নারীদের ইদ্দত

প্রশ্ন: ইদ্দত কাকে বলে? স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ইদ্দত পালনের সময়সীমা কতদিন? কোথায় তিনি ইদ্দিত পালন করবেন? ইদ্দতের সময় বিধবা নারী বাড়ির বাহিরে যেতে পারবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘ইদ্দত’ শব্দটি আরবি (عدة)। আভিধানিক অর্থ হল গণনা করা বা গণনাকৃত। ইসলামী শরীয়াহ অনুসারে, মহিলাদের ইদ্দত হল কোন মহিলা তার স্বামী কর্তৃক সরাসরি তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা খোলা ও ইলার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে অথবা কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে ঐ মহিলাকে একটি নিদিষ্ট সময়কাল একটি ঘরে অবস্থান করতে হয়। নির্ধারিত এই সময় পার না হওয়া পর্যন্ত সে এই ঘর ছেড়ে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না। অন্য কোন পুরুষকে বিয়েও করতে পারবে না। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হলে তিনি শরীয়ত সম্মত সবই করতে পারবেন।এই নিদিষ্ট সময় পার করাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইদ্দত বলে। ইদ্দত পালন করা নারীদের জন্য ফরজ। পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর যখন তারা ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন তারা নিজদের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক যা করবে, সে ব্যাপারে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর তোমরা যা কর, সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সূরা বাকারা:২/ ২৩৪)
.
উক্ত আয়াতের আলোকে স্বামীর মৃত্যুর পর (শোক পালনের) এই ইদ্দত পালন সকল নারীর জন্য অপরিহার্য, তাতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর সহবাস হয়ে থাকুক বা না হয়ে থাকুক, স্ত্রী যুবতী হোক বা বৃদ্ধা। অবশ্য গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা।কেননা তিনি এই আওতায় পড়বে না। কারণ, তার ইদ্দতকাল হল সন্তানপ্রসব হওয়া পর্যন্ত। মহান আল্লাহ বলেন,‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব হওয়া পর্যন্ত।’’ (সূরা ত্বালাক: ৬৫/৪) অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর পর বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত মহিলা শোক পালন করবে। চার মাস দশ দিনের পূর্বেই যদি বাচ্চা প্রসব হয়ে যায় তবে শোক পালনের জন্য মহিলাকে চার মাস দশ দিন পূর্ণ করতে হবে না। মোটকথা, গর্ভপাত পর্যন্ত সময় চার মাস দশ দিনের কম হোক বা বেশি হোক গর্ভবতী মহিলার জন্য এ সময়টুকু শোক পালন করতে হবে। হাদীসে এসেছে উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্ (নুসায়বাহ্) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো রমণী যেন মৃতের জন্য তিনদিনের অধিক শোক পালন না করে, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন ব্যতীত।(সহীহ বুখারী হা/ ৫৩৪২, সহীহ মুসলিম হা/ ৯৩৮ আবূ দাঊদ হা/ ২৩০২, নাসায়ী হা/৩৫৩৪, ইবনু মাজাহ হা/ ২০৮৭, ইরওয়া ২০১৪, সহীহ আল জামি‘ হা/৭৬৪৯)
.
▪️স্বামী মারা গেলে মহিলা ইদ্দত পালন করবে কোথায়?
.
শরী‘আতের বিধান হল স্ত্রী যেখান থেকে স্বামীর মৃত্যুর খবর পাবে,সেখানে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। অর্থাৎ এই সময় যদি স্ত্রী স্বামীর বাড়িতে থাকে তাহলে সেখানেই ইদ্দত পালন করবে। কারন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুরাই‘আহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে বলেছিলেন, اِمْكُثِىْ فِىْ بَيْتِكِ الَّذِىْ جَاءَ فِيْهِ نَعْىُ زَوْجِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ‘তুমি সেই ঘরে অবস্থান কর, যে ঘরে তোমার কাছে তোমার স্বামীর মৃত্যু-সংবাদ এসেছে, যতক্ষণ না তোমার ইদ্দত পূর্ণ হয়’ (ইবনু মাজাহ, হা/২০৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১৩২, সনদ সহীহ)। তবে কোন কারণে যদি উক্ত বাড়ি তার জন্য ঝুকিপূর্ণ ও সুবিধাজনক না হয় কিংবা তাকে দেখাশুনা করার মত কোন মাহরাম পুরুষ বা তেমন কেউ না থাকে, তাহলে মায়ের বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারে। এমনকি কি যে নারীর বাসর হওয়ার আগেই তার স্বামী মারা গেছেন তিনি নিজ পরিবারের বাড়ীতে ইদ্দত পালন করবেন; স্বামীর বাড়ীতে নয়। কেননা এটি সেই বাড়ী যেই বাড়ীতে থাকাকালেই তার স্বামী মারা গেছেন। তিনি তখনও তার স্বামীর বাড়ীতে স্থানান্তরিত হয়নি। দলিল আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতেমাহ বিনতে কায়েস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার আশঙ্কা হয় যে, কেউ হয়তো আমার ঘরে জোরপূর্বক ঢুকে আমার ক্ষতি করবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অন্য স্থানে চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।(ইবনু মাজাহ, হা/২০৩২-৩৪, আবী দাউদ হা/ ১৯৮৪ সনদ সহীহ)
.
▪️বিধবা নারীর ইদ্দত কখন শুরু হয় এবং শেষ হয়?
.
যে নারীর স্বামী মারা গেছে তিনি চন্দ্র মাস অনুযায়ী ইদ্দত পালন করবেন; সৌর মাস অনুযায়ী নয়। কেননা শরিয়তের বিধি-বিধান চন্দ্র মাসের সাথে সম্পৃক্ত। যদি স্বামীর মৃত্যু মাসের শুরুতে হয় তাহলে মাস গণনা শুরু হবে নতুন চাঁদের ভিত্তিতে। যদি কোন মাসের দিন সংখ্যা পূর্ণ ত্রিশদিন হয়; আর কোন মাসের দিন সংখ্যা ২৯ দিন হয় সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটিকে এক মাস গণনা করা সঠিক। কম দিনবিশিষ্ট মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোর কাযা করা নারীর উপর আবশ্যক নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌তাআলা বলেছেন: “লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, এটা মানুষের জন্য ও হজ্জের জন্য সময়-নির্দেশক।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৯ আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা”২৯/৩১৫-৩১৬) সুতরাং বিধবা নারীর ইদ্দতের এই সময়টি স্বামী মারা যাওয়ার পর শুরু হয় এবং স্বাভাবিক ভাবে তার মৃত্যুর চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তার ইদ্দত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে যতদিন পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব না হবে ততদিন ইদ্দত পালন করবে।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, ইমামগন সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে একজন স্বাধীন মুসলিম মহিলার ইদ্দত যে গর্ভবতী নয় তার স্বামীর মৃত্যুর চার মাস দশ দিন, এবার বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে সহবাস হয়েছে কি না এবং সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছে কিনা। বা খুব অল্প বয়সী এবং এখনও বয়ঃসন্ধি পায়নি এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই কারন মহান আল্লাহ বলেছেন,আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। সূরা বাকারা: ২/২৩৪ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো রমণী যেন মৃতের জন্য তিনদিনের অধিক শোক পালন না করে, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন ব্যতীত।(বুখারী ৫৩৪২, মুসলিম ৯৩৮ ইবনে কুদামাহ আল মুগনী খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ৯৩)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,“যে মহিলার স্বামী মারা যায় সে গর্ভবতী না হলে চার মাস দশ দিন ইদ্দাহ পালন করবে। কারন মহান আল্লাহ বলেছেন,আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। যা মৃত্যুর তারিখ থেকে শুরু হয়। যদি একজন মহিলা ইচ্ছাকৃতভাবে শোক পালন না করে তবে সে বড় পাপ করছে এবং তাকে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।” স্থায়ী কমিটির আলেমগণ আরো বলেছেন,“যার স্বামী মারা যায় তার ইদ্দাহ হল মৃত্যুর পরপরই চার মাস দশ দিন এবং যদি সে গর্ভবতী হয় তাহলে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। যদি কোন নারী অজ্ঞতার কারণে বা অন্য কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে শোক পালন না করেন, তাহলে তাকে কাফফারা দিতে হবে না, তবে তাকে তওবা করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে যিকির করতে হবে।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ২০ পৃষ্ঠা:৪২১ এবং পৃষ্ঠা: ৪৮১)

▪️বিধবা নারী এই সময় কোন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকবেন।
.
সদ্য-বিধবা তথা স্বামীর শোকপালনরত নারীকে যে বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে হাদিসে সেগুলোর বর্ণনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, لَا تَلْبَسُ ثَوْبًا مَصْبُوْغًا إِلَّا ثَوْبَ عَصْبٍ ‘(স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী) রঙিন কাপড় ব্যবহার করতে পারবে না। তবে সূতাগুলো একত্রে বেঁধে হালকা রং লাগিয়ে তা দিয়ে কাপড় বুনলে তা ব্যবহার করা যাবে’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৩৪২)।
.
উক্ত হাদীসের আলোকে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন: বিধবা নারী তার ইদ্দত পালনকালে যা কিছু থেকে বিরত থাকবেন সেগুলো হচ্ছে– পাঁচটি বিষয় যেমন:

(১). যে বাড়ীতে তার স্বামী মারা গেছে সে বাড়ীতে অবস্থান করা। তার ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এখানে থাকবেন। ইদ্দত শেষ হবে চার মাস দশদিনে। তবে যদি গর্ভবতী হন তাহলে সন্তান প্রসব করার মাধ্যমে তার ইদ্দত শেষ হবে। যেমনটি আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “আর গর্ভধারিনীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।”[সূরা ত্বালাক, আয়াত: ৪] কোন প্রয়োজন কিংবা জরুরী অবস্থা ব্যতীত ঘর থেকে বের হবেন না। যেমন- অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাওয়া, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও এ জাতীয় অন্য কিছু কেনার জন্য কাউকে না পেলে বাজারে যাওয়া, অনুরূপভাবে ঘরটি যদি ধ্বসে পড়ে তাহলে তিনি এ ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে চলে যাবেন, কিংবা তাকে সঙ্গ দেয়ার মত যদি কেউ না থাকে এবং তিনি নিজের উপর আশংকা করেন এ রকম প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে আপত্তি নেই।

(২). তিনি সুন্দর কাপড়-চোপড় পরবেন না; সেটা হলুদ হোক বা সবুজ হোক বা অন্য কোন রঙের হোক। বরং অসুন্দর কাপড়-চোপড় পরবেন; সেটা কালো বা সবুজ হোক বা অন্য কোন রঙের হোক। মোটকথা হল, অসুন্দর কাপড় হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন।

(৩).স্বর্ণ, রৌপ্য, ডায়মন্ড, মুক্তা কিংবা এসব ধাতুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্য কোন ধাতু দিয়ে তৈরী অলংকার পরবেন না; সেটা গলার হার হোক, হাতের চুড়ি হোক, আংটি হোক কিংবা এ ধরণের অন্য কোন অলংকার হোক না কেন; ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত পরবেন না।

(৪). সুগন্ধি পরিহার করবেন। সেটা ধূপধুনার মাধ্যমে সুগন্ধি গ্রহণ হোক কিংবা অন্য কোন সুগন্ধি হোক না কেন। তবে, হায়েয থেকে পবিত্র হলে কিছু ধূপ দিয়ে ধূপধুনা করতে কোন অসুবিধা নেই।

(৫). সুরমা লাগানো বর্জন করবেন। তিনি সুরমা লাগাবেন না এবং সুরমার মত অন্য যা কিছু চেহারার রূপ চর্চায় ব্যবহৃত হয় সেগুলোও ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ যে বিশেষ রূপচর্চা দ্বারা মানুষ আকৃষ্ট হয় সেটা বর্জন করবেন। পক্ষান্তরে, সাবান ও পানি দিয়ে সাধারণ রূপচর্চা করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু, সুরমা যা দিয়ে চক্ষুদ্বয়কে সুন্দর করা হয় কিংবা সুরমার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অন্য যে সকল জিনিস নারীরা চেহারাতে ব্যবহার করে থাকে সেগুলো ব্যবহার করবেন না। যে নারীর স্বামী মারা গেছে তার এই পাঁচটি বিষয় মেনে চলতে হবে।(শাইখ বিন বায ‘ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা’খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩১৫-৩১৬ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৬৭০)
.
ইদ্দতের সময় বিধবা নারী কোন কারনে
গৃহ ত্যাগ করতে পারবে কি?
.
শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশুদ্ধ কথা হল:স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত পালনকারী নারী একান্ত প্রয়োজন বা আবশ্যকীয় কাজে ঘর বের হতে পারবে, যেমন,রোগী হলে ডাক্তার দেখানো,খাবার ক্রয় ইত্যাদি, যখন তার কাজ করে দেওয়ার কেউ থাকবে না। অনুরূপভাবে ঘর নষ্ট হয়ে গেলেও বের হতে পারবে। তাছাড়া একাকী সে ঘরে ভয় পেলেও সেখান থেকে বের হতে পারবে। তবে এগুলো দিনের বেলা হবে নিরুপায় না হলে রাতে নয়।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,“ইদ্দত পালনকারী নারী নিজ প্রয়োজনে দিনের বেলায় বের হতে পারেন; হোক না সেই নারী তালাক্বপ্রাপ্তা কিংবা বিধবা। যেহেতু জাবের (রাঃ) বলেন: আমার খালার তিন তালাক্ব হয়ে গেল। তখন তিনি তার খেজুর গাছ কাটার জন্য বের হলে এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলো। সেই লোক তাকে নিষেধ করলেন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন: আপনি বের হন এবং আপনার খেজুর গাছ কাটুন। আশা করি আপনি সেটা থেকে দান করবেন কিংবা কল্যাণকর কিছু করবেন।”(সহীহ মুসলিম হা/১৪৮৩, আবূ দাঊদ হা/ ২২৯৭, নাসায়ী হা/৩৫৫০, ইবনু মাজাহ হা/ ২০৩৪) মুজাহিদ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “উহুদের যুদ্ধের দিন কিছু লোক শহীদ হলেন। তখন তাদের স্ত্রীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমরা রাতে একাকীত্ব অনুভব করি। আমরা কি সবাই একজনের ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারি? সকাল হলে অবিলম্বে আমরা যার যার বাসায় চলে যাব। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনারা একজনের বাসায় সবাই গল্প করুন। যখন ঘুমাতে চাইবেন তখন প্রত্যেকে নিজের বাসায় চলে যাবেন।”ইদ্দত পালনকারী নারী তার বাসা ছাড়া অন্যত্র রাত্রি যাপন করবেন না। জরুরী পরিস্থিতি ছাড়া রাতের বেলায় বের হবেন না। যেহেতু রাতে ফাসাদ ঘটার সম্ভাবনাময় সময়; দিন এর বিপরীত। যেহেতু দিনের বেলা নিজের প্রয়োজন ও জীবিকা পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কিছু ক্রয় করার সময়।(ইবনে কুদামাহ“আল-মুগনী”খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ১৩০)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,“মূল বিধান হলো: নারী তার স্বামীর বাসায় রাত্রি যাপন করবে; যে বাসায় থাকা অবস্থায় তার স্বামী মারা গেছে। কোন প্রয়োজন বা জরুরী কিছু ছাড়া সে বাসা থেকে বের হবে না; যেমন অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে যাওয়া, বাজার থেকে রুটি বা এ জাতীয় কিছু কেনা; যদি তাকে এগুলো কিনে দেয়ার কেউ না থাকে।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ২০ পৃষ্ঠা: ৪২১ এবং পৃষ্ঠা: ৪৪০)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে যা প্রমানিত হয় তা হল: কোন নারীর স্বামী মারা গেলে সে নারীর জন্য ইদ্দত পালন করা ফরজ বা ওয়াজিব। তিনি এই সময় স্বামীর বাড়িতে থাকলে সেখানেই ইদ্দত পালন করবেন। তিনি তার এই ইদ্দত স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে গননা শুরু করবেন। তিনি ইদ্দতের এই সময় স্বামীর জন্য শোক পালন করবেন এবং জাঁক জমকপূর্ণ সাজ-সজ্জা বর্জন করবেন। তিনি একান্ত প্রয়োজন হলে দিনের বেলায় জরুরি কাজে বাড়ির বাহিরে যেতে পারবেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।