মৃত নারী-পুরুষের গোসল করানোর সহীহ পদ্ধতি

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অহেতুক বিলম্ব না করে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ওয়াজিব।কেননা রাসূল (ﷺ)-এর একাধিক আদেশ এই ওয়াজিব হওয়ার কথা প্রমাণ করে।(সহীহ বুখারী হা/১১৮৬ সহীহ মুসলিম হা/২০১২) মৃতের গোসল দেওয়ার অধিক হকদার সেই ব্যক্তি যাকে মাইয়্যেত জীবিতাবস্থায় অসিয়ত করে যাবে।যদি কাউকে অসিয়ত না থাকে তাহলে মৃতের সবচেয়ে কাছের নিকটাত্মীয় যে ব্যক্তি গোসলের সুন্নাহ সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখে এবং যার মধ্যে তাকওয়া এবং আমানতদারী আছে তাকেই এ কাজের জন্য প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে নারীদের জন্য নারী এবং পুরুষদের জন্য পুরুষ গোসল করাবে। তবে মহিলাগণ শিশুদেরকে গোসল করাতে পারবে।(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৮) এক্ষেত্রে গোসল দাদাদের প্রয়োজনে সাহায্যকারী হিসেবে অন্যান্য নারী পুরুষ রাখা যাবে।স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে বিনা দ্বিধায় গোসল দিতে পারে।(ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫)
.
মাইয়েতকে গোসল দেয়ার সময় উপরে এবং ডানে বামে সামনে পিছনে অর্থাৎ সর্বমোট পাঁচদিকে পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গোসলের শরিয়ত সম্মত পদ্ধতি হচ্ছে- প্রথমে ইসতেনজা করাবে। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হলে গোসলদানকারী হাতে একটি নেকড়া বেঁধে নিয়ে মৃতব্যক্তির পায়খানা ও পেশাবের স্থানদ্বয় নাভি ও হাঁটুর মাঝখানের স্থান ঢেকে নিয়ে পানি ঢেলে ধুয়ে পরিস্কার করবে।যদি বারবার পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হয় তাহলে ভাল করে পরিষ্কার করে সেখানে তুলা বা কাপড়ের টুকরা দ্বারা বন্ধ করে দেবে। প্রয়োজন হলে এর উপর প্লাস্টার পট্টি ব্যবহার করতে পারে। তবে ন্যাকড়া ব্যবহার করাই উত্তম।এরপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পূর্বে সালাতের ওযূর মত ওযূ করাবে।(সহীহ বুখারী হা/১২৫৫) তবে কুলি করানো ও নাকে পানি দেয়া ওযূ থেকে বাদ যাবে;এই দুটি স্থান ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মোছাই যথেষ্ট হবে। সুতরাং মৃতব্যক্তিকে কুলি করানো ও নাকে পানি ঢুকানোর বদলে ভেজা আঙ্গুলদ্বয় দিয়ে তার ঠোঁটদ্বয়ে পানি দিবে। এবং তার দাঁতগুলো মুছে দিবে।কিন্তু মুখে বা নাকে পানি প্রবেশ করাবে না।(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী, ২/১৬৫ পৃ. ইসলাম সাওয়াল ও জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫৩৭২০)।
.
মৃতের মুখে বা নাকে পানি প্রবেশ না করানোর কারন হল জীবিত ব্যক্তি পানি প্রবেশ করালে সেটা দিয়ে সে কুলি করে এবং সেটা ফেলে দেয় ও পানিটা বের হয়ে যায়। আর মৃতব্যক্তির মুখে পানি ঢাললে সে পানি তার পেটে চলে যাবে এবং এতে করে হতে পারে এ পানি স্থির কিছুকে নাড়িয়ে দিবে। একই কথা বলব নাকে পানি দেয়ার ক্ষেত্রেও। মৃতব্যক্তি নাকে পানি টেনে নিতে পারে না এবং নাক থেকে পানি ফেলে দিতে পারে না। সে কারণে আমরা বলব: তার মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবেন না’ (উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতি‘, ৫/১৩১ পৃ.) তারপর চেহারা ও দুই হাত ধুয়ে দিবে। মাথা ও দুই কান মাসেহ করাবে। পা দুটো ধুয়ে দিবে। এরপর বরইপাতা মিশ্রিত পানি তার মাথার উপর ঢালবে। এরপর তাকে বামপার্শ্বে শয়ন করিয়ে ডান পার্শ্বে পানি ঢালবে। তারপর অনুরুপ ডানপার্শ্বে শয়ন করিয়ে বাম পার্শ্বে পানি ঢালবে। এরপর সারা শরীরে তিনবার পানি ঢালবে।লাশের কোন অঙ্গ অগ্নিদগ্ধ বা কোন দুর্ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকলে কাপড় জড়িয়ে গোসলের পর ঐ অঙ্গে মাসাহ করে দেবে। মৃতকে গোসলের ক্ষেত্রে যদি তিনবারের বেশিও পানি ঢালা প্রয়োজন হয় তাহলে পাঁচবার পানি ঢালা যেতে পারে। অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যায় শেষ করবে এটি উত্তম। শেষবার পানির সাথে কর্পুর দিবে। কর্পুর একজাতীয় সুগন্ধি; যা সবাই চিনে। কর্পুর শরীরকে ভাল রাখে এবং সুগন্ধি ছড়ায়। এরপর শুষ্ক কাপড় দ্বারা মাইয়্যেতের দেহ মাথা, বুক, মুখ, পেট, হাত, পা মুছে দেবে । লজ্জাস্থানের উপর ভিজা কাপড়টিকে সরিয়ে অন্য একটি শুকনা কাপড় দিয়ে দেবে। মাইয়্যেত নারী হলে তার চুলগুলো আঁচড়ে মাথার অগ্রভাগ বা সামনের চুলকে একটি বেনী আর মাথার দু’পাশের চুলকে দুটি বেনী করে কাফনের সময় এই তিনটি বেনী লাশের পিছনদিকে ছড়িয়ে দেয়া মুস্তাহাব। (সহীহ বুখারী হা/১২৬৩)।
.
এটি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর উত্তম পদ্ধতি। তবে যেভাবেই গোসল করানো হোক না কেন সেটা জায়েয। গুরুত্বপূর্ণ হলো-মৃতব্যক্তির সারা শরীরে পানি পৌঁছানো ও নাপাকি দূর করা।তবে উত্তম হলো- সর্বপ্রথম ইসতেনজা করানোর মাধ্যমে শুরু করা। এরপর ওজু করানো। এরপর বরই পাতার পানি দিয়ে তিনবার পানি ঢালা। এরপর সারা শরীরে তিনবার পানি ঢালা। প্রথমে ডান পাশে। তারপর বাম পাশে। তিনবার পানি ঢালবে। যদি তিনবারের বেশিও পানি ঢালা প্রয়োজন হয় তাহলে পাঁচবার পানি ঢালা যেতে পারে। যদি পাঁচবারের বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সাতবার পানি ঢালবে। অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যায় শেষ করবে।এটি উত্তম। যদি একবার বা দুইবার গোসল করায় সেটাও জায়েয হবে। তবে উত্তম হচ্ছে তিনবার। প্রয়োজন হলে পাঁচবার, আরও বেশি প্রয়োজন হলে সাতবার। (বিন বায ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব এবং ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২০১০৮৫)। তারপর গোসল শেষে মাইয়্যেতকে সমান মাপের তিনটি কাপড়ে কাফন পড়িয়ে জানাযার জন্য প্রস্তুত করা হবে। পাশাপাশি জেনে রাখা ভাল যে যিনি মৃতব্যক্তিকে গোসল দিয়েছেন তার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব ওয়াজিব নয়। বরং তিনি অযু করলেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ। (সুনানে তিরমিযি (৩/৩১৮), আল-মুগনী (১/১৩৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।