যে দু’আটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি পড়তেন

ভূমিকা: ঈমানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে, স্বীকৃতি, স্বীকারোক্তি এবং আত্মার প্রশান্তি।পারিভাষিক অর্থে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের নিকট ঈমান হল মূল ও শাখাসহ হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম। প্রথম দু’টি মূল ও শেষেরটি হল শাখা,যেটা না থাকলে পূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। ঈমান ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ঈমান ব্যতীত মানুষ আখিরাতে তার কোন সৎ আমলের প্রতিদান লাভ করতে পারবে না। আবার ঈমানহীন মানুষ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে চিরকাল। তাই ঈমানকে ইসলামের মূল খুঁটি বললেও অতিরঞ্জন হবে না।আজ আমরা অতি ছোট্ট দু’টি দু’আ নিয়ে আলোচনা করব।যে দুআগুলো কোনো অবস্থাতেই আমাদের জন্য পাঠ করা থেকে বিরত থাকা উচিত হবেনা। শাহর ইবনু হাওশাব (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, মুমিনদের মা ও রাসূলের স্ত্রী উম্মে সালামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা)-কে আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার কাছে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় কোন দু’আটি পাঠ করতেন? তিনি বললেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দু’আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন,
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
.
মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দীনিকা (আরবি হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা অসম্ভব, মূল আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয় ভুল পড়বেন)
.
অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন। (তিরমিযি, হাদিস: ৩৫২২; যিলালুল জান্নাহ, হা: ২২৩)।
.
এবার এভাবে মুখস্থ করুন:
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ
(ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব) অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী!
.
ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
(সাব্বিত ক্বালবী আলা দীনিকা) অর্থ: [আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল-অবিচল রাখুন।
.
আরেকটি দু’আ একই ভাব ও মর্মের। তবে, সেটি আরো বেশি হৃদয়গ্রাহী। সেই দু’আটি পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আলে ইমরানের ৮ নং আয়াতে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
.
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
.
(আরবি উচ্চারণ বাংলায় লেখা সম্ভব নয়, তবুও আমরা হাদিসের ক্ষেত্রে লেখি। কিন্তু কুরআনের ক্ষেত্রে লিখি না। কারণ এটা সালাফগন নিষেধ করেছেন।কেননা এতে ভুল উচ্চারণে অর্থ বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই নিজেরা একটু কষ্ট করে আরবি দেখে শিখে নিবেন)।
.
আয়াতটির অর্থ: হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সঠিক পথে চালিয়েছো, তখন আর আমাদের অন্তরকে (সত্যপথ থেকে) বাঁকা করে দিও না। তোমার রহমতের ভান্ডার হতে আমাদের জন্য রহমত দাও। নিশ্চয়ই প্রকৃত দাতা তো তুমিই। (সূরা আলে ইমরান: ৮)
.
প্রিয় পাঠক! হাদিসে এসেছে শেষ যামানায় নিজের ঈমানকে টিকিয়ে রাখা, হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার চেয়েও কঠিন হবে। আমরা জানি না সেই সময়েই আমরা আছি কীনা। তবে, বর্তমান সময়েও দীনের উপর অটল-অবিচল থাকা-যে কত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ ঈমানকে হরণ করার জন্য শয়তানি তৎপরতার শেষ নেই। এমতাবস্থায় আমাদের মত দুর্বল মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। হাদিসে এসেছে মানুষের অন্তর আল্লাহর দুই আঙুলের মাঝে। তিনিই সেটিকে এদিক-ওদিক করেন।(মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩০২) সুতরাং আমরা তো জানি না, আমাদের কোন অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ্ রাগ করে আমাদের অন্তরকে বক্রতার দিকে ঘুরিয়ে দেন আর আমরা হয়ে যাই চিরস্থায়ীভাবে মহাক্ষতিগ্রস্ত। তাই, নিজের ঈমানকে নিরাপদ রাখতে, এই দু’আ দুটো নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর আগে, সাধারণ দু’আয় ও সদা-সর্বদা পাঠ করতে হবে খুব বেশি বেশি। এই দুটো দু’আ পাঠের সময় মনে মনে ভাবতে থাকবেন ‘‘আল্লাহ! আমি তোমার খুবই দুর্বল এক বান্দা। আমি সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যাই। আমার অন্তর দ্রুত পাল্টে যায়। আর তোমার হাতেই তো অন্তরের চাবি। যদি তুমি আমার অন্তরকে দ্বীনের উপর অটল না রাখো, তাহলে তো আমি ধ্বংস হয়ে যাব!’’ এভাবে নিজের মত করে ভাবতে থাকবেন আর আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরবেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।