কোন পুরুষ উপর কোন মৃত পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট করে ৩ দিন বা তার অধিক শোক পালন করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

প্রশ্ন: কোন পুরুষ যেমন: (প্রখ্যাত আলেম, ফাক্বীহ, নেতা ইত্যাদি) কেউ মারা গেলে অপর পুরুষরা তার জন্য নির্দিষ্ট করে ৩ দিন, ৪ দিন শোক পালন করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে শোকপালন [ইদ্দত] মানে নির্দিষ্ট একটি সময় সাজসজ্জা ও সুগন্ধির ব্যবহার বর্জন করা। এটি নারীদের বৈশিষ্ট্য; পুরুষদের নয়। কোন নারীর আত্মীয় মারা গেলে তিনি তিনদিন পর্যন্ত শোক পালন করতে পারে। আর স্বামী মারা গেলে ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করা ওয়াজিব। অবশ্য গর্ভবতীর ইদ্দত প্রসবকাল পর্যন্ত। দলিল উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে মারফু হিসেবে বর্ণিত, “মৃত ব্যক্তির উপর কোনো নারী তিন দিনের বেশী শোক পালন করবে না। তবে স্বামীর উপর চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। আর সে কোনো রঙিন কাপড় পরিধান করবে না। তবে সাদা-কালো কাপড় পরিধান করতে পারবে। সে সুরমাও ব্যবহার করবে না এবং সুঘ্রাণও ব্যবহার করবে না। তবে ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার সময় দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সামান্য সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে।(সহীহ বুখারী হা/৩১৩, সহীহ মুসলিম হা/৯৩৮)।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, যে স্ত্রীর স্বামী মারা গেছে তাকে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং নিজেকে সাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। একে ইদ্দত (আনুষ্ঠানিক শোক) বলা হয় এবং আমরা এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোন মতভেদ জানি না। সুতরাং যে মহিলার স্বামী মারা গেছে তার জন্য এটা ওয়াজিব। (ইবনু কুদামাহ, আল-মুগনী, খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ১২৫)।
.
পক্ষান্তরে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আলেমদের ইজমা অর্থাৎ সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে, পুরুষের উপর কোন শোকপালন নেই। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের [আলেমগণ] এই মর্মে ইজমা তথা ঐক্যমত করেছেন। (আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ১০৫)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল

প্রশ্ন: আমরা যে অঞ্চলে আছি সেখানে একটি প্রথা আছে; তাহলো: কারো স্ত্রী মারা গেলে সে স্বামী ৬ মাস বা তদুর্ধ্ব সময়ের আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে না। আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: কেন? তারা বলবে: স্ত্রীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনস্বরূপ। ঘটনাক্রমে এক লোক তার স্ত্রী মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে বিয়ে করে ফেলে। মানুষ তার বিয়েতে যায়নি। এমনকি তারা এ লোককে সালাম পর্যন্ত দেয় না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে; এমনকি সেটা যদি একদিন পরেও হয় বিয়ে করা কি শরিয়তে অনুমোদিত; নাকি অনুমোদিত নয়?
.
জবাব তারা বলেন: এটি একটি জাহেলী প্রথা। পবিত্র শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। তাই এ প্রথাটি বর্জন করা ও এটাকে বিবেচনা না করার জন্য একে অপরকে নসিহত করা বাঞ্চনীয়। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরপর বিয়ে করেছে তার সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করা জায়েয নয়। কেননা তা শরিয়ত প্রদত্ত অধিকার ছাড়া সম্পর্কচ্ছেদ।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খন্ড: ১৯ পৃষ্ঠা: ১৫৬)।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আমাদের এখানের প্রথা হচ্ছে মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া তিনদিনের বেশি সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকা দূরত্বের কারণে এবং আমাদের কেউ কেউ মৃতব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ দেরীতে পাওয়ার কারণে। অর্থাৎ তিনদিনের পর কিংবা এর চেয়ে অধিক সময়। কখনও চারদিনও চলমান থাকে। এর হুকুম কি?
.
জবাবে শাইখ বলেন, সান্ত্বনা দেয়ার সুনির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই; না তিনদিন; আর না এর চেয়ে বেশি সময়। হতে পারে সান্ত্বনাদানকারীগণ চারদিন পর বা পাঁচদিন পর জেনেছে। মূলকথা এর কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সান্ত্বনাদানকারী সান্ত্বনা দেয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যদি তিনদিন পর, চারদিন পর বা পাঁচদিন পর যখন তার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তখন সান্ত্বনা দেন এতে কোন অসুবিধা নেই। তিনদিন হলো শোকপ্রকাশের সময়সীমা। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির নিকটাত্মীয় নারীর শোকপ্রকাশ করার সময়সীমা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃতব্যক্তির জন্য নারী তিনদিনের বেশি শোকপ্রকাশ করবে না।” তাই মৃতের নিকটাত্মীয় নারীদের জন্য তিনদিনের বেশি শোকপ্রকাশ করা নাজায়েয। পক্ষান্তরে সান্ত্বনা দেয়ার সময় তিনদিনে নির্দিষ্ট নয়। অনুরূপভাবে প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের পক্ষ থেকে তাদের জন্য খাবার পাঠানোর কোন সময়সীমা নেই। তাই কোন প্রতিবেশী যদি তিনদিনের পর তাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে; যেহেতু তারা তখনও তাদের মুসিবতে ব্যস্ত তাতে কোন অসুবিধা নেই। আমাদের জানা মতে, শরিয়তে এর কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। (বিন বায ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব; ২/১১২৭)। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
___________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি