তিন-চার রাকাআত বিশিষ্ট সালাতে দুই রাকাআত শেষ করার পর প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহুদের সাথে দুরুদ পাঠ করতে হবে কি

তিন চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ অথবা সুন্নত সালাতে ২য় রাক‘আত শেষ করার পর ১ম বৈঠক হলে তাশাহুদের সাথে দুরুদ বা অন্যকিছু পড়তে হবে কিনা এই মাসালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে তিন-চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতের প্রথম বৈঠকে শুধুমাত্র তাশাহুদ অর্থাৎ ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়াই সুন্নত এর অতিরিক্ত কিছু নয়। (সহীহ মুসলিম হা/১১৩৮; মিশকাত হা/৭৯১) তবে কেউ সাথে দুরুদ পাঠ করলেও সমস্যা নেই, এর জন্য সাহু সিজদা দিতে হবেনা ইনশাআল্লাহ, কিন্তু প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের সাথে দুরুদ পাঠ সুন্নাত মনে করা ঠিক হবেনা কেননা রাসূল (ﷺ)-থেকে সুস্পষ্ট করে এই মর্ম খাস কোন বিশুদ্ধ হাদীস নেই।
.
ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উলামাগণের ‘আমল হল তারা প্রথম বৈঠক লম্বা করতেন না আর তাশাহুদের পরে অন্য কোন দু‘আ পড়তেন না; যদি অতিরিক্ত পড়ে তাহলে সাহু সিজদা দিবে। শা‘বী হতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এটা পছন্দ করেছেন। আর ইমাম শাফি‘ঈ বলেছেন,দরূদ পড়লে কোন সমস্যা নেই। (তিরমিজি হা/৩৩৬ এর টিকা)।
.
ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, আমি (ভাষ্যকার) বলি, তাশাহুদের উপর অতিরিক্ত দু‘আ পড়ার দরকার নেই আর যদিও পড়ে তাহলে সাহু সাজদার প্রয়োজন নেই, কারণ এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। (মির‘আতুল মাফাতীহ হা/৯১৫ ব্যাখ্যা দষ্টব্য)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:

لا يستحب أن تصلي على النبي صلى الله عليه وسلم في التشهد الأول ، وهذا ظاهر السنة ، لأن الرسول صلى الله عليه وسلم لم يعلِّم ابن مسعود وابن عباس إلا هذا التشهد فقط ، وقال ابن مسعود : ( كنا نقول قبل أن يفرض علينا التشهد ) وذكر التشهد الأول فقط ، ولم يذكر الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم في التشهد الأول ، فلو كان سنة لكان الرسول عليه الصلاة والسلام يعلمهم إياه في التشهد .
وأما قولهم : ( يا رسول الله ! علمنا كيف نسلم عليك فكيف نصلي عليك إذا نحن صلينا عليك في صلاتنا ؟ ) فهو سؤال عن الكيفية وليس فيه ذكر الموضع ، وفرق بين أن يعين الموضع أو تبين الكيفية ، ولهذا قال ابن القيم رحمه الله في زاد المعاد : كان من هدي النبي صلى الله عليه وسلم تخفيف هذا التشهد ، ثم ذكر الحديث أنه ( كان كأنما يجلس على الرضف ) يعني الحجارة المحماة ، من شدة تعجيله ، وهذا الحديث وإن كان في سنده نظر ، لكن هو ظاهر السنة ، أي أنه لا يزيد على هذا ، وفي صحيح ابن خزيمة ( أن الرسول صلى الله عليه وسلم كان يتشهد في هذا الجلوس ولا يدعو ) ، ومع ذلك لو أن أحدا من الناس صلى على النبي صلى الله عليه وسلم في هذا الموضع ما أنكرنا عليه ، لكن لو سَأَلَنَا أيهما أحسن ؟ لقلنا : الاقتصار على التشهد فقط ، ولو صلى لم ينه عن هذا الشيء ؛ لأنه زيادة خير ، وفيه احتمال ، وإن كان ضعيفا أنه يصلي عليه في هذا المكان ” انتهى

অর্থাৎ প্রথম তাশাহুদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব নয়; সুন্নাহ থেকে এটাই বোঝা যায়,কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু মাসউদ ও ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে শুধুমাত্র এই তাশাহহুদ শিখিয়েছেন এবং ইবনু মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন: আমাদের উপর তাশাহহুদ ফরজ হওয়ার আগে আমরা বলতাম এবং তিনি শুধুমাত্র প্রথম তাশাহহুদের কথাই উল্লেখ করেছেন এবং প্রথম তাশাহহুদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরুদ পাঠের কথা উল্লেখ করেননি। যদি এটা সুন্নত হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তাশাহহুদে তা শিক্ষা দিতেন। তাদের এই কথার জন্য, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা জানি কিভাবে আপনার প্রতি সালাম পাঠাতে হয়, কিন্তু যখন আমরা আমাদের সালাতে আপনার প্রতি দরূদ পাঠাই তখন কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরূদ পাঠাব?” এটি কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে সাহাবিদের একটি প্রশ্ন ছিল, এবং এটি কখন করতে হবে তা উল্লেখ না করে।কখন নির্দিষ্ট করা এবং কীভাবে তা উল্লেখ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাই ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] তার যাদুল মা‘আদ গ্রন্থে বলেছেন: এই তাশাহহুদকে সংক্ষিপ্ত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদ্ধতি ছিল। অতঃপর তিনি হাদীছটি উল্লেখ করেছেন যেটিতে বলা হয়েছে “তিনি খুব দ্রুত এই তাশাহুদ শেষ করতেন। মনে হত তিনি যেন গরম পাথরের উপর বসে আছেন (তাই তিনি দ্রুত উঠে যাচ্ছেন)। (আবূ দাঊদ ৯৯৫, তিরমিযী ৩৩৬) যদিও এই হাদীছের সনদে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে, তবুও সুন্নাহ থেকে এটাই বোঝা যায়, অর্থাৎ প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ-এর বেশি কিছু পড়া উচিত নয়। ছহীহ ইবনে খুযায়মাহতে বলা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বৈঠকে তাশাহহুদ পড়তেন কিন্তু দু‘আ করতেন না। এতদসত্ত্বেও, কেউ যদি এই স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করে, তবে আমরা তাকে নিন্দা করব না, তবে তিনি যদি আমাদের জিজ্ঞেস করেন কোনটি উত্তম, তাহলে আমরা বলব যে, তাশাহহুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম, কিন্তু যদি সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পাঠায় তবে তাকে তা না করতে বলা উচিত নয়, কারণ এটি অতিরিক্ত কল্যাণ এবং এটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,যদিও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নামাযের সময় নবীর উপর দরূদ পাঠ করা দুর্বল। (উসামীন আশ-শারহুল মুমতি খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ২২৫ কিঞ্চিৎ পরিমার্জিত) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।