইসলামে হারাম কাজে সহযোগিতা করাও হারাম ইসলামে অসুস্থতা, মৃত্যুর আশঙ্কা ইত্যাদি ব্যতীত অধিক সন্তানের ভরণ-পোষণের ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনা করা শরী‘আত পরিপন্থী কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা খাদ্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমি তাদেরকে এবং তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করে থাকি’[সূরা বানী ইসরাঈল :৩১]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা অধিক প্রেমানুরাগিণী, অধিক সন্তান জন্মদানকারিণী মহিলাকে বিয়ে করো। কারণ আমি ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করব’[আবুদাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭; মিশকাত, হা/৩০৯১,সনদ ছহীহ]

তবে স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে স্ত্রীর সম্মতিক্রমে আযল বা সাময়িক জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়। জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কুরআন মাজিদ নাযিল হচ্ছিল তখন আমরা আযল করতাম [ছহীহ বুখারী, হা/৫২০৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪০; তিরমিযী, হা/১১৩৭; মিশকাত, হা/৩১৮৪]।

কিন্তু ঢালাওভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ জায়েজ নয় আবার অনেক সময় গর্ভের সন্তানও নষ্ট করা হয় যা সুস্পষ্ট হারাম আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে তোমরা হত্যা করো না শরী‘আতসম্মত কারণ ব্যতীত’[সূরা আন‘আম ১৫১]

তিনি আরো বলেন ‘সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যকে সহযোগিতা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অতি কঠোর’[আল-মায়েদা, ৫/২]

নূ’মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। এ দুইয়ের মাঝে রয়েছে অনেক সন্দেহজনক বিষয় যা অনেক মানুষই জানে না। যে ব্যক্তি এ সব সন্দেহজনক বিষয় হতে দূরে থাকল সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদ রাখতে পারল, আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে জড়ালো হলো সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়ল। সাবধান! প্রত্যেক বাদশারই সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হলো তার হারামকৃত বিষয়সমূহ [ছহীহ বুখারী, হা/৫২; তিরমিযী, হা/১২০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৮৪]

অএতব প্রশ্নের বর্ণনানুসারে যেহেতু বর্তমানে পশ্চিমাদের অনুসরণ অনুকরণ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় ফলে উক্ত কর্মে হালাল-হারাম মিশ্রনের সাথে জড়িত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে এবং সে অফিসে কর্মরত থাকায় হারাম বিষয়ে সহযোগিতা করতে হয় তাই ইসলামের নির্দেশনানুযায়ী এমন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী না করে বৈধ পন্থায় রিযিক অন্বেষণ করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার জন্য রাস্তা বের করে দেন এবং বিনা হিসাবে তিনি তাকে রিযিক দিয়ে থাকেন।”
[সূরা তালাক: ২-৩]( আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।