দুনিয়াবী দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করবেন না যদি করতেই হয় তাহলে এই দু’আটি পড়ুন

ভূমিকা: সবকিছু অনিশ্চিত হলেও নিজের মৃত্যু সুনিশ্চিত। কেননা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে মৃত্যু অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ বলেন,প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)। তিনি আরো বলেন, কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং জানে না কোন্ মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সকল বিষয়ে সম্যক অবহিত।(সূরা লোক্বমান ৩১/৩৪)। এই অনিবার্য ও অমোঘ সত্য বিষয়টিকে পাশ কাটানোর কোন সুযোগই কারু নেই।যদিও বহু মানুষ দুনিয়াবী কষ্ট যন্ত্রণা কিংবা হতাশা নিয়ে মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যু কামনা করে যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। কারন রাসূল (ﷺ) মৃত্যু কামনা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কারণ সে নেককার হ’লে হয়তো অধিক নেকী অর্জন করবে এবং বদকার হ’লে সম্ভবত তওবা করে আল্লাহর সন্তোষ লাভে সমর্থ হবে’ (সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/১৫৯৮) অরপ বর্ননায় তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে যেন মৃত্যুর জন্য দো‘আ না করে। কেননা তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিনের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে। (সহীহ মুসলিম হা/২৬৮২; মিশকাত হা/১৫৯৯)। আর হাদীস থেকেও জানা যায় কিয়ামতের ছোট্ট আলামত গুলোর মধ্যে একটি আলামত হচ্ছে,মানুষ দুনিয়ার বিপদ ও মুসীবতের তাড়নায় অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা করবে।(সহীহ মুসলিম ১৫৭,ইবনু মাজাহ ৪০৩৭, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫৭৮) তাছাড়া প্রত্যেক মৃত্যু কামনাকারী ব্যক্তি দু’শ্রেণী হতে মুক্ত হতে পারে না। মৃত্যু কামনাকারী ব্যক্তি হয় নেককার হবে না হয় বদকার হবে। মৃত্যু কামনাকারী ব্যক্তি নেককার হলে তার জন্য বৈধ হবে না মৃত্যু কামনা করা। কেননা জীবিত অবস্থায় অধিক নেকী অর্জন করতে পারবে অপরদিকে মৃত্যু কামনা কারী ব্যক্তি বদকার বা পাপী হলে তার জন্যও মৃত্যু কামনা করা বৈধ না। কেননা সম্ভবত সে তাওবাহ্ করে পাপকাজ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর সন্তোষ লাভ অর্জনে সক্ষম হবে। তাই সবার উচিত মৃত্যু কামনা থেকে বিরত থাকা।
.
তবে হ্যা ফিতনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য মৃত্যু কল্যানকর হলে আল্লাহর কাছে উত্তম মৃত্যু চাওয়া যেতে পারে। যেমনটি রাসূল (ﷺ) আল্লাহর কাছে দু’আ করে বলেছিলেন, (হে আল্লাহ) আপনি যখন আপনার বান্দাদের কঠিন পরীক্ষায় নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করেন, তখন আমাকে এ ফিতনায় জড়িয়ে পড়ার আগেই আপনার নিকট উঠিয়ে নিন।(তিরমিজি হা/৩২৩৩) তাই কিভাবে ফিতনা থেকে বাঁচতে কিভাবে মৃত্যু কামনা করা যেতে পারে এই মর্মে প্রখ্যাত সাহাবী আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদীস এসেছে, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ক্ষতি নেমে আসার কারণে তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই মৃত্যু কামনা না করে, বরং সে যেন বলে,

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لي

মোটামুটি উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা আহয়িনী মা- কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী ওয়াতা ওয়াফ্‌ফানী ইযা- কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী’’।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ,আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন, যতক্ষন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়, আর আমাকে মৃত্যু দান করুন, যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হবে।(সহীহ বুখারী হা/ ৫৬৭১, সহীহ মুসলিম হা/ ২৬৮০, আবূ দাঊদ হা/৩১০৮, তিরমিযী হা/ ৯৭০, নাসায়ী ১৮২০, ইবনু মাজাহ্ ৪২৬৫, ইবনু হিব্বান ৯৬৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী হা/৬৫৬৫, সহীহ আত তারগীব হা/ ৩৩৭০)
.
এবার মুখস্থ করতে পারেন এভাবে:
.
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي
(আল্লাহুম্মা আহয়িনী) অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন,
.
مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي
(মা- কা-নাতিল হায়া-তু খায়রাল লী) অর্থ: যতক্ষন বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয়,
.
وَتَوَفَّنِي
(ওয়াতা ওয়াফফানী) অর্থ: আর আমাকে মৃত্যু দান করুন,
.
إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لي
(ইযা- কা-নাতিল ওয়াফা-তু খায়রাল লী’’)

অর্থ: যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হবে।
.
প্রিয় পাঠক! যে কোন কারণে নিজের মৃত্যু কামনা করা এ জন্যই নিষিদ্ধ যে, কারণ বেঁচে থাকলেই তো যে কেউ নিজের নেক আমল বাড়িয়ে নিতে পারবে অথবা নিজ কৃতকর্ম থেকে তাওবা করে আখিরাতের জন্য প্রস্ত্তত হতে পারবে। আর সেজন্যই রাসূল ﷺ বলেছেন,لاَ يَتَمَنَّى أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ ، إِمَّا مُحْسِناً فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ ، وَإِمَّا مُسِيْئاً لَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ‘‘তোমাদের কেউ যেন কখনো নিজের মৃত্যু কামনা না করে। যদি সে নেককার হয়ে থাকে তা হলে সে নেক কাজে আরো অগ্রসর হবে। আর যদি সে বদ্কার হয়ে থাকে তা হলে সে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট নিজ কৃতকর্ম থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে’(সহীহ বুখারী, হা/৭২৩৫) আর মৃত্যু কামনাতে রয়েছে এক প্রকার আল্লাহর ফায়সালার প্রতি অসন্তুষ্টি। মুমিনের জন্য জরুরি হলো, যখন তার কোনো বিপদ হয় সে ধৈর্য ধারণ করবে। বিপদে ধৈর্য ধারণ করলে সে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিস লাভ করবে।

প্রথম: গুনাহসমূহের ক্ষমা। “মুসলিমকে যে কোনো চিন্তা, পেরেশানি, কষ্ট ও কোনো কিছু স্পর্শ করে, এমন (তার গায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তা‘আলা তার বিনিময়ে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করেন।”

দ্বিতীয়: যখন আল্লাহর সাওয়াব আশা করার তাওফীক লাভ করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সবর করবে তখন অবশ্যই সে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। কিন্তু যখন মৃত্যু কামনা করবে তখন বুঝা যাবে যে, লোকটি আল্লাহর ফায়সালার ওপর ধৈর্যশীল ও সন্তুষ্ট নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, যদি সে মুহসিন হয়, তাহলে তার বেঁচে থাকাতে তার নেক আমল বৃদ্ধি পাবে। মুমিন যদিও কষ্ট ও বিপদে বেঁচে থাকে, তার নেক আমলসমূহ বৃদ্ধি পায়। আর যদি পাপীও হয়, যে গুনাহ করেছে, সে হয়তো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, তার মনোনিবেশ কামনা করবে; অর্থাৎ তার সন্তুষ্টি চাইবে ও ওযর পেশ করবে। তারপর গুনাহসমূহ থেকে তাওবা করাবস্থায় মারা যাবে। সুতরাং মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ, সবকিছুই নির্ধারিত, সবর করবে এবং সাওয়াবের আশা করবে। আর সব সময় অবস্থা একই থাকবে এটা অসম্ভব। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।