একজন আদর্শবান নারীর বৈশিষ্ট্য,গুণাবলী এবং স্বামীর সংসারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

প্রশ্ন: একজন আদর্শবান নারীর বৈশিষ্ট্য,গুণাবলী এবং স্বামীর সংসারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো কি কি যেগুলো পালন না করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:

◾একজন উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য :মুমিনা হওয়ার পরও নারীর মাঝে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে উত্তম স্ত্রী হিসাবে গণ্য হয়, তন্মধ্যে ৪৪টি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

➤(১). সতী-সাধ্বী,নারী অনুগত ও লজ্জাস্থান হেফাযত কারিণী :সেই উত্তম নারী যে সতী-সাধ্বী ও অনুগত এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতেও স্বীয় লজ্জাস্থান হেফাযতকারিণী।(বিস্তারিত দেখুন,সূরা নিসা ৪/৩৪ সহীহ ইবনে হিববান হা/৪১৬৩;সহীহ আত-তারগীব হা/১৯৩১ মিশকাত হা/৩২৫৪)
.
➤(২).পুণ্যবতী নারীরা দ্বীনদার বা নেককার হয় : কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা صَالِحَاتُ তথা দ্বীনদার বা নেককার গুণের অধিকারী হিসাবে নারীকে উল্লেখ করেছেন (সূরা আন-নিসা : ৩৪)। উক্ত শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ত্বাবারী (রহিমাতুল্লাহ্) বলেছেন,দ্বীনের সঠিক অনুসরণকারিণী ও সৎকর্মশীল নারীগণ’।(ইমাম ত্বাবারী, জামিঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৯৩)
.
➤(৩). দ্বীনদার নারীরা বিশ্বস্ত ও অনুগত হয় :
আল-কুরআনুল কারীমে قَانِتَاتٌ শব্দ (সূরা আন-নিসা : ৩৪) দ্বারা আল্লহ ও তাদের স্বামীর অনুগত হওয়া’ বোঝানো হয়েছে।(জামিঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৯৪) কুরআনে আল্লহ তা‘আলা আইয়ূব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীর প্রশংসা করেছেন, যিনি চরম অসুস্থতা ও দরিদ্রতার মধ্যেও স্বামীর পাশে ছিলেন এবং অসামান্য ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।(সূরা ছোয়াদ:৪১-৪৩)।
.
➤(৪).পূণ্যবতী নারীরা একনিষ্ঠভাবে রবের ইবাদত করে:পূণ্যবতী নারীরা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে সচেষ্ট থাকে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লংঘন করে না তারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত,ফরজ এবং নফল সিয়াম পালন করে এগুলো নবী-রাসূল ও সৎ লোকদের বৈশিষ্ট্য সিয়াম প্রভৃতি দমন করে সিয়াম পালন কারী স্ত্রীর কাছ সব ধরনের কল্যান আশা করা যায়,মহান আল্লাহ উত্তম নারীদের বৈশিষ্ট্য কুরআনে উল্লেখ করেছেন (দেখুন সূরা তাহরীম,৬৬/৫)
.
➤(৫).পূণ্যবতী নারীরা ঘরে এবং বাহিরে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে চলাচল করে :পর্দা ইসলামে ফরয। সালাত-সিয়াম পালন না করলে যেমন আল্লাহর কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে, তেমনি পর্দা পালন না করলেও আল্লাহর কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে। বেপর্দা নারীদের সম্পর্কে রাসূল (ﷺ)বলেন,তোমাদের নারীদের মধ্যে নিকৃষ্ট হ’ল যারা পর্দাহীনা অহংকারিণী।(বায়হাক্বী,আস-সুনানুল কুবরা হ/১৩৮৬০; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৮৪৯)
.
➤(৬).দ্বীনদার নারীরা সর্বদা জিহ্বা সংযত রাখে:
মানুষের জবান বা কথার ১৪টি ব্যাধি রয়েছে। যেমন অর্থহীন কথা,পরচর্চা, পরনিন্দা, রুক্ষতা, অশ্লীলতা, ঝগড়া-বিবাদ, অভিশাপ, ঠাট্টা-বিদ্রুপ, উপহাস, গোপনীয়তা প্রকাশ, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা আশ্বাস ইত্যাদি। এর কোন কোনটি নারীর ভেতর আবার কোন কোনটি পুরুষের ভেতর পাওয়া যায়। তাই আল্লাহ নারী-পুরুষের উভয়কেই এসব ব্যাধির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন(দেখুন সূরা হুজুরাত,১১সহীহ মুসলিম,২৬৫৭ মিশকাত,৮৬)।
.
➤(৭).দ্বীনদান নারীরা বংশের গৌরব,অহংকার করেনা: কিন্তু নিন্দিত বহু নারী নিজেকে অন্যের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ভাবতে পছন্দ করে। এমনকি নিজের ও নিজ পরিবারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়। কুরআনে এমন অহংকারী নারীকে সতর্ক করা হয়েছে(দেখুন সূরা আল-আহযাব : ৩৬ ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪২১)
.
➤(৮) পূণ্যবতী নারীরা আল্লাহ তার রাসূল পিতা-মাতার আনুগত্য করে:আল্লাহ বলেন,আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল।(সূরা বনি ইসরাইল,১৭/২৩ আরো দেখুন সূরা লোকমান,১৪ আবূদাঊদ হা/২১৪০; মিশকাত হা/৩২৫৫ মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩২/২৬১)।
.
➤(৯).আদর্শ নারীরা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা নেই এমন সকল ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:যদি তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না।”(সূরা নিসা,৩৪) রাসূল (ﷺ)জনৈকা মহিলাকে বলেন, স্বামী তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম (নাসাঈ কুবরা, আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬১২ বুখারী হা/১০৫২; মিশকাত হা/১৪৮২)।আল্লাহর নাফরমানীতে তার আনুগত্য করে না। (দেখুন ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, হাদিস সম্ভার,১৮২৩)
.
➤(১০)আদর্শ নারী সর্বদা সে হক্বের উপর অটল থাকে এবং হক্ব বলতে কখনো ভয় পায়না।মহান আল্লাহ বলেন,হে মুমিনগণ!তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও সেটি তোমাদের নিজেদের কিংবা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়।(বাদী-বিবাদী) ধনী হৌক বা গরীব হৌক (সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করো না)।’(সূরা নিসা ৪/১৩৫)
.
➤(১১)পূণ্যবতী নারীরা নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হয় :আল্লাহ বলেন,‘তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোন অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিণী হবে না’(সূরা আন-নিসা :২৫) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিণী নারীগণ, যারা প্রকাশ্যে-
অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিণী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিণী হবে না’।(জামিঊল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, ৮ম খণ্ড,পৃ.১৯৩)
.
➤(১২).পূণ্যবতী নারীরা দ্বীন পালনে পুরুষের সহযোগী: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজে আদেশ করে, অসৎ কাজে নিষেধ করে, তারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ :৭১ইবনু মাজাহ হা/১৮৫৬ তিরমিযী হা/৩০৯৪; মিশকাত হা/২২৭৭)
.
➤(১৪).পূণ্যবতী নারীরা পুরুষের মানসিক আশ্রয়স্থল:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,আল্লাহর নিদর্শন হল তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের ভেতর থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।(সূরা আর-রূম : ২১)অন্য আয়াতে বলেন, “তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।(সূরা আরাফ: ১৮৯)
.
➤(১৫).পূণ্যবতী নারীরা প্রেম-ভালবাসা বিনিময়কারিণী :স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক বজায় থাকা পরিবারে শান্তি বজায় থাকার অন্যতম শর্ত। এ সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি অতি প্রেমময়ী হওয়া যরূরী। এতে অন্য নারীর প্রতি স্বামীর মনে কখনো কোন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না এবং তার বিপথগামী হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না। আর এ ধরনের নারীর জন্যই জান্নাত রয়েছে।(দেখুন সহীহুল জামে‘ হা/২৬০৪ সহীহ আত-তারগীব হা/১৯৪১।
.
➤(১৬). পূণ্যবতী নারীরা স্বামীকে মুগ্ধকারিণী :উত্তম স্ত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল নিজের প্রতি স্বামীকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করা। সেটা কয়েকভাবে হতে পারে। নিজের আকার-আকৃতিকে কেবল স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দর করা। স্বামীর সামনে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে সর্বদা স্বামীকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করা এ আচার-ব্যবহারে সর্বদা খোশ মেজাজী ও হাসি-খুশী থাকে।(দেখুন নাসাই হা/৩২৩১;মিশকাত হা/৩২২৭; সহীহাহ হা/১৮৩৮।)
.
➤(১৭).বিপদাপদে স্বামীকে সান্ত্বনা দানকারিণী :মানুষ বিভিন্ন বিপদাপদ ও অসুখ-বিসুখে অনেক সময় মুছড়ে পড়ে। এসময় তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আদর্শ ও গুণবতী স্ত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল বিপদে স্বামীকে সান্ত্বনা দেওয়া ও ধৈর্য ধারণে সাহায্য করা। বিস্তারিত দেখুন,বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা; সহীহুল জামে‘ হা/৩৩৩০;সহীহাহ হা/১৮৪৯।বুখারী হা/৩; মুসলিম হা/১৬০; মিশকাত হা/৫৮৪১। বুখারী হা/৫৪৭০; মুসলিম হা/২১৪৪)
.
➤(১৮).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর চাহিদা পূরণকারিণী :
গুণবতী স্ত্রী সদা স্বামীর সেবা-যত্ন ও তার সার্বিক চাহিদা পূরণে নিয়োজিত থাকবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন তার নিকট আসে যদিও সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে’।(তিরমিযী হা/১১৬০; মিশকাত হা/৩২৫৭; ছহীহাহ হা/১২০২) অপর বর্ননায় বলেন,যদিও সে উটের গদির উপরে থাকে’(মুসনাদুল বায্যার,সহীহাহ হা/১২০৩)
.
➤(১৯).স্বামীর অধিকার পূরণে অগ্রগামী :উত্তম নারী হচ্ছে যে স্বামীর অধিকার আদায়ে কমতি করে না বরং তার খেদমতে সাধ্যমত চেষ্টা করে। উম্মুল হুছাইন বিন মিহছান তার ফুফু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ﷺ) -এর দরবারে গমন করেন। তার প্রয়োজন শেষ হ’লে রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি কি বিবাহিতা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেন, তুমি তার জন্য কেমন? তিনি বললেন, আমি অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত তার সেবা করি। রাসূল (ﷺ) বললেন,লক্ষ্য কর, তার থেকে তুমি কোথায়? কেননা সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।(মুসনাদ আহমাদ,
সহীহুল জামে‘ হা/১৫০৯; সহীহাহ হা/২৬১২)
.
➤(২০).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর মান-সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা এবং তার ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি ও ঘরের সকল বস্তুর রক্ষণা-বেক্ষণকারিণী; মহান আল্লাহ বলেন:কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাযতে তারা হেফাযত করে।”(সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪) আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।
(সহীহ বুখারী, ৪৯০৪; সহীহ মুসলিম,৪৮২৮)
.
➤(২১).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর বিনা অনুমতিতে নফল সিয়াম পালন করেনা। স্ত্রী যদি স্বামীর সাথেই থাকে তাহলে স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোজা রাখতে পারবে না।(দেখুন সহীহ বুখারী,৫১৯২ ইবনে মাজাহ,
১৭৬১)তবে স্বামী যদি সফরে থাকে বা স্ত্রী যদি তার বাবার বাড়িতে থাকে তাহলে সে স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখতে পারবে।ফাতহুল বারী ৯/২৯৫;
শরহু আবু দাউদ ১০/৬০১)
.
➤(২২).স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ খরচ করে না এবং সে ন্যায়পরায়ণতার সাথেই জীবন-যাপন করে (দেখুন তিরমিযী ৬৭০,আবূ দাউদ ৩৫৬৫ ইবনে মাজাহ, ২২৯৫)
.
➤(২৩).পূণ্যবতী নারীরা খরচের ক্ষেত্রে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে :জীবন যাত্রার মান সবার সমান নয়। অর্থনৈতিক অবস্থার উপরে মানুষের জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে। সুতরাং স্বামীকে ভরণ-পোষণের ব্যাপারে কষ্টে নিপতিত করা আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য নয়। বরং তার আয় বুঝে ব্যয় করার চেষ্টা করতে হবে।(বিস্তারিত দেখুন,ফুরক্বান,২৫/৬৭ সহীহ মুসলিম হা/২২৫২। সিলসিলা সহীহাহ হা/৫৯১)
.
➤(২৪).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর সম্পদ থেকে অপচয় ও অপব্যয় করেনা :স্বামীর পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের সংরক্ষণ করা স্ত্রীর কর্তব্য। আর জীবন যাত্রার ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় না করা।আল্লাহ বলেন, তোমরা খাও ও পান কর, অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’(সূরা আ‘রাফ ৭/৩১)। অপচয়কারী শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করা হয়েছে।(সূরা বনী ইসরাঈল ১৭/২৭)
.
➤(২৫).পূণ্যবতী নারীরা আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে :আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য। তদ্রূপ স্বামীর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে যে নেয়ামত দান করেছেন তারও শুকরিয়া আদায় করে। রাসূল (ﷺ) বলেন,ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না’(আবুদাউদ হা/৪৮১১; তিরমিযী হা/১৯৫৪ মিশকাত হা/৩০২৫ সহীহ বুখারী হা/২৯ মুসলিম হা/৯০)
.
➤(২৬).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে: আদর্শ নারীরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি তার স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। হাদীসে এসেছে,
আল্লাহ ঐ মহিলার দিকে তাকাবেন না যে তার স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না এবং স্বামীকে ছাড়া তার চলে না’।(সহীহাহ হা/২৮৯;সহীহ আত-তারগীব হা/১৯৪৪)
.
➤(২৭)স্বামীকে রাগান্বিত করা থেকে বিরত থাকে :কোন কারণে স্বামী রেগে গেলে পূণ্যবতী নারীরা সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে। অপরদিকে নিন্দিত মহিলারা স্বামীর অপছন্দনীয় কাজগুলি বেশী বেশী করে স্বামীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বা তাকে রাগান্বিত করার জন্য।স্বামী তার প্রয়োজনীয় সবকিছু যথাযথভাবে প্রদান করলেও সে যেন খুশি হ’তেই চায় না।এসব নারীদের সম্পর্কে রাসূল (ﷺ)এর-হুঁশিয়ারি (দেখুন তিরমিযী হা/৩৬০;মিশকাত হা/১১২২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৪৮৭)
.
➤(২৮).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীকে সম্মান করে ও তাকে কষ্ট না দেওয়া থেকে বিরত থাকে :স্বামীকে যথাযথ সম্মান করা ও তাকে কষ্ট না দেওয়া উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য। রাসূল (ﷺ)বলেন,আমি যদি কোন ব্যক্তিকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকেই তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য আদেশ করতাম’।(আবুদাউদ হা/২১৪০মিশকাত হা/৩২৫৫)স্বামীকে কষ্ট দিলে জান্নাতের হূররা তার জন্য বদদো‘আ করে।(দেখুন তিরমিযী হা/১১৭৪; ইবনু মাজাহ হা/২০১৪; মিশকাত হা/৩২৫৮)
.
➤(২৯).পূণ্যবতী নারীরা বাড়ীতে অবস্থান করে:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,তোমরা স্বগৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না’ (সূরা আহযাব ৩৩/৩৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেছেন,তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থানকে অবধারিত করে নাও। প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হবে না’(ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৪০৯)

➤(৩০).স্বামীর গোপনীয় বিষয় ও উভয়ের মধ্যবর্তী বিশেষ কাজ প্রকাশ না করা :স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সংঘটিত কার্যাবলী গোপনীয় বিষয়। তা প্রকাশ করা নির্লজ্জতা। আর একাজের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (দেখুন আহমাদ, ইরওয়া ৭/৭৪; আদাবুয যিফাফ, পৃঃ ৭১,সনদ হাসান মুসলিম হা/১৪৩৭; মিশকাত হা/৩১৯০)
.
➤(৩১).পূণ্যবতী নারীরা মার্জিত ভাষায় কথা বলে: আল্লাহ বলেন,আর তোমরা ন্যায় সংগত ভাবে কথা বল’ (সূরা আল-আহযাব : ৩২)। উক্ত বাক্যের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন,‘নারীরা অনুচ্চ ভাষায় এমনভাবে কথা বলবে, যা শরী‘আত নিষেধ করেনি এবং মানুষের কাছেও তা শুনতে খারাপ মনে হয় না’।(ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৪তম খণ্ড, পৃ. ১৭৮)
.
➤(৩২).আদর্শবান নারীরা অন্যকে স্বামীর বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি দান করেনা :পূণ্যবতী নারী নিজে যেমন স্বামীর সম্পদ হেফাযত করে তেমনি নিজের ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করে। সাথে সে স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে দিবে না। (দেখুন সহীহ বুখারী হা/৫১৯৫; মুসলিম হা/১০২৬; মিশকাত হা/২০৩১)
.
➤(৩৩).পূণ্যবতী নারীরা অন্যের গৃহে স্বীয় বস্ত্র উন্মোচন করেনা : তারা আল্লাহ এবং পরকালের জবাবদিহিতাকে ভয় করে নিজেকে পরিপূর্ণ রাখার,পর্দায় রাখার চেষ্টা করে। অপরদিকে নিন্দিত নারীরা যারা স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকে না। অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার কাছে যায়। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তাদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারি (দেখুন মুসনাদ আহমাদ হা/২৬৬১১সহীহুল জামে‘ হা/২৭০৮;সহীহ আত- তারগীব হা/১৭১)
.
➤(৩৪).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যের বাড়িতে রাত্রি যাপন করে না: রসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, ‘সাবধান! কোন পুরুষ যেন কখনও কোন অকুমারী (গায়ের মাহরাম) নারীর সাথে রাত্রি যাপন না করে। তবে যদি সে বিবাহিত হয় (এবং তার স্ত্রী সাথে থাকে) বা সে মাহরাম হয় তাহ’লে ভিন্ন কথা’।(মুসলিম হা/২১৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৯৯;সহীহাহ হা/৩০৮৬)
.
➤(৩৫).পূণ্যবতী নারীরা সাজসজ্জা করে ও সুগন্ধি মেখে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকে : আদর্শ নারীদের অন্যতম একটি গুণ হলো তারা তাদের স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য সাজসজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার করে অপরদিকে নিন্দিত নারীরা কোথাও যাওয়ার প্রাক্কালে সুসজ্জিত হয়ে এবং সুগন্ধি মেখে বের হয়। এমন নারীদের সম্পর্কে (বিস্তারিত দেখুন,
মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৩৮৪; বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৮০০,মুসলিম হা/২১২৮মিশকাত হা/৩৫২৪)
.
(৩৬).পূণ্যবতী নারীরা শ্বশুর-শাশুড়ীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করে : স্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য হ’ল স্বামীকে সন্তুষ্ট করা। সেজন্য স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ ও তাদের সেবা করে স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। অপরদিকে স্বামীর ভাইদের সাথে পর্দা বজায় রেখে নিজের ইজ্জত-আব্রু ও লজ্জাস্থান হেফাযতের চেষ্টা করা যরূরী।(দেখুন সহীহ বুখারী হা/৫২৩২; মুসলিম হা/২১৭২; মিশকাত হা/৩১০২)
.
(৩৭).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর গৃহের কাজ নিজ হাতে করে: স্বামীর ঘর-বাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিপাটি রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর খেদমত করা, সন্তান-সন্ততিদেরকে লালন-পালন করা ও তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখা, তাদের আদব-কায়েদা শিক্ষা দেওয়া এবং সভ্য করে গড়ে তোলাও স্ত্রীর দায়িত্ব।মহিলা সাহাবীগণ নিজ হাতে ক্ষেতেরও কাজ করতেন। (দেখুন সহীহ মুসলিম হা/২৭২৭)
.
➤(৩৮).পূণ্যবতী নারীরা সন্তানের প্রতি স্নেহশীল :
সন্তানের প্রতি যত্নশীল ও স্নেহময়ী নারীকে মহানবী (ﷺ) উত্তম নারী হিসাবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন,কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম।(দেখুন সহীহ বুখারী হা/৩৪৩৪,সহীহ মুসলিম ৪৪/৪৯ হা/২৫২৭ মিশকাত হা/৩০৮৪)
.
➤(৩৯).পূণ্যবতী নারীরা স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করায় না। কেননা নিজের স্বামীর সন্তান ব্যতীত অন্য কোন সন্তানকে দুধপান করানোর জন্য স্বামীর অনুমতি নেয়া যরূরী। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি না নেয়াটাও দোষণীয় নয়।(আশ-শারহুল মুমতি’, ১২/৪২৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫১৬১৫)।
.
➤(৪০).পূণ্যবতী নারীরা বিনম্র, কোমল,এবং লজ্জাশীল হয়:উত্তম নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লজ্জাশীলা হওয়া। পক্ষান্তরে যার লজ্জা নেই সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।(সহীহ বুখারী হা/৩৪৮৪, ৬১২০মিশকাত হা/৫০৭২)
.
➤(৪১)দ্বীনদার নারীরা বিনা কারণে স্বামীর কাছে তালাক চায় না। রাসূল (ﷺ)বলেন,যে মহিলা বিনা কারণে তার স্বামীর নিকটে তালাক্ব চায়,তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধিও হারাম’।(আবুদাউদ হা/২২২৬ তিরমিযী হা/১১৮৭; মিশকাত হা/৩২৭৯)
.
➤(৪২).পুণ্যবতী নারীরা অন্যকে নিজের তুলনায় ছোট মনে করেনা :বিনয় ও নম্রতা মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।বিনয়ীকে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।অপরদিকে অহংকারীরা অন্যের চাইতে নিজেকে বড় মনে করে।(দেখুন সহীহ মুসলিম হা/৯১ মিশকাত হা/৫১০৮)
.
➤(৪৩).পূণ্যবতী নারীরা পুরুষের বেশ ধারণকারিণী হয়না :(দেখুন সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/৪৪২৯)

➤(৪৪).দ্বীনদার নারী কখনো পরচুলা ব্যবহারকারিণী ও উল্কিকারিণী হবেনা :(দেখুন সহীহ বুখারী,মিশকাত হা/৪৪৩০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।