ইসলামী শরীয়ত মতে স্ত্রী সহবাসের সুন্নাহ সম্মত প্রদ্ধতি কি? স্ত্রী গর্ভবতী হলে সহবাসে কোন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি?

প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়ত মতে স্ত্রী সহবাসের সুন্নাহ সম্মত প্রদ্ধতি কি? স্ত্রী গর্ভবতী হলে সহবাসে কোন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি? সহবাসের নিষিদ্ধ কোন সময় আছে কি? বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করার সাথে সাথে তার জীবন ধারণের জন্য কিছু চাহিদা দিয়েছেন এবং চাহিদা মিটানোর পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। মানব জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ন্যায় জৈবিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম বিবাহের বিধান দিয়েছে। ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সহবাস তার ব্যতিক্রম নয়।ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর’[সূরা বাক্বারাহ ২২৩] আল্লাহ এখানে স্ত্রীদের সাথে সংগমের কোন সময়, দিন তারিখ বা নিয়মনীতি বেঁধে দেননি।তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে, যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ নয়।সেটা শেষে উপস্থাপন কবরো তার পূর্বে সহবাসের সুন্নাহ সম্মত প্রদ্ধতি আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। যেমন:-

▪️(১)- স্ত্রী সহবাসের প্রথমে নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। এ মর্মে হাদীস দেখুন [সহীহ মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২,সিলসিলা সহীহা ৪৫৪,মিশকাত,১৮৯৮]

▪️(২)- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে, كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। [বুখারী ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬, আবূ দাঊদ ২৩৮২,তিরমিযী ৭২৯ যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩]

▪️(৩)- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া– بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।[সহীহ বুখারী হা/১৪১, ৫১৬৫; মুসলিম হা/১৪৩৪; বুলূগুল মারাম হা/১০২০]

▪️(৪)- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে উপরের দিক থেকে বা নিচের দিক থেকে সেটা হক স্বামী অথবা স্ত্রী (সব দিক থেকে সঙ্গম করতে পারে, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে অন্য পথে নয় [তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২]

▪️(৫).স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা : সহবাসের পরে ঘুমাতে ও পানাহার করতে চাইলে কিংবা পুনরায় মিলিত হ’তে চাইলে মাঝে ওযূ করে নেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না; কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ওযূ করে’।[আবুদাউদ হা/৪১৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩, সনদ হাসান।

▪️(৬)-.একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক।[সহীহ মুসলিম,৩০৮ মিশকাত,৪৫৪]তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُ এরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। [মুসনাদে আহমেদ, ২৩৩৫০ আবু দাউদ ২১৯ মিশকাত,৪৭০]

▪️(৭)সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয আছে এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই[আবূ দাঊদ ৪০১৯, তিরমিযী ২৭৯৪ আল মুগনী ৭/৭৭] ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৭৬৬]

🔰শরী‘আতে সহবাসের কিছু শিষ্টাচার ও নীতিমালা নির্দেশ করা হয়েছে।সেই নির্দেশনার আলোকে স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধ সময় যেমন,
_____________________________
(ক) প্রসবোত্তর স্রাব অথবা ঋতু স্রাব থাকাকালীন সহবাস করা হারাম [সূরা আল-বাক্বারাহ,২২২]।

নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঋতুবতী নারীর সাথে সহবাস করে সে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা (কুরআন) অবিশ্বাস করে’[তিরমিযী, হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৬৩৯, সনদ সহীহ]। তবে এমতাবস্থায় শুধু সহবাস ছাড়া অন্যান্য সব কাজ করা যাবে (ছহীহ মুসলিম, হা/৩০২)।কিন্তু কেউ যদি এই অবস্থায় সঙ্গম করে,তাহলে তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।এমন অবস্থায় তওবার পাশাপাশি কাফফারা স্বরূপ এক দীনার বা অর্ধ দীনার গরীব-মিসকীনকে দান করতে হবে [তিরমিযী, আবুদাঊদ হা/২৬৪; ইরওয়া হা/১৯৭; মিশকাত হা/৫৫৩]। আর এক দীনার হ’ল ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণের সমপরিমাণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৪/১৫ তবে শারঈ বিধান না জেনে অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা ভুলক্রমে করে ফেললে তওবা করাই যথেষ্ট হবে [সহীহ মুসলিম হা/১২৬; ইবনুল উছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতি‘ ১/৫৭১]

🔸(খ) স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা হারাম। বর্তমানে যাকে ‘এন্যাল সেক্স’ বা পায়ূ সেক্স বলে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِيْ دُبُرِهَا فَقَدْ بَرِئَ مِمَّا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘যে তার স্ত্রীর পশ্চাদদ্বারে সঙ্গম করে, সে যেন আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর নাযিলকৃত দ্বীন হতে মুক্ত হয়ে গেল’[আবূ দাঊদ, হা/৩৯০৪; তিরমিযী, হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৬৩৯]

এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না এবং সে অভিশপ্ত [তিরমিযী, হা/১১৬৬; ইবনু মাজাহ, হা/১৯২৩, সনদ হাসান; আবূ দাঊদ, হা/২১৬২] অতএব স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করা কোনক্রমেই বৈধ নয়। এটা অসভ্য ও বিজাতীয়দের ঘৃণ্য অপকর্ম।

🔸(গ) স্বামী-স্ত্রীর লজ্জাস্থানে মুখ লাগানো উচিত নয়। যাকে বর্তমানে ‘ওরাল সেক্স’ বলে। মুখ গহ্বর কিংবা জিহ্বা দ্বারা একে অপরের যৌনাঙ্গ চুষা (ঝঁপশ) বা লেহন করা। যা কোন সভ্য ও রুচিশীল মানুষের আচরণ হতে পারে না। এটা অপবিত্র এবং অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম করেছেন [সূরা আল-আ‘রাফ : ১৫৭] অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিজের কোন অনিষ্টতা বা ক্ষতি এবং পরস্পরে কারোর ক্ষতি করা যাবে না’[ইবনু মাজাহ, হা/২৩৪০,২৩৪১; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৭৫১৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৫০; বিস্তারিত দ্র. : ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং-২১৪৬, ৫০৭০৮] এটা রুচিহীন, বিকারগ্রস্ত বেহায়া জাতির অপকর্ম।

🔸(ঘ) রামাযান মাসের দিনের বেলায় ছিয়াম থাকাবস্থায় সহবাস করা হারাম [সূরা আল-বাক্বারাহ :১৮৭]। কেউ যদি সিয়াম অবস্থায় সঙ্গম করে,তাহলে সিয়ামের কাযা কাফফারা ওয়াজিব, এতে স্বামী স্ত্রী উভয়ের সম্মতি থাকলে তাদের তাহলে উভয়ের উপর কাযা,কাফফারা অপরিহার্য হবে। কিন্তু যদি শুধু স্বামী জোর করে সহবাস করে তাহলে শুধু স্বামীর উপর কাযা কাফফারা ওয়াজিব ।
হবে স্ত্রী শুধু উক্ত সিয়ামের কাযা আদায় করবে [সহীহ বুখারী হা/১৯৩৬; মুসলিম হা/১১১১; মিশকাত হা/২০০৪; আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ ফাতাওয়া ১৫/৩০৭]

🔸(ঙ) হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায় সহবাস হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।[সূরা আল-বাক্বারাহ :১৯৭]
কেননা যৌনমিলনের ফলেই ইহরাম বাতিল হবে

🔸(চ) যৌন মিলনের গোপন রহস্য ফাঁস করা হারাম। কেনন এই সম্পর্কে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।[সহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৭; বিস্তারিত দ্র. : ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-৫৫৬০]

🔰উল্লেখ্য যে,বিভিন্ন সময়ে সহবাস করা যাবেনা মর্মে সমাজে যা কিছু চালু আছে যার শারঈ কোন দলিল নেই সবই নিজেদের বানানো মনগড়া কথা যেমন:-
_____________________________
🔸(১).গর্ভবতী নারীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে প্রথম তিন
মাস, শেষ তিন মাস বা এর মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মিলন উচিত নয় মর্মে যা বলা হয় এই বক্তব্যের শারঈ কোন দলিল নেই।বরং শারঈ নিষিদ্ধ সময় ব্যাতিত
সর্বদা সহবাস করা যায়।যদি গর্ভকালীন অবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলমান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করা যায়। সহবাসের সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। হবে এ ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা নিঃসন্দেহে উত্তম।যেমন জুযামাহ বিনতু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেছেন, কিছু লোকের মধ্যে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম, আর তিনি বলছিলেন, ‘আমি অবশ্য তোমাদেরকে ‘গীলা’ করার ব্যাপারে নিষেধ করার ইচ্ছা করেছিলাম। তারপর দেখলাম রোম ও পারস্যের লোকেরা ‘গীলা’ করে থাকে তাতে তাদের শিশু সন্তানদের কোন ক্ষতি করে না। এরপর তাকে আয্‌ল সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, -এটাতো গোপন শিশু হত্যা![মুসলিম ১৪৪২, তিরমিয়ী ২০৭৬,২০৭৭, নাসায়ী ৩৩২৬, আর দাউদ ৩৮৮২, ইবনু মাজাহ ২০১১,আহমাদ ২৬৪৯৪,
২৬৯০১,মালেক ১২৯২]
উক্ত হাদীসে গীলা’ শব্দের অর্থ সন্তানকে দুধ খাওয়ান অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করা। আবার কেউ বলেছেন, যে গর্ভবতী স্ত্রী সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছে সেই মুহূর্তে তার সঙ্গে সঙ্গম করা।

🔸(২).স্বামী স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রঃ) কখনও স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হবে। সঙ্গমের সময় কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়’ ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়। [দেখুন, তুহফাতুল আরুশ ১১৮ –১১৯ পৃঃ]

🔸(৩).শুক্রবারে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি ‘মুনকার’ তথা যঈফ [সিলসিলা যঈফাহ হা/৬১৯৪]

🔸(৪).বিভিন্ন দিনে মিলনের বিভিন্ন ফযীলত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা শী‘আদের তৈরী জাল বর্ণনা মাত্র [খোমেনী, তাহরীরুল ওয়াসায়েল, বিবাহ অধ্যায়]

🔸(৫).স্ত্রীর সাথে রাতের প্রথম প্রহরে সহবাস করলে সন্তান মেয়ে হয় আর শেষ প্রহরে করলে সন্তান ছেলে হয় এই কথার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। কেননা ছেলে-মেয়ে দেয়ার মালিক কেবল মাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন [সূরা শূরা ৪৯-৫০]

🔸(৬)পশ্চিম দিকে মাথা রেখে স্ত্রী সহবাস নাজায়েজ মর্মে সমাজে যে বক্তব্য চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই কেননা এ বিষয়ে শরী‘আতে কোন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখিত হয়নি [ফাতাওয়া ইমাম নববী ১৯০-১৯১ পৃ.] এছাড়াও এর বাহিরে যা কিছু সমাজে প্রচলিত রয়েছে তার সবই ভিত্তিহীন।

🔸(৭)স্ত্রীকে উপুড় করে পিছনের দিক থেকে যদি তার সাথে সঙ্গম করা হয়,তাহলে (সেই সঙ্গমে সন্তান জন্ম নিলে) তার চক্ষু টেরা হয়। এই ধারণার কোন ভিত্তি নেই যার প্রমানে মহান আল্লাহ বলেন,তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও [সূরা বাকারা,২২৩]

অবশেষে,মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন সুন্নার আলোকে ইসলামী বিধিনিষেধ পালন করার তৌফিক দান এবং সমাজে প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার থেকে হেফাজত করুন আমীন।(মহান আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।