নাতি-নাতনিকে ভাই বোন বলে সম্বোধন করা যাবে কি?

প্রশ্ন: ছেলে মেয়ের সন্তানদেরকে অর্থাৎ নাতি-নাতনিকে তাদের নানা-দাদারা কোন দৃষ্টিতে দেখবেন? নাতি-নাতনিকে ভাই বোন বলে সম্বোধন করা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমান সমাজে অনেকেই ঠাট্টা মশকরা করে নাতি নাতনি কে ভাই বোন বলে সম্বোধন করেন আবার বিবাহ-শাদী সম্পাদন বিষয়ক বহু প্রকার ঠাট্টা মশকরা করা হয় অথচ ইসলামী শরীয়তে নাতি বা নাতনি নিয়ে এভাবে ঠাট্টা-মশকরা করা হারাম। কারন এরা ছেলে ও মেয়ের সমতুল্য। তাদেরকে নাতি-নাতনি এবং সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতে হবে।মহান আল্লাহ নবী ইউসুফ (আঃ)-এর একটি বক্তব্য উল্লেখ্য করে বলেন,
وَٱتَّبَعْتُ مِلَّةَ ءَابَآءِىٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَۚ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشْرِكَ بِٱللَّهِ مِن شَىْءٍۚ ذَٰلِكَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
‘আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্‌রাহীম, ইস্‌হাক এবং ইয়া’কূবের মিল্লাত অনুসরণ করি। আল্লাহ্‌র সাথে কোন বস্তুকে শরীক করা আমাদের জন্য সংগত নয়। এটা আমাদের ও সমস্ত মানুষের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।[সূরা ইউসুফ,১২/৩৮] উক্ত আয়াতে বাপ, দাদা, নানা, প্রপিতামহ সহ সবাইকে (ءَابَآءِىٓ) বাবা শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে অর্থাৎ পিতামহ-প্রপিতামহকেও পিতা বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ তাঁরাও পিতা। পুনরায় পর্যায়ক্রমে প্রপিতামহ ইবরাহীম (আঃ) তাঁরপর পিতামহ ইসহাক (আঃ) এবং তাঁরপর পিতা ইয়াকূব (আঃ)-কে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, প্রথমে প্রথম পুরুষ, অতঃপর দ্বিতীয় পুরুষ ও সবশেষে তৃতীয় পুরুষকে উল্লেখ করেছেন এমনকি কুরআনে সব যায়গায় বাপ চাচা দাদা নানাকে বাবা শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে। হাদীসেও বহু দলিল রয়েছে যেমন,

আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমরা রাসুল(ﷺ) এর সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে রাসুল(ﷺ) কে?’ রাসুল(ﷺ) তখন তার সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, ‘এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যাক্তিই হলেন তিনি। ’ তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, “হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র!” রাসুল(ﷺ) তাকে বললেনঃ “আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি।” [সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ৬৩ ইসলামী ফাউন্ডেশন: ৬২]।

বারা’ (রা.) হতে বর্ণিত। নবী(ﷺ) তখন তাঁর সাদা খচ্চরটির পিঠে ছিলেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফ্ইয়ান ইবনু হারিস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, “আমি নবী, এ কথা মিথ্যা নয়। আমি আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র।” অতঃপর তিনি সহাবীদের সারিবদ্ধ করেন। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং :২৯৩০] উপরোক্ত দুটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান বলেছেন অথচ আব্দুল মুত্তালিব রাসূলের সম্পর্কে দাদা।আর পিতা হলেন আব্দুল্লাহ।

আবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের কন্যা ফাতিমা রাঃ-এর হাসান (রাঃ) কে নিজের সন্তান হিসাবে আখ্যায়িত করতেন।[সহীহ বুখারী হা/৩৭৪৬, ৭১০৯; মিশকাত হা/৬১৪৪; বঙ্গানুবাদ মিসকাত হা/৫৮৮৪ সনদ সহীহ]।

অপর বর্ননায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই নাতি হাসান (রাঃ) ও হোসাইন (রাঃ) কে লক্ষ করে বলতেন, এ দুটি আমার ছেলে এবং আমার মেয়ের ছেলে। [সুনানে তিরমিযী হা/৩৭৬৯; মিশকাত হা/৬১৬৫ সনদ হাসান]। মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
____________________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।