গুল-জর্দা, সাদা, মিষ্টি পান-সুপারী খাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে

প্রশ্ন: গুল-জর্দা, সাদা, মিষ্টি পান-সুপারী খাওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? বিস্তারিত জানতে চাই?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:

প্রথমত: শুধু পান সুপারি খাওয়া সরাসরি নিষিদ্ধ না হলেও এগুলো খাওয়া উচিত নয় ডাক্তারি পরামর্শ মতে পানের আনুষঙ্গিক উপাদানগুলো মুখে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে আর চুনে রয়েছে প্যারা অ্যালোন ফেনল, যা মুখে ঘা (আলসার) সৃষ্টি করতে পারে এবং এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলতে নিষেধ করেছেন [সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৯৫]। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে সাদা পাতা, গুল-জর্দা, মিষ্টি জর্দা ইত্যাদি ছাড়া শুধু পান সুপারি খাওয়া হারাম নয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন সেগুলোকে হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘন কারীদের পছন্দ করেন না [সূরা আল-মায়েদা: ৮৭]। যেহেতু শুধু পান সুপারি হারাম হওয়ার দলিল নেই তাই আমরাও সরাসরি হারাম বলবোনা।
.
দ্বিতীয়তম: সাদা পাতা, গুল-জর্দা মিষ্টি জর্দা কোন অবস্থাতেই খাওয়া যাবেনা এগুলো সুস্পষ্ট হারাম যারা গুল-জর্দা খাওয়াকে মাখরুহ বলেন তাদের কোন দলিল নেই তারা বিনা দলিলে উক্ত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বরং বিশুদ্ধ মত হল গুল-জর্দা, সাদাপাতা সরাসরি তামাক থেকে তৈরী। আর তামাক বা তামাকজাত যে কোন নেশাদার দ্রব্য খাওয়া সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মাদকতা আনয়নকারী প্রত্যেক বস্ত্তই মদ এবং প্রতিটি মাদকদ্রব্য হারাম’ [সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮]।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা কি এখনো নিবৃত হবে না’ [সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০-৯১]।
.
অপর আয়াতে বলেন: তোমরা নিজেদেরকে
হত্যা করো না [সূরা বাকারা:১৯৫, সূরা নিসা:২৯]।
.
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃমুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বহু বাণী দ্বারা সূর্যালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, মাদকদ্রব্য সেবন করা হারাম। এ মর্মে তাঁর একাধিক বাণী বিধৃত হয়েছে। যেমন: জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে বস্তুর অধিক পরিমাণ ব্যবহারে নেশা আনয়ন করে, ঐ বস্তুর অল্প পরিমাণ ব্যবহার করাও হারাম’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৫৮; আবু দাঊদ, হা/৩৬৮১; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৫৬০৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩৩৯৩ ও ৩৩৯৪, সনদ হাসান ছহীহ]।
.
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সব ধরনের নেশাদার দ্রব্য হারাম’ [ইবনু মাজাহ হা/৩৩৮৮]।
.
অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে জিনিস এক ফারাক্ব পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি হয়, উহা হাতের অঞ্জলি পরিমাণ ব্যবহারও হারাম’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৬৮; আবু দাঊদ, হা/৩৬৮৭; তিরমিযী, হা/১৮৬৬; মিশকাত, হা/৩৬৪৬, সনদ ছহীহ]।
.
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ বস্তু যা বিবেকের ক্ষতি করে সেসবই মদ। আর সব ধরনের মদই হারাম’ [ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯০]।
.
আর শুধু পান সুপারি খাওয়াও অনর্থক এতে কোন উপকার নেই এবং শুধু শুধু অর্থেরও অপচয়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ’ [সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭]। অন্যত্র বলেন, ‘এবং খাও, পান কর ও অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না’ [সূরা আল-‘আরাফ: ৩১]।
.
তাছাড়া অনর্থক জিনিস বর্জন করা ইসলামের সৌন্দর্য : নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হল অনর্থক জিনিস ত্যাগ করা’ [তিরমিযী, হা/২৩১৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৬; মিশকাত, হা/৪৮৩৯, সনদ সহীহ]।

উল্লেখ্য যে, তামাক শুধু মানুষের জন্য নয়, বরং সকল প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ লোক তামাকজনিত রোগে মারা যায়। তন্মধ্যে ৬ লাখের অধিক হ’ল পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না’ [ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০ সহীহাহ হা/২৫০]। সেজন্য স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও তামাকজাত দ্রব্য অর্থাৎ সাদা পাতা, গুল-জর্দা মিষ্টি জর্দা ইত্যাদি খাওয়া থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। আল্লাহু আলাম।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।