মৃত্যু দিবস বা শোক দিবস পালনের বিধান কি?

প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত্যু দিবস বা শোক দিবস পালনের বিধান কি?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ বা শাহাদতবরণ করলে তার জন্য মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা, কবরে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো, দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা সবই জাহেলিয়াত এবং বিজাতীয় সংস্কৃতি মাত্র। ইসলামে এসবের কোনই অনুমোদন নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)।

রাসূল (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম কখনো কারো জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেননি। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী হা/২৬৯৭; মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০)।

জেনে রাখা ভাল যে, ইসলাম ধর্মে মুসলিমদের উৎসবের দিন দুইটি ১. ঈদুল আযহা ২. ঈদুল ফিতর। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে এ দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন,এ দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে, একে অপরের মধ্যে আনন্দ ভালোবাসা সুখ দুখ বিনিময় করবে। তাই ইসলামে উপরোক্ত দুটি উৎসবের দিন ছাড়া বাকি সব যেমন:- জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস, থার্টিফার্স্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, নববর্ষ দিবস, স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস,শোক দিবস,মা দিবস, বাবা দিবস, মে দিবস ইত্যাদি যত দিবস আছে এবার হোক সেটা আরবি, বা বাংলা, অথবা ইংরেজি,এক কথায় সকল দিবস পালন করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত এবং নিষিদ্ধ হারাম। কখনো কখনো শিরক ও হতে পারে তাই এই সকল দিবস পালন করা তাতে অংশগ্রহণ করা যাবেনা।

আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মাদীনাহ’য় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি দিন (নওরোজ ও মেহেরজান) খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘এই দুটি দিন কীসের?’ তারা বলে, ‘জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব করতাম।’ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি উত্তম দিন দান করেছেন। আর তা হলো, ‘ঈদুল আদ্বহা (কোরবানীর ‘ঈদ)এবং ‘ঈদুল ফিত্বর [রোজার ‘ঈদ]’। (আবূ দাঊদ, হা/১১৩৪; সনদ: সাহীহ) রাসূল ﷺ তো চাইলে বলতে পারতেন যে, তোমাদের দুই দিন থাক। সাথে এই দুটিও নাও। কিন্তু তিনি তা বলেননি। কারণ ইসলাম এসেছে হক প্রতিষ্ঠা করতে বাতিলকে বিলুপ্ত করতে প্রাচীন অপসংস্কৃতি জাহেলিয়াতকে অপসৃত করতে। ইসলাম আর জাহেলিয়াত কখনো এক হতে পারে না। উপরোক্ত হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, মুসলিমদের জীবনে এই দুটি দিবস ছাড়া অন্য কোনো দিবস থাকতে পারে না বরং এসব পালন করা হারাম। এই সকল দিবস নিষিদ্ধ হওয়ার কয়েকটি কারন নিচে উল্লেখ্য করা হল।

◾প্রথমতঃ এই সকল দিবস রাসূল সাঃ নিজে অথবা তার সাহাবীগণ কখনো নিজেরা পালন করেননি এবং এদিনগুলো কে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো আমল করেননি। তাছাড়া সব ধরনের দিবস পালন বিজাতীয় অপসংস্কৃতি ইহুদী-খ্রিস্টানদের অনুকরণ মাত্র। যা ইসলামে নিষিদ্ধ (আবূদাঊদ হা/৪০৩১, তিরমিযী হা/২৬৯৫ সিলসিলা সহীহাহ হা/২১৯৪)।

অপর বর্ননায় রাসূল (ﷺ)স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে বলেন, তোমরা ইহূদী-নাছারাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে হাতে হাতে ও বিঘ’তে বিঘ’তে। তারা যদি গুই সাপের গর্তে ঢুকে পড়ে, তোমরাও সেখানে ঢুকবে’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৪,সনদ হাসান)।

◾দ্বিতীয়তঃ শারঈ কোন নির্দেশনা নেই এমন কোন কাজ মুসলিমরা করতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে (সূরা আল-আহযাব: ২১)।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য’ (মুসলিম হা/১৭১৮)।
.
অবশেষে আমাদের আহবান, হে আমার প্রানপ্রিয় মুসলিম ভাইবোন আসুন আমরা মহান আল্লাহ এবং সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তার রাসূল (ﷺ) কে ভালোবাসে এই সকল দিবসকে প্রত্যাখ্যান করি কোরআন ও সহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করি। মহান আল্লাহ সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে সকল বেহায়াপনা অশ্লীলতা থেকে হেফাজত করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।