প্রশ্ন: একজন ব্যক্তিকে তার সমস্ত খরচের জন্য নেকি দেওয়া হবে তবে শুধুমাত্র মাটিতে খরচ অর্থাৎ দালান-কোঠা স্থাপনের খরচ ছাড়া। এই হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,প্রত্যেক উচ্চ পাকা বাড়ি তার মালিকের জন্য দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। তবে যেটি একান্ত জরূরী সেটি ছাড়া।(আবু দাউদ হা ৫২৩৭ ইবনে মাজা হা/ ৪১৬১) বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রথমে এই হাদিসটিকে যঈফ বলেছিলেন, সিলসিলা যঈফাহ হা/ ১৭৪ পরবর্তীতে তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন।(সিলসিলাতুস সহীহাহ হা/২৮৩০)
.
অপর বর্ননায়, খব্বাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন রাসূল (ﷺ)বলেছেন: একজন ব্যক্তিকে তার সমস্ত খরচের জন্য নেকি দেওয়া হবে তবে শুধুমাত্র মাটিতে খরচ অর্থাৎ (দালান-কোঠা স্থাপনে খরচ) ছাড়া। (তিরমিজি হা/২৪৮৩, ইবনে মাজাহ হা/৪১৬৩, সিলসিলা সহীহা হা/২৮৩১, সনদ বিশুদ্ধ)
.
দুটি হাদীসের বিশুদ্ধ অর্থ হল; দুনিয়ার জীবনে একজন মানুষ তার পরিবার-পরিজনের পিছনে যত প্রকার সম্পদ ব্যয় করে তার সেই সকল ব্যয়ের কারণে আখিরাতে তাকে পুরস্কৃত করা হবে অর্থাৎ নেকি দেওয়া হবে। অপরদিকে একজন মানুষ যদি দুনিয়াতে ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করে উদ্দেশ্য হলো: এর দ্বারা অহংকার প্রকাশ করা ও অতিরিক্ত সুখ-সাচ্ছন্দ্যে মেতে থাকা বা সমাজে আধিপত্য বিস্তার করা ইত্যাদি কারনে এই অতিরিক্ত ঘর বাড়ী নির্মাণ বা অতিরিক্ত খরছের জন্য আখিরাতে তাকে কোন সাওয়াব দেয়া হবে না। এখানে ঐ ঘর-বাড়ী উদ্দেশ্য নয় যা মানব কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে যেমন মসজিদ, মাদরাসা ও সরাইখানা ইত্যাদি। কেননা এগুলো পরকালের সাওয়াবের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়। অনুরূপভাবে মানুষের প্রয়োজনীয় খাবার, পোশাক ও বাসস্থান বানানো এর অন্তর্ভুক্ত নয়। (বিস্তারিত জানতে তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা/ ২৪৮৩)
.
এই দুটি হাদীস সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
.
উক্ত হাদীস দুটিতে কি বুঝানো হয়েছে তা আল্লাহই ভাল জানেন তবে জেনে রাখুন: যখন একজন মুসলমান তার প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বাড়িঘর নির্মাণের ব্যাপারে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই যে,নির্মাতার পরিবারের আকার অনুযায়ী যা প্রয়োজন তা পরিবর্তিত হয়,তা বড় বা ছোট, এবং তিনি অতিথিদের আপ্যায়ন করুক বা না করুক। এ ক্ষেত্রে এটি সহীহ হাদীসের অনুরূপ,”পুরুষের জন্য একটি বিছানা,তার স্ত্রীর জন্য একটি বিছানা, তাদের মেহমানের জন্য একটি বিছানা এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।(সহীহ মুসলিম, ৬/১৪৬) এ কারণেই হাফিজ ইবনে হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীছ উল্লেখ করার পর বলেছেন: এই সমস্ত বিষয় বুঝতে হবে কোনটি জরুরীভাবে প্রয়োজন নেই, কোনটি স্থায়ী জীবন যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় যা তাপ ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। তারপর তিনি এমন কিছু লোকের কথা বললেন যারা মিথ্যা ধারণা দিয়েছিল যে সমস্ত ধরণের বিল্ডিং অভিশপ্ত, এবং তিনি এই বলে মন্তব্য করেছিলেন: বিষয়টি এমন নয় বরং ব্যাখ্যা সাপেক্ষে, প্রত্যেকেই যে তার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘরবাড়ি নির্মাণ করে তারা অবশ্যই পাপের জন্য দোষী নয়…কিছু ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত বিল্ডিং নির্মাণ কল্যান আনতে পারে,অর্থাৎ এমন কিছু যা নির্মাতা ছাড়া অন্যদের উপকার করে।
যেমন: মসজিদ, মাদরাসা ও সরাইখানা ইত্যাদি। কেননা এগুলো পরকালের সাওয়াবের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়। এগুলো সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে নির্মাতার জন্য প্রতিদান নিয়ে আসবে।আল্লাহই ভালো জানেন। (সিলসিলাহ আল-সহীহাহ, হাদীস নং ২৮৩১ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ২১৬৫৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।