জান্নাতে কি আমরা কুরআনের পাখির কন্ঠে অর্থাৎ মৃত সাঈদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পাব

প্রশ্ন: জৈনক বক্তা বলেছেন: আমরা আশায় আছি আল্লাহর জান্নাতে আমরা কুরআনের পাখির কন্ঠে অর্থাৎ মৃত সাঈদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পাব। তার উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবন গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। আর কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বিশুদ্ধ আক্বীদা হল: গায়েবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে পৃথিবীর করো কাছে নয় এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) তিনি নিজেও গায়েব জানতেন না যতটুকু আল্লাহ তাকে জানিয়েছেন সেটুকু ছাড়া। সুতরাং বিশুদ্ধ দলিল ছাড়া যে ব্যক্তি এর বিপরীত আক্বীদা পোষণ করবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।কেননা যারা ভবিষ্যতের সংবাদ জানে বলে দাবী করে,তাদেরকে গণক বলা হয়। গনকের পরিনাম জানতে দেখুন সহীহ মুসলিম, হা/২২৩০ মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮৮৯; আবূ দাঊদ, হা/৩৯০৪; তিরমিযী, হা/১৩৫; ইবনু মাজাহ, হা/৯৩৬)
.
মহান আল্লাহ্‌ বলেন, বলুন আসমানে-যমিনে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না। (আন-নামম, ২৭/ ৬৫) আল্লাহ বলেন, (হে নবী) বলুন, আমি তোমাদের বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ভাণ্ডারসমূহ আছে। আর আমি গায়েবও জানি না এবং তোমাদেরকে এও বলি না যে, আমি ফেরেশতা, আমার প্রতি যা অহীরূপে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি (আল-আনআম, ৬/৫০)। আল্লাহ আরো বলেন, (হে নবী) বলুন, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভালো-মন্দের উপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম, তবে তো আমি অনেক কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতো না। ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আমি তো আর কিছুই নই (আল-আ‘রাফ, ৭/১৮৮)।
.
সুতরাং জৈনক বক্তা কোন দলিলের আলোকে “ইনশাআল্লাহ” বলা ছাড়া এভাবে অনেকটা নিশ্চিত করে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তিনি ভাল জানেন। তবে আমার যতটুকু মনে হয় আল্লাহু আলাম। এই ধরনের ভ্রান্ত বক্তারা কিছু জাল জয়ীফ হাদিসের আলোকেই এই বক্তব্য দিয়ে থাকেন। যেমন: আমাদের সমাজে কিছু জাল জয়ীফ বর্ননার আলোকে পথ ভ্রষ্ট বক্তাদের মুখে প্রচলিত আছে যে,মহান আল্লাহ তাআলা জান্নাত বাসীদেরকে নিজে সুরা আর রাহমান তিলাওয়াত করে শুনাবেন। অপর এক বর্ননার আলোকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল জান্নাতবাসীদের কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাবেন। আরো বলা হয় “সূরা রহমান হবে জান্নাতবাসীদের জাতীয় সংগীত”(নাউজুবিল্লাহ) উক্ত মর্মে যতগুলো বর্ণনা রয়েছে তার একটিও সহীহ নয় কোনটি যঈফ আবার কোনটি জাল [দেখুন যঈফুল জামে‘ হা/১৮৩৪, ৪১৫৮; দায়লামী, মীযান ৪/৭৪; যঈফাহ হা/১২৪৮, ৩২৮২; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া খন্ড:১২ পৃষ্ঠা: ৪১১]
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “এটা কি সত্য যে আমরা জান্নাতে আমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে সূরা আর-রহমান তিলাওয়াত শুনব?
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগন উত্তরে বলেন:”আমরা যতদূর জানি এটি সত্য নয়।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ ফাতওয়া নং ৭৪৫৮ ইসলাম ওয়েব ফাতওয়া নং ২৭৮১৬৪)
.
সমাজে আরো প্রচলিত আছে যে,আবার আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতে তাঁর প্রশংসা করে গান গাইবেন মর্মে বর্ণিত বর্ণনাটিও দুর্বল।(মুসনাদু আবদ বিন হুমাইদ হা/৮৫১; যঈফুত তারগীব হা/২১৮৪]
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক মৃত্যু পরবর্তী যাবতীয় বিষয় ইলমে গায়েবের বিষয় আর ইলমে গায়েবের বিষয় প্রমাণের জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ সনদের হাদীস থাকতে হবে। এসব ক্ষেত্রে জাল-যইফ হাদিসের কোনও স্থান নেই। সুতরাং এ সকল জাল জয়ীফ হাদিস প্রচার, বর্ণনা এবং বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।(সহীহ বুখারী:৩৪৪১) মহান আল্লাহর পথভ্রষ্ট বক্তাদের সঠিক বুঝ দান করুক। এবং তাদের থেকে জাতিকে হেফাজত করুক। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।