মসজিদ আল্লাহর ঘর এই কথা কি সঠিক

প্রশ্ন: মসজিদ আল্লাহর ঘর এই কথা কি সঠিক? আলেমগন বলেন মসজিদ আল্লাহর ঘর, তিনিই এর হেফাযত করে থাকেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা যুদ্ধের সময় দেখা যায় যে অনেক মসজিদও বিলীন হয়ে যায়। এর ব্যাখ্যা কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পৃথবীর সকল মসজিদকে আল্লাহ নিজের ঘর একথা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত।আর এজন্য মসজিদগুলিকে ‘বায়তুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর ঘর’ বলা হয়। নবী ইবরাহীম (আঃ) তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও তাঁর সন্তান ইসমাঈল (আঃ)-কে কা‘বা ঘরের পাশে রেখে এই বলে আল্লাহর কাছে দো‘আ করেছিলেন যে,হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার সন্তানদের একাংশকে তোমার এ পবিত্র (কা‘বা) গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় রেখে যাচ্ছি। হে আমাদের পালনকর্তা! যেন তারা সালাত কায়েম করে। অতএব কিছু মানুষের অন্তরকে তুমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও এবং তাদেরকে ফল-ফলাদি দ্বারা রূযী দান কর। যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে’ (সূরা ইবরাহীম ১৪/৩৭)।
.
পৃথিবীর সব কিছুর একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। এরপরেও বিশেষভাবে মসজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ ‘অতএব তারা যেন ইবাদত করে এই গৃহের মালিকের’
(সূরা কুরায়শ ১০৬/৩)।
.
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللهِ أَحَدًا ‘নিশ্চয়ই মসজিদ সমূহ কেবল আল্লাহর জন্য। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহবান করো না’ (সূরা জ্বীন ৭২/১৮)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا، ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলিকে বিরান করার চেষ্টা চালায়?’(সূরা বাক্বারাহ ২/১১৪)।
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যখনই কোন একদল মানুষ আল্লাহর ঘরসমূহের কোন এক ঘরে (মসজিদে) সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং নিজেদের মধ্যে আপোসে তা অধ্যয়ন করে, তখন তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, রহমত তাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেয় এবং ফেরেশতাগণ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। এমনকি তাদের কথা আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাগণের মধ্যে আলোচনা করেন’।(মুসলিম হা/৭০২৮; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫; তিরমিযী হা/২৯৪৫; সহীহুল জামি‘ হা/৬৫৭৭)
.
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কাছে সব চাইতে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদসমূহ আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ। (সহিহ মুসলিম,১৪১৪ ই.ফা. ১৪০০, ই.সে. ১৪১২)
.
সাঈদ বিন যুবায়ের (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,المساجدُ بيوتُ اللهِ في الأرضِ تضيءُ لأهلِ السَّماءِ كما تضيءُ نجومُ السَّماءِ لأهلِ الأرضِ ‘পৃথিবীতে মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর। এগুলো আসমানবাসীর জন্য তেমনি আলোকিত করে যেমনভাবে দুনিয়াবাসীদের জন্য আকাশের তারকাগুলো আলোকিত করে’।(হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১০।)
.
আবুদ্দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,المسجدُ بيتُ كلِّ تَقِيٍّ ‘মসজিদ হ’ল প্রত্যেক আল্লাহভীরুদের ঘর’(তাবারাণী, আল-কাবীর; ছহীহাহ হা/৭১৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩৩০)

◾আল্লাহর ঘর মসজিদ তিনি এর হেফাজত করেন অর্থ কি?
______________________________________
আল্লাহর ঘর মসজিদের হেফাযত অর্থ তার সম্মান মর্যাদার হেফাযত। তার চার দেওয়ালের হেফাযত নয়। খোদ রাসূল (ﷺ) কা‘বাগৃহকে ভেঙ্গে ইব্রাহীমী ভিতের উপরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করেননি (সহীহ মুসলিম হা/১৩৩৩)।
.
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে,যেকোন কারণে মসজিদ ভাঙ্গা-গড়া হ’তে পারে। কিন্তু এর সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিন বান্দাদের উপর। যেমন আল্লাহ কা‘বাগৃহ নির্মাণকালে ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে বলেন, তোমরা একে মুক্বীম-মুসাফির, ত্বাওয়াফকারী ও ই‘তিকাফকারীদের জন্য সর্বদা ‘পবিত্র’ রাখ’ (সূরা বাক্বারাহ ২/১২৭)।
.
রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি ওযূ করল, অতঃপর মসজিদে এল, সে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী। অতএব আল্লাহর দায়িত্ব তাঁর মেহমানদের সম্মান করা’ (সিলসিলা সহীহাহ হা/১১৬৯)। আর তিনি ঐসব মেহমানদের সম্মান করবেন, যারা তাঁর গৃহের সম্মান বজায় রাখবে।(নোট আত তাহরীক)
.
অতএব,যে কোন দূর্যোগে মসজিদ আক্রান্ত বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তা রক্ষা করার দায়িত্ব আল্লাহ নেননি। বরং মসজিদের সম্মানের হেফাযত করার দায়িত্ব বান্দাদের।আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।