দুই সিজদার মাঝে দু’আ পড়া ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ

প্রশ্ন: দুই সিজদার মাঝে কোন দু’আ পড়তে হয়? উক্ত দু’আ পড়া কি ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ? উক্ত দু’আ না পড়লে কি সাহু সিজদা দিতে হবে কিনা? কোন মতটি অধিক সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সালাতে দুই সিজদার মাঝখানে যে দু‘আ পড়া হয় সেটি ওয়াজিব নাকি সুন্নাহ এটি নিয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে একদল আলেমগনের একটি অংশ বলেছেন এটি মুস্তাহাব অপর আরেক দলের আলেমগন বলেছেন ওয়াজিব। তবে জমহুর ওলামাদের অধিক বিশুদ্ধ মতে দুই সিজদার মাঝে বসা ওয়াজিব এবং দু‘আ পড়া মুস্তাহাব। এমনকি উক্ত দু’আ পড়া হয়েছে কিনা এমন সন্দেহ হলেও সাহু সিজদা দেয়া লাগবে না। কেননা উক্ত দু’আ না পড়লে সাহু সিজদা দিতে হবে এই মর্মে কোন বর্ননা পাওয়া যায়না। তবে হাম্বলী মাজহাবের কিছু আলেম দুই সিজদার মাঝে উক্ত দু’আ পড়া ওয়াজিব বলেছেন তাদের মতে ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে কিন্তু ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) এটিকে ওয়াজিব মনে করতেন না। (যাদুল মা‘আদ, ১/১৬৯ পৃ ফাৎহুল বারী লিইবনি রজব, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৫৬)।
.
বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে দুই সিজদার মাঝে দু’আ পড়ার বিধান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে শাইখ বলেন: দুই সিজদার মাঝখানে সালাত আদায়কারীর জন্য সুন্নাত হল: رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ (রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী) অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও) এটি দুইবার পাঠ করা।এছাড়াও হাদীসে অন্যান্য দু’আ রয়েছে।তবে একদল পণ্ডিতের মতে এটি কমপক্ষে একবার পাঠ করা ওয়াজিব, (binbaz.org.sa ফাতওয়া নং-১২৭৮৮)।
.
আমরা জানি সাহু সিজদা হল ভুল সংশোধনী।ফরয অথবা নফল সালাতে ভুল করে কোন ওয়াজিব অংশ ত্যাগ করলে ঐ ভুলের খেসারত স্বরুপ এবং ভুল আনয়নকারী শয়তানের প্রতি চাবুক স্বরুপ দুটি সিজদাহ করতে হয়। অর্থাৎ সালাতে ভুলক্রমে কোন ‘ওয়াজিব’ তরক হলে শেষ বৈঠকের তাশাহ্হুদ শেষে সালাম ফিরানোর পূর্বে অথবা পরে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, সালাতের ওয়াজিব তরক হলে ‘সিজদায়ে সাহু’ ওয়াজিব হবে এবং সুন্নাহ তরক হলে ‘সিজদায়ে সাহু’ সুন্নাহ হবে (শাওকানী, আ-সায়লুল জাররার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৭৪)।

◾আর সালাতে সাধারণত সাহো সিজদা চারটি কারণে দেয়া হয়। যেমন:

▪️(১) সালাত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সালাম ফিরালে
▪️(২) সালাত কম-বেশি হলে
▪️(৩) তাশাহ্হুদ ছুটে গেলে ও
▪️(৪) সালাতে সন্দেহ হলে (বিস্তারিত দ্র. যাদুল মা‘আদ, ১/১৬৯ পৃ.সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১০১৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৮ ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-২০। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৬ সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘সহো’ অনুচ্ছেদ-২০ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০১৭ ; মুসলিম, মিশকাত হা/১০২১) যদি সহো সিজদা দিতে ভুলে যায় তবে পরে স্মরণ হ’লেই সহো সিজদা দিবে (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ১/৩৮৫; উসাইমীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৩/৫৩৭)। আর সাহু সিজদা সালামের পূর্বে ও পরে উভয়ই জায়েয আছে। তবে পূর্বে দেওয়াই উত্তম (ইবনু আব্দিল বার্র, আত-তাহমীদ ১০/২০১-২০৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৭/১৪৮)।
.
◾দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে স্থিরতার গুরুত্ব
এবং পাঠনীয় দু‘আ
_______________________________________
দুই সিজদার মাঝে এই বৈঠকে আল্লাহর নবী (ﷺ) স্থির হয়ে বসে যেতেন এবং এতে তাঁর প্রত্যেক হাড় নিজের জায়গায় ফিরে যেত। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৪ বায়হাকী) তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকেও উক্তরুপে বসার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “এভাবে সোজা ও স্থির হয়ে না বসলে কারো নামায সম্পূর্ণ হবে না।” (সুনানে আবূদাঊদ: ৮৫৭) এই বৈঠকে রাসূল (ﷺ) প্রায় ততটা সময় বসতেন, যতটা সময় ধরে তিনি সিজদাহ করতেন। (সহীহ বুখারী ৭৯২) কখনো কখনো এত লম্বা বসতেন যে, সাহাবীগণ মনে করতেন, হয়তো তিনি (দ্বিতীয় সিজদাহ করতে) ভুলেই গেছেন। (সহীহ বুখারী: ৮২১)।
.
দুই সিজদার মাঝে প্রচলিত দো‘আটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন কোন কোন হাদীসে
কেবল رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ (রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী দুই বার) অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও) অংশটুকু এসেছে (আবুদাউদ হা/৮৫০, ৮৭৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭, মিশকাত হা/১২০০; ইরওয়া হা/৩৩৫, সনদ সহীহ)।

আবার কোন হাদীসে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) পাঁচটি বিষয় প্রার্থনা করতেন”‏ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي ‏” ‏.উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়া ‘আফিনী, ওয়াহদিনী, ওয়ারযুক্বনী”। অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, (আমার প্রয়োজন মিটাও, আমাকে উঁচু কর), পথ দেখাও, নিরাপত্তা দাও এবং জীবিকা দান কর। (আবুদাউদ হা/৮৫০ তিরমিযী,২৮৪, মিশকাত হা/ ৯০১ সনদ সহীহ)।

আবার কোন হাদীসে এসেছে, তিনি দুই সিজদার মাঝে সাতটি বিষয় প্রার্থনা করতেন (ইবনু মাজাহ মিশকাত,৯০০ আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন্নবী ১৫৩ পৃ.)।

সেজন্য ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: হাদীসে বিভিন্ন শব্দযোগে মোট সাতটি বিষয় প্রার্থনা করা হয়েছে। যার সবগুলি একত্রে পাঠ করা উত্তম (নববী, আল-মাজমূ‘ ৩/৪৩৭)।

উক্ত সাতটি বিষয় হ’ল: ‘اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহাম্নী ওয়াহ্দিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ারযুকনী ওয়ারফা‘নী’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন, আমার মর্যাদা উন্নীত করুন’ (ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮ মিশকাত,৯০০ সনদ সহীহ)।

যেনে রাখা ভাল যে, দুই সিজদার মাঝখানে বৈঠকে আঙ্গুল ইশারা করার হাদীস সহীহ নয়। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্‌ ৮২পৃ:) আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।